[ আধ্যাত্মিক উন্নতি কিভাবে করা যায়__সেই নিয়ে গুরু মহারাজ, একজনের জিজ্ঞাসার উত্তর দিচ্ছিলেন ‌। আজ সেই আলোচনার শেষাংশ ।]
……… সুতরাং এটা জেনে রাখবেন বিবেকের জাগরণ না হোলে কখনোই নিঃস্বার্থ সেবা হয় না। আর সেবা কথাটার সাথে ‘নিঃস্বার্থ’ কথাটি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। কোনোরূপ স্বার্থ জড়িত থাকলে তা duty হোতে পারে, ‘খেদমদ্’ হোতে পারে – কিন্তু সেবা হয় না ! সেবা হয় অন্তর থেকে, অন্তর থেকে প্রেরণা আসে__ আর সেই প্রেরণার ফলে সেবার ভাব আসে ! মা যখন সন্তানের যত্ন করে তখন কিছু চাওয়া-পাওয়া থাকে ?–থাকে না ! কোনো বিবেকবান সন্তান যখন বৃদ্ধ বা রোগগ্রস্ত পিতা-মাতার সেবা করে, যত্ন করে তখন সেখানে কি কোনোরূপ দেনা-পাওনার ভাব থাকে ?– থাকে না ! ঐ সকল ক্ষেত্রে অন্তরের প্রেরণায় সেবা হয়। কিন্তু এই যে উদাহরণগুলি দেওয়া হোলো – এগুলিতে পারিবারিক বন্ধনের, মায়া-মমতার বা স্নেহ-ভালবাসা-শ্রদ্ধার একটা ব্যাপার রয়েছে, আর পরিবারের বাইরে গিয়ে সমাজের বিভিন্ন স্তরের সাধারণ মানুষের সেবা করতে গেলে সম্পূর্ণ স্বার্থশূন্য হয়েই তা করতে হয়__না হোলে তা করতে পারা যায় না ! প্রকৃতপক্ষে, সর্বত্যাগী, স্বার্থশূন্য সন্ন্যাসীই পারে স্থান-কাল-পাত্র নির্বিশেষে, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের সেবা করতে !
তবে আহত বা পীড়িতের স্থূল সেবাই যে ‘সেবা’– তা কিন্তু নয় ! প্রকৃত ‘সেবা’ হোচ্ছে মানুষের বিবেকের জাগরণ ঘটানো, তার চেতনার উত্তরণ ঘটানো ! এই কথাই একটু আগে বলা হচ্ছিলো –! উপনিষদের ঋষিরা সকাল বিকাল প্রার্থনা করতেন – ” অসদো মা সদগময়, মৃত্যোর্মা অমৃতংগময়, তমসো মা জ্যোতিঃর্গময়৷”[অসত থেকে আমাদেরকে সতে নিয়ে চলো, মৃত্যু থেকে আমাদেরকে অমৃতে নিয়ে চলো, অন্ধকার থেকে আমাদেরকে জ্যোতিঃতে নিয়ে চলো।] ঋষি তপোবনে এই প্রার্থনামন্ত্র ছাত্রদেরকে দিয়েও পাঠ করানো হোতো – কিন্তু গুরুকুল শুধু পাঠ করিয়েই ক্ষান্ত থাকতেন না, তাদেরকে হাত ধরে উন্নত আধ্যাত্মিক অবস্থায় পৌঁছে দিতেন !
সুতরাং অধ্যাত্মপথে অগ্রসর হোতে গেলে – প্রথম শর্ত আপনার মধ্যে এই পথে অগ্রগতির ব্যাকুলতা জাগতে হবে ! সেটা আপনি পারিবারিক সূত্রে পেতে পারেন (যদি পিতা-মাতা উন্নত হয়) বা আপনি সামাজিকভাবে পেতে পারেন (শিক্ষাগুরু, আধ্যাত্মিক পুস্তক পাঠ ইত্যাদির দ্বারা) অথবা এই ব্যাকুলতা কোনো মহাত্মা, মহাপুরুষ, যুগপুরুষ বা সদ্গুরুর সাথে প্রত্যক্ষ সংযোগের ফলেও জাগতে পারে।
তবে, সে যেভাবেই হোক, এটা জেনে রাখবেন যে__ ওই শেষের ধাপটি অর্থাৎ কোনো মহাত্মা, মহাপুরুষ বা সদ্গুরুর direct সংস্পর্শ বিনা কখনোই সাধারণ মানবের আধ্যাত্মিক উন্নতি সম্ভব হয় না !
‘সাধারণ মানব’- বলা হোলো এইজন্য যে, পূর্ব পূর্ব ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় যে, ‘অসাধারণ’ কারো কারো কোনো মহাপুরুষের স্থূল সংস্পর্শ ছাড়াই ‘আধ্যাত্মিক উন্নতি’ বা পূর্ণত্বলাভ সম্ভব হয়েছে – কিন্তু তার উদাহরণ দুটি কি একটি ! ঐরকম দু-একটিকে__ অধ্যাত্মজগতে ‘উদাহরণ’- হিসাবেই মা জগদম্বা পাঠান ! মা-য়ের জগতে কোনো ‘শেষ কথা’ হয় না – আর সেই জন্যই ঘটে যায় কিছু কিছু অনিয়ম ! এর দ্বারা ✓রী মা বোঝান যে ‘অনিয়ম’-ও নিয়মের মধ্যেই পড়ে !
আপনি জিজ্ঞাসা করছিলেন – আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য আপনি কি করবেন ?– এই তো আপনি এখানে এসেছেন, বসে বসে ধর্মকথা, ঈশ্বরকথা শুনছেন, আত্মতত্ত্বের পাঠ গ্রহণ করছেন – এইটাই কি কম কথা ! এই সময়ে কত শত মানুষ কত কি অন্য কাজ করছে –কেউ কেউ হয়তো কত অসৎকাজ, কুকর্ম করে চলেছে, কিন্তু আপনি তো তা করছেন না ! এই মুহূর্তে এখানে যারাই বসে আছে তারা জ্ঞান-গঙ্গায় স্নান করছে, পবিত্র হোচ্ছে, মুক্ত হোচ্ছে ! এই যে পারমার্থিক আস্বাদ, এটা ভুলতে পারেনা মানুষ ! এর একটা নেশা রয়েছে !! তাই তো আপনারা সকলে আবার ছুটে ছুটে আসছেন !
তবে জেনে রাখবেন, –এই যে আস্বাদ পাইয়ে দেওয়া হোলো, এইটা ✓রী মায়ের জগতে বিশেষ কৃপা! কৃপাপ্রাপ্তদের উচিত _এবার নিজের প্রচেষ্টা দিয়ে নিজে নিজেই নিজের অভ্যন্তরে এর স্বাদ গ্রহণ করা ! ব্যস্ _ তাহলেই হবে।
আপনিও যদি এমনটা করতে পারেন__তাহলে তখন আপনাকে আর পিছু ফিরে চাইতে হবে না। ধীরে ধীরে – আপনিও এগিয়ে যাবেন পূর্ণত্বের পথে, পূর্ণত্বলাভের পথে !
চরৈবেতি – চরৈবেতি – চরৈবেতি
*সপ্তম খণ্ড সমাপ্ত*