গুরুমহারাজ :—-এই দ্যাখো! তা যাবে না কেন! এইটা করতেই তো ওঁদের আসা! এই জন্যই বলা হয়েছে _”মহাজন যেন গতঃ স পন্থা শ্রেয়।”তাঁরাই তো পথ দেখান, প্রদর্শক। যুগপুরুষ তাঁরাই যাঁরা যুগপ্রয়োজনে শরীর ধারণ করেন। আর তাঁদের সাধন ভজন!!__ এ যেন একবার ঝালিয়ে নেওয়া!! সবকিছু করাই আছে _শুধু একবার বসে ঠিকঠাক করে নেওয়া!! ওনাদের সাধন-ভজনের সাথে যেন সাধারণের তুলনা কোরো না।
যুগপুরুষেরা যখন শরীর ধারণ করেন তখন তাদের সাধারণত দুটো উদ্দেশ্য থাকে। এক হচ্ছে _লোকশিক্ষা আর দ্বিতীয় হচ্ছে নিজে সাধন করে জগৎ কে সাধন ভজন করায় উৎসাহ দেওয়া।
তাঁরা সাধন করে ঐ সাধন-পদ্ধতি গুলিকেই আরও charged করে তোলেন বা শক্তিশালী করে দেন!! এর ফলে কি হয় জানো__আগামীতে ঐপথে আরো অনেক সাধক সাধন-ভজন করতে পারে বা জীবনে পূর্ণতা প্রাপ্ত হতে পারে।
এঁরা descending! এঁরা পূর্ব হতেই পূর্ণজ্ঞানী, কিন্তু যেহেতু পৃথিবীতে নতুন শরীর নিয়ে কাজ করছেন তাই এখানকার সাধন-পদ্ধতি গুলো একবার ঝালিয়ে নেন!
আর সাধারন সাধকেরা বা যারা ascending ক্রমে রয়েছে, তাদের জন্ম জন্মান্তরের সাধনার ফলে কোন সাধক হয়তো কোন জন্মে পূর্ণতা পেতে পারে! সাধনার ফলে জগৎ বা জীবন রহস্যের এক একটা জট কাটতে থাকে। কিন্তু এই স্তরগুলি অতিক্রম করার সময় প্রতিটি বাঁকে বাঁকে রয়েছে প্রচুর প্রতিবন্ধকতা _আছে লোভ এবং প্রাপ্তি!! এইসব কিছুকে অতিক্রম করে একলক্ষ হতে পারলে তবেই পূর্ণত্ব লাভ করা সম্ভব! এমন সাধকও বহু আছে যারা তার জীবনে এটা করে দেখিয়েছেন।
তবে বেশিরভাগ সাধকই বিভিন্ন সিদ্ধিতে আটকে যান। তাদের দ্বারা জগৎকল্যাণমূলক অনেক কাজ হতে পারে _সমাজ সংস্কার হোতে পারে, charitable বিভিন্ন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি হতে পারে __কিন্তু আধ্যাত্মিক পূর্ণতা লাভ হবেনা।
ওনাদের প্রতিষ্ঠিত institution থেকেও কোনো সাধকের পূর্ণতা লাভ হবেনা। কি করে হবে? _প্রতিষ্ঠাতা নিজেই তো মাঝপথে সাধনা বন্ধ করে কোন না কোন সিদ্ধিতে ফেঁসে গিয়েছেন।
একমাত্র পূর্ণত্বপ্রাপ্ত মহাপুরুষের শিক্ষা, আদর্শ, সাধন-পদ্ধতি অবলম্বন করেই পূর্ণতা লাভ সম্ভব হয় _অন্য কোনভাবেই তা সম্ভব নয়। আধ্যাত্মিক জগতের ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে এখনও পর্যন্ত গোরক্ষনাথ পরম্পরায় সবচাইতে বেশি সংখ্যক সাধক পূর্ণত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন। কারন এটি যোগ পরম্পরা _আর নিষ্ঠাভরে গুরুর নির্দেশ মতো যোগ করলে যোগের ফল একদম instantly পাওয়া যায়।যতটা করবে, ততটাই এগিয়ে যাবে। তবে উপযুক্ত আধার ছাড়া সুকঠিন যোগমার্গ অবলম্বন করা বা এই পথে এগিয়ে যাওয়া অসম্ভব। চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছতে কঠোর ব্রহ্মচর্য্য ও নিরন্তর প্রার্থনার প্রয়োজন হয়।
সারা ভারতবর্ষ বিশেষত হিমালয়ের বিভিন্ন অঞ্চল ঘোরার সময় আমি যে কত শত পরম্পরার সাধু, যোগী, সাধক দেখেছি তার ইয়ত্তা করতে পারবে না ৷ বিচিত্র সব সাধক আর বিচিত্র তাদের সাধন পদ্ধতি ৷ কিন্তু সবারই লক্ষ্য এক ! এটাই আমার সবচাইতে মজা লেগেছে যে বিশাল বৈচিত্রের মধ্যে এ এক চরম ও পরম ঐক্য ! সাধনপথ পিছলপথ ! অনেকে হয়তো পিছলে যাচ্ছে – আবার পিছনে থাকা অনেকে এগিয়ে আসছে । এইভাবেই এক-একটা পরম্পরা টিকে রয়েছে । যদি কখনও মা জগদম্বা দেখেন কোন পরম্পরা থেকে ভাল আর কিছু হচ্ছে না – এখন তিনি ওটিকে সমাপ্ত করে দেন ৷ সেক্ষেত্রে অন্য কোন পরম্পরার গুরু এসে ঐ পরম্পরার বাকী লোকেদের দায়িত্ব নিয়ে নেন । লোকচক্ষুর অন্তরালে মায়ের জগতে কত লীলা ঘটে চলেছে – ক’জন তার খবর রাখে !
আবার এক-একটি পরম্পরার জন্য সাধকও নির্দিষ্ট রয়েছে – তার সেই পদ্ধতির সাধনেই মঙ্গল হবে, অন্যভাব গ্রহণের উপযুক্ত শরীর বা মনের গঠন তার নয় । কিন্তু এমনও দেখা যায় হয়তো কেউ ভুল করে বা যে কোন কারণে অন্য পরম্পরায় চলে এসেছে – সেখানে তার আধ্যাত্মিক মঙ্গল হবার জায়গায় ক্ষতিই বেশী হবে!
এই রকম অবস্থায় পড়লে ঐ ব্যক্তির যদি আন্তরিক প্রার্থনা থাকে তখন আবার মায়ের ইচ্ছায় তাকে তার উপযুক্ত ধারায় ফিরিয়ে আনা হয় । ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ একটা গল্প বলতেন – একজন ব্যক্তি বিভিন্ন রঙে অপরকে রাঙায় – কিন্তু তার নিজের রঙটি কি তা জানা যাচ্ছে না ! এঁরাই হলেন যুগপুরুষ _যাঁর কাছে সব প্রকারের রঙ রয়েছে! তাই যুগপুরুষের কাছে যে কোন পরম্পরার লোক আসুক না কেন – তার মঙ্গল হয় ৷ কোন পরম্পরার সাধন-পদ্ধতি হয়তো উপযুক্ত গুরুর অভাবে শক্তিহীন হয়ে গেছে — যুগপুরুষ সেই পরম্পরার শক্তিকে আবার Charged করে ঐ পরম্পরার সাধকদের মঙ্গল সাধন করেন । দেখবে, মহাপুরুষ বা যুগপুরুষরা বহু শক্তিপীঠ, সাধনক্ষেত্র দর্শন করেন বা সেই ক্ষেত্রে পদার্পন করেন। এটা কেন করেন বলতো শুধুমাত্র সেগুলিকে Charged করে আরও শক্তিশালী করতে ! যাতে মানুষজন সেখানে এলে, সেখানে মনঃসংযোগ করলে, ভক্তিভাব আরোপ করলে তাদের উপকার হয় ৷ মানুষের কল্যাণের নিমিত্তই মহাপুরুষদের আগমন ৷ তাঁদের জীবনেব প্রতিটি পদক্ষেপেই কল্যাণ নিহিত থাকে । আর শুধু মানুষের কেন, মহামানবের আগমনে সমস্ত জীবজগতের মঙ্গল হয় – কল্যাণ হয় । বিশ্বজগতের কল্যাণ করতেই তাঁর আসা ! তবে জানবে – মহাপুরুষের আগমনটাও মহাবিশ্বপ্রকৃতি বা মা জগদম্বার ইচ্ছাতেই হয় ৷৷