এবারের গল্পটা, যেটা গুরুমহারাজ বলেছিলেন _সেটা যেন অনেকটা আগেকার গল্পের উত্তর।(গল্প কথা প্রসঙ্গে – 11 নং গল্প) ‘একজন কয়েদীকে নিয়ে গল্পটা’ _শুরু করা যাক।
এক কয়েদী দীর্ঘদিন ধরে এক জেলখানায় বন্দি ছিল। সে ছিল অন্যান্য কয়েদীদের চেয়ে সম্পুর্ন আলাদা! সামান্য কোন অপরাধে সে জেলে ঢুকেছিল। কিন্তু জেলে ঢুকেই সে জেনে নিয়েছিল যে, _এই জেলখানার সবার ঊপরওয়ালা হোল __জেলার সাহেব। জেলার সাহেব যদি মনে করেন, তাহলে তিনি যে কাউকে অল্পদিনের মধ্যেই মুক্ত করে দিতে পারেন!
এইটা জানার পর, ঐ কয়েদী জেলখানার যা নিয়ম সেগুলি একদম ঠিকমতো পালন করতো, আর সুযোগ পেলেই জেলার ((গল্পটি গুরুমহারাজ অনেকবার বলেছিলেন। কোন কোন সময় গুরুমহারাজ ‘জেলারে’ র স্থলে ‘ম্যাজিস্ট্রেট’ কথাটি ব্যবহার করতেন!)- সাহেবের দোহাই দিতো (গুনগান করতো), তার নামে জয়ধ্বনি করতো _তার রুপ গুনের কথা সবাইকে বলতো ! আর এসব সেই কয়েদী আন্তরিকতার সঙ্গে করতো _কারণ জেলারের গুনগান করার সময় তার দুচোখ জলে ভরে উঠতো।
কয়েদীটির এ হেন আচরন বেশ কিছুদিন লক্ষ্য করার পর ওখানকার রক্ষীরা বুঝতে পারল যে ব্যাপারটা জেলার সাহেবকে জানানো প্রয়োজন!
ফলে তারা জেলার সাহেবকে ঐ কয়েদীর অদ্ভুত আচার আচরণের কথা জানালো। সব শুনে জেলার সাহেব ঐ কয়েদীকে বিশেষ নজরে রাখতে বললেন এবং সাথে সাথে এটাও বলে দিলেন যে __ওর যাতে কোন অসুবিধা না হয়, সে ব্যাপারে যেন নজর রাখা হয়!
এই ভাবেই বেশ কিছুদিন কেটে যাওয়ার পর দেখা গেল __ ঐ কয়েদীর আচরণের অনেকখানি পার্থক্য ঘটে গেছে! তার যে নিত্যনৈমিত্তিক কাজ সেগুলি আর ভালো লাগে না __শুধু জেলার সাহেবের দোহাই পাড়তে পাড়তেই তার দিন কেটে যায়। খাওয়া দাওয়ার ঠিক নাই, শোওয়া-ঘুমানোর প্রয়োজনবোধ নাই __সে এক নিদারুণ অবস্থা!!
জেলার সাহেবের কাছে খবর গেল (অবশ্য তিনি সবার অলক্ষে সবসময় সবার উপরে নজর রাখেন)। জেলার সাহেব হুকুম দিলেন _”দাও _ওকে মুক্ত করে দাও!”
রক্ষীরা জেলের ছোট দরজা খুলে তাকে ছেড়ে দিল আর বলে দিল _” যাও তুমি মুক্ত!”
ঐ কয়েদী কিন্তু ছাড়া পেয়েও পালাল না _গারদের বাইরে বেরিয়ে এসেও এক জায়গায় বসে বসে আরো জোরে জোরে জেলারের নামে দোহাই পারতে লাগল। সবসময় মুখে শুধু জেলারের গুনগান _” হে জেলার সাহেব! তুমি কত গুনবান ! কত দয়া তোমার! আমার মতো গুনহীনকেও তুমি নিজগুনে মুক্ত করেছ!! __ইত্যাদি নানাভাবে নানা কথায় জেলারের গুন গাইতে লাগল।
রক্ষীরা আবার খবর দিল জেলার সাহেবকে!
জেলার সাহেব সব শুনে হুকুম দিলেন _”ওয়াচ করো_অর্থাৎ নজর রাখো। আর দ্যাখোতো _ও কি চায়? কি পেলে সন্তুষ্ট হয় ও! ওকে সেটা দিয়ে দাও!
জেলারের হুকুমে রক্ষীরা তার কাছে গিয়ে কিছু ভালো ভালো খাবার-দাবার, দামী দামী পোষাক-আষাক দিয়ে জিজ্ঞাসা করল _”আর কি কি চাই তোমার! কি পেলে তুমি এখান থেকে যাবে বলো!!”
কয়েদী কাঁদতে কাঁদতে বলল _” মহাশয়! আমি সেই পরমদয়াল জেলার সাহেবের সাথে মিলতে চাই! যিনি এতো দয়াল_যাঁর নাম গুনগান করলে কয়েদখানা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, আমি সেই পরমদয়াল, করুনানিধানকে চাই”!
রক্ষীরা বলল_” তাকে এখানে কোথায় পাবে? তিনি থাকেন রাজধানী শহরে! এখানে মাঝে মাঝে visit – এ আসেন।তাঁর সাথে দেখা করতে হোলে যাও __শহরে গিয়ে তাঁর খোঁজ করো”।
রাজধানী শহরে জেলার সাহেব থাকেন!!! _শুনে খুব খুশি হোল কয়েদী! এদের সকলকে বিদায় জানিয়ে এবার কয়েদী চলল রাজধানী শহরের দিকে! মুখে জেলার সাহেবের গুনগান! অবশেষে একদিন সে পৌঁছে গেল জেলার সাহেব যেখানে থাকেন _সেই শহরে (সালোক্য)!
রাজধানী এলাকায় পৌঁছে গেল সে, দেখল_ সেখানকার জৌলুস, রাস্তাঘাটে আলোর রোশনাই, চারিদিকে চাকচিক্য, বড় বড় বাড়ি, কত দোকান পশরা! যে ব্যক্তি এত জাঁকজমক কখনো দেখেনি তার মাথা ঘুরে যাবার ই কথা! নানারকম দেখার জিনিস, ভোগের সামগ্রী, প্রলোভনের হাতছানি! কয়েদী কিন্তু এসবে ভোলার লোক নয়। সে সবই দেখছে কিন্তু কোন কিছুই ভালোভাবে দেখছে না! তার এক লক্ষ্য _জেলার সাহেবের বাড়ির ঠিকানা যোগাড় করে তাঁর সঙ্গে দেখা করা!
বহুজনকে জিজ্ঞাসা করে অবশেষে খুঁজে পেল সে জেলার সাহেবের বাড়ি! ‘ওই দেখা যায় জেলার সাহেবের বাড়ি!’ (সামীপ্য) …… [চলবে]
এক কয়েদী দীর্ঘদিন ধরে এক জেলখানায় বন্দি ছিল। সে ছিল অন্যান্য কয়েদীদের চেয়ে সম্পুর্ন আলাদা! সামান্য কোন অপরাধে সে জেলে ঢুকেছিল। কিন্তু জেলে ঢুকেই সে জেনে নিয়েছিল যে, _এই জেলখানার সবার ঊপরওয়ালা হোল __জেলার সাহেব। জেলার সাহেব যদি মনে করেন, তাহলে তিনি যে কাউকে অল্পদিনের মধ্যেই মুক্ত করে দিতে পারেন!
এইটা জানার পর, ঐ কয়েদী জেলখানার যা নিয়ম সেগুলি একদম ঠিকমতো পালন করতো, আর সুযোগ পেলেই জেলার ((গল্পটি গুরুমহারাজ অনেকবার বলেছিলেন। কোন কোন সময় গুরুমহারাজ ‘জেলারে’ র স্থলে ‘ম্যাজিস্ট্রেট’ কথাটি ব্যবহার করতেন!)- সাহেবের দোহাই দিতো (গুনগান করতো), তার নামে জয়ধ্বনি করতো _তার রুপ গুনের কথা সবাইকে বলতো ! আর এসব সেই কয়েদী আন্তরিকতার সঙ্গে করতো _কারণ জেলারের গুনগান করার সময় তার দুচোখ জলে ভরে উঠতো।
কয়েদীটির এ হেন আচরন বেশ কিছুদিন লক্ষ্য করার পর ওখানকার রক্ষীরা বুঝতে পারল যে ব্যাপারটা জেলার সাহেবকে জানানো প্রয়োজন!
ফলে তারা জেলার সাহেবকে ঐ কয়েদীর অদ্ভুত আচার আচরণের কথা জানালো। সব শুনে জেলার সাহেব ঐ কয়েদীকে বিশেষ নজরে রাখতে বললেন এবং সাথে সাথে এটাও বলে দিলেন যে __ওর যাতে কোন অসুবিধা না হয়, সে ব্যাপারে যেন নজর রাখা হয়!
এই ভাবেই বেশ কিছুদিন কেটে যাওয়ার পর দেখা গেল __ ঐ কয়েদীর আচরণের অনেকখানি পার্থক্য ঘটে গেছে! তার যে নিত্যনৈমিত্তিক কাজ সেগুলি আর ভালো লাগে না __শুধু জেলার সাহেবের দোহাই পাড়তে পাড়তেই তার দিন কেটে যায়। খাওয়া দাওয়ার ঠিক নাই, শোওয়া-ঘুমানোর প্রয়োজনবোধ নাই __সে এক নিদারুণ অবস্থা!!
জেলার সাহেবের কাছে খবর গেল (অবশ্য তিনি সবার অলক্ষে সবসময় সবার উপরে নজর রাখেন)। জেলার সাহেব হুকুম দিলেন _”দাও _ওকে মুক্ত করে দাও!”
রক্ষীরা জেলের ছোট দরজা খুলে তাকে ছেড়ে দিল আর বলে দিল _” যাও তুমি মুক্ত!”
ঐ কয়েদী কিন্তু ছাড়া পেয়েও পালাল না _গারদের বাইরে বেরিয়ে এসেও এক জায়গায় বসে বসে আরো জোরে জোরে জেলারের নামে দোহাই পারতে লাগল। সবসময় মুখে শুধু জেলারের গুনগান _” হে জেলার সাহেব! তুমি কত গুনবান ! কত দয়া তোমার! আমার মতো গুনহীনকেও তুমি নিজগুনে মুক্ত করেছ!! __ইত্যাদি নানাভাবে নানা কথায় জেলারের গুন গাইতে লাগল।
রক্ষীরা আবার খবর দিল জেলার সাহেবকে!
জেলার সাহেব সব শুনে হুকুম দিলেন _”ওয়াচ করো_অর্থাৎ নজর রাখো। আর দ্যাখোতো _ও কি চায়? কি পেলে সন্তুষ্ট হয় ও! ওকে সেটা দিয়ে দাও!
জেলারের হুকুমে রক্ষীরা তার কাছে গিয়ে কিছু ভালো ভালো খাবার-দাবার, দামী দামী পোষাক-আষাক দিয়ে জিজ্ঞাসা করল _”আর কি কি চাই তোমার! কি পেলে তুমি এখান থেকে যাবে বলো!!”
কয়েদী কাঁদতে কাঁদতে বলল _” মহাশয়! আমি সেই পরমদয়াল জেলার সাহেবের সাথে মিলতে চাই! যিনি এতো দয়াল_যাঁর নাম গুনগান করলে কয়েদখানা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, আমি সেই পরমদয়াল, করুনানিধানকে চাই”!
রক্ষীরা বলল_” তাকে এখানে কোথায় পাবে? তিনি থাকেন রাজধানী শহরে! এখানে মাঝে মাঝে visit – এ আসেন।তাঁর সাথে দেখা করতে হোলে যাও __শহরে গিয়ে তাঁর খোঁজ করো”।
রাজধানী শহরে জেলার সাহেব থাকেন!!! _শুনে খুব খুশি হোল কয়েদী! এদের সকলকে বিদায় জানিয়ে এবার কয়েদী চলল রাজধানী শহরের দিকে! মুখে জেলার সাহেবের গুনগান! অবশেষে একদিন সে পৌঁছে গেল জেলার সাহেব যেখানে থাকেন _সেই শহরে (সালোক্য)!
রাজধানী এলাকায় পৌঁছে গেল সে, দেখল_ সেখানকার জৌলুস, রাস্তাঘাটে আলোর রোশনাই, চারিদিকে চাকচিক্য, বড় বড় বাড়ি, কত দোকান পশরা! যে ব্যক্তি এত জাঁকজমক কখনো দেখেনি তার মাথা ঘুরে যাবার ই কথা! নানারকম দেখার জিনিস, ভোগের সামগ্রী, প্রলোভনের হাতছানি! কয়েদী কিন্তু এসবে ভোলার লোক নয়। সে সবই দেখছে কিন্তু কোন কিছুই ভালোভাবে দেখছে না! তার এক লক্ষ্য _জেলার সাহেবের বাড়ির ঠিকানা যোগাড় করে তাঁর সঙ্গে দেখা করা!
বহুজনকে জিজ্ঞাসা করে অবশেষে খুঁজে পেল সে জেলার সাহেবের বাড়ি! ‘ওই দেখা যায় জেলার সাহেবের বাড়ি!’ (সামীপ্য) …… [চলবে]