(এক যুবক ব্রহ্মচারী, সদগুরুর সন্ধানে নদীর ধার বরাবর ঘুরতে ঘুরতে একজন গৃহস্থের সাক্ষাৎ পায়। সেখানে আতিথ্যের আতিশয্য খুবই ছিল কিন্তু বিপদ ও ছিল……. !! খেতে বসে গন্ডুষের পর গৃহস্বামী ঐ ব্রহ্মচারী কে উপরের দিকে তাকাতে বলেছিলেন! তাকিয়ে কি দেখল…!! )
একটা প্রকাণ্ড ধারালো খাঁড়া সরু ফিনফিনে একটা সুতোয় বেঁধে এমনভাবে ঝোলানো আছে যে _ওটা ছিঁড়ে যে কোন মুহূর্তে পড়বে ওর ঘাড়ে! আর ঐ ধারালো খাঁড়া একবার ছিঁড়ে পড়লে ওর মাথা দু-ফাঁক হয়ে যাবে! লোকটি এটি দেখা মাত্রই লাফিয়ে অতি দ্রুত উঠে পালাতে চাইছিল। গৃহস্বামী ধরে আবার জোর করে বসালো, বলল__” দ্যাখো, তুমি ব্রাহ্মণ! একবার যখন গন্ডুষ করে খেতে বসে পড়েছ _তখন উঠে গেলে তো সারাদিন আর তোমার খাওয়াই হবে না। সারাদিন উপবাসী থাকতে হবে! এর আগেও কয়েকদিন তোমার ভালো খাবার দাবার জোটে নি _আজকেও যদি না খাও তাহলে তো মারা পড়ে যাবে। তার চেয়ে খুব তাড়াতাড়ি করে খেয়ে নাও_ প্রয়োজনে ঐদিকে তাকিয়ে তাকিয়ে খাও! তাছাড়া তুমি আমাদের অতিথি _যদি খাবার ফেলে উঠে যাও, তাহলে গৃহস্থের অকল্যান হবে! তাই বাবা! তাড়াতাড়ি করে খেয়ে নাও, কি জানি – কখন খাঁড়া টা ছিঁড়ে পড়ে!”
লোকটি আর কি করে! কোনক্রমে খাবারের থালায় হাত দেয় আর মুখে পোড়ে, চোখ তো সবসময়ের জন্য রয়েছে উপরপানে খাঁড়ার দিকে! লোকটির খাওয়া শুরু হোতেই গৃহস্বামী ভদ্রলোক করল কি __খাঁড়াটিকে অল্প অল্প দোলাতে লাগল, বোধহয় যাতে আরও তাড়াতাড়ি খাঁড়াটি পড়ে যায়! এটা দেখেই ঐ লোকটি খাওয়ার speed আরও বাড়িয়ে কোনমতে খাওয়া শেষ করল! আর শেষ হতেই স্প্রিং-এর মতো ছিটকে সড়ে এসে হাঁফ ছেড়ে বাঁচল!
তারপর বলল_”আপনি তো আচ্ছা লোক মশাই! এমনি করে বিপদের মুখে রেখে _কারুকে কেউ খেতে দেয়? যদি খাঁড়াটা ছিঁড়ে পরতো তাহলে কি সর্বনাশ হতো বলুন তো!!”
গৃহস্বামী ভদ্রলোক খুব শান্তকন্ঠে উত্তর দিলেন _”আরে বাবা _কিছু হয়নি তো!! তাহলে আর কি চিন্তা! এখন বলো _কেমন খেলে? শুক্তোটা কেমন হয়েছিল? আর শাক, ঝোল, মাছের ঝাল টা? আর চাটনি? সবগুলোর স্বাদ কেমন ছিল?”
লোকটি বিরক্ত হয়ে বলে উঠল _” থামুন তো মশাই! ঐসব ঝাল, ঝোল, অম্বলের স্বাদ নেবার সময় কোথায় পেলাম? আমার সমস্ত attention তো ছিল ঐ খাঁড়ার পানে_খাদ্যের দিকে কোন attention ই ছিল না, তাই কোন্ খাদ্যের কেমন taste তা জানবো কি করে? কোনরকমে খাবারটা শেষ করেছি এইমাত্র!”
গৃহস্বামী ভদ্রলোক ঐ ব্যক্তিকে হাতমুখ ধুয়ে বিশ্রামকক্ষে আসতে বললেন। লোকটি ঐ ঘরে এলে ভদ্রলোক তখন ওকে বলতে শুরু করলেন _” তাহলে কি বুঝলে বৎস! শুধুমাত্র খাঁড়ার দিকে তোমার সমস্ত মনোযোগ থাকার জন্য তুমি অত গুলো ভালো ভালো খাবারের taste বুঝতে পারলে না! তাহলে সদা সর্বদা যাঁর সমস্ত মনোযোগ ঈশ্বরে নিবদ্ধ সে কি করে এই সংসারের ভোগ্য বস্তুর taste অনুভব করে! তুমি যখন খেতে বসেছিলে তোমার থালার চারিদিকে কত ভোগ্যবস্তু ছিল _সেগুলি কে তুমি ছুঁয়েছ, খেয়েছও কিন্তু কোন আলাদা আলাদা taste পাও নি! তেমনি যার মন সবসময় সেই পরমব্রহ্মে লীন হয়ে থাকে _সে এই ভোগের জগতের মধ্যে থেকেও নিরাসক্ত বা অনাসক্ত হয়ে থাকেন! আর এইরূপ ব্যক্তিরাই হতে পারেন সদগুরু!”
ঐ ব্যক্তি তখন তার নিজের ভূল ধারনার কথা বুঝতে পারল এবং গৃহস্বামীর পদপ্রান্তে লুটিয়ে পড়ল।গুরু শিষ্যের মিলন হোল!
গল্পটি এখানেই শেষ করে -এই প্রসঙ্গে গুরুমহারাজ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণদেবের বলা দ্বাপর যুগের আর একটি কাহিনীর অবতারণা করলেন ।উনি বললেন –একদিন রাধারানী তার সখীদের নিয়ে মথুরার হাটে যাচ্ছিলেন পশরা সাজিয়ে -সেগুলি বিক্রি করার জন্য ।তখনকার দিনে মথুরা আর বৃন্দাবনের মধ্যে ছিল যমুনা নদী(বর্তমানে কালের খেয়ালে মথুরা -বৃন্দাবন যমুনার একই পাড়ে অবস্থিত)।
যাই হোক, সেদিন বৃন্দাবনের গোপিনীরা যমুনার কূলে পৌঁছে দেখল যে যমুনা কানায় কানায় পূর্ণ অথচ ঘাটে কোন নৌকা নাই ।তাহলে তাঁরা পার হবেন কি করে! সকলে মিলে খুবই চিন্তা করছেন এমন সময়ে তারা দেখলেন ব্যাসদেব (মহামুনি বেদব্যাস )সেখান দিয়ে যাচ্ছেন ।তাঁকে দেখতে পেয়েই রাধারানী ছুটে তাঁর কাছে এসে বললেন -“হে মহামুনি! আমি জানি, আপনি মহাযোগী,সমস্ত যোগবিভূতি আপনার করায়ত্ত! ঐ যোগবিভূতির দ্বারা আপনি আমাদের এই নদী পার করার ব্যবস্থা করে দিন! নাহলে আমরা এতগুলি অসহায় নারী বড়ই বিপদে পড়ে যাব।যাহোক করে আপনাকে -আমাদের ওপারে যাবার একটা ব্যবস্থা করে দিতেই হবে ।”
ব্যাসদেব পড়লেন মহাবিপদে।তিনি জানেন “স্ত্রী হট্”-কি জিনিস! এতগুলি নারী যখন বায়না ধরেছে তখন তাকে দিয়ে কার্যোদ্ধার না করিয়ে ছাড়বে না! এদিকে আবার যোগবিভূতি প্রয়োগ করাও যোগী র কর্তব্য নয়! কি করা যায়! ভগবানের প্রেয়সী, প্রিয় সঙ্গিনী রাধারানীর মনোতুষ্টির জন্য এটুকু না কবলেও নয়!
অবশেষে তিনি রাধারমনকে স্মরণ করে গোপিনীদের উদ্দেশ্য করে বললেন -“তোমাদের পশরায় যা খাদ্য দ্রব্যাদি রয়েছে -সেখান থেকে কিছু কিছু খাবার আমাকে খেতে দাও ।আমি ক্ষুধার্ত! আগে ক্ষুন্নিবৃত্তি করে নিই -তারপর তোমাদের প্রার্থনা পূরণ করব।”
গোপিনীরা খুশি হয়ে ওনাকে ননী,মাখন,ছানা ইত্যাদি খেতে দিল।উনি তৃপ্তি করে সেই সমস্ত খাবার খেয়ে একটা তৃপ্তির ঢেকুর তুলে, যমুনার উদ্দেশ্যে জোড়হাতে বলে উঠলেন -“হে যমুনা! আমি ব্যাসদেব, আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি -যদি আমি কিছুই না খেয়ে থাকি, তাহলে তুমি দুফাঁক হয়ে রাস্তা করে দাও -যাতেআমরা সকলে ওপারে যেতে পারি ।”
দেখতে দেখতে যমুনার জল দুধারে সরে গিয়ে রাস্তা করে দিল এবং রাধারানী সখীদের নিয়ে তাড়াতাড়ি অপরপারে পৌঁছে গেল।ব্যাসদেবও গেলেন। এবার ভালোয় ভালোয় ওপারে পৌঁছে রাধারানী বৃদ্ধ ব্যাসকে বললেন -“আপনি তো সাংঘাতিক মানুষ মশাই! আমাদের সকলের সামনে আপনি দিব্যি গপগপ করে ছানা, ননী, মাখন খেলেন –যমুনার জলেই হাত-মুখ ও ধুলেন আবার যমুনাকেই বললেন ‘যদি আমি কিছু না খেয়ে থাকি…..!ব্যাপারটা কি মশাই?”
ব্যাসদেব হেসে উত্তর দিলেন -“আমি তো সত্যি কথাই বলেছি! তোমরা যখন সবাই মিলে আমাকে যমুনা পার করার মতো কঠিন কাজের দায়িত্ব দিলে -তখন আমি আর কি করি!বিপদে পড়ে বিপদভঞ্জন মধুসূদন কে স্মরণ করতে লাগলাম আর যেহেতু তিনি তোমাদের হাতের ননী-মাখন খেতে ভালবাসেন তাই ওগুলি নিবেদন করে তাঁকে প্রসন্ন করার চেষ্টা করলাম।”গোপিনীরা হৈ হৈ করে বলে উঠলো -“কিন্তু ওগুলো তো আপনি নিজে খেলেন! পরানবঁধু কে কোথায় দিলেন!!”
ব্যাসদেব শান্তকন্ঠে উত্তর দিলেন -“তিনি(ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ) তো সদাসর্বদা অন্তরে অন্তর্যামী রূপে বিরাজমান -বাইরে নিবেদনের কি প্রয়োজন? ” [ক্রমশঃ]
একটা প্রকাণ্ড ধারালো খাঁড়া সরু ফিনফিনে একটা সুতোয় বেঁধে এমনভাবে ঝোলানো আছে যে _ওটা ছিঁড়ে যে কোন মুহূর্তে পড়বে ওর ঘাড়ে! আর ঐ ধারালো খাঁড়া একবার ছিঁড়ে পড়লে ওর মাথা দু-ফাঁক হয়ে যাবে! লোকটি এটি দেখা মাত্রই লাফিয়ে অতি দ্রুত উঠে পালাতে চাইছিল। গৃহস্বামী ধরে আবার জোর করে বসালো, বলল__” দ্যাখো, তুমি ব্রাহ্মণ! একবার যখন গন্ডুষ করে খেতে বসে পড়েছ _তখন উঠে গেলে তো সারাদিন আর তোমার খাওয়াই হবে না। সারাদিন উপবাসী থাকতে হবে! এর আগেও কয়েকদিন তোমার ভালো খাবার দাবার জোটে নি _আজকেও যদি না খাও তাহলে তো মারা পড়ে যাবে। তার চেয়ে খুব তাড়াতাড়ি করে খেয়ে নাও_ প্রয়োজনে ঐদিকে তাকিয়ে তাকিয়ে খাও! তাছাড়া তুমি আমাদের অতিথি _যদি খাবার ফেলে উঠে যাও, তাহলে গৃহস্থের অকল্যান হবে! তাই বাবা! তাড়াতাড়ি করে খেয়ে নাও, কি জানি – কখন খাঁড়া টা ছিঁড়ে পড়ে!”
লোকটি আর কি করে! কোনক্রমে খাবারের থালায় হাত দেয় আর মুখে পোড়ে, চোখ তো সবসময়ের জন্য রয়েছে উপরপানে খাঁড়ার দিকে! লোকটির খাওয়া শুরু হোতেই গৃহস্বামী ভদ্রলোক করল কি __খাঁড়াটিকে অল্প অল্প দোলাতে লাগল, বোধহয় যাতে আরও তাড়াতাড়ি খাঁড়াটি পড়ে যায়! এটা দেখেই ঐ লোকটি খাওয়ার speed আরও বাড়িয়ে কোনমতে খাওয়া শেষ করল! আর শেষ হতেই স্প্রিং-এর মতো ছিটকে সড়ে এসে হাঁফ ছেড়ে বাঁচল!
তারপর বলল_”আপনি তো আচ্ছা লোক মশাই! এমনি করে বিপদের মুখে রেখে _কারুকে কেউ খেতে দেয়? যদি খাঁড়াটা ছিঁড়ে পরতো তাহলে কি সর্বনাশ হতো বলুন তো!!”
গৃহস্বামী ভদ্রলোক খুব শান্তকন্ঠে উত্তর দিলেন _”আরে বাবা _কিছু হয়নি তো!! তাহলে আর কি চিন্তা! এখন বলো _কেমন খেলে? শুক্তোটা কেমন হয়েছিল? আর শাক, ঝোল, মাছের ঝাল টা? আর চাটনি? সবগুলোর স্বাদ কেমন ছিল?”
লোকটি বিরক্ত হয়ে বলে উঠল _” থামুন তো মশাই! ঐসব ঝাল, ঝোল, অম্বলের স্বাদ নেবার সময় কোথায় পেলাম? আমার সমস্ত attention তো ছিল ঐ খাঁড়ার পানে_খাদ্যের দিকে কোন attention ই ছিল না, তাই কোন্ খাদ্যের কেমন taste তা জানবো কি করে? কোনরকমে খাবারটা শেষ করেছি এইমাত্র!”
গৃহস্বামী ভদ্রলোক ঐ ব্যক্তিকে হাতমুখ ধুয়ে বিশ্রামকক্ষে আসতে বললেন। লোকটি ঐ ঘরে এলে ভদ্রলোক তখন ওকে বলতে শুরু করলেন _” তাহলে কি বুঝলে বৎস! শুধুমাত্র খাঁড়ার দিকে তোমার সমস্ত মনোযোগ থাকার জন্য তুমি অত গুলো ভালো ভালো খাবারের taste বুঝতে পারলে না! তাহলে সদা সর্বদা যাঁর সমস্ত মনোযোগ ঈশ্বরে নিবদ্ধ সে কি করে এই সংসারের ভোগ্য বস্তুর taste অনুভব করে! তুমি যখন খেতে বসেছিলে তোমার থালার চারিদিকে কত ভোগ্যবস্তু ছিল _সেগুলি কে তুমি ছুঁয়েছ, খেয়েছও কিন্তু কোন আলাদা আলাদা taste পাও নি! তেমনি যার মন সবসময় সেই পরমব্রহ্মে লীন হয়ে থাকে _সে এই ভোগের জগতের মধ্যে থেকেও নিরাসক্ত বা অনাসক্ত হয়ে থাকেন! আর এইরূপ ব্যক্তিরাই হতে পারেন সদগুরু!”
ঐ ব্যক্তি তখন তার নিজের ভূল ধারনার কথা বুঝতে পারল এবং গৃহস্বামীর পদপ্রান্তে লুটিয়ে পড়ল।গুরু শিষ্যের মিলন হোল!
গল্পটি এখানেই শেষ করে -এই প্রসঙ্গে গুরুমহারাজ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণদেবের বলা দ্বাপর যুগের আর একটি কাহিনীর অবতারণা করলেন ।উনি বললেন –একদিন রাধারানী তার সখীদের নিয়ে মথুরার হাটে যাচ্ছিলেন পশরা সাজিয়ে -সেগুলি বিক্রি করার জন্য ।তখনকার দিনে মথুরা আর বৃন্দাবনের মধ্যে ছিল যমুনা নদী(বর্তমানে কালের খেয়ালে মথুরা -বৃন্দাবন যমুনার একই পাড়ে অবস্থিত)।
যাই হোক, সেদিন বৃন্দাবনের গোপিনীরা যমুনার কূলে পৌঁছে দেখল যে যমুনা কানায় কানায় পূর্ণ অথচ ঘাটে কোন নৌকা নাই ।তাহলে তাঁরা পার হবেন কি করে! সকলে মিলে খুবই চিন্তা করছেন এমন সময়ে তারা দেখলেন ব্যাসদেব (মহামুনি বেদব্যাস )সেখান দিয়ে যাচ্ছেন ।তাঁকে দেখতে পেয়েই রাধারানী ছুটে তাঁর কাছে এসে বললেন -“হে মহামুনি! আমি জানি, আপনি মহাযোগী,সমস্ত যোগবিভূতি আপনার করায়ত্ত! ঐ যোগবিভূতির দ্বারা আপনি আমাদের এই নদী পার করার ব্যবস্থা করে দিন! নাহলে আমরা এতগুলি অসহায় নারী বড়ই বিপদে পড়ে যাব।যাহোক করে আপনাকে -আমাদের ওপারে যাবার একটা ব্যবস্থা করে দিতেই হবে ।”
ব্যাসদেব পড়লেন মহাবিপদে।তিনি জানেন “স্ত্রী হট্”-কি জিনিস! এতগুলি নারী যখন বায়না ধরেছে তখন তাকে দিয়ে কার্যোদ্ধার না করিয়ে ছাড়বে না! এদিকে আবার যোগবিভূতি প্রয়োগ করাও যোগী র কর্তব্য নয়! কি করা যায়! ভগবানের প্রেয়সী, প্রিয় সঙ্গিনী রাধারানীর মনোতুষ্টির জন্য এটুকু না কবলেও নয়!
অবশেষে তিনি রাধারমনকে স্মরণ করে গোপিনীদের উদ্দেশ্য করে বললেন -“তোমাদের পশরায় যা খাদ্য দ্রব্যাদি রয়েছে -সেখান থেকে কিছু কিছু খাবার আমাকে খেতে দাও ।আমি ক্ষুধার্ত! আগে ক্ষুন্নিবৃত্তি করে নিই -তারপর তোমাদের প্রার্থনা পূরণ করব।”
গোপিনীরা খুশি হয়ে ওনাকে ননী,মাখন,ছানা ইত্যাদি খেতে দিল।উনি তৃপ্তি করে সেই সমস্ত খাবার খেয়ে একটা তৃপ্তির ঢেকুর তুলে, যমুনার উদ্দেশ্যে জোড়হাতে বলে উঠলেন -“হে যমুনা! আমি ব্যাসদেব, আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি -যদি আমি কিছুই না খেয়ে থাকি, তাহলে তুমি দুফাঁক হয়ে রাস্তা করে দাও -যাতেআমরা সকলে ওপারে যেতে পারি ।”
দেখতে দেখতে যমুনার জল দুধারে সরে গিয়ে রাস্তা করে দিল এবং রাধারানী সখীদের নিয়ে তাড়াতাড়ি অপরপারে পৌঁছে গেল।ব্যাসদেবও গেলেন। এবার ভালোয় ভালোয় ওপারে পৌঁছে রাধারানী বৃদ্ধ ব্যাসকে বললেন -“আপনি তো সাংঘাতিক মানুষ মশাই! আমাদের সকলের সামনে আপনি দিব্যি গপগপ করে ছানা, ননী, মাখন খেলেন –যমুনার জলেই হাত-মুখ ও ধুলেন আবার যমুনাকেই বললেন ‘যদি আমি কিছু না খেয়ে থাকি…..!ব্যাপারটা কি মশাই?”
ব্যাসদেব হেসে উত্তর দিলেন -“আমি তো সত্যি কথাই বলেছি! তোমরা যখন সবাই মিলে আমাকে যমুনা পার করার মতো কঠিন কাজের দায়িত্ব দিলে -তখন আমি আর কি করি!বিপদে পড়ে বিপদভঞ্জন মধুসূদন কে স্মরণ করতে লাগলাম আর যেহেতু তিনি তোমাদের হাতের ননী-মাখন খেতে ভালবাসেন তাই ওগুলি নিবেদন করে তাঁকে প্রসন্ন করার চেষ্টা করলাম।”গোপিনীরা হৈ হৈ করে বলে উঠলো -“কিন্তু ওগুলো তো আপনি নিজে খেলেন! পরানবঁধু কে কোথায় দিলেন!!”
ব্যাসদেব শান্তকন্ঠে উত্তর দিলেন -“তিনি(ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ) তো সদাসর্বদা অন্তরে অন্তর্যামী রূপে বিরাজমান -বাইরে নিবেদনের কি প্রয়োজন? ” [ক্রমশঃ]