[খড়্গপুর ষ্টেশনে]
=======================
একদিন সিটিং-এ গুরুমহারাজ বেশ খোসমেজাজে ছিলেন। তাই সেদিন তিনি _’তাঁর সন্ন্যাস নেবার পর বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করাকালীন’ কত ঘটনা-অঘটন ঘটেছিল, সেই সব আলোচনা করছিলেন।তার মধ্যে একটা এখানে উপস্থাপন করা হোক।
একবার গুরুমহারাজ ট্রেনে করে কোন স্থানে গেছিলেন। বনগ্রাম পরমানন্দ মিশন তখন প্রতিষ্ঠা হয়ে গেছে _ গুরুমহারাজের পরনে গেরূয়া কাপড় পড়া ছিল। ফলে যে কেউ দেখে বুঝতে পারছিল যে উনি সন্ন্যাসী! ট্রেন থেকে খড়্গপুর ষ্টেশনে নেমে উনি পরবর্তী কোন লাইনে ট্রেন ধরবেন বলে বসে ছিলেন, এরপর কি ঘটেছিল সেটা গুরুমহারাজের কথাতেই শোনা যাক্।
“একবার ঘুরতে ঘুরতে খড়্গপুর রেলষ্টেশনে বসে আছি _ গেরূয়া কাপড় পড়ে রাস্তাঘাটে ঘোরাঘুরি করার অনেক সমস্যা! হাজার মানুষের, লক্ষ জিজ্ঞাসার উত্তর দিতে হয়। ব্যঙ্গ-বিদ্রুপও সহ্য করতে হয়। সাধু-সন্তদের এরূপ অভিজ্ঞতা প্রায় সকলেরই রয়েছে। আসলে কি হয় বলোতো__মানুষ সমাজ, সংসার নিয়ে একটা নির্দিষ্ট বাঁধাধরা নিয়মে চলতে ভালোবাসে। প্রচলিত রীতির বাইরে কেউ গেলে বা যেতে চাইলে তাকে মেনে নিতে পারে না! reaction করে বসে!
আমি এই ব্যাপারগুলো বুঝি _কিন্তু আত্মরক্ষার জন্য ঐ ধরণের reaction – এর proper action করতে হয়! আমারই জীবনে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনা তোমাদের বলছি শোন! ঘটনাটা শুনে তোমরা হয়তো ভাববে আমি action-এর reaction করছি __কিন্তু এগুলো শুধুমাত্র আত্মরক্ষার কৌশল বা proper action ! যাই হোক, ঘটনাটি শোন__
খড়্গপুর ষ্টেশনের প্লাটফর্ম অনেক বড় _আমার ট্রেন আসার দেরি দেখে একটা ফাঁকা বেন্চে গিয়ে বসলাম এবং কৌতুহলী মানুষের অহেতুক বিরক্ত করা থেকে মুক্ত হতে একটা খবরের কাগজ কিনে মুখ ঢাকা দিয়ে পড়তে শুরু করলাম। কাগজ পড়া যত না উদ্দেশ্য _নিজেকে আত্মরক্ষা করা তার চেয়েও বড় উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু আমার এই সমস্ত প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়ে গেল _আর হবে না কেন, অপরকে disturb করার চিরাচরিত culture যে বাঙালির অস্থিতে মজ্জায়!!
সুতরাং বেশিক্ষণ সুখে শান্তিতে থাকতে পারলাম না। আমি খবরের কাগজের আড়ালে নিজের মুখ ঢাকা অবস্থাতেও বেশ বুঝতে পারছিলাম যে একজন কৌতুহলী ব্যক্তি আমাকে অনেকক্ষণ ধরে observe করছে। আমার পাশাপাশি স্থানে অন্য লোক বসে ছিল বলে _ঐ লোকটি আমার কাছে আসতে পারছিল না। তবে সুযোগ পেলে ও যে আমাকে বিরক্ত করবেই _এটা আমি নিশ্চিত ছিলাম!
হলও তাই! আমার ঠিক পাশের লোকটি হটাৎ করে উঠে গেল _আর সামনের ঐ ভদ্রলোক সটাক্ করে এসে আমার পাশটিতে বসে পড়ল! সাথে সাথে আমার sixth sense বলে উঠল “পরমানন্দ! এবার ready হও!” তবু আমি খবরের কাগজটা মুখের একেবারে সামনে ধরে _আমি যে ‘কাগজ পড়ায় খুবই মগ্ন’ __তা বোঝাতে চাইছিলাম! কিন্তু ‘ভবী ভোলার নয়’! সেই লোকটি একবার বাঁদিকে একবার ডানদিকে ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আমার মুখটা দেখার প্রচেষ্টা করতে লাগল। সে যে আমার কি অসোয়াস্তিকর অবস্থা তা তোমাদের কি বলব! শেষমেশ লোকটা আর তার নিজের কৌতুহল চাপতে না পেরে খবরের কাগজের ফাঁক দিয়ে তার মাথাটা ঢুকিয়ে ই দিল!! আমি ঘাড় না ঘুরিয়ে খবরের কাগজে চোখ রেখেই জিজ্ঞাসা করলাম _”কি ব্যাপার! কিছু জানতে চাইছেন?”
লোকটি বলল _” হ্যাঁ – হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন! তা সাধুবাবা! আপনি দেখতে-শুনতেও বেশ _ইয়ং বয়েস, এই বয়সেই সাধু হয়েছেন? তা বেশ বেশ! তা বাবা আপনার শুভনাম টি কি?”
__স্বামী পরমানন্দ ।
~~আপনি কোথায় থাকেন?
__বনগ্রাম, বর্ধমান।
~~ওখানে আপনি কতদিন আছেন?
__1978 সাল থেকে।
~~ওখানে আর কে কে আছে?
___কিছু সন্ন্যাসী- সন্ন্যাসীনি, ব্রহ্মচারী – ব্রহ্মচারীনী, কিছু অনাথ ছেলে।
এইভাবে লোকটি একটার পর একটা জিজ্ঞাসা করেই যেতে লাগলো আর আমি সংক্ষিপ্ত উত্তর দিতে লাগলাম_যাতে ওর জিজ্ঞাসা করার প্রবৃত্তি কমে যায়।
কিন্তু জানো__কিছু লোক আছে যারা অপরকে উৎপাত করেই আনন্দ পায়! আমি বেশ বুঝতে পারছিলাম যে, এই লোকটিও ঐ দলেরই– তাই আমি বেশ ভালোই বুঝতে পারছিলাম যে, আমাকে এমন কিছু করতে হবে যাতে লোকটির উৎপাত করা বন্ধ হয়।
আমি খবরের কাগজ গুটিয়ে ফেলতে শুরু করলাম। লোকটি কিন্তু প্রশ্নবান ছুঁড়েই যাচ্ছে_”তাহলে মশায়! আপনি এই অল্প বয়সে এই লাইনে এলেন কেন?”
__” সাধু-সন্ত হওয়া কোন ‘লাইন’ নয়।”
~~কত বছর হল – সাধু হয়েছেন?
__সাধু হয়েই আছি।
ততক্ষণে আমার কাগজ ভাঁজ করা হয়ে গেছে। সেটাকে ব্যাগে পুরে _এবার আমি নিজেই ঘুরে ওর মুখোমুখি হলাম এবং চোখে চোখ রেখে ওকেই জিজ্ঞাসা করলাম_”এইবার বলুন তো কি কি জানতে চান?”
লোকটি এবার একটু ঘাবড়ে গেল তবু জিজ্ঞাসা করতে ছাড়ল না! বলল,_”আচ্ছা মশাই! ‘সাধু’-কথার অর্থ কি?”
আমি দেখলাম আর দেরি না করে এখনই ওকে চুপ করিয়ে দিতে হবে! তাই মুখটা ওর মুখের কাছে নিয়ে গিয়ে, ওর চোখে আমার চোখটা বড় বড় করে পাকিয়ে উত্তর দিলাম _” যে অপরের ব্যাপারে জানতে না চেয়ে শুধু নিজেকে জানে বা জানার চেষ্টা করে _সে সাধু!” এরপরেই ঐ লোকটার নাকের সামনে আঙুল উঁচিয়ে বললাম _” আর যে নিজের ‘আপন ঘরের’ খবর না রেখে শুধু অপরের খোঁজ নিয়ে বেড়ায় সে ‘চদু’!!”_আমার কথা শেষ হলেও ওর নাকের সামনে থেকে আঙুল তো সরালামই ন_বরং কটমট করে ওর দিকে চেয়েই রইলাম। ঘটনার আকস্মিকতায় লোকটা কিছুক্ষনের জন্য ঘাবড়ে গেল _তারপর যখন বুঝতে পারল যে কথাগুলো ওকেই বলা হচ্ছে __তখন হটাৎ করে বেন্চ থেকে উঠে পড়ে লোকটা দ্রুতপায়ে অনেকটা দূরে চলে গেল। সেখান থেকে একবার পিছন ফিরে আমার দিকে চেয়ে দেখল। আমি তখনও ওর দিকে সেই একইভাবে তাকিয়ে রয়েছি দেখে লোকটা প্লাটফর্মের দুরতম প্রান্তে, একদম আমার দৃষ্টির অন্তরালে চলে গেল _আর এদিকে এলই না!”
(গুরুজীর মুখে _’চদু’ – কথাটি শুনে ওখানে অনেকেই হেসে ফেলেছিল। এইটা দেখে গুরুমহারাজ ব্যাপারটা বুঝে বললেন _” তোরা ‘চদু’ কথাটা অশ্লীল ভাবছিস নাকি? এটা কোন গালাগালি নয় _আমরা ছোটবেলায় দেখতাম কোন ব্যান্ডপার্টির দল এলে, সেই দলে একজন মোটাসোটা বা হাঁদাক্যাবলা লোক থাকত, যে কাঁধে করে সবচাইতে বড় জয়ঢাক বা বড় ড্রাম(big-drum)-টা বইত, আর সেটা বাজাতো অন্যজন। ঐ লোকটি ব্যান্ডের দলের সবচাইতে কম মাইনে পেত_কারন বাজনার কোন তাল জ্ঞান ওর জানা নাই। ওর কাজ শুধুমাত্র বড় বড় জয়ঢাক পিঠে বেঁধে বয়ে বেড়ানো! একেই বলা হোত _’জয়ঢাকের চদু’!) [ক্রমশঃ]
=======================
একদিন সিটিং-এ গুরুমহারাজ বেশ খোসমেজাজে ছিলেন। তাই সেদিন তিনি _’তাঁর সন্ন্যাস নেবার পর বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করাকালীন’ কত ঘটনা-অঘটন ঘটেছিল, সেই সব আলোচনা করছিলেন।তার মধ্যে একটা এখানে উপস্থাপন করা হোক।
একবার গুরুমহারাজ ট্রেনে করে কোন স্থানে গেছিলেন। বনগ্রাম পরমানন্দ মিশন তখন প্রতিষ্ঠা হয়ে গেছে _ গুরুমহারাজের পরনে গেরূয়া কাপড় পড়া ছিল। ফলে যে কেউ দেখে বুঝতে পারছিল যে উনি সন্ন্যাসী! ট্রেন থেকে খড়্গপুর ষ্টেশনে নেমে উনি পরবর্তী কোন লাইনে ট্রেন ধরবেন বলে বসে ছিলেন, এরপর কি ঘটেছিল সেটা গুরুমহারাজের কথাতেই শোনা যাক্।
“একবার ঘুরতে ঘুরতে খড়্গপুর রেলষ্টেশনে বসে আছি _ গেরূয়া কাপড় পড়ে রাস্তাঘাটে ঘোরাঘুরি করার অনেক সমস্যা! হাজার মানুষের, লক্ষ জিজ্ঞাসার উত্তর দিতে হয়। ব্যঙ্গ-বিদ্রুপও সহ্য করতে হয়। সাধু-সন্তদের এরূপ অভিজ্ঞতা প্রায় সকলেরই রয়েছে। আসলে কি হয় বলোতো__মানুষ সমাজ, সংসার নিয়ে একটা নির্দিষ্ট বাঁধাধরা নিয়মে চলতে ভালোবাসে। প্রচলিত রীতির বাইরে কেউ গেলে বা যেতে চাইলে তাকে মেনে নিতে পারে না! reaction করে বসে!
আমি এই ব্যাপারগুলো বুঝি _কিন্তু আত্মরক্ষার জন্য ঐ ধরণের reaction – এর proper action করতে হয়! আমারই জীবনে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনা তোমাদের বলছি শোন! ঘটনাটা শুনে তোমরা হয়তো ভাববে আমি action-এর reaction করছি __কিন্তু এগুলো শুধুমাত্র আত্মরক্ষার কৌশল বা proper action ! যাই হোক, ঘটনাটি শোন__
খড়্গপুর ষ্টেশনের প্লাটফর্ম অনেক বড় _আমার ট্রেন আসার দেরি দেখে একটা ফাঁকা বেন্চে গিয়ে বসলাম এবং কৌতুহলী মানুষের অহেতুক বিরক্ত করা থেকে মুক্ত হতে একটা খবরের কাগজ কিনে মুখ ঢাকা দিয়ে পড়তে শুরু করলাম। কাগজ পড়া যত না উদ্দেশ্য _নিজেকে আত্মরক্ষা করা তার চেয়েও বড় উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু আমার এই সমস্ত প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়ে গেল _আর হবে না কেন, অপরকে disturb করার চিরাচরিত culture যে বাঙালির অস্থিতে মজ্জায়!!
সুতরাং বেশিক্ষণ সুখে শান্তিতে থাকতে পারলাম না। আমি খবরের কাগজের আড়ালে নিজের মুখ ঢাকা অবস্থাতেও বেশ বুঝতে পারছিলাম যে একজন কৌতুহলী ব্যক্তি আমাকে অনেকক্ষণ ধরে observe করছে। আমার পাশাপাশি স্থানে অন্য লোক বসে ছিল বলে _ঐ লোকটি আমার কাছে আসতে পারছিল না। তবে সুযোগ পেলে ও যে আমাকে বিরক্ত করবেই _এটা আমি নিশ্চিত ছিলাম!
হলও তাই! আমার ঠিক পাশের লোকটি হটাৎ করে উঠে গেল _আর সামনের ঐ ভদ্রলোক সটাক্ করে এসে আমার পাশটিতে বসে পড়ল! সাথে সাথে আমার sixth sense বলে উঠল “পরমানন্দ! এবার ready হও!” তবু আমি খবরের কাগজটা মুখের একেবারে সামনে ধরে _আমি যে ‘কাগজ পড়ায় খুবই মগ্ন’ __তা বোঝাতে চাইছিলাম! কিন্তু ‘ভবী ভোলার নয়’! সেই লোকটি একবার বাঁদিকে একবার ডানদিকে ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আমার মুখটা দেখার প্রচেষ্টা করতে লাগল। সে যে আমার কি অসোয়াস্তিকর অবস্থা তা তোমাদের কি বলব! শেষমেশ লোকটা আর তার নিজের কৌতুহল চাপতে না পেরে খবরের কাগজের ফাঁক দিয়ে তার মাথাটা ঢুকিয়ে ই দিল!! আমি ঘাড় না ঘুরিয়ে খবরের কাগজে চোখ রেখেই জিজ্ঞাসা করলাম _”কি ব্যাপার! কিছু জানতে চাইছেন?”
লোকটি বলল _” হ্যাঁ – হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন! তা সাধুবাবা! আপনি দেখতে-শুনতেও বেশ _ইয়ং বয়েস, এই বয়সেই সাধু হয়েছেন? তা বেশ বেশ! তা বাবা আপনার শুভনাম টি কি?”
__স্বামী পরমানন্দ ।
~~আপনি কোথায় থাকেন?
__বনগ্রাম, বর্ধমান।
~~ওখানে আপনি কতদিন আছেন?
__1978 সাল থেকে।
~~ওখানে আর কে কে আছে?
___কিছু সন্ন্যাসী- সন্ন্যাসীনি, ব্রহ্মচারী – ব্রহ্মচারীনী, কিছু অনাথ ছেলে।
এইভাবে লোকটি একটার পর একটা জিজ্ঞাসা করেই যেতে লাগলো আর আমি সংক্ষিপ্ত উত্তর দিতে লাগলাম_যাতে ওর জিজ্ঞাসা করার প্রবৃত্তি কমে যায়।
কিন্তু জানো__কিছু লোক আছে যারা অপরকে উৎপাত করেই আনন্দ পায়! আমি বেশ বুঝতে পারছিলাম যে, এই লোকটিও ঐ দলেরই– তাই আমি বেশ ভালোই বুঝতে পারছিলাম যে, আমাকে এমন কিছু করতে হবে যাতে লোকটির উৎপাত করা বন্ধ হয়।
আমি খবরের কাগজ গুটিয়ে ফেলতে শুরু করলাম। লোকটি কিন্তু প্রশ্নবান ছুঁড়েই যাচ্ছে_”তাহলে মশায়! আপনি এই অল্প বয়সে এই লাইনে এলেন কেন?”
__” সাধু-সন্ত হওয়া কোন ‘লাইন’ নয়।”
~~কত বছর হল – সাধু হয়েছেন?
__সাধু হয়েই আছি।
ততক্ষণে আমার কাগজ ভাঁজ করা হয়ে গেছে। সেটাকে ব্যাগে পুরে _এবার আমি নিজেই ঘুরে ওর মুখোমুখি হলাম এবং চোখে চোখ রেখে ওকেই জিজ্ঞাসা করলাম_”এইবার বলুন তো কি কি জানতে চান?”
লোকটি এবার একটু ঘাবড়ে গেল তবু জিজ্ঞাসা করতে ছাড়ল না! বলল,_”আচ্ছা মশাই! ‘সাধু’-কথার অর্থ কি?”
আমি দেখলাম আর দেরি না করে এখনই ওকে চুপ করিয়ে দিতে হবে! তাই মুখটা ওর মুখের কাছে নিয়ে গিয়ে, ওর চোখে আমার চোখটা বড় বড় করে পাকিয়ে উত্তর দিলাম _” যে অপরের ব্যাপারে জানতে না চেয়ে শুধু নিজেকে জানে বা জানার চেষ্টা করে _সে সাধু!” এরপরেই ঐ লোকটার নাকের সামনে আঙুল উঁচিয়ে বললাম _” আর যে নিজের ‘আপন ঘরের’ খবর না রেখে শুধু অপরের খোঁজ নিয়ে বেড়ায় সে ‘চদু’!!”_আমার কথা শেষ হলেও ওর নাকের সামনে থেকে আঙুল তো সরালামই ন_বরং কটমট করে ওর দিকে চেয়েই রইলাম। ঘটনার আকস্মিকতায় লোকটা কিছুক্ষনের জন্য ঘাবড়ে গেল _তারপর যখন বুঝতে পারল যে কথাগুলো ওকেই বলা হচ্ছে __তখন হটাৎ করে বেন্চ থেকে উঠে পড়ে লোকটা দ্রুতপায়ে অনেকটা দূরে চলে গেল। সেখান থেকে একবার পিছন ফিরে আমার দিকে চেয়ে দেখল। আমি তখনও ওর দিকে সেই একইভাবে তাকিয়ে রয়েছি দেখে লোকটা প্লাটফর্মের দুরতম প্রান্তে, একদম আমার দৃষ্টির অন্তরালে চলে গেল _আর এদিকে এলই না!”
(গুরুজীর মুখে _’চদু’ – কথাটি শুনে ওখানে অনেকেই হেসে ফেলেছিল। এইটা দেখে গুরুমহারাজ ব্যাপারটা বুঝে বললেন _” তোরা ‘চদু’ কথাটা অশ্লীল ভাবছিস নাকি? এটা কোন গালাগালি নয় _আমরা ছোটবেলায় দেখতাম কোন ব্যান্ডপার্টির দল এলে, সেই দলে একজন মোটাসোটা বা হাঁদাক্যাবলা লোক থাকত, যে কাঁধে করে সবচাইতে বড় জয়ঢাক বা বড় ড্রাম(big-drum)-টা বইত, আর সেটা বাজাতো অন্যজন। ঐ লোকটি ব্যান্ডের দলের সবচাইতে কম মাইনে পেত_কারন বাজনার কোন তাল জ্ঞান ওর জানা নাই। ওর কাজ শুধুমাত্র বড় বড় জয়ঢাক পিঠে বেঁধে বয়ে বেড়ানো! একেই বলা হোত _’জয়ঢাকের চদু’!) [ক্রমশঃ]