(এর আগে গল্পের প্রথমাংশ এ দেখানো হয়েছিল রোমের এক বিপথগামী সুদর্শন যুবক তার রূপের জাদুতে সে দেশের রানী এবং এক জাদুকরী কে মুগ্ধ করেছিল এবং তাদের জিজ্ঞাসার উত্তর দিয়েছিল। এখন পরের অংশ।)
যুবক বিন্দুমাত্র দেরি না করে বলে উঠল_ “আপনার পূর্বের রূপ বা পরের রূপের ভালোমন্দ খুঁজতে যাওয়া বোকামি হবে!আপনি ই আমাকে শিখিয়েছিলেন __ সাধারণত নারীদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, “নারীর ইচ্ছা”-ই ঐ নারীর জীবনকে পরিচালিত করে! (অর্থাৎ রমনী যা পেতে চায় _যতক্ষণ পর্যন্ত না সে সেটা পায় __ততক্ষণ শান্তি পায় না, মন অশান্ত হয়েই থাকে।সেটাকে পেয়েই যেন তার শান্তি!! যোগশাশ্ত্র একে বলেছে “স্ত্রী-হঠ”।) আর এই উত্তর দিয়েই আমি দেশের রানীর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলাম! তবে আমি আরও বুঝলাম যে, নারীর ‘ইচ্ছা’-র গতি খুবই এলোমেলো ! এই দেখুন না _আপনি আপনার পূর্ব অবস্থায় অর্থাৎ জাদুকরী অবস্থায় থাকতে ইচ্ছা করেছিলেন _তাই ঐ অবস্থায় দীর্ঘদিন কাটালেন। এখন আমাকে দেখে আপনার মনে নতুন কোন ‘ইচ্ছা’-র উদয় হয়েছে, আর তা পুরনের জন্য আপনি নতুন রূপ ধারণ করেছেন!!আবার আপনার মধ্যে নতুন অন্য কোন ‘ইচ্ছা’-র আগমন ঘটলে আপনি আমাকেও ছুঁড়ে ফেলে দেবেন!”
যুবকের কথায় জাদুকরী রমনীও খুবই লজ্জা পেয়ে গেল, আর সেই ফাঁকে
জাদুকরীকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে যুবক ঐ স্থান ত্যাগ করে চলে গেল।
আসলে ঐ জাদুকরী, নারীর জীবনে ‘ইচ্ছা’-ই যে নারী কে control করে _এই রহস্যটিই যুবকটিকে শিখিয়ে ছিলেন! এই একই উত্তর শুনে রানী লজ্জা পেয়েছিল _কারন সত্যি সত্যিই রানী ঐ যুবকটির রূপ-যৌবনের মোহে পড়ে গিয়েছিল! আর এখন এক্ষেত্রে জাদুকরী!!
গুরুমহারাজ এরপর কিছুক্ষণ কথার ছেদ দিয়ে আবার বলতে শুরু করলেন _এই গল্পটি ইউরোপের, ফলে ওখানকার প্রচলিত দর্শনের reflexion রয়েছে গল্পটিতে। কিন্তু ভারতীয় দর্শন বলেছে _ভাবনা, ইচ্ছা, ক্রিয়া! ভাবনা এবং ইচ্ছা, মন ও বুদ্ধির জগতে ক্রিয়াশীল! মনে প্রথমে আসে ভাবনা_তাতে বুদ্ধি যুক্ত হয়ে তা ইচ্ছায় রূপ নেয়। আর বলবতী ইচ্ছাই ইন্দ্রিয় সহযোগে কর্মে লিপ্ত হয়_যেটিকে বলা হচ্ছে ক্রিয়া!!
এবার কথা হচ্ছে _মানবের জীবনে শুভ ইচ্ছা, শুভ সংকল্প থাকলে ক্রিয়া বা কর্ম শুভ হয়, লোককল্যানকারী ও সৃজনশীল হয়। আর ভাবনা যদি অশুভ হয় তাহলে তার দ্বারা ধংসাত্নক, অকল্যানমুলক কাজই হয়।
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছিলেন _ব্রহ্ম মন বা বুদ্ধির গোচর নয় _কিন্তু শুদ্ধ মন বা শুদ্ধ বুদ্ধির গোচর!
সাধারণ মানুষের ইচ্ছা তো শুধু সুখলাভ এবং ভোগের ইচ্ছা!
ভগবান বুদ্ধ বলেছিলেন _’এষণা’! পুত্রৈষণা, বিত্তৈষণা ইত্যাদি! ‘এষণা’ যুক্ত হয়ে মানুষ কর্মচক্রে ফেঁসে যায়- আর বেরোতে পারে না!
তাহলে কি আর কখনই বেরোতে পারবে না? পারবে বই কি! কর্মের দ্বারাই কর্মের বন্ধন থেকে মুক্ত হতে হবে। একমাত্র ভগবৎ প্রীত্যর্থে কর্ম করলে কর্মক্ষয় হয়, তাই সদগুরু অথবা কোন আধ্যাত্মিক মানুষের পদপ্রান্তে বসে _তাঁর কাছ থেকে জীবনের পাঠ গ্রহণ করতে হয়। এরপর সেই শিক্ষা জীবনে যোজনা করতে পারলেই সাধারণ মানুষের জীবন ও মহাজীবনে রূপান্তরিত হয়ে যায়!!
রোমান কোন philosopher হয়তো মানবের (নারীর) ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন! কিন্তু ভারতীয় দার্শনিকগন সুক্ষজগৎকে আরও গভীরভাবে বিশ্লেষন করেছেন।
ভারতীয় দর্শন বলেছে_মন, বুদ্ধি, চিত্ত ও অহংকার এই চারটি নিয়ে মানবের অন্তঃকরন চতুষ্টয়। এর মধ্যে মনের বৃত্তি হল _সংকল্প ও বিকল্প, বুদ্ধির বৃত্তি হল _কোন কিছুকে নিশ্চয় করা, আর অহংকার হল_অভিমানাত্মিকা বৃত্তি! অর্থাৎ মন, বুদ্ধি এবং অহংকার হল চিত্তেরই পৃথক পৃথক বৃত্তি! চিত্ত যেন হ্রদ _আর সেই হ্রদের এক একটা তরঙ্গ যেন এক একটা বৃত্তি!
বাতাসের প্রবাহ বন্ধ হলে যেমন হ্রদে কোন তরঙ্গ সৃষ্টি হয় না _তেমনি চিত্তবৃত্তিনিরোধ হলে অন্তঃকরন শান্ত, সমাহিত হয়। এইরূপ স্থিতিকেই ভারতীয় দর্শনশাশ্ত্রে বলা হয়েছে সমাধি অবস্থা!!
অষ্টাঙ্গিক যোগমার্গের শেষ ধাপ হল সমাধি! যম-নিয়ম-আসন-প্রানায়াম-প্রত্যাহার-ধারনা-ধ্যান-সমাধি! সদগুরুর সান্নিধ্যে এলে তবে সাধকের আধ্যাত্মিক তত্ত্বসমূহের ধারনা হয়। এবার নিজের মধ্যে সেই ধারণাকে সম্পূর্ণরূপে পরিপুষ্ট করার কৌশল-ই ধ্যান!
চিত্তের বিভিন্ন অবস্থা রয়েছে _সেগুলি হল মূঢ়চিত্ত, ক্ষিপ্তচিত্ত,বিক্ষিপ্তচিত্ত, শান্তচিত্ত ও নিরুদ্ধচিত্ত। এতরকম অবস্থাবিশিষ্ঠ চিত্তদহ বা হ্রদ কি সহজে শান্ত হয়? একমাত্র সদগুরুর নির্দেশিত পথে সাধন করলে __ধ্যানের গভীরতায় চিত্ত নিরুদ্ধ হয়! নিরুদ্ধচিত্ত অবস্থাই হল চিত্তের নিস্তরঙ্গ অবস্থা!আর এই অবস্থায় স্থিতিলাভ করাই মানবজীবনের পূর্ণত্বলাভ!!
ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ।। (ক্রমশঃ)
যুবক বিন্দুমাত্র দেরি না করে বলে উঠল_ “আপনার পূর্বের রূপ বা পরের রূপের ভালোমন্দ খুঁজতে যাওয়া বোকামি হবে!আপনি ই আমাকে শিখিয়েছিলেন __ সাধারণত নারীদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, “নারীর ইচ্ছা”-ই ঐ নারীর জীবনকে পরিচালিত করে! (অর্থাৎ রমনী যা পেতে চায় _যতক্ষণ পর্যন্ত না সে সেটা পায় __ততক্ষণ শান্তি পায় না, মন অশান্ত হয়েই থাকে।সেটাকে পেয়েই যেন তার শান্তি!! যোগশাশ্ত্র একে বলেছে “স্ত্রী-হঠ”।) আর এই উত্তর দিয়েই আমি দেশের রানীর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলাম! তবে আমি আরও বুঝলাম যে, নারীর ‘ইচ্ছা’-র গতি খুবই এলোমেলো ! এই দেখুন না _আপনি আপনার পূর্ব অবস্থায় অর্থাৎ জাদুকরী অবস্থায় থাকতে ইচ্ছা করেছিলেন _তাই ঐ অবস্থায় দীর্ঘদিন কাটালেন। এখন আমাকে দেখে আপনার মনে নতুন কোন ‘ইচ্ছা’-র উদয় হয়েছে, আর তা পুরনের জন্য আপনি নতুন রূপ ধারণ করেছেন!!আবার আপনার মধ্যে নতুন অন্য কোন ‘ইচ্ছা’-র আগমন ঘটলে আপনি আমাকেও ছুঁড়ে ফেলে দেবেন!”
যুবকের কথায় জাদুকরী রমনীও খুবই লজ্জা পেয়ে গেল, আর সেই ফাঁকে
জাদুকরীকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে যুবক ঐ স্থান ত্যাগ করে চলে গেল।
আসলে ঐ জাদুকরী, নারীর জীবনে ‘ইচ্ছা’-ই যে নারী কে control করে _এই রহস্যটিই যুবকটিকে শিখিয়ে ছিলেন! এই একই উত্তর শুনে রানী লজ্জা পেয়েছিল _কারন সত্যি সত্যিই রানী ঐ যুবকটির রূপ-যৌবনের মোহে পড়ে গিয়েছিল! আর এখন এক্ষেত্রে জাদুকরী!!
গুরুমহারাজ এরপর কিছুক্ষণ কথার ছেদ দিয়ে আবার বলতে শুরু করলেন _এই গল্পটি ইউরোপের, ফলে ওখানকার প্রচলিত দর্শনের reflexion রয়েছে গল্পটিতে। কিন্তু ভারতীয় দর্শন বলেছে _ভাবনা, ইচ্ছা, ক্রিয়া! ভাবনা এবং ইচ্ছা, মন ও বুদ্ধির জগতে ক্রিয়াশীল! মনে প্রথমে আসে ভাবনা_তাতে বুদ্ধি যুক্ত হয়ে তা ইচ্ছায় রূপ নেয়। আর বলবতী ইচ্ছাই ইন্দ্রিয় সহযোগে কর্মে লিপ্ত হয়_যেটিকে বলা হচ্ছে ক্রিয়া!!
এবার কথা হচ্ছে _মানবের জীবনে শুভ ইচ্ছা, শুভ সংকল্প থাকলে ক্রিয়া বা কর্ম শুভ হয়, লোককল্যানকারী ও সৃজনশীল হয়। আর ভাবনা যদি অশুভ হয় তাহলে তার দ্বারা ধংসাত্নক, অকল্যানমুলক কাজই হয়।
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছিলেন _ব্রহ্ম মন বা বুদ্ধির গোচর নয় _কিন্তু শুদ্ধ মন বা শুদ্ধ বুদ্ধির গোচর!
সাধারণ মানুষের ইচ্ছা তো শুধু সুখলাভ এবং ভোগের ইচ্ছা!
ভগবান বুদ্ধ বলেছিলেন _’এষণা’! পুত্রৈষণা, বিত্তৈষণা ইত্যাদি! ‘এষণা’ যুক্ত হয়ে মানুষ কর্মচক্রে ফেঁসে যায়- আর বেরোতে পারে না!
তাহলে কি আর কখনই বেরোতে পারবে না? পারবে বই কি! কর্মের দ্বারাই কর্মের বন্ধন থেকে মুক্ত হতে হবে। একমাত্র ভগবৎ প্রীত্যর্থে কর্ম করলে কর্মক্ষয় হয়, তাই সদগুরু অথবা কোন আধ্যাত্মিক মানুষের পদপ্রান্তে বসে _তাঁর কাছ থেকে জীবনের পাঠ গ্রহণ করতে হয়। এরপর সেই শিক্ষা জীবনে যোজনা করতে পারলেই সাধারণ মানুষের জীবন ও মহাজীবনে রূপান্তরিত হয়ে যায়!!
রোমান কোন philosopher হয়তো মানবের (নারীর) ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন! কিন্তু ভারতীয় দার্শনিকগন সুক্ষজগৎকে আরও গভীরভাবে বিশ্লেষন করেছেন।
ভারতীয় দর্শন বলেছে_মন, বুদ্ধি, চিত্ত ও অহংকার এই চারটি নিয়ে মানবের অন্তঃকরন চতুষ্টয়। এর মধ্যে মনের বৃত্তি হল _সংকল্প ও বিকল্প, বুদ্ধির বৃত্তি হল _কোন কিছুকে নিশ্চয় করা, আর অহংকার হল_অভিমানাত্মিকা বৃত্তি! অর্থাৎ মন, বুদ্ধি এবং অহংকার হল চিত্তেরই পৃথক পৃথক বৃত্তি! চিত্ত যেন হ্রদ _আর সেই হ্রদের এক একটা তরঙ্গ যেন এক একটা বৃত্তি!
বাতাসের প্রবাহ বন্ধ হলে যেমন হ্রদে কোন তরঙ্গ সৃষ্টি হয় না _তেমনি চিত্তবৃত্তিনিরোধ হলে অন্তঃকরন শান্ত, সমাহিত হয়। এইরূপ স্থিতিকেই ভারতীয় দর্শনশাশ্ত্রে বলা হয়েছে সমাধি অবস্থা!!
অষ্টাঙ্গিক যোগমার্গের শেষ ধাপ হল সমাধি! যম-নিয়ম-আসন-প্রানায়াম-প্রত্যাহার-ধারনা-ধ্যান-সমাধি! সদগুরুর সান্নিধ্যে এলে তবে সাধকের আধ্যাত্মিক তত্ত্বসমূহের ধারনা হয়। এবার নিজের মধ্যে সেই ধারণাকে সম্পূর্ণরূপে পরিপুষ্ট করার কৌশল-ই ধ্যান!
চিত্তের বিভিন্ন অবস্থা রয়েছে _সেগুলি হল মূঢ়চিত্ত, ক্ষিপ্তচিত্ত,বিক্ষিপ্তচিত্ত, শান্তচিত্ত ও নিরুদ্ধচিত্ত। এতরকম অবস্থাবিশিষ্ঠ চিত্তদহ বা হ্রদ কি সহজে শান্ত হয়? একমাত্র সদগুরুর নির্দেশিত পথে সাধন করলে __ধ্যানের গভীরতায় চিত্ত নিরুদ্ধ হয়! নিরুদ্ধচিত্ত অবস্থাই হল চিত্তের নিস্তরঙ্গ অবস্থা!আর এই অবস্থায় স্থিতিলাভ করাই মানবজীবনের পূর্ণত্বলাভ!!
ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ।। (ক্রমশঃ)