হিমালয়ের কোন একস্থানে এক সন্ন্যাসী পরম্পরার দুজন সন্ন্যাসী পরিব্রাজন( সাধনা) করছিলেন ৷ অনেক সম্প্রদায়ের মধ্যেই দেখা যায় যে পরিব্রাজন সাধনের অন্যতম অঙ্গ , এরাও তেমনি কোন সম্প্রদায়ের সাধক ছিলেন ৷ সন্ন্যাসী দুজনে সারাদিন বিভিন্ন তীর্থদর্শন বা নির্দিষ্ট যাত্রাপথে ভ্রমণ এগুলি সম্পন্ন করত আর সন্ধ্যার প্রাক্কালে কোন মন্দির বা মঠ অথবা এইরূপ কোন নিরাপদ স্থান দেখে সেখানে রাত্রির আশ্রয় নিত । পরিব্রাজনরত সাধুসন্তরা এইরূপই করে থাকে ৷ ভ্রমণপথ নির্দিষ্ট থাকলে তারা প্রতিদিনকার যাত্রার দূরত্ব বা কোনখান থেকে কোথায় যেতে হবে, সেই স্থান নির্দিষ্ট করে নেয় এবং সেইভাবেই পরিব্রাজন শেষ করে ৷ যেমন “নর্মদা পরিক্রমা” , “বেনারস থেকে রামেশ্বরম” এগুলি পরিব্রাজনের সংকল্প করে এবং সময় নির্দিষ্ট করে সাধুরা বেড়িয়ে পরে – রাস্তায় শরীর খারাপ বা অন্য কোন বিপর্যয় না ঘটলে তারা ঠিকমতো সংকল্প-সিদ্ধিও ঘটিয়ে ফেলে ।
যাইহোক আলোচ্য গল্পের এমনই দুই সন্ন্যাসী পাহাড়ী পথ দিয়ে হেঁটে চলেছে – অন্তরে সদা-সর্বদা চলছে ইষ্টনাম । সেই ভোরে বেড়িয়ে সন্ধ্যার আগে কোন নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে হবে – এই লক্ষ্য ৷ পথে পড়ল একটা পাহাড়ী নদী । নদীটি খুব প্রশস্থ নয় , জলও বেশী নয় কিন্তু কোমড় অবধি তো হবেই – তাতে তীব্র স্রোত । সন্ন্যাসী দুজন বয়সে নবীন — কাজেই সেই নদী পার হতে তাদের কোন অসুবিধা হোল না ৷ ওপারে পৌঁছে ওরা কৗেপিনের জল নিংড়ানো , গা মোছা – এইসব করছে , এমন সময় একটি বিপন্ন নারীকন্ঠের আওয়াজে ওরা তাকিয়ে দেখল একটি যুবতী রমণী নদীটি পেরোতে চাইছে – কিন্তু সাহস করে জলে নামতে পারছে না ৷ সেই যুবতীর আকুল আহ্বানে ঐ দুজন সন্ন্যাসীর মধ্যে অপেক্ষাকৃত বেশী নবীনটি ভিজে কৗেপীন পড়া অবস্থাতেই অনায়াস ভঙ্গীতে যুবতীকে কোলে তুলে নিয়ে নদীর পরপারে রেখে এল ৷ তারপর ফিরে এসে – গা মুছে , পোষাক পাল্টে আবার পথ চলা শুরু করল ।
অন্তরে ইষ্টনাম সদা-সর্বদা জপ করলেও মাঝে মধ্যে তো পরস্পরের মধ্যে কিছু কথা হয়েই থাকে । সেদিন কিন্তু ঐ ঘটনার পর থেকে ওদের মধ্যে কোন কথাই আর হোল না ৷ অপেক্ষাকৃত নবীন দু-একবার কথা বলার চেষ্টা করেছিল কিন্তু Senior সন্ন্যাসী বেশী পাত্তাই না দিয়ে আগে আগে গট্-গট্ করে হাঁটছিল ৷ যাইহোক , সন্ধ্যার সময় ওরা দুজনে এক শিবমন্দির প্রাঙ্গনে এসে হাজির হ’ল ৷ সেখানে আরও কিছু সাধু-সন্তরা রয়েছে , আরো কেউ কেউ এসে পৌঁছাচ্ছে – সে রাতের মতো ওখানেই বিশ্রাম । Junior সাধুটি সেখানে পৌঁছে ঝোলা – কমন্ডুল রেখেই বেড়িয়ে গেল কাঠের সন্ধানে ৷ কিছু শুকনো কাঠ যোগাড় করে ধুনি জ্বালিয়ে দুজনে আগুনের দুপ্রান্তে বসে ইষ্টনাম স্মরণ করে ধ্যানের অন্তর্লীনতায় প্রবেশ করতে যাবে – এমন সময় Senior সাধুটি Junior টিকে বলে উঠল ” তুমি এটা কি করলে ?”
নবীন সন্ন্যাসী সারাদিন পর Senior টির মুখ থেকে হঠাৎ ঐ কথা শুনে চমকে উঠল! তাহলে কি ধুনি জ্বালাতে বা অন্য কোন ব্যাপারে কোন বিঘ্ন হোল ? বিনয়ের সঙ্গে বলল ” কোন ঘটনার কথা বলছেন মহাত্মন ?” (পরবর্তী অংশ পরের দিন) [ক্রমশঃ]