একটা সত্য ঘটনা অবলম্বনে গুরু মহারাজ এই গল্পের অবতারণা করেছিলেন । হয়তো উনি ঘটনা ঘটার সময় উপস্থিতও ছিলেন সেখানে!সেই সময় গুরুমহারাজের বয়স খুব অল্প ছিল। ঘটনাটি ঘটেছিল বেনারসে ৷ তখন বেনারসে বিশ্বনাথ মন্দিরের নিকটে বা মন্দিরের আশে পাশে দুজন খ্যাপা ঘুরে বেড়াতো ৷ তাদের মধ্যে খুবই বন্ধুত্ব ছিল – একে অপরকে ছেড়ে প্রায় থাকতো না বললেই চলে ৷ ওই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ , ব্যবসাদার , এমনকি সাধু-সন্তরাও জানতো যে ওদের দুজনের মধ্যে একজন উন্নত যোগী খ্যাপার ছদ্মবেশে রয়েছে! কিন্তু এদের মধ্যে সে কোনজন– সেটা কেউ বুঝতে পারতো না!
কিন্তু একদিন এমন একটা ঘটনা ঘটল , যে ঘটনায় সকলে বুঝতে পারলো ওদের মধ্যে কোন জন প্রকৃতপক্ষে খ্যাপা এবং কোন জন পরমহংস!
সাধারণত খ্যাপা-দুজন মন্দির চত্বরে ঘুরে বেড়াতো , কেউ কিছু দিলে খেতো অথবা ভান্ডারায় খেতো, আর বাকী সময় গঙ্গার জলে গিয়ে জল ছিটিয়ে খেলা কোরতো । সেদিনও ওরা গঙ্গার জলে হুড়োহুড়ি করছিল! স্নানার্থীরা প্রায়শই এদের ব্যাবহারে বিরক্ত হোত – কিন্তু এরা খ্যাপা না হয়ে মহাত্মাও হতে পারে, এই ভেবে অনেকে মান্যও করতো । যেদিন বেশী স্নানার্থী থাকতো বা কেউ ওদের বকাবকি করতো, সেদিন ওরা ঘাট থেকে একটু সরে গিয়ে, আঘাটাতেই জল নিয়ে দাপাদাপি করতো ৷
একদিন ওরা এইরকমই করছিল __স্নানের ঘাট থেকে একটু দূরে ওরা স্নান করছিল ৷ হঠাৎ সেখানে গলিত একটা পচা শবদেহ জলে ভাসতে ভাসতে ওদের কাছে এসে হাজির ! খ্যাপাটি দূর্গন্ধ পেয়ে নাক টিপে ধরল , অন্যজনকে বলল – “ভাই উঠে চল ! ছিঃ ! কি দূর্গন্ধ ! এ্যাঃ ! পচা মৃতদেহ !” এই বলে সে জল থেকে উঠে যাবার উপক্রম করল! আর ওদের মধ্যে যে পরমহংস তার তো কোন বিকার নেই – সে বলল ” আরে কি এমন গন্ধ ! জলের ছিটা দিয়ে সরিয়ে দাও – এখনি ভেসে যাবে! এসো আমরা জলের ঢেউ দিয়ে দিয়ে মৃতদেহটা সরাই !” ওর কথা শুনে খ্যাপাটি মৃতদেহের দিকে ফিরতেই দেখল – মৃতদেহটির হাতে একটা সোনার আংটি ! জলে-রোদ্দুর পড়ে সোনা চক্-চক্ করছে ! সোনা চক্-চক্ করুক আর নাই করুক খ্যাপার চোখ চক্-চক্ করে উঠল! সে লাফিয়ে পড়ে মৃতদেহটার হাত ধরে ফেলল – টেনে একটু কাছে নিয়ে এসে আংটিটা মৃতের হাত থেকে খোলার জন্য প্রানপন চেষ্টা করতে লাগল! ঘটনাটা হয়েছে কি__ মৃতদেহ তো জলে পড়ে পচে ফুলে উঠেছে , ফলে আঙুলের মধ্যে আংটি চেপে বসে গেছে! খ্যাপা প্রাণপণ চেষ্টায় টানাটানি করে খুবলে খানিকটা পচা মাংসসমেত আংটিটি বের করে আনল – আর ভালো করে জলে ধুয়ে পরিস্কার করতে লাগল!
পরমহংস এতক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা দেখছিল । ও ভাবছিল — বাহা রে মানুষ ! এখুনি “উফ্ কি গন্ধ !” – বলে পালাতে চাইছিল , আবার আংটি দেখেই লোভে – মোহে সেই গলিত পচা শবদেহটা ধরে তার মাংস খুবলে আংটি বের করল – তখন আর গন্ধ নাই , ঘৃণা নাই ! ভোগ-লালসা কি ভীষণ ব্যাপার ! – এসব ভাবতে ভাবতেই পরমহংস দেখল খ্যাপা ওকে কিছু না বলেই একা একা জল থেকে উঠে চলে যাচ্ছে ৷ পরমহংস বলল – ” ও ভাই দাঁড়াও ! আমিও যাব , আমাকে একটু দ্যাখাও তুমি কি পেলে ! একবার দাও, হাতে নিয়ে তো দেখি — জিনিসটা কি ?” খ্যাপা পালাতে পালাতে বলল – ” উঁঃ ! দেবো কেনো – আমি কষ্ট করে পেয়েছি ! ওটা আমার — কাউকে দেবো না ।” [ক্রমশঃ]