সমুদ্রতীরবর্তী কোন এক অঞ্চলে এক বৃদ্ধা রমণী বাস কোরতো। পরিবারে তার কেউ ছিল না , ফলে সে ছিল একা এবং কিছু ছাগল পুষে সেখান থেকেই সে তার জীবিকা নির্বাহ কোরতো ৷ বৃদ্ধাটি প্রতিদিন সকালে ছাগলগুলিকে লম্বা লম্বা দড়ি দিয়ে সমুদ্রের ধারে নিয়ে গিয়ে, যেখানে কচি কচি ঘাস বা ঝোপঝাড় রয়েছে সেখানে একটা শক্ত খোঁটা পুঁতে বেঁধে দিয়ে আসত! আবার দিনান্তে সেখানে গিয়ে খোঁটা থেকে ছাগলগুলিকে খুলে দড়িসমেত বাড়ী নিয়ে আসত ৷
সেই অঞ্চলের অন্যান্য ছাগলের মালিকেরা কিন্তু বুড়ির পদ্ধতি অবলম্বন করতো না। তারা তাদের ছাগলগুলিকে খোলা ছেড়ে দিতো – ফলে ছাগলগুলি আপনমনে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে চরে বেড়াত ৷ এতে বুড়ীর ছাগলগুলির খুব রাগ হোত বুড়ির উপর , ভাবতো “অন্য ছাগলের মালিকেরা কেমন উদার , কত ভালো – অথচ ঐ বুড়ীটা খুবই খারাপ , শুধু তাদেরকে বেঁধে রাখে – একদম খোলামেলাভাবে ছেড়ে দেয় না ৷”
এইভাবে কেটে যাচ্ছিল সময়! সমুদ্রতীরবর্তী স্থানে দীর্ঘদিন বাস করার ফলে, সমুদ্রের জোয়ার-ভাটার সীমারেখা বুড়ি জানতো! তাই সে তার ছাগলদের সেইরকম সীমা মেনেই নিরাপদ দূরত্বে বেঁধে রাখতো। কিন্তু একদিন সমুদ্রে বান ডাকল , সেদিন প্রবল জলোচ্ছ্বাসে বেশ কিছুটা অঞ্চল প্লাবিত হয়ে গেল! খোলা থাকা ছাগলেরা সেই বিশাল প্লাবনে কে কোথায় ভেসে গেল — তাদের আর খোঁজ পাওয়া গেল না ।
কিন্তু বুড়ির ছাগলগুলি শক্ত খোঁটায় লম্বা দড়ি দিয়ে বাঁধা ছিল, ফলে তারা নাকানি-চোবানি খেলো _ কিন্তু ভেসে গেল না! ঢেউ সরে যেতেই তারা মাটি পেয়ে গেল – ঝোপঝাড়ের ডালপালা খেতেও শুরু করল! বুড়িও ব্যাপারটা সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল থাকায় নিশ্চিন্ত ছিল। তাই সে নিরুদ্বিগ্নচিত্তে নির্দিষ্ট সময়ে এসে দড়ি ধরে ছাগলগুলিকে আবার গৃহে ফিরিয়ে নিয়ে গেল!
গল্পটা এইখানে শেষ করে গুরু মহারাজ উপস্থিত সকলকে উদ্দেশ্য করে বললেন – মানুষের দশাও ঠিক এমনিই হয় ৷ এখানে বুড়ি যেন সদ্-গুরু , লম্বা দড়ি দিয়ে বাঁধা মানেই হচ্ছে তাদের বিবেকের জাগরণ বা চেতনার উত্তরণ ঘটানো _ যাতে তারা নানান অনুশাসনে নিজেদেরকে বেঁধে রাখতে পারে! কিন্তু গুরুপ্রদত্ত শিক্ষা ও সংযমের রশি তার গলায় পড়ানো থাকে! এতে করে সাময়িকভাবে কোন কোন শিষ্যের মনে হতে পারে যে – এই সংযমের বাঁধনে আবদ্ধ না থেকে সমাজের অন্যান্যরা যেমন উশৃঙ্খল , বেপরোয়া জীবন-যাপন করছে – ঐরূপ জীবন-ই ভালো!
কিন্তু দিনের শেষে দেখা যায় বুড়ির বাঁধা ছাগলগুলোই যথাস্থানে টিকে থাকে –আর বাকীরা ভেসে যায়! ঠিক তেমনি সংযমহীন উশৃঙ্খল মানুষেরা জীবন সায়াহ্নে এসে দেখে নিজের চেতনার উন্নতি তো হয়ই নি বরং ভাটার টানে তারা কোথায়, কত দুরে ভেসে গেছে!
অজ্ঞান অন্ধকারে থাকা, ভেসে যাওয়া মানুষ জানে না যে, উজান বেয়ে তাকেই আবার পূর্বের জায়গাতে ফিরতে হবে – আজ না হয় কাল!
যে সব মানুষের মনে মুমুক্ষুতা এসেছে, যারা সদ্-গুরুর সান্নিধ্য লাভ করেছে _তাদেরকে গুরু ইষ্টমন্ত্র দান করার সাথে সাথে তাদের মধ্যে ‘আধ্যাত্মিক শক্তি’ সঞ্চারিত করে দেন । এরফলে তার বিবেকের জাগরণ হয় আর আত্মিক উত্তরণ শুরু হয়! বিবেকের জাগরণ হলে সে বুঝতে পারে কি তার করা উচিৎ আর কি করা তার পক্ষে গর্হিত! এইধরনের বিচারগুলিকে ‘অনুশাসন’ মনে হলেও__ এই সংযমের রাস্তাই সাধককে উত্তরণের দিকে নিয়ে যায় ৷ এই পথ অবলম্বনকারীরা জাগতিক ঝড়-ঝাপটা-প্লাবনে(জাগতিক ত্রিবিধ বাধা – আধিভৌতিক, আধিদৈবিক, ও আধ্যাত্মিক) একটু আধটু নাকানি-চোবানি খেলেও – ভেসে যায় না! ঠিক সময়ে সদ্-গুরু এসে হাত ধরে তাকে নিয়ে যান সাধারণ জীবনযাপন থেকে উত্তরণের পথে, পরে উত্তরণ থেকে মহাউত্তরণের দিকে ৷। [ক্রমশঃ]
সেই অঞ্চলের অন্যান্য ছাগলের মালিকেরা কিন্তু বুড়ির পদ্ধতি অবলম্বন করতো না। তারা তাদের ছাগলগুলিকে খোলা ছেড়ে দিতো – ফলে ছাগলগুলি আপনমনে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে চরে বেড়াত ৷ এতে বুড়ীর ছাগলগুলির খুব রাগ হোত বুড়ির উপর , ভাবতো “অন্য ছাগলের মালিকেরা কেমন উদার , কত ভালো – অথচ ঐ বুড়ীটা খুবই খারাপ , শুধু তাদেরকে বেঁধে রাখে – একদম খোলামেলাভাবে ছেড়ে দেয় না ৷”
এইভাবে কেটে যাচ্ছিল সময়! সমুদ্রতীরবর্তী স্থানে দীর্ঘদিন বাস করার ফলে, সমুদ্রের জোয়ার-ভাটার সীমারেখা বুড়ি জানতো! তাই সে তার ছাগলদের সেইরকম সীমা মেনেই নিরাপদ দূরত্বে বেঁধে রাখতো। কিন্তু একদিন সমুদ্রে বান ডাকল , সেদিন প্রবল জলোচ্ছ্বাসে বেশ কিছুটা অঞ্চল প্লাবিত হয়ে গেল! খোলা থাকা ছাগলেরা সেই বিশাল প্লাবনে কে কোথায় ভেসে গেল — তাদের আর খোঁজ পাওয়া গেল না ।
কিন্তু বুড়ির ছাগলগুলি শক্ত খোঁটায় লম্বা দড়ি দিয়ে বাঁধা ছিল, ফলে তারা নাকানি-চোবানি খেলো _ কিন্তু ভেসে গেল না! ঢেউ সরে যেতেই তারা মাটি পেয়ে গেল – ঝোপঝাড়ের ডালপালা খেতেও শুরু করল! বুড়িও ব্যাপারটা সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল থাকায় নিশ্চিন্ত ছিল। তাই সে নিরুদ্বিগ্নচিত্তে নির্দিষ্ট সময়ে এসে দড়ি ধরে ছাগলগুলিকে আবার গৃহে ফিরিয়ে নিয়ে গেল!
গল্পটা এইখানে শেষ করে গুরু মহারাজ উপস্থিত সকলকে উদ্দেশ্য করে বললেন – মানুষের দশাও ঠিক এমনিই হয় ৷ এখানে বুড়ি যেন সদ্-গুরু , লম্বা দড়ি দিয়ে বাঁধা মানেই হচ্ছে তাদের বিবেকের জাগরণ বা চেতনার উত্তরণ ঘটানো _ যাতে তারা নানান অনুশাসনে নিজেদেরকে বেঁধে রাখতে পারে! কিন্তু গুরুপ্রদত্ত শিক্ষা ও সংযমের রশি তার গলায় পড়ানো থাকে! এতে করে সাময়িকভাবে কোন কোন শিষ্যের মনে হতে পারে যে – এই সংযমের বাঁধনে আবদ্ধ না থেকে সমাজের অন্যান্যরা যেমন উশৃঙ্খল , বেপরোয়া জীবন-যাপন করছে – ঐরূপ জীবন-ই ভালো!
কিন্তু দিনের শেষে দেখা যায় বুড়ির বাঁধা ছাগলগুলোই যথাস্থানে টিকে থাকে –আর বাকীরা ভেসে যায়! ঠিক তেমনি সংযমহীন উশৃঙ্খল মানুষেরা জীবন সায়াহ্নে এসে দেখে নিজের চেতনার উন্নতি তো হয়ই নি বরং ভাটার টানে তারা কোথায়, কত দুরে ভেসে গেছে!
অজ্ঞান অন্ধকারে থাকা, ভেসে যাওয়া মানুষ জানে না যে, উজান বেয়ে তাকেই আবার পূর্বের জায়গাতে ফিরতে হবে – আজ না হয় কাল!
যে সব মানুষের মনে মুমুক্ষুতা এসেছে, যারা সদ্-গুরুর সান্নিধ্য লাভ করেছে _তাদেরকে গুরু ইষ্টমন্ত্র দান করার সাথে সাথে তাদের মধ্যে ‘আধ্যাত্মিক শক্তি’ সঞ্চারিত করে দেন । এরফলে তার বিবেকের জাগরণ হয় আর আত্মিক উত্তরণ শুরু হয়! বিবেকের জাগরণ হলে সে বুঝতে পারে কি তার করা উচিৎ আর কি করা তার পক্ষে গর্হিত! এইধরনের বিচারগুলিকে ‘অনুশাসন’ মনে হলেও__ এই সংযমের রাস্তাই সাধককে উত্তরণের দিকে নিয়ে যায় ৷ এই পথ অবলম্বনকারীরা জাগতিক ঝড়-ঝাপটা-প্লাবনে(জাগতিক ত্রিবিধ বাধা – আধিভৌতিক, আধিদৈবিক, ও আধ্যাত্মিক) একটু আধটু নাকানি-চোবানি খেলেও – ভেসে যায় না! ঠিক সময়ে সদ্-গুরু এসে হাত ধরে তাকে নিয়ে যান সাধারণ জীবনযাপন থেকে উত্তরণের পথে, পরে উত্তরণ থেকে মহাউত্তরণের দিকে ৷। [ক্রমশঃ]