এক বনের ধারে এক গ্রামে একজন দরিদ্র কাঠুরিয়া বাস করতো । সে বনে জঙ্গলে কাঠ কাটতো আর তা বিক্রি করে কোনক্রমে সংসার চালাতো ৷ সেই জঙ্গলের বনপথ দিয়ে একজন গুরুদেব শিষ্য-সামন্ত নিয়ে প্রায়ই যাওয়া-আসা কোরতো । কাঠুরিয়ার জানা ছিল যে , গুরুর কাছে দীক্ষা নিলে গ্রহের ফের কেটে যায় — দুঃখ-দুর্দশা দূর হয় । তাই সে ওই গুরুদেবকে যখনই যাওয়া আসার পথে দেখতে পেতো, তখনই প্রণাম করে তাকে দীক্ষা দেবার জন্য অনুরোধ জানাত ।
গুরুদেব তেমন কোন উন্নত সাধক ছিল না। বংশ পরম্পরার গোঁসাই গুরুরা যেমন হয় _তেমন আর কি! কাঠুরিয়া গরীব বলে ঐ গুরুদেব তাকে খুব একটা পাত্তা দিত না , কারণ তার যারা শিষ্য ছিল তারা সবাই ছিল খুব ধনী। কাঠুরিয়া ব্যাপারটা বুঝতো কিন্তু করেই বা কি _দুঃখ ঘোচার জন্যই তো তার দীক্ষাগ্রহণের ইচ্ছা! না হোলে কি আর সে দীক্ষার জন্য এতটা ব্যাকুল হোত!
কিন্তু কাঠুরিয়ার অভাব আর ঘোচে না — দীক্ষা ও আর হয় না! তাই সে ঠিক করল এবার ঐ গুরুদেব এদিকে এলে সে দীক্ষা না নিয়ে ছাড়বে না ৷ যেমন ভাবা তেমন কাজ ! কিছুদিনের মধ্যেই গুরুদেব লোকজন নিয়ে সেই বনপথে এসে হাজির । কাঠুরিয়া কুড়ুল কাঁধে তার পায়ে এসে পড়লো , বলল – ” এবার আমাকে দীক্ষা দিতেই হবে ! কারণ আমি স্বপ্ন দেখেছি যে আপনার শ্রীচরণের কৃপায় আমার অবস্থার উন্নতি হবে ৷ তাই আপনার শ্রীচরণপূজার অধিকার আমাকে দিতেই হবে ৷” গুরুদেব দেখল মহামুস্কিল ! এই বন-জঙ্গলে কাঠুরিয়া যেভাবে কুড়ুল উঁচিয়ে জোর-জবরদস্তি করছে তাতে তাকে চটিয়ে লাভ নেই ৷ হয়তো কুড়ুলের এক ঘা দিয়েই দেবে ! তাছাড়া এই বনপথে তাকে প্রায়ই যাওয়া-আসা করতে হয় – যদি কখনও বিপদ-আপদ আসে এই কাঠুরিয়া তার প্রামবাসীদের নিয়ে এসে সাহায্য করতে পারবে!
এইসব চিন্তা করে গুরুদেব কাঠুরিয়াকে দীক্ষা দিতে রাজী হয়ে গেল ।
দীক্ষা দেবার পর গুরুদেব তার নির্দিষ্ট গন্তব্যে চলে গেল , আর কাঠুরিয়া গুরুদেবের পা থেকে খুলে নেওয়া খড়ম-জোড়া রোজ পূজো করে আর ঠাকুরের কাছে অভাব মোচনের প্রার্থনা করে! একদিন হয়েছে কি – গভীর জঙ্গলে একটা পোড়োবাড়ির গায়ে একটা শুকিয়ে যাওয়া বড় গাছ কাটছিল কাঠুরিয়া। গাছটা বেশ বড়ো ছিল – তাই অর্ধেকের বেশী কাটতেই সেটা শিকড়সমেত উপড়ে গেল । আর কি আশ্চর্য্য ! শিকড়ের মাটির চাঙরের সাথে উঠে এল ঘড়া ঘড়া সোনার মোহর !!
জঙ্গলের ঐ পোড়োবাড়িটি হয়ত কোন রাজার মন্দির ছিল , আর সেখানে রাজা ধনরত্ন লুকিয়ে রেখেছিল – কিন্তু কালের গর্ভে সেই রহস্য হারিয়ে যাওয়ায় আর ঐ ধনরত্ন উদ্ধার হয়নি ।
হয়তো কাঠুরিয়ার আন্তরিক প্রার্থনায় ঈশ্বর সন্তুষ্ট হয়ে তাকে ঐ সম্পদ পাইয়ে দিলেন! সম্পদ পাওয়ার পর খুব তাড়াতাড়ি কাঠুরিয়া বিশাল ধনী হয়ে গেল! সে জঙ্গল সংলগ্ন এলাকার বেশ খানিকটা জমি কিনে নিয়ে একটা বিশাল অট্টালিকা বানাল! বাড়ীতে দারোয়ান , চাকর-বাকর , দাস-দাসী _লোকজনে পরিপূর্ণ!
কোন একদিন গুরুদেব ঐ পথে আবার আসছিল – বনের পথে এক বিরাট অট্টালিকা আর তার জৌলুস দেখে স্থানীয় লোকজনদের জিজ্ঞাসা করে গুরুদেব জানতে পারল যে সেই কাঠুরিয়াই দৈবাৎক্রমে বড়লোক হয়ে উঠেছে ৷ গুরুদেব তো মহাখুশী , দারোয়ানকে ঠেলে সরিয়ে বাড়ীর ভিতর ঢুকে হাঁকাডাকি শুরু করে দিল! শিষ্য কাঠুরিয়া গোলমাল শুনে বাইরে এসে দেখে গুরুদেব দাঁড়িয়ে ৷ সে ছুটে এসে গুরুদেবের পা দুটো জড়িয়ে ধরে বলল – “আমার কি সৌভাগ্য গুরুদেব ! আপনি স্বয়ং এসে হাজির হয়েছেন – আপনি অন্তর্যামী , আমি মনে মনে খুবই প্রার্থনা জানাচ্ছিলাম ঈশ্বরের কাছে, যাতে আপনার শুভাগমন ঘটে এই অধমের কুঠীরে !” গুরুদেব বলল – “কুঠীর কি বলছ বাবা ! এ যে রাজপ্রাসাদ ! তা তুমি সামান্য কাঠুরিয়া থেকে এই অতুল ঐশ্বর্য্যের মালিক হলে কি করে ?” কাঠুরিয়া বলল – “গুরুদেব সবই আপনার শ্রীচরণের কৃপায় । সেই যে আপনার শ্রীচরণের খড়ম রেখে দিয়েছিলাম – সেইটা রোজ পূজো করে ঈশ্বরের কাছে বড়লোক হবার প্রার্থনা জানাতাম , আর তাতেই এই ফল ! আমার যা কিছু দেখছেন তা সবই — আপনার শ্রীচরণের কৃপা !”
যাইহোক , শিষ্য গুরুদেবকে তার অট্টালিকার দোতলার একটি ঘরে বিশ্রামের জন্যে নিয়ে গেল ৷ সেখানে সোনার পালঙ্ক আর তেমনি মখমলের গদি-বিছানা ৷ গুরুদেব সোনার পালঙ্ক কখনো দেখেনি — বলল , ” বাবা ! এই সোনার পালঙ্ক কার ?” শিষ্য (কাঠুরিয়া) বলল – “গুরুদেব , এসব যা দেখছেন সবই আপনার , আপনার শ্রীচরণের কৃপাতেই তো সবকিছু !” তারপর খাবার ব্যাবস্থা ! সোনার বড় থালায় অন্ন পরিবেশন করা হোল , সোনার বাটিতে ডাল-তরকারি ! এসব দেখে তো গুরুদেবের চক্ষু চড়কগাছ ! বলল , ” এতসব সোনার থালা _ বাটি এগুলি কার ?” শিষ্য বলল , “গুরুদেব ! এ সবকিছু আপনারই ! আপনার শ্রীচরণের কৃপাতেই তো সবকিছু ! কাজেই এই সব বাসনপত্র , আসবাব সবই আপনার !” গুরুদেব মনে মনে ভাবল _” কাঠুরিয়া ব্যাটা খুবই বোকা, একেবারে মাথামোটা! কপালগুনে বড়লোক হয়েছে বটে _কিন্তু বুদ্ধিতে সেই কাঠুরিয়াই রয়ে গেছে! ‘সবকিছুই আপনার’ _ বলে দিচ্ছে যখন, তখন যাবার সময় এই সমস্ত কিছু সঙ্গে করে নিয়ে চলে যাব।”
কিন্তু আদর-যত্ন , খাওয়া-দাওয়া এতই সুন্দরভাবে হচ্ছে যে যেতেই মন চায় না! এদিকে জিনিসপত্রগুলির লোভও গুরুদেব ছাড়তে পারছে না! … [ক্রমশঃ]
গুরুদেব তেমন কোন উন্নত সাধক ছিল না। বংশ পরম্পরার গোঁসাই গুরুরা যেমন হয় _তেমন আর কি! কাঠুরিয়া গরীব বলে ঐ গুরুদেব তাকে খুব একটা পাত্তা দিত না , কারণ তার যারা শিষ্য ছিল তারা সবাই ছিল খুব ধনী। কাঠুরিয়া ব্যাপারটা বুঝতো কিন্তু করেই বা কি _দুঃখ ঘোচার জন্যই তো তার দীক্ষাগ্রহণের ইচ্ছা! না হোলে কি আর সে দীক্ষার জন্য এতটা ব্যাকুল হোত!
কিন্তু কাঠুরিয়ার অভাব আর ঘোচে না — দীক্ষা ও আর হয় না! তাই সে ঠিক করল এবার ঐ গুরুদেব এদিকে এলে সে দীক্ষা না নিয়ে ছাড়বে না ৷ যেমন ভাবা তেমন কাজ ! কিছুদিনের মধ্যেই গুরুদেব লোকজন নিয়ে সেই বনপথে এসে হাজির । কাঠুরিয়া কুড়ুল কাঁধে তার পায়ে এসে পড়লো , বলল – ” এবার আমাকে দীক্ষা দিতেই হবে ! কারণ আমি স্বপ্ন দেখেছি যে আপনার শ্রীচরণের কৃপায় আমার অবস্থার উন্নতি হবে ৷ তাই আপনার শ্রীচরণপূজার অধিকার আমাকে দিতেই হবে ৷” গুরুদেব দেখল মহামুস্কিল ! এই বন-জঙ্গলে কাঠুরিয়া যেভাবে কুড়ুল উঁচিয়ে জোর-জবরদস্তি করছে তাতে তাকে চটিয়ে লাভ নেই ৷ হয়তো কুড়ুলের এক ঘা দিয়েই দেবে ! তাছাড়া এই বনপথে তাকে প্রায়ই যাওয়া-আসা করতে হয় – যদি কখনও বিপদ-আপদ আসে এই কাঠুরিয়া তার প্রামবাসীদের নিয়ে এসে সাহায্য করতে পারবে!
এইসব চিন্তা করে গুরুদেব কাঠুরিয়াকে দীক্ষা দিতে রাজী হয়ে গেল ।
দীক্ষা দেবার পর গুরুদেব তার নির্দিষ্ট গন্তব্যে চলে গেল , আর কাঠুরিয়া গুরুদেবের পা থেকে খুলে নেওয়া খড়ম-জোড়া রোজ পূজো করে আর ঠাকুরের কাছে অভাব মোচনের প্রার্থনা করে! একদিন হয়েছে কি – গভীর জঙ্গলে একটা পোড়োবাড়ির গায়ে একটা শুকিয়ে যাওয়া বড় গাছ কাটছিল কাঠুরিয়া। গাছটা বেশ বড়ো ছিল – তাই অর্ধেকের বেশী কাটতেই সেটা শিকড়সমেত উপড়ে গেল । আর কি আশ্চর্য্য ! শিকড়ের মাটির চাঙরের সাথে উঠে এল ঘড়া ঘড়া সোনার মোহর !!
জঙ্গলের ঐ পোড়োবাড়িটি হয়ত কোন রাজার মন্দির ছিল , আর সেখানে রাজা ধনরত্ন লুকিয়ে রেখেছিল – কিন্তু কালের গর্ভে সেই রহস্য হারিয়ে যাওয়ায় আর ঐ ধনরত্ন উদ্ধার হয়নি ।
হয়তো কাঠুরিয়ার আন্তরিক প্রার্থনায় ঈশ্বর সন্তুষ্ট হয়ে তাকে ঐ সম্পদ পাইয়ে দিলেন! সম্পদ পাওয়ার পর খুব তাড়াতাড়ি কাঠুরিয়া বিশাল ধনী হয়ে গেল! সে জঙ্গল সংলগ্ন এলাকার বেশ খানিকটা জমি কিনে নিয়ে একটা বিশাল অট্টালিকা বানাল! বাড়ীতে দারোয়ান , চাকর-বাকর , দাস-দাসী _লোকজনে পরিপূর্ণ!
কোন একদিন গুরুদেব ঐ পথে আবার আসছিল – বনের পথে এক বিরাট অট্টালিকা আর তার জৌলুস দেখে স্থানীয় লোকজনদের জিজ্ঞাসা করে গুরুদেব জানতে পারল যে সেই কাঠুরিয়াই দৈবাৎক্রমে বড়লোক হয়ে উঠেছে ৷ গুরুদেব তো মহাখুশী , দারোয়ানকে ঠেলে সরিয়ে বাড়ীর ভিতর ঢুকে হাঁকাডাকি শুরু করে দিল! শিষ্য কাঠুরিয়া গোলমাল শুনে বাইরে এসে দেখে গুরুদেব দাঁড়িয়ে ৷ সে ছুটে এসে গুরুদেবের পা দুটো জড়িয়ে ধরে বলল – “আমার কি সৌভাগ্য গুরুদেব ! আপনি স্বয়ং এসে হাজির হয়েছেন – আপনি অন্তর্যামী , আমি মনে মনে খুবই প্রার্থনা জানাচ্ছিলাম ঈশ্বরের কাছে, যাতে আপনার শুভাগমন ঘটে এই অধমের কুঠীরে !” গুরুদেব বলল – “কুঠীর কি বলছ বাবা ! এ যে রাজপ্রাসাদ ! তা তুমি সামান্য কাঠুরিয়া থেকে এই অতুল ঐশ্বর্য্যের মালিক হলে কি করে ?” কাঠুরিয়া বলল – “গুরুদেব সবই আপনার শ্রীচরণের কৃপায় । সেই যে আপনার শ্রীচরণের খড়ম রেখে দিয়েছিলাম – সেইটা রোজ পূজো করে ঈশ্বরের কাছে বড়লোক হবার প্রার্থনা জানাতাম , আর তাতেই এই ফল ! আমার যা কিছু দেখছেন তা সবই — আপনার শ্রীচরণের কৃপা !”
যাইহোক , শিষ্য গুরুদেবকে তার অট্টালিকার দোতলার একটি ঘরে বিশ্রামের জন্যে নিয়ে গেল ৷ সেখানে সোনার পালঙ্ক আর তেমনি মখমলের গদি-বিছানা ৷ গুরুদেব সোনার পালঙ্ক কখনো দেখেনি — বলল , ” বাবা ! এই সোনার পালঙ্ক কার ?” শিষ্য (কাঠুরিয়া) বলল – “গুরুদেব , এসব যা দেখছেন সবই আপনার , আপনার শ্রীচরণের কৃপাতেই তো সবকিছু !” তারপর খাবার ব্যাবস্থা ! সোনার বড় থালায় অন্ন পরিবেশন করা হোল , সোনার বাটিতে ডাল-তরকারি ! এসব দেখে তো গুরুদেবের চক্ষু চড়কগাছ ! বলল , ” এতসব সোনার থালা _ বাটি এগুলি কার ?” শিষ্য বলল , “গুরুদেব ! এ সবকিছু আপনারই ! আপনার শ্রীচরণের কৃপাতেই তো সবকিছু ! কাজেই এই সব বাসনপত্র , আসবাব সবই আপনার !” গুরুদেব মনে মনে ভাবল _” কাঠুরিয়া ব্যাটা খুবই বোকা, একেবারে মাথামোটা! কপালগুনে বড়লোক হয়েছে বটে _কিন্তু বুদ্ধিতে সেই কাঠুরিয়াই রয়ে গেছে! ‘সবকিছুই আপনার’ _ বলে দিচ্ছে যখন, তখন যাবার সময় এই সমস্ত কিছু সঙ্গে করে নিয়ে চলে যাব।”
কিন্তু আদর-যত্ন , খাওয়া-দাওয়া এতই সুন্দরভাবে হচ্ছে যে যেতেই মন চায় না! এদিকে জিনিসপত্রগুলির লোভও গুরুদেব ছাড়তে পারছে না! … [ক্রমশঃ]