উত্তর ভারতে একজন শিবভক্ত ছিল যার প্রকৃত নাম ‘যাই হোক কিছু একটা’ ছিল, কিন্তু লোকসমাজে সে ‘ঘণ্টাকর্ণ’ নামে পরিচিত ছিল । এর একটা কারণ ছিল । উত্তর ভারতের বেশীরভাগ স্থানেই রামনাম , রামায়ণ গান , কৃষ্ণনাম , হরিনাম ইত্যাদি খুবই হয় ৷ এই কৃষ্ণনাম বা রামনাম ঐ শিবভক্তটির কানে যাতে না যায় – তাই সে দুটি কানের দুপাশে দুটো ঘন্টা বেঁধে ঝুলিয়ে রাখতো । রাস্তাঘাটে বেরোলে যেই কৃষ্ণনাম, হরিনাম বা রামনাম শুনতে পেতো – অমনি মাথা ঝাঁকিয়ে দু-কানের ঘণ্টাগুলো নড়াতো আর ঢং ঢং করে ঘন্টার ধ্বনিই শুনতে পেতো, অন্য আওয়াজগুলি ঘন্টার ধ্বনিতে চাপা পড়ে যেতো।
সে শিবনাম , শিবগুণগান ছাড়া অন্য আর কিছু শুনবে না – এই তার সিদ্ধান্ত! শিবসাধক হিসাবে এই ঘন্টাকর্ন যথেষ্টই উন্নত ছিল। অথচ শিবের এই একনিষ্ঠ ভক্তটির একগুঁয়েমি দেখে তার আরাধ্য দেবতা শিব দেখল মহা মুস্কিল ! এই খ্যাপা ভক্তকে নিয়ে কি করা যায় ! হরি-হর একই তত্ত্ব, দুই-য়ে মিলেই যে এক ও অদ্বৈত _ এই ব্যাপারটা কি করে ওকে বোঝানো যায় !
এক সন্ধ্যায় যখন ঘন্টাকর্ণ শিবমূর্তির সামনে আরতি করছিল , তখন মহাদেব শিব, __হরি-হর অভিন্ন রূপে তার সামনে মূর্তির জায়গায় প্রকট হলেন! একই মূর্ত্তির বামদিকটা হরি আর ডানদিকটা হর! মুখমন্ডলের বামদিকের কপালে তিলক , মাথায় মুকুট , বাম হাতদুটোয় শঙ্খ-চক্র । আর মুখমন্ডলের ডানদিকের কপালে ভস্মলেপা , মাথায় জটা , ডান হাতে ত্রিশূল , ডমরু!
ঘণ্টাকর্ণ তন্ময় হয়ে আরতি করছিল – হঠাৎ ধূপের ধোঁয়া আর প্রদীপের আলোর আলো-আধাঁরিতে দেখল, তার আরাধ্য দেবতা –প্রকট হরি-হর মূর্ত্তিতে! কিন্তু তার আরাধ্য _ সাক্ষাৎ তার সামনে জীবন্তভাবে প্রকট হয়েছে, এই আনন্দের থেকেও তার দুঃখ লাগল বেশী, যখন ঘন্টাকর্ন সেই মূর্ত্তির অর্ধেক অংশে হরি বা নারায়ণকে দেখতে পেল!
সেই ভয়ংকর শিবভক্ত তখন যে কাজটা করল তা ঘন্টাকর্নের মতো দু-একজন বীরভক্ত-ই করতে পারে ! সে হরিহর মূর্ত্তির বাম অংশ তার বাম হাত দিয়ে চাপা দিয়ে শুধু ডান অংশ অর্থাৎ নারায়ণ কে চাপা দিয়ে হর বা মহাদেব অংশকে অারতি করতে শুরু করল!
অলক্ষ্যে হরিহর ভক্তের এই ভীষণ কান্ড দেখে হেসে উঠলেন! তিনি দেখলেন তাঁর ভক্তের এই যে তমোভক্তি , এর ভীষণ জোর! একে চট্ করে ভেঙে ফেলা সম্ভব নয় ৷ সাধন ভজনের দ্বারা ধীরে ধীরে সাধক উন্নত হয় এবং সাধনার শেষ সীমায় পৌঁছে জ্ঞানলাভ হয়। আর জ্ঞানলাভ হলেই দ্বৈতভাব কেটে গিয়ে সাধক অদ্বৈত তত্ত্বে উপনীত হতে পারে! অবশ্যই তার জন্য কালের অপেক্ষা করতে হয়!”
গুরু মহারাজ এতদূর বলার পরই হেসে ফেললেন ৷ তারপর বললেন – “আমার এখানেও অনেক তমোভক্তি সম্পন্ন মানুষ আসা যাওয়া করে! জানো, এমন অনেকে রয়েছে, যারা আমাকে প্রণাম করার ছলে এসে পায়ের বুড়ো আঙুল কামড়ে ধরে!! তোমরা অনেকেই হয়তো কথাটা বিশ্বাস করছ না _ভাবছ এটা আবার কি কারনে কেউ করতে যাবে! কারণটা হোল _সে কোথাও শুনেছে যে, মহাপুরুষের পায়ের বুড়ো আঙুল চুষলে (কামড়ালে) শক্তির Transfar হয়!
আর একবার একজন তমোঃপ্রধান ভক্ত শ্রাবণ মাসের সোমবারে এক ঘড়া গঙ্গার জল নিয়ে এসে আমাকে বলল – ‘আজ শিবের জন্মবার , তোমার মাথায় জল ঢাললেই আমার জন্ম সার্থক হবে । নেমে এসো , তোমার মাথায় জল ঢালি৷’ বোঝ কান্ডটা! সেদিন মুরারী এসে কোনক্রমে ওর হাত থেকে আমাকে রক্ষা করেছিল।
এছাড়া আরও বলছি শোন _এখানে কত মেয়ে ভক্তরা আসে , যারা আমাকে প্রণাম করার নাম করে সিঁথির সিঁদুর আমার দুটো পায়ে ঘসে ঘসে লাগিয়ে দেয়! মনে মনে হয়তো ভাবে_ তার সিঁথির সিঁদুর অক্ষয় হবে!
জানো, আমার শরীরের চামড়া খুবই নরম! সিঁদুরে পারদ বা নানারকম কেমিক্যাল থাকে , ওগুলোয় আমার পা জ্বালাপোড়া করে , খুব অস্বস্তি হয়! এছাড়া আমার পড়নের গেরুয়া কাপড়টিতেও সিঁদুর লেগে যায় –সে ও এক অস্বস্তির ব্যাপার!
কিন্তু কি করব বলো ? আমাকে প্রসন্ন করা তো ওদের উদ্দেশ্য নয় – নিজের নিজের মনের মধ্যে যে বাসনা রয়েছে, সেটা চরিতার্থ করাটাই যেন আসল !আমি তো reaction করতে পারি না বরং আমার ওদের জন্য করুণা হয়! সেইজন্য ওদের জন্য মা জগদম্বার কাছে প্রার্থনা করি, যাতে ওদের সুমতি হয় ।।” [ক্রমশঃ]
সে শিবনাম , শিবগুণগান ছাড়া অন্য আর কিছু শুনবে না – এই তার সিদ্ধান্ত! শিবসাধক হিসাবে এই ঘন্টাকর্ন যথেষ্টই উন্নত ছিল। অথচ শিবের এই একনিষ্ঠ ভক্তটির একগুঁয়েমি দেখে তার আরাধ্য দেবতা শিব দেখল মহা মুস্কিল ! এই খ্যাপা ভক্তকে নিয়ে কি করা যায় ! হরি-হর একই তত্ত্ব, দুই-য়ে মিলেই যে এক ও অদ্বৈত _ এই ব্যাপারটা কি করে ওকে বোঝানো যায় !
এক সন্ধ্যায় যখন ঘন্টাকর্ণ শিবমূর্তির সামনে আরতি করছিল , তখন মহাদেব শিব, __হরি-হর অভিন্ন রূপে তার সামনে মূর্তির জায়গায় প্রকট হলেন! একই মূর্ত্তির বামদিকটা হরি আর ডানদিকটা হর! মুখমন্ডলের বামদিকের কপালে তিলক , মাথায় মুকুট , বাম হাতদুটোয় শঙ্খ-চক্র । আর মুখমন্ডলের ডানদিকের কপালে ভস্মলেপা , মাথায় জটা , ডান হাতে ত্রিশূল , ডমরু!
ঘণ্টাকর্ণ তন্ময় হয়ে আরতি করছিল – হঠাৎ ধূপের ধোঁয়া আর প্রদীপের আলোর আলো-আধাঁরিতে দেখল, তার আরাধ্য দেবতা –প্রকট হরি-হর মূর্ত্তিতে! কিন্তু তার আরাধ্য _ সাক্ষাৎ তার সামনে জীবন্তভাবে প্রকট হয়েছে, এই আনন্দের থেকেও তার দুঃখ লাগল বেশী, যখন ঘন্টাকর্ন সেই মূর্ত্তির অর্ধেক অংশে হরি বা নারায়ণকে দেখতে পেল!
সেই ভয়ংকর শিবভক্ত তখন যে কাজটা করল তা ঘন্টাকর্নের মতো দু-একজন বীরভক্ত-ই করতে পারে ! সে হরিহর মূর্ত্তির বাম অংশ তার বাম হাত দিয়ে চাপা দিয়ে শুধু ডান অংশ অর্থাৎ নারায়ণ কে চাপা দিয়ে হর বা মহাদেব অংশকে অারতি করতে শুরু করল!
অলক্ষ্যে হরিহর ভক্তের এই ভীষণ কান্ড দেখে হেসে উঠলেন! তিনি দেখলেন তাঁর ভক্তের এই যে তমোভক্তি , এর ভীষণ জোর! একে চট্ করে ভেঙে ফেলা সম্ভব নয় ৷ সাধন ভজনের দ্বারা ধীরে ধীরে সাধক উন্নত হয় এবং সাধনার শেষ সীমায় পৌঁছে জ্ঞানলাভ হয়। আর জ্ঞানলাভ হলেই দ্বৈতভাব কেটে গিয়ে সাধক অদ্বৈত তত্ত্বে উপনীত হতে পারে! অবশ্যই তার জন্য কালের অপেক্ষা করতে হয়!”
গুরু মহারাজ এতদূর বলার পরই হেসে ফেললেন ৷ তারপর বললেন – “আমার এখানেও অনেক তমোভক্তি সম্পন্ন মানুষ আসা যাওয়া করে! জানো, এমন অনেকে রয়েছে, যারা আমাকে প্রণাম করার ছলে এসে পায়ের বুড়ো আঙুল কামড়ে ধরে!! তোমরা অনেকেই হয়তো কথাটা বিশ্বাস করছ না _ভাবছ এটা আবার কি কারনে কেউ করতে যাবে! কারণটা হোল _সে কোথাও শুনেছে যে, মহাপুরুষের পায়ের বুড়ো আঙুল চুষলে (কামড়ালে) শক্তির Transfar হয়!
আর একবার একজন তমোঃপ্রধান ভক্ত শ্রাবণ মাসের সোমবারে এক ঘড়া গঙ্গার জল নিয়ে এসে আমাকে বলল – ‘আজ শিবের জন্মবার , তোমার মাথায় জল ঢাললেই আমার জন্ম সার্থক হবে । নেমে এসো , তোমার মাথায় জল ঢালি৷’ বোঝ কান্ডটা! সেদিন মুরারী এসে কোনক্রমে ওর হাত থেকে আমাকে রক্ষা করেছিল।
এছাড়া আরও বলছি শোন _এখানে কত মেয়ে ভক্তরা আসে , যারা আমাকে প্রণাম করার নাম করে সিঁথির সিঁদুর আমার দুটো পায়ে ঘসে ঘসে লাগিয়ে দেয়! মনে মনে হয়তো ভাবে_ তার সিঁথির সিঁদুর অক্ষয় হবে!
জানো, আমার শরীরের চামড়া খুবই নরম! সিঁদুরে পারদ বা নানারকম কেমিক্যাল থাকে , ওগুলোয় আমার পা জ্বালাপোড়া করে , খুব অস্বস্তি হয়! এছাড়া আমার পড়নের গেরুয়া কাপড়টিতেও সিঁদুর লেগে যায় –সে ও এক অস্বস্তির ব্যাপার!
কিন্তু কি করব বলো ? আমাকে প্রসন্ন করা তো ওদের উদ্দেশ্য নয় – নিজের নিজের মনের মধ্যে যে বাসনা রয়েছে, সেটা চরিতার্থ করাটাই যেন আসল !আমি তো reaction করতে পারি না বরং আমার ওদের জন্য করুণা হয়! সেইজন্য ওদের জন্য মা জগদম্বার কাছে প্রার্থনা করি, যাতে ওদের সুমতি হয় ।।” [ক্রমশঃ]