রামায়ণের একটি কাহিনীতে শ্রবণকুমার নামে একটি ছেলের কথা পাওয়া যায় যে তার অন্ধ এবং বৃদ্ধ পিতামাতাকে প্রাণাপেক্ষা ভালোবাসতো এবং তাদের অন্তিম ইচ্ছাপূরণের জন্য সে তার জীবনের ভোগ-সুখ-সাধ বিসর্জন দিয়ে একটা বাঁশের দুইধারে পিতামাতা দুজনকে দড়ির ঝোলনায় বসিয়ে, কাঁধে নিয়ে দেশ থেকে দেশান্তরে তীর্থে তীর্থে ঘুরে বেড়াত ৷ বহু পূর্বে মহারাষ্ট্রের পুন্ডরপুর অঞ্চলে পুন্ডরীক(পুন্ডলিক!) নামে একটি ছেলে তদ্রুপই পিতামাতার সেবায় নিজের জীবন-যৌবন উৎসর্গ করে দিয়েছিল ৷একনিষ্ঠভাবে পিতামাতার সেবাকেই ঐ যুবক ঈশ্বরের সেবা মনে কোরতো! সারাদিন সে পিতামাতাকে নিয়েই থাকতো, অন্যদিকে মন দেবার সে আর সময় করেই উঠতে পারতো না! ফলে আলাদা করে ধ্যান- জপ, সাধন-ভজন করার সময় তার ছিল না!!
যৌবনের শত প্রলোভনও পুন্ডরীককে তার বৃদ্ধ পিতামাতার সেবাকার্য্য থেকে কোনদিন একচুলও বিচ্যুত করতে পারেনি! ঐ গ্রামের জাগ্রত দেবতা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ! তিনি কিন্তু পিতামাতার প্রতি একনিষ্ঠ ভক্তির জন্য ঐ ছেলেটির উপর বিশেষ প্রসন্ন ছিলেন ! যাই হোক, এইভাবেই দিন কেটে যাচ্ছিল। কিন্তু একদিনের ঘটনা এমন ঘটল যে সেই ঘটনায় পুন্ডরীক নিজেই ইতিহাস হয়ে গেল!! সেই ঘটনাটি আলোচনা করা যাক!!
ঘটনা হয়েছিল কি – সেদিন ভগবান কৃষ্ণের কোন এক বিশেষ পূজার দিন (খুব সম্ভবত জন্মাষ্ঠমী), গ্রামের সবাই ঐ গ্রামেরই একটি বিশেষ স্থানে সমবেত হয়েছে – সেখানে মহা-ধূমধাম সহকারে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পূজা হবে , কত বাদ্যি-বাজনা , নাচ-গান হবে! আর সেই সব মজা দেখার জন্য এবং অনুষ্ঠানে যোগ দেবার জন্য, নতুন নতুন পোষাক পড়ে সেদিন মানুষের ঢল নেমেছিল সেখানে ! গ্রামের যেন সমস্ত মানুষ গিয়ে জুটেছিল সেখানকার কৃষ্ণমন্দিরে!
অল্পবয়সী ছেলেদের মধ্যে শুধুমাত্র পুন্ডরীকই সেদিন বাড়ীর বাইরে পা রাখেনি! সেদিন ছিল প্রচন্ড গরম ! সন্ধ্যার পর-ই তার বৃদ্ধ বাবা-মা শুয়ে পড়েছিল আর প্রচন্ড গরমে তাদের ঘুম আসছিল না, গরমে দুজনেই গরমে হাঁসফাঁস করছিল! পিতা মাতার গরমে কষ্ট পাওয়া এবং ছটফট করা দেখে পুন্ডরীক পিতা-মাতার মাথা নিজের দুই কোলে রেখে দুহাতে দুটো তালপাতার পাখা নিয়ে ক্রমাগত তাদের মাথায় গায়ে হাওয়া দিয়ে যাচ্ছিল ৷ ঠান্ডা হাওয়ার স্পর্শ্য পেয়ে অচিরেই বৃদ্ধ-বৃদ্ধা নিশ্চিন্তে ছেলের কোলে মাথা দিয়ে ঘুমিয়েও পড়েছিল ৷
গ্রামের সবাই সেই আনন্দ-অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গেছে – শুধু পুন্ডরীক ছাড়া ! ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দেখলেন _এই গ্রামের মধ্যে তাঁর সবচাইতে প্রিয় ভক্তটিই অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত! তাকে তো আনতেই হবে _নাহলে তাঁর লীলা প্রচার হবে কি করে!! পুন্ডরীক কে আনার জন্য ভগবান একটা ছলনার আশ্রয় নিলেন! তিনি মন্দির ছেড়ে স্বয়ং এসে হাজির হলেন পুন্ডরীকের পর্ণকুঠীরে ৷ আলোয় ঝলমল করে উঠল চারিদিক – পুন্ডরীকও ভাবতে শুরু করল__” এত আলো কোথা থেকে এল !” এমন সময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মধুর কন্ঠে পুন্ডরীককে উদ্দেশ্য করে তার অনুষ্ঠানে না যাবার হেতু কি তা জিজ্ঞাসা করলেন ৷ একে তো ঘরে এত আলো , তার উপর আবার ঐ আলোকময় জ্যোতির্ময় মূর্ত্তি কথা বলছে দেখে বিরক্ত হ’ল পুন্ডরীক ৷ বহুকষ্টে তার বৃদ্ধ পিতামাতা ঘুমিয়েছে — যদি জেগে যায় ! তাই সে জ্যোতির্ময় শরীরবিশিষ্ট ভগবানকে ইঙ্গিতে ঠোঁটে আঙুল দিয়ে দেখালো “চুপ” ।
ভগবান তাও বললেন – “পুন্ডরীক ! আমি ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ! তোমার কুঠীরে এসেছি , আমাকে বসতেও বলবে না ?”
পুন্ডরীক মুখে আঙুল রেখেই ফিসফিসিয়ে বলল “ওইখানে চুপটি করে বস। কিন্তু কোন কথা বলবে না৷”
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আবার বললেন _”পুন্ডরীক! আমি স্বয়ং ভগবান! কত সাধক শত-সহস্র বৎসর হেঁটমুন্ড উর্দ্ধমুখী হয়ে সাধনা করেও আমাকে লাভ করতে পারে না __আর আমি আজ নিজে থেকে তোমার কাছে এসেছি! তুমি কি জানো _এটা তোমার কত বড় সৌভাগ্য!!”
পুন্ডরীকের একটাই কথা _” তুমি যে হও-সে হও! এখন দয়া করে চুপ করো! এই একটা ইঁট দিচ্ছি এইটার উপর বস।” এই বলে পুন্ডরীক একটা ইঁট ভগবানের দিকে ছুঁড়ে দিল।
ঐ ইঁটের উপর দাঁড়িয়েই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জ্যোতির্ময় বিগ্রহ মূর্ত্তিতে রূপ নিল!
এদিকে মন্দিরে বিগ্রহ নাই দেখে গ্রামবাসী ভক্তরা এদিক_ওদিক ছোটাছুটি – খোঁজাখুঁজি করছিল! হটাৎ পুন্ডরীকের কুঠীরে এত জ্যোতি দেখে গ্রামবাসী সেখানে এসে দেখে কৃষ্ণমূর্ত্তি একটা ইঁটের উপর দন্ডায়মাণ ৷ মারাঠা ভাষায় ‘বিট’ মানে ইঁট , আর ‘ঠল’ মানে দন্ডায়মাণ বা স্থিত , সেই থেকে ঐ বিগ্রহের নাম হ’ল বিটঠলজী ৷ পরবর্ত্তীতে এই বিটঠলজী-র মন্দির মহারাষ্ট্রের ভক্তদের অন্যতম ভক্তিকেন্দ্র হিসাবে পরিগনিত হয়েছিল। আর বহু সাধক এই বিটঠলজীকে কেন্দ্র করে পরবর্ত্তীতে সিদ্ধিলাভও করেছিলেন ৷ [ক্রমশঃ]
যৌবনের শত প্রলোভনও পুন্ডরীককে তার বৃদ্ধ পিতামাতার সেবাকার্য্য থেকে কোনদিন একচুলও বিচ্যুত করতে পারেনি! ঐ গ্রামের জাগ্রত দেবতা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ! তিনি কিন্তু পিতামাতার প্রতি একনিষ্ঠ ভক্তির জন্য ঐ ছেলেটির উপর বিশেষ প্রসন্ন ছিলেন ! যাই হোক, এইভাবেই দিন কেটে যাচ্ছিল। কিন্তু একদিনের ঘটনা এমন ঘটল যে সেই ঘটনায় পুন্ডরীক নিজেই ইতিহাস হয়ে গেল!! সেই ঘটনাটি আলোচনা করা যাক!!
ঘটনা হয়েছিল কি – সেদিন ভগবান কৃষ্ণের কোন এক বিশেষ পূজার দিন (খুব সম্ভবত জন্মাষ্ঠমী), গ্রামের সবাই ঐ গ্রামেরই একটি বিশেষ স্থানে সমবেত হয়েছে – সেখানে মহা-ধূমধাম সহকারে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পূজা হবে , কত বাদ্যি-বাজনা , নাচ-গান হবে! আর সেই সব মজা দেখার জন্য এবং অনুষ্ঠানে যোগ দেবার জন্য, নতুন নতুন পোষাক পড়ে সেদিন মানুষের ঢল নেমেছিল সেখানে ! গ্রামের যেন সমস্ত মানুষ গিয়ে জুটেছিল সেখানকার কৃষ্ণমন্দিরে!
অল্পবয়সী ছেলেদের মধ্যে শুধুমাত্র পুন্ডরীকই সেদিন বাড়ীর বাইরে পা রাখেনি! সেদিন ছিল প্রচন্ড গরম ! সন্ধ্যার পর-ই তার বৃদ্ধ বাবা-মা শুয়ে পড়েছিল আর প্রচন্ড গরমে তাদের ঘুম আসছিল না, গরমে দুজনেই গরমে হাঁসফাঁস করছিল! পিতা মাতার গরমে কষ্ট পাওয়া এবং ছটফট করা দেখে পুন্ডরীক পিতা-মাতার মাথা নিজের দুই কোলে রেখে দুহাতে দুটো তালপাতার পাখা নিয়ে ক্রমাগত তাদের মাথায় গায়ে হাওয়া দিয়ে যাচ্ছিল ৷ ঠান্ডা হাওয়ার স্পর্শ্য পেয়ে অচিরেই বৃদ্ধ-বৃদ্ধা নিশ্চিন্তে ছেলের কোলে মাথা দিয়ে ঘুমিয়েও পড়েছিল ৷
গ্রামের সবাই সেই আনন্দ-অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গেছে – শুধু পুন্ডরীক ছাড়া ! ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দেখলেন _এই গ্রামের মধ্যে তাঁর সবচাইতে প্রিয় ভক্তটিই অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত! তাকে তো আনতেই হবে _নাহলে তাঁর লীলা প্রচার হবে কি করে!! পুন্ডরীক কে আনার জন্য ভগবান একটা ছলনার আশ্রয় নিলেন! তিনি মন্দির ছেড়ে স্বয়ং এসে হাজির হলেন পুন্ডরীকের পর্ণকুঠীরে ৷ আলোয় ঝলমল করে উঠল চারিদিক – পুন্ডরীকও ভাবতে শুরু করল__” এত আলো কোথা থেকে এল !” এমন সময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মধুর কন্ঠে পুন্ডরীককে উদ্দেশ্য করে তার অনুষ্ঠানে না যাবার হেতু কি তা জিজ্ঞাসা করলেন ৷ একে তো ঘরে এত আলো , তার উপর আবার ঐ আলোকময় জ্যোতির্ময় মূর্ত্তি কথা বলছে দেখে বিরক্ত হ’ল পুন্ডরীক ৷ বহুকষ্টে তার বৃদ্ধ পিতামাতা ঘুমিয়েছে — যদি জেগে যায় ! তাই সে জ্যোতির্ময় শরীরবিশিষ্ট ভগবানকে ইঙ্গিতে ঠোঁটে আঙুল দিয়ে দেখালো “চুপ” ।
ভগবান তাও বললেন – “পুন্ডরীক ! আমি ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ! তোমার কুঠীরে এসেছি , আমাকে বসতেও বলবে না ?”
পুন্ডরীক মুখে আঙুল রেখেই ফিসফিসিয়ে বলল “ওইখানে চুপটি করে বস। কিন্তু কোন কথা বলবে না৷”
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আবার বললেন _”পুন্ডরীক! আমি স্বয়ং ভগবান! কত সাধক শত-সহস্র বৎসর হেঁটমুন্ড উর্দ্ধমুখী হয়ে সাধনা করেও আমাকে লাভ করতে পারে না __আর আমি আজ নিজে থেকে তোমার কাছে এসেছি! তুমি কি জানো _এটা তোমার কত বড় সৌভাগ্য!!”
পুন্ডরীকের একটাই কথা _” তুমি যে হও-সে হও! এখন দয়া করে চুপ করো! এই একটা ইঁট দিচ্ছি এইটার উপর বস।” এই বলে পুন্ডরীক একটা ইঁট ভগবানের দিকে ছুঁড়ে দিল।
ঐ ইঁটের উপর দাঁড়িয়েই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জ্যোতির্ময় বিগ্রহ মূর্ত্তিতে রূপ নিল!
এদিকে মন্দিরে বিগ্রহ নাই দেখে গ্রামবাসী ভক্তরা এদিক_ওদিক ছোটাছুটি – খোঁজাখুঁজি করছিল! হটাৎ পুন্ডরীকের কুঠীরে এত জ্যোতি দেখে গ্রামবাসী সেখানে এসে দেখে কৃষ্ণমূর্ত্তি একটা ইঁটের উপর দন্ডায়মাণ ৷ মারাঠা ভাষায় ‘বিট’ মানে ইঁট , আর ‘ঠল’ মানে দন্ডায়মাণ বা স্থিত , সেই থেকে ঐ বিগ্রহের নাম হ’ল বিটঠলজী ৷ পরবর্ত্তীতে এই বিটঠলজী-র মন্দির মহারাষ্ট্রের ভক্তদের অন্যতম ভক্তিকেন্দ্র হিসাবে পরিগনিত হয়েছিল। আর বহু সাধক এই বিটঠলজীকে কেন্দ্র করে পরবর্ত্তীতে সিদ্ধিলাভও করেছিলেন ৷ [ক্রমশঃ]