এক চক্ষুষ্মান ব্যক্তির একটি জন্মান্ধ বন্ধু ছিল । তার জীবনের সবরকম ঘটে যাওয়া ঘটনা ও অনুভূতি ঐ ব্যক্তি অন্ধ ব্যক্তিটির সাথে Share করত ৷ একদিন চক্ষুষ্মান ব্যক্তিটি জীবনে প্রথম কোন সহৃদয় মহিলার দেওয়া এক গ্লাস দুধ পান করে । দুধের স্বাদ গ্রহণ কোরে এবং দুধের পুষ্টিগুণের মাহাত্ম্য জেনে অভিভূত ঐ ব্যক্তি তাড়াতাড়ি তার বন্ধুর কাছে এসে সবিস্তার তাকে দুধপানের ঘটনা বলল_আর দুধের স্বাদ যে অপূর্ব এবং তার কত গুণ ইত্যাদি কথাও বলতে ছাড়ল না । সব শোনার পর অন্ধ বন্ধুটি তাকে জিজ্ঞাসা করল – “আচ্ছা বন্ধু ! তুমি দুধের বর্ণনা তো দিলে না ? এটি দেখতে কেমন ?” (এই গল্পটি বহু প্রাচীন আমলের এবং পণ্ডিত মহলে সমাদৃত । তাই গল্পের কথোপকথন সংস্কৃতে হলেই ভাল হয় ।) — অন্ধ ব্যক্তি :- “কিম্ দুগ্ধম্ ?” চক্ষুষ্মান ব্যক্তি :- “দুগ্ধম্ শুভ্রম্ ।” অন্ধ ব্যক্তি শুভ্র বা সাদা কেমন _তাও জানে না। তাই সে পুনরায় জিজ্ঞাসা করল__ “কিম্ শুভ্রম্ ?” ঐ ব্যক্তি অনেক ভেবে চিন্তে যাতে অন্ধটি বুঝতে পারে এমন উদাহরণ টেনে বলল_”বকসদৃশম্।”
কিন্তু অন্ধ তো বক কেমন তাও জানে না, তাই পুনরায় জিজ্ঞাসা করল – “কিম্ বকঃ ?” চক্ষুষ্মান ব্যক্তি মনে মনে ভাবল যে বক তো জলে থাকে, তাই ওইটা বললে অন্ধবন্ধু নিশ্চয়ই বুঝবে। তাই সে উত্তর দিল “সলিলে স্থিতঃ।” অন্ধ সেটাও ভালো বুঝতে পারছিল না। তাই আবার জিজ্ঞাসা করল _”কিম্ সলিলম্ ?” ঐ ব্যক্তি এবার ছন্দ মিলিয়ে উত্তর দিল – “স্বচ্ছসলিলম্ ।” অন্ধ স্বচ্ছ কি জিনিস সেটা বুঝতে পারল না। তাই জানতে চাইল “কিম্ স্বচ্ছম্ ?” চক্ষুষ্মান ব্যক্তি পডল মহা মুস্কিলে! এবার কি বলে _কি বলে! ভাবতে ভাবতেই মাথায় বুদ্ধি এসে গেল! বলল _”সীসা(কাঁচ)সদৃশম্ ।” অন্ধ সিসা-ও জানে না। তাই তার আবার জিজ্ঞাসা _”সীসা কিম্ ?”
এরপর ঘটনা ঘটল কি__চক্ষুস্মান ব্যক্তিটি কাছেই একটি কাঁচ খন্ড দেখতে পেয়ে সেটাকে ঐ অন্ধের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল_”এষা সিসা” ৷ অন্ধ তাড়াতাড়ি হাতে নিয়ে ওটির স্বাদ গ্রহনের জন্য (কারণ দুধের স্বাদ বোঝাতেই এত কথার অবতারণা, অন্ধের মাথায় ওইটাই ঘুরছিল।) _যেই না ওটি মুখে পুরে নিয়ে কামড় বসিয়েছে – অমনি মুখের ভিতরের অংশ কেটে, দাঁতে বিশ্রী চাপ পড়ে একেবারে নাজেহাল অবস্থা!! অন্ধ থু – থু – করে কাঁচ টুকরো মুখের বাইরে ফেলে দিয়ে যন্ত্রণা সামলে বলল – “এই যদি তোমার দুধের স্বাদ হয়, তাহলে আমার দুধ খেয়ে দরকার নেই ।”
এতদূর পর্যন্ত গল্পটি বলে গুরু মহারাজ উপস্থিত সকলকে উদ্দেশ্য করে বললেন – ঋষিদের দ্বারা উক্ত বা বিভিন্ন মহাপুরুষের দ্বারা সৃষ্ট ধর্মমতের সারভাগ — বিভিন্ন পন্ডিত ব্যক্তিদের দ্বারা ধর্মশাস্ত্র বা ধর্মগ্রন্থ হিসাবে লিখিত হয় ৷ পরবর্ত্তীতে সেগুলির আবার ব্যাখ্যাকার-রা ব্যাখ্যা করেন। সেগুলি ও শাশ্ত্র হয়। এইভাবে মূল ভাবটি বিকৃত হতে হতে বহুদিন পরে তা সম্পূর্ণ পাল্টে যায় ৷ কোন মহাপুরুষের শিক্ষাও এইরকমভাবেই কয়েক জেনারেশনের মধ্যে পরিবর্তিত হয়ে যায় ৷ আর এতটাই পরিবর্তিত হয় যে — দুগ্ধ, কাঁচখণ্ডে পরিণত হয়ে যায় ৷ বর্ত্তমান বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মমতের যে ভয়ঙ্কর রূপ পরিলক্ষিত হচ্ছে, সেটি ওই ভাবেই হয়েছে । গুরু মহারাজ বললেন বিবেকহীন বুদ্ধিমান মানুষ শব্দজালে ফেঁসে যায় ৷ দুগ্ধম্ – শুভ্রম্ – বকম্ – স্বচ্ছম্ – করতে করতে দুধ-কাঁচে এসে পৌঁছায় ৷ আর সেইটাকে দিয়ে মূলকে খুঁজতে চায় বা মূলের আস্বাদন করতে চায় ৷ কিন্তু তাতো আর পাওয়া যায় না! ফলে অনেক সময় পাওয়া যায় না বলেই তা বর্জনীয় হয়ে যায়! তাই শব্দজালে আবদ্ধ হওয়া ভালো নয় ৷ ওটা পন্ডিতদের তর্কবিদ্যার কচ্-কচানি । পণ্ডিত শব্দটাই ‘পণ্ড’ শব্দ থেকে এসেছে ৷ স্থান-কাল-পাত্র ভেদে ধর্মের মূল ভাব, মহাপুরুষের মূল শিক্ষা, শাস্ত্রের মূল বক্তব্য পাল্টে পাল্টে যায় ৷ শেষে মানুষ লক্ষ্য ভুলে উপলক্ষ্যে মেতে যায়। ঈশ্বরকে ছেড়ে আচার-অনুষ্ঠান, জাত-পাত, বর্ণভেদ, মত-ভেদ এসব-কে প্রাধান্য দেয় ৷ ঈশ্বর বা আল্লার চেয়ে পণ্ডিত বা মোল্লারা বড় হয়ে দাঁড়ায় । মূল শিক্ষাটি কি তার অণ্বেষণ না করে সাধারণ মানুষ সমকালীন ধর্মীয় নেতার মত-কে প্রাধান্য দিয়ে বসে ৷ ফলে সমাজে নেমে আসে দুর্বিষহ যন্ত্রণা । শুরু হয় হানাহানি, মারামারি – রক্তপাত ৷৷(ক্রমশঃ)
কিন্তু অন্ধ তো বক কেমন তাও জানে না, তাই পুনরায় জিজ্ঞাসা করল – “কিম্ বকঃ ?” চক্ষুষ্মান ব্যক্তি মনে মনে ভাবল যে বক তো জলে থাকে, তাই ওইটা বললে অন্ধবন্ধু নিশ্চয়ই বুঝবে। তাই সে উত্তর দিল “সলিলে স্থিতঃ।” অন্ধ সেটাও ভালো বুঝতে পারছিল না। তাই আবার জিজ্ঞাসা করল _”কিম্ সলিলম্ ?” ঐ ব্যক্তি এবার ছন্দ মিলিয়ে উত্তর দিল – “স্বচ্ছসলিলম্ ।” অন্ধ স্বচ্ছ কি জিনিস সেটা বুঝতে পারল না। তাই জানতে চাইল “কিম্ স্বচ্ছম্ ?” চক্ষুষ্মান ব্যক্তি পডল মহা মুস্কিলে! এবার কি বলে _কি বলে! ভাবতে ভাবতেই মাথায় বুদ্ধি এসে গেল! বলল _”সীসা(কাঁচ)সদৃশম্ ।” অন্ধ সিসা-ও জানে না। তাই তার আবার জিজ্ঞাসা _”সীসা কিম্ ?”
এরপর ঘটনা ঘটল কি__চক্ষুস্মান ব্যক্তিটি কাছেই একটি কাঁচ খন্ড দেখতে পেয়ে সেটাকে ঐ অন্ধের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল_”এষা সিসা” ৷ অন্ধ তাড়াতাড়ি হাতে নিয়ে ওটির স্বাদ গ্রহনের জন্য (কারণ দুধের স্বাদ বোঝাতেই এত কথার অবতারণা, অন্ধের মাথায় ওইটাই ঘুরছিল।) _যেই না ওটি মুখে পুরে নিয়ে কামড় বসিয়েছে – অমনি মুখের ভিতরের অংশ কেটে, দাঁতে বিশ্রী চাপ পড়ে একেবারে নাজেহাল অবস্থা!! অন্ধ থু – থু – করে কাঁচ টুকরো মুখের বাইরে ফেলে দিয়ে যন্ত্রণা সামলে বলল – “এই যদি তোমার দুধের স্বাদ হয়, তাহলে আমার দুধ খেয়ে দরকার নেই ।”
এতদূর পর্যন্ত গল্পটি বলে গুরু মহারাজ উপস্থিত সকলকে উদ্দেশ্য করে বললেন – ঋষিদের দ্বারা উক্ত বা বিভিন্ন মহাপুরুষের দ্বারা সৃষ্ট ধর্মমতের সারভাগ — বিভিন্ন পন্ডিত ব্যক্তিদের দ্বারা ধর্মশাস্ত্র বা ধর্মগ্রন্থ হিসাবে লিখিত হয় ৷ পরবর্ত্তীতে সেগুলির আবার ব্যাখ্যাকার-রা ব্যাখ্যা করেন। সেগুলি ও শাশ্ত্র হয়। এইভাবে মূল ভাবটি বিকৃত হতে হতে বহুদিন পরে তা সম্পূর্ণ পাল্টে যায় ৷ কোন মহাপুরুষের শিক্ষাও এইরকমভাবেই কয়েক জেনারেশনের মধ্যে পরিবর্তিত হয়ে যায় ৷ আর এতটাই পরিবর্তিত হয় যে — দুগ্ধ, কাঁচখণ্ডে পরিণত হয়ে যায় ৷ বর্ত্তমান বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মমতের যে ভয়ঙ্কর রূপ পরিলক্ষিত হচ্ছে, সেটি ওই ভাবেই হয়েছে । গুরু মহারাজ বললেন বিবেকহীন বুদ্ধিমান মানুষ শব্দজালে ফেঁসে যায় ৷ দুগ্ধম্ – শুভ্রম্ – বকম্ – স্বচ্ছম্ – করতে করতে দুধ-কাঁচে এসে পৌঁছায় ৷ আর সেইটাকে দিয়ে মূলকে খুঁজতে চায় বা মূলের আস্বাদন করতে চায় ৷ কিন্তু তাতো আর পাওয়া যায় না! ফলে অনেক সময় পাওয়া যায় না বলেই তা বর্জনীয় হয়ে যায়! তাই শব্দজালে আবদ্ধ হওয়া ভালো নয় ৷ ওটা পন্ডিতদের তর্কবিদ্যার কচ্-কচানি । পণ্ডিত শব্দটাই ‘পণ্ড’ শব্দ থেকে এসেছে ৷ স্থান-কাল-পাত্র ভেদে ধর্মের মূল ভাব, মহাপুরুষের মূল শিক্ষা, শাস্ত্রের মূল বক্তব্য পাল্টে পাল্টে যায় ৷ শেষে মানুষ লক্ষ্য ভুলে উপলক্ষ্যে মেতে যায়। ঈশ্বরকে ছেড়ে আচার-অনুষ্ঠান, জাত-পাত, বর্ণভেদ, মত-ভেদ এসব-কে প্রাধান্য দেয় ৷ ঈশ্বর বা আল্লার চেয়ে পণ্ডিত বা মোল্লারা বড় হয়ে দাঁড়ায় । মূল শিক্ষাটি কি তার অণ্বেষণ না করে সাধারণ মানুষ সমকালীন ধর্মীয় নেতার মত-কে প্রাধান্য দিয়ে বসে ৷ ফলে সমাজে নেমে আসে দুর্বিষহ যন্ত্রণা । শুরু হয় হানাহানি, মারামারি – রক্তপাত ৷৷(ক্রমশঃ)