একবার মানস সরোবর থেকে একটি রাজহংস কোন কারণে উড়তে উড়তে সমভূমির এক সরোবরে এসে নেমেছিল ৷ সেখানে অন্যসব হংসরা এবং অন্যান্য পাখিরা এই নতুন অতিথিকে দেখে, আর তার চালচলনের রাজকীয়তা দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিল! তার উপর ঐ রাজহংসের ছিল নানান বিষয় সম্বন্ধে অসাধারণ জ্ঞান!! ধীরে ধীরে তারা সেই অপূর্বদর্শন রাজহংসের সঙ্গে ভাব জমালো , জানতে চাইল – কি করে সে এত সুন্দর , এত সভ্য-ভদ্র এবং এমন জ্ঞানী হলো ?
তখন রাজহংস খুব শান্ত অথচ মৃদুকন্ঠে এবং সুন্দর ভাষায়_ হিমালয় ও সেখানে অবস্থিত মানস সরোবরের বিস্তারিত বর্ণনা এবং সেখানকার মাহাত্ম্যের কথা তাদের বলল!!
হিমালয় – দেবতাত্মা হিমালয়! যেখানে যুগ যুগ ধরে সাধু-সন্তরা ধ্যান-জপ , সাধন-ভজন করে আসছেন! ওইসব স্থান পুত-পবিত্র! ধ্যান জপ, সাধন-ভজন, যাগজজ্ঞ ছাড়া অন্য কোন কিছুই ওখানে হয় না! তাই ওখানকার বাতাবরন সদা-সর্বদা পূর্ত-পবিত্র! মানস সরোবরে দেবী-দেবী , অপ্সরাগণ স্নান করেন , ঋষি-মুনিরা স্নান-তর্পনাদি করেন , সেই জন্য মানস সরোবরের এত মহিমা! অন্যান্য জলাশয় অপেক্ষা এই সরোবর সম্পূর্ণ পৃথক ৷ মানস সরোবরে স্নান করলে বা ওই জলে অবগাহন করলে-ই জীবনের সব কালো কেটে গিয়ে জ্ঞানের আলোয় আলোকময় হয়ে উঠা যায়! রূপহীনরাও রূপ-সৌন্দর্যে ঝলমল করে ওঠে!
সবাই শুনল রাজহংসের কথা । কেউ কেউ বায়না ধরল রাজহংস যখন ফিরে যাবে তখন সে যেন তাদেরকেও সঙ্গে নেয়!মানস সরোবরের জলে স্নান করে তারাও রূপে ঝলমলে হয়ে উঠতে চায়!
রাজহংস হাসলো , বলল – “তোমরা কি সেখানে যেতে পারবে ? সে যে অনেক দূর ! অত দীর্ঘ পথ উড়ে যাওয়ার অভ্যাস তোমাদের নেই! তোমাদের সে ক্ষমতাও নেই (অর্থাৎ তোমাদের পাখার সে জোর নেই) ৷ দীর্ঘপথ ওরার জন্য সর্বোপরি প্রয়োজন হয় উড্ডয়ন কৌশলের! উড্ডয়ন কৌশল বা ওড়ার কৌশল জানাটা খুবই প্রয়োজন – কারণ সমুদ্রের উপর দিয়ে অত দীর্ঘ পথ, যেখানে বিশ্রামের কোন ব্যবস্থা নেই, _সেই পথ অতিক্রম করতে গেলে উড্ডয়ন-কুশলী হতেই হবে ।”
রাজহংসের কথা শুনে অনেক পাখিই যাওয়ার আশা ছেড়ে দিল । শুধু হংস বা হাঁস প্রজাতির পাখিরা বলল – “দ্যাখো , আমরা তো তোমাদেরই প্রজাতির একজন , আমরা নিশ্চয়ই পারবো।”
রাজহংস বলল – “যে কেউ পারতে পারে_ তার জন্য নয় , কিন্তু তোমরা কয়েকদিন আমার নির্দেশ মতো ওড়ার কৌশল রপ্ত করো –আগে আমি তোমাদের যোগ্যতা বিচার করি, _তারপর দেখা যাবে ৷” এদিকে হয়েছে কি _পাখিদের মধ্যে ধূর্ত কাকেরা অনেকদিন ধরেই অর্থাৎ রাজহংসের আগমন থেকে শুরু করে তার সমস্ত গতিবিধির উপর লক্ষ্য রাখছিল । তারা এগিয়ে এসে বলল – “রাজহংস মশাই ! আমরাও নানা রকম ওড়ার কৌশল জানি , আমরা ডিগবাজি জানি , উল্টোবাজি জানি – ইত্যাদি নানা ওড়ার কৌশল জানি । এখন দু-চারটে করে দেখাচ্ছি___ আপনি দেখুন !”
এই বলে সেই কাক বাবাজীরা রাজহংসকে নানান ওড়ার কৌশল দেখাতে লাগল!
সব দেখে রাজহংস হাসতে লাগল, তারপর বলল – “দেখ! এখান থেকে মানস সরোবর শুধু দীর্ঘপথই নয় , সমস্যা সঙ্কুল ও বিপদ সঙ্কুলও বটে । কোথাও খাদ্যাভাব, কোথাও আবহাওয়ার গন্ডগোল (অর্থাৎ কোথাও খুব গরম , কোথাও শীত) , কোথাও ঝড়-ঝাপটা! কোথাও শুধুই জল – স্থল নাই , ফলে বিশ্রামের জায়গা পাওয়া যায় না – এইসব প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে শুধু উড়ে চলা, আর উড়ে চলা !
সুতরাং ওড়ার সময় কোন কেরামতি চলবে না ৷ লক্ষ্য স্থির রেখে স্থিরভাবে উড়তে হবে – এটাই মূলমন্ত্র ৷”
যাই হোক, রাজহংসের বিদায়ের দিন এসে গেল! রাজহংসের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পেরে বাকী পাখিরা রণে ভঙ্গ দিলেও কাকের দল তার সাথে মানস সরোবর যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েই চলল। তারা কোন বারন শুনবে না _তারা যাবেই যাবে!! [ক্রমশঃ]
তখন রাজহংস খুব শান্ত অথচ মৃদুকন্ঠে এবং সুন্দর ভাষায়_ হিমালয় ও সেখানে অবস্থিত মানস সরোবরের বিস্তারিত বর্ণনা এবং সেখানকার মাহাত্ম্যের কথা তাদের বলল!!
হিমালয় – দেবতাত্মা হিমালয়! যেখানে যুগ যুগ ধরে সাধু-সন্তরা ধ্যান-জপ , সাধন-ভজন করে আসছেন! ওইসব স্থান পুত-পবিত্র! ধ্যান জপ, সাধন-ভজন, যাগজজ্ঞ ছাড়া অন্য কোন কিছুই ওখানে হয় না! তাই ওখানকার বাতাবরন সদা-সর্বদা পূর্ত-পবিত্র! মানস সরোবরে দেবী-দেবী , অপ্সরাগণ স্নান করেন , ঋষি-মুনিরা স্নান-তর্পনাদি করেন , সেই জন্য মানস সরোবরের এত মহিমা! অন্যান্য জলাশয় অপেক্ষা এই সরোবর সম্পূর্ণ পৃথক ৷ মানস সরোবরে স্নান করলে বা ওই জলে অবগাহন করলে-ই জীবনের সব কালো কেটে গিয়ে জ্ঞানের আলোয় আলোকময় হয়ে উঠা যায়! রূপহীনরাও রূপ-সৌন্দর্যে ঝলমল করে ওঠে!
সবাই শুনল রাজহংসের কথা । কেউ কেউ বায়না ধরল রাজহংস যখন ফিরে যাবে তখন সে যেন তাদেরকেও সঙ্গে নেয়!মানস সরোবরের জলে স্নান করে তারাও রূপে ঝলমলে হয়ে উঠতে চায়!
রাজহংস হাসলো , বলল – “তোমরা কি সেখানে যেতে পারবে ? সে যে অনেক দূর ! অত দীর্ঘ পথ উড়ে যাওয়ার অভ্যাস তোমাদের নেই! তোমাদের সে ক্ষমতাও নেই (অর্থাৎ তোমাদের পাখার সে জোর নেই) ৷ দীর্ঘপথ ওরার জন্য সর্বোপরি প্রয়োজন হয় উড্ডয়ন কৌশলের! উড্ডয়ন কৌশল বা ওড়ার কৌশল জানাটা খুবই প্রয়োজন – কারণ সমুদ্রের উপর দিয়ে অত দীর্ঘ পথ, যেখানে বিশ্রামের কোন ব্যবস্থা নেই, _সেই পথ অতিক্রম করতে গেলে উড্ডয়ন-কুশলী হতেই হবে ।”
রাজহংসের কথা শুনে অনেক পাখিই যাওয়ার আশা ছেড়ে দিল । শুধু হংস বা হাঁস প্রজাতির পাখিরা বলল – “দ্যাখো , আমরা তো তোমাদেরই প্রজাতির একজন , আমরা নিশ্চয়ই পারবো।”
রাজহংস বলল – “যে কেউ পারতে পারে_ তার জন্য নয় , কিন্তু তোমরা কয়েকদিন আমার নির্দেশ মতো ওড়ার কৌশল রপ্ত করো –আগে আমি তোমাদের যোগ্যতা বিচার করি, _তারপর দেখা যাবে ৷” এদিকে হয়েছে কি _পাখিদের মধ্যে ধূর্ত কাকেরা অনেকদিন ধরেই অর্থাৎ রাজহংসের আগমন থেকে শুরু করে তার সমস্ত গতিবিধির উপর লক্ষ্য রাখছিল । তারা এগিয়ে এসে বলল – “রাজহংস মশাই ! আমরাও নানা রকম ওড়ার কৌশল জানি , আমরা ডিগবাজি জানি , উল্টোবাজি জানি – ইত্যাদি নানা ওড়ার কৌশল জানি । এখন দু-চারটে করে দেখাচ্ছি___ আপনি দেখুন !”
এই বলে সেই কাক বাবাজীরা রাজহংসকে নানান ওড়ার কৌশল দেখাতে লাগল!
সব দেখে রাজহংস হাসতে লাগল, তারপর বলল – “দেখ! এখান থেকে মানস সরোবর শুধু দীর্ঘপথই নয় , সমস্যা সঙ্কুল ও বিপদ সঙ্কুলও বটে । কোথাও খাদ্যাভাব, কোথাও আবহাওয়ার গন্ডগোল (অর্থাৎ কোথাও খুব গরম , কোথাও শীত) , কোথাও ঝড়-ঝাপটা! কোথাও শুধুই জল – স্থল নাই , ফলে বিশ্রামের জায়গা পাওয়া যায় না – এইসব প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে শুধু উড়ে চলা, আর উড়ে চলা !
সুতরাং ওড়ার সময় কোন কেরামতি চলবে না ৷ লক্ষ্য স্থির রেখে স্থিরভাবে উড়তে হবে – এটাই মূলমন্ত্র ৷”
যাই হোক, রাজহংসের বিদায়ের দিন এসে গেল! রাজহংসের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পেরে বাকী পাখিরা রণে ভঙ্গ দিলেও কাকের দল তার সাথে মানস সরোবর যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েই চলল। তারা কোন বারন শুনবে না _তারা যাবেই যাবে!! [ক্রমশঃ]