আরব দেশে একজন সুফি সাধক বাস করতো। সে সাধনার দ্বারা চরম সত্য বোধ করেছিল বা চরম সত্যে উপনীত হয়েছিল । তার নাম ছিল মনসুর (!)। সে ফকিরের বেশে দেশে দেশে ঘুরে বেড়াতো এবং তার কাছে আসা ভক্তবৃন্দকে উপদেশ দেবার সময় একটা কথাই বলত – “আয়ানুল হক” – যার বাংলা মানে হবে “আমি-ই সত্য” । কিন্তু ইসলাম ধর্মমতে রয়েছে যে — ” একমাত্র আল্লাহ্ সত্য, আর হজরত মুহাম্মদ তাঁর একমাত্র রসুল “– এটার বাইরে কেউ ধর্ম শিক্ষা দিতে পারবে না ৷ ফলে এই সুফি সাধকের শিক্ষাদানের কথা, স্থানীয় ধর্মীয় নেতারা _সে দেশের রাজার কানে তুলতে দেরি করল না । তারা গিয়ে বাদশা কে বলল – ” হুজুর ! এই লোকটা ইসলাম ধর্মাবলম্বী হয়েও কাফেরের অধম ! এ আল্লার নাম করে না , আল্লা-ই একমাত্র সত্য একথা বলে না – এ বলে কিনা আমি-ই সত্য !!! “আয়ানুল হক”!!! “I am that”!!! অর্থাৎ সে নিজেকেই ‘আল্লা’ বলে প্রচার করছে !”
এসব কথা শুনে বাদশা তো রেগে আগুন ! হুকুম দিলেন – যেখানেই থাকুক , যে অবস্থাতেই থাকুক , ওই লোকটাকে তক্ষুনি যেন বেঁধে তার কাছে নিয়ে আসা হয় ।
অনুচরের দল ছুটল – কোথায় সেই সুফিসাধক ! খোঁজ করতেই পাওয়া গেল একটা গাছতলায় উঁচু ঢিবির উপর বসে সেই সাধক তার সামনে বসা মানুষজনদের আত্মতত্ত্বের শিক্ষা দিচ্ছে ! সকলকে বলছে ” আয়ানুল হক ” , ‘আমি’-ই সত্য , ‘আমি’-কে__ তা জানো , ‘আমি’-কে জানলেই সব জানার শেষ! তখন দেখবে আমি-ই আল্লা ! আমি-ই একমাত্র সত্য ! “আয়ানুল হক” , “আয়ানুল হক” !! রাজার আদেশে সৈন্যরা ফকিরকে আষ্টে-পৃষ্ঠে বেঁধে রাজসভায় নিয়ে গিয়ে হাজির হলো ৷ তাকে দেখে বাদশার যত ক্রোধ , সভাসদদের ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ আরও বেশী! বাদশা তাকে জিজ্ঞাসা করল – ” ফকির ! তুমি লোককে কি শিক্ষা দাও ? ‘ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্ ‘– এই শিক্ষা দাও না ? তুমি বল না যে , আল্লা এক ও অদ্বিতীয় আর তার একমাত্র রসুল সল্লাল্লাহ হজরথ মুহাম্মদ ! – তাহলে তুমি কি শিক্ষা দাও ?” অকুতোভয় ফকির বলল – ” জনাব ! আমি সাধনার শিখরে পৌঁছে এই সার সত্য জেনেছি যে “আয়ানুল হক”, ‘আমি’-ই সত্য ! আমাকে বা নিজেকে জানলেই সব জানা যায় এবং তখনই প্রকৃত পক্ষে ‘আল্লা’-কে জানা যায় । অন্যথায় বাকি যা জানা, তা অজ্ঞানের-ই নামান্তর! নিজেকে জানাই জ্ঞান , “আমি-ই সত্য”– এটাই জ্ঞান , বাকী যা কিছু জানা সে সবই অজ্ঞান ৷”
বাদশার মুখের সামনে দাঁড়িয়ে এই কথা ! রেগে অগ্নিশর্মা হয়ে বাদশা হুকুম দিল ওকে এখনই প্রকাশ্যে গর্দান কেটে দেহ থেকে আলাদা করে ফেল – দেখি ওর গর্দান কেটে বাদ দেবার পর কি করে ও “আয়ানুল হক” বলে !
ফকির মৃত্যুদন্ড শুনে এবং উদ্যত খড়গ হাতে ঘাতক আসছে দেখেও শান্তকন্ঠে বাদশাকে বলল – ” হুজুর ! আমার দেহকে কেটে দু-টুকরো করলেও ‘আমাকে’– আপনি মারতে পারবেন না ৷ কারণ আমি দেহ নই , মন নই , বুদ্ধি নই , আমি শুদ্ধ ,বুদ্ধ , নিত্য , শাশ্বত আত্মা ৷ যার জন্ম নাই , মৃত্যু নাই ৷” বাদশা আর শুনতে চাইছিলেন না – কারণ এসব কথা কোরান শরীফে লেখা নাই – এগুলি শোনাও হারাম ! তাই ঘাতককে বললেন – ” কাট্ ওর মুন্ডু !” ঘাতক খড়গের এক ঘায়ে ফকিরের দেহ থেকে মুন্ড আলাদা করে দিল ৷ কি আশ্চর্য্য ! রক্তাক্ত কাটা মুন্ডু মাটিতে পড়ে পড়েই বলতে শুরু করল “আয়ানুল হক!” “আয়ানুল হক!” । বাদশা হুকুম দিলেন – ” ওর মুন্ডু , দেহ সব কুচি কুচি করে কেটে ফেলো !” ঘাতকের দল কুচি কুচি করতে লাগলো ফকিরের দেহ ৷ রাজাসহ সভাসদগণ বা উপস্থিত সবাই দেখল যে ফকিরের শরীরের ছোট ছোট টুকরোগুলিও বলেছে “আয়ানুল হক”, “আয়ানুল হক” ৷
“এটা কোন কল্পকাহিনী নয় । আরবে এমন ঘটনা সত্যি সত্যি ঘটেছিল । এর Record রয়েছে বা ইতিহাস রয়েছে । বহু দেশে বিভিন্ন ভাষায় এই ঘটনাটি গল্পাকারে স্থান করে নিয়েছে ।” – গুরু মহারাজ এই কথাগুলি বলেছিলেন ৷
তিনি আরো বললেন – ” মুসলিম সমাজের গোঁড়া অংশ, _সুফী সাধকদের জীবন দর্শন বা তাদের উপলব্ধ সত্যের ব্যাপারটা _পাত্তাই দিতে চায় না ৷ এরকম আশ্চর্যজনক অনেক ঘটনা বহু সুফি সাধকের জীবনে ঘটেছে এবং হয়তো রাজন্যবর্গের সামনেই ঘটেছে! বহু মানুষই হয়তো সেইসব ঘটনার সাক্ষী – তবু এই সমাজের একটা বৃহৎ অংশ “কোরান” ও “হাদিস”-এর বাইরে বেরোতে পারেনি!
আর সবচাইতে মুস্কিল হয়েছে – আজ থেকে দেড় হাজার (১৫০০) বছর আগের আরবী ভাষায় লেখা “আল কোরান” , তাও হজরথ নিজে লেখেন নি – পার্শ্বদরা একটু একটু করে লিখে রাখতো! পরবর্ত্তীতে সেগুলির সংকলন হয়েছিল । যাইহোক প্রাচীন আরবীর এক একটা শব্দের কত আলাদা আলাদা অর্থ হতে পারে – সেইরকম পারদর্শী বা উদারমনা পণ্ডিতরা তো “কোরান” ব্যাখ্যা করে না!
একটু আধটু আরবী জানে, অথবা হয়তো বাংলায় কোরানের অনুবাদ পড়েছে – মোল্লারা সেই জ্ঞান নিয়েই কোরান নিজে পড়ে এবং লোককে পড়ে শোনায়, ব্যাখ্যা করে। মুসলিম সমাজের বেশীরভাগ মানুষ অশিক্ষিত হওয়ায় – মোল্লাদের আরও সুবিধা – সে যা বুঝেছে, সেটাই বোঝায় ! তাছাড়া এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় অনুবাদ হওয়া মানেই –প্রকৃত বিষয়বস্তুর অবমূল্যায়ন হয়ে যাওয়া!
এছাড়া, আরও বলা হয়
যে , আল কোরানের ২/৩ অংশ গুরু পরম্পরায় রয়েছে যা প্রকাশিত হয়নি, আর বাকী ১/৩ অংশ প্রকাশিত! তাহলে বাকী ২/৩ অংশে অর্থাৎ বেশীরভাগ অংশে কি রয়েছে – সাধারণ মানুষ তো তা জানেই না !!
তবে শুধু ইসলামে নয়, সব ধর্মমতেই এটা হয়েছে বা হয়ে থাকে! লক্ষ্য ছেড়ে উপলক্ষে , আসলকে ছেড়ে কৃত্রিমকে _নিয়েই মানুষ মাতামাতি বেশি করে! কিন্তু শুধু মাতামাতি করলে যা হয় কথা ছিল , ধর্মমতের প্রাধান্য বিস্তার নিয়ে মারামারি , রক্তপাত , হিংসা , বহুকাল থেকে চলে আসছে – এটাই দুঃখের , এটাই বেদনার !
আসুন সকলে সেই সর্বশক্তিমানের (আল্লা , খোদা , ঈশ্বর , God – যে নামেই ডাকা হোক) কাছে প্রার্থনা করি — ধর্মের নামে , ধর্মমত প্রতিষ্ঠার নামে এই রক্তপাত , এই বিভেদকামীতা যেন সত্ত্বর বন্ধ হয়।” [ক্রমশঃ]
এসব কথা শুনে বাদশা তো রেগে আগুন ! হুকুম দিলেন – যেখানেই থাকুক , যে অবস্থাতেই থাকুক , ওই লোকটাকে তক্ষুনি যেন বেঁধে তার কাছে নিয়ে আসা হয় ।
অনুচরের দল ছুটল – কোথায় সেই সুফিসাধক ! খোঁজ করতেই পাওয়া গেল একটা গাছতলায় উঁচু ঢিবির উপর বসে সেই সাধক তার সামনে বসা মানুষজনদের আত্মতত্ত্বের শিক্ষা দিচ্ছে ! সকলকে বলছে ” আয়ানুল হক ” , ‘আমি’-ই সত্য , ‘আমি’-কে__ তা জানো , ‘আমি’-কে জানলেই সব জানার শেষ! তখন দেখবে আমি-ই আল্লা ! আমি-ই একমাত্র সত্য ! “আয়ানুল হক” , “আয়ানুল হক” !! রাজার আদেশে সৈন্যরা ফকিরকে আষ্টে-পৃষ্ঠে বেঁধে রাজসভায় নিয়ে গিয়ে হাজির হলো ৷ তাকে দেখে বাদশার যত ক্রোধ , সভাসদদের ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ আরও বেশী! বাদশা তাকে জিজ্ঞাসা করল – ” ফকির ! তুমি লোককে কি শিক্ষা দাও ? ‘ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্ ‘– এই শিক্ষা দাও না ? তুমি বল না যে , আল্লা এক ও অদ্বিতীয় আর তার একমাত্র রসুল সল্লাল্লাহ হজরথ মুহাম্মদ ! – তাহলে তুমি কি শিক্ষা দাও ?” অকুতোভয় ফকির বলল – ” জনাব ! আমি সাধনার শিখরে পৌঁছে এই সার সত্য জেনেছি যে “আয়ানুল হক”, ‘আমি’-ই সত্য ! আমাকে বা নিজেকে জানলেই সব জানা যায় এবং তখনই প্রকৃত পক্ষে ‘আল্লা’-কে জানা যায় । অন্যথায় বাকি যা জানা, তা অজ্ঞানের-ই নামান্তর! নিজেকে জানাই জ্ঞান , “আমি-ই সত্য”– এটাই জ্ঞান , বাকী যা কিছু জানা সে সবই অজ্ঞান ৷”
বাদশার মুখের সামনে দাঁড়িয়ে এই কথা ! রেগে অগ্নিশর্মা হয়ে বাদশা হুকুম দিল ওকে এখনই প্রকাশ্যে গর্দান কেটে দেহ থেকে আলাদা করে ফেল – দেখি ওর গর্দান কেটে বাদ দেবার পর কি করে ও “আয়ানুল হক” বলে !
ফকির মৃত্যুদন্ড শুনে এবং উদ্যত খড়গ হাতে ঘাতক আসছে দেখেও শান্তকন্ঠে বাদশাকে বলল – ” হুজুর ! আমার দেহকে কেটে দু-টুকরো করলেও ‘আমাকে’– আপনি মারতে পারবেন না ৷ কারণ আমি দেহ নই , মন নই , বুদ্ধি নই , আমি শুদ্ধ ,বুদ্ধ , নিত্য , শাশ্বত আত্মা ৷ যার জন্ম নাই , মৃত্যু নাই ৷” বাদশা আর শুনতে চাইছিলেন না – কারণ এসব কথা কোরান শরীফে লেখা নাই – এগুলি শোনাও হারাম ! তাই ঘাতককে বললেন – ” কাট্ ওর মুন্ডু !” ঘাতক খড়গের এক ঘায়ে ফকিরের দেহ থেকে মুন্ড আলাদা করে দিল ৷ কি আশ্চর্য্য ! রক্তাক্ত কাটা মুন্ডু মাটিতে পড়ে পড়েই বলতে শুরু করল “আয়ানুল হক!” “আয়ানুল হক!” । বাদশা হুকুম দিলেন – ” ওর মুন্ডু , দেহ সব কুচি কুচি করে কেটে ফেলো !” ঘাতকের দল কুচি কুচি করতে লাগলো ফকিরের দেহ ৷ রাজাসহ সভাসদগণ বা উপস্থিত সবাই দেখল যে ফকিরের শরীরের ছোট ছোট টুকরোগুলিও বলেছে “আয়ানুল হক”, “আয়ানুল হক” ৷
“এটা কোন কল্পকাহিনী নয় । আরবে এমন ঘটনা সত্যি সত্যি ঘটেছিল । এর Record রয়েছে বা ইতিহাস রয়েছে । বহু দেশে বিভিন্ন ভাষায় এই ঘটনাটি গল্পাকারে স্থান করে নিয়েছে ।” – গুরু মহারাজ এই কথাগুলি বলেছিলেন ৷
তিনি আরো বললেন – ” মুসলিম সমাজের গোঁড়া অংশ, _সুফী সাধকদের জীবন দর্শন বা তাদের উপলব্ধ সত্যের ব্যাপারটা _পাত্তাই দিতে চায় না ৷ এরকম আশ্চর্যজনক অনেক ঘটনা বহু সুফি সাধকের জীবনে ঘটেছে এবং হয়তো রাজন্যবর্গের সামনেই ঘটেছে! বহু মানুষই হয়তো সেইসব ঘটনার সাক্ষী – তবু এই সমাজের একটা বৃহৎ অংশ “কোরান” ও “হাদিস”-এর বাইরে বেরোতে পারেনি!
আর সবচাইতে মুস্কিল হয়েছে – আজ থেকে দেড় হাজার (১৫০০) বছর আগের আরবী ভাষায় লেখা “আল কোরান” , তাও হজরথ নিজে লেখেন নি – পার্শ্বদরা একটু একটু করে লিখে রাখতো! পরবর্ত্তীতে সেগুলির সংকলন হয়েছিল । যাইহোক প্রাচীন আরবীর এক একটা শব্দের কত আলাদা আলাদা অর্থ হতে পারে – সেইরকম পারদর্শী বা উদারমনা পণ্ডিতরা তো “কোরান” ব্যাখ্যা করে না!
একটু আধটু আরবী জানে, অথবা হয়তো বাংলায় কোরানের অনুবাদ পড়েছে – মোল্লারা সেই জ্ঞান নিয়েই কোরান নিজে পড়ে এবং লোককে পড়ে শোনায়, ব্যাখ্যা করে। মুসলিম সমাজের বেশীরভাগ মানুষ অশিক্ষিত হওয়ায় – মোল্লাদের আরও সুবিধা – সে যা বুঝেছে, সেটাই বোঝায় ! তাছাড়া এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় অনুবাদ হওয়া মানেই –প্রকৃত বিষয়বস্তুর অবমূল্যায়ন হয়ে যাওয়া!
এছাড়া, আরও বলা হয়
যে , আল কোরানের ২/৩ অংশ গুরু পরম্পরায় রয়েছে যা প্রকাশিত হয়নি, আর বাকী ১/৩ অংশ প্রকাশিত! তাহলে বাকী ২/৩ অংশে অর্থাৎ বেশীরভাগ অংশে কি রয়েছে – সাধারণ মানুষ তো তা জানেই না !!
তবে শুধু ইসলামে নয়, সব ধর্মমতেই এটা হয়েছে বা হয়ে থাকে! লক্ষ্য ছেড়ে উপলক্ষে , আসলকে ছেড়ে কৃত্রিমকে _নিয়েই মানুষ মাতামাতি বেশি করে! কিন্তু শুধু মাতামাতি করলে যা হয় কথা ছিল , ধর্মমতের প্রাধান্য বিস্তার নিয়ে মারামারি , রক্তপাত , হিংসা , বহুকাল থেকে চলে আসছে – এটাই দুঃখের , এটাই বেদনার !
আসুন সকলে সেই সর্বশক্তিমানের (আল্লা , খোদা , ঈশ্বর , God – যে নামেই ডাকা হোক) কাছে প্রার্থনা করি — ধর্মের নামে , ধর্মমত প্রতিষ্ঠার নামে এই রক্তপাত , এই বিভেদকামীতা যেন সত্ত্বর বন্ধ হয়।” [ক্রমশঃ]