[ বিশ্ব সাহিত্যের অন্যতম প্রভাবশালী কবি ও সুফি দার্শনিক “মাওলানা জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি”।
জগদ্বিখ্যাত কবি রুমি ৩০ শে সেপ্টেম্বর ১২০৭ তৎকালীন খোরাসানের বলখ শহরে (বর্তমানে আফগানিস্তানে) জন্মগ্রহণ করেন।
তার শেষজীবন কেটেছে তৎকালীন রুম সাম্রাজ্যের অধীন কোনিয়ায়, যা বর্তমান তুরস্কে অবস্থিত।
১৭ ডিসেম্বর ১২৭৩ তিনি দেহত্যাগ করেন।
তিনি লিখেছেন পারসিক ভাষায়।
মাওলানা রুমির সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ “মসনবি”।
এটা শুধু ফার্সি সাহিত্যভান্ডার নয়, বিশ্বসাহিত্য ভাণ্ডারেরও একটি অমূল্য সম্পদ।
এ গ্রন্থে দ্বিপদী ছন্দবদ্ধ কবিতার সংখ্যা ২৫,৬০০ টি। মসনবি কেবল ধর্মতত্ত্বের নয়, সাধারণ দর্শনেরও একটি আদর্শ গ্রন্থ।
তার এ গ্রন্থটি বিশ্বের ২৩ টি ভাষায় অনূদিত, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও একটি সর্বোচ্চ বিক্রিত গ্রন্থ।]
পারসিক কবি রূমি একজন মহা সাধক ছিলেন ৷ তিনি তার জীবনদর্শন কবিতার আকারে লিখে প্রকাশ করতেন । যেগুলি পরবর্তীকালে সাধকের জীবন বা সাধারণ মানুষের জীবনেও অর্থবহ হয়ে ওঠে এবং মানুষ সেগুলি থেকে জীবন পথে এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা পেয়ে থাকে । রূমির এইরকম-ই একটি কবিতা রয়েছে যার বাংলা করলে হবে – ” হে সর্বশক্তিমান ! আমি যেন গাছের পাতায় লেগে থাকা শিশির বিন্দু , যার পরমায়ু খুবই ক্ষণস্থায়ী , কারণ যদি মাটিতে ঝরে পড়ি _তাহলে মাটি শুষে নেবে, আর পাতায় লেগে থাকলে রোদ উঠলেই উত্তাপ আমায় বাস্পীভূত করে দেবে। কিন্তু হে প্রভু ! যদি পাতার ঐ শিশিরকণা কোন স্রোতস্বিনীতে পড়ে – তাহলে সেই স্রোতস্বিনী তাকে নিয়ে পৌঁছে দেয় মহাসাগরের কাছে , অর্থাৎ অন্তিম গন্তব্যস্থল৷
গুরু মহারাজ দোঁহাটি (কবিতাটি) বললেন , বাংলা অর্থও বললেন , তারপর ব্যাখ্যা করতে শুরু করলেন । বললেন – এখানে গাছের পাতায় শিশির কণা বলতে সংসার রূপ বৃক্ষে এক একটা জীবন ৷ জীবন তো ক্ষণস্থায়ী – মৃত্যু যে কোন সময় তাকে গ্রাস করে নেবে ।জীবন কি মহাজীবনের রূপ নিতে পারে যদি না স্রোতস্বিনীরূপী গুরু তাকে আশ্রয় না দেন । সদগুরু-ই পারেন সাধককে তার চরম বা পরম লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে – তার উৎসে ফিরিয়ে দিতে ৷ তিনি শুধু আশ্রয়-ই দেন না সঙ্গে নিয়েও চলেন , কিন্তু প্রয়োজন শরণাগতির ৷ যে সাধক কায়মনোবাক্যে নিরন্তর প্রার্থনা করেন তার আধ্যাত্মিক বা আত্মিক উত্তরনের জন্য , তার অবশ্যই উত্তরণ ঘটবে ৷ পরমেশ্বর ঠিকই যথাসময়ে ঐ সাধকের কাছে সদ্-গুরুকে পাঠিয়ে দেবেন – যে তাকে হাত ধরে উত্তরনের চরম সীমায় পৌঁছে দেবে ৷
আধ্যাত্মিক জগতের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এইরকম ভুরি ভুরি Example পাওয়া যাবে । বিভিন্ন মহাপুরুষের জীবনী পাঠ করলে দেখা যায় যে জাগতিক (সাংসারিক বা সামাজিক) কোন দুঃখ-কষ্ট-শোক সহ্য করতে না পেরে , দুর্জয় বাসনা ও দুর্দম কামনাকে অগ্রাহ্য করে বহু সাধক সিদ্ধিলাভ করেছেন , ঈশ্বরদর্শন বা আত্মদর্শন করেছেন। [ক্রমশঃ]