গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দ সন্ন্যাস নিয়েছিলেন পরম গুরুদেব রামানন্দ অবধূতজির কাছ থেকে (উত্তরকাশী , হিমালয়), [অবশ্য রামানন্দজীর নির্দেশে গুরু মহারাজ (স্বামী পরমানন্দ) সন্ন্যাস-সংস্কারের কাজ ঋষিকেশের কৈলাস আশ্রমের বিদ্যানন্দ গিরির কাছে করেছিলেন]! বেশ কিছুদিন ওখানে কাটানোর পর গুরুমহারাজ পরম গুরুদেবের কাছ থেকে _সমভূমিতে মানুষের কল্যাণে কাজ করার অনুমতি চাইলেন, তখন নিত্য নির্বিকল্প স্থিতির মহাত্মা(রামানন্দজী)-ও তাঁর আদরের একমাত্র নয়নের মণি শিষ্য(স্বামী পরমানন্দ)-কে ছাড়তে চাইছিলেন না ৷ বলেছিলেন, “তুমি কেন সমতলে যাবে! তুমি কি জানো না _’ইয়ে জগ্ ঝুট হ্যায় , কুত্তা কা পুছ্ হ্যায়’!” আরো বলছিলেন যে , আগে আগে অবতার , মহাপুরুষ অনেকেই জগৎকল্যাণের নিমিত্ত শরীর ধারণ করেছেন , কাজও করেছেন কিন্তু জগৎ জ্যায়সা কি ত্যায়সা । মহাপুরুষদের শিক্ষা কি আর মানুষ নিল ? বরঞ্চ মানুষ বারবার মহাপুরুষের উপর অত্যাচার করেছে , অনেক ক্ষেত্রে তাঁদেরকে মেরেও ফেলেছে! তাই রামানন্দজী তাঁর প্রিয় শিষ্য ও সন্তানকে এই কষ্টের মধ্যে পড়তে দিতে চাননি। উনি গুরুমহারাজকে হিমালয় ছেড়ে_ নিচে আসতে দিতে চান নি(অবশ্য এই পুরো ব্যাপারটা পরম গুরুদেবের একটা পরীক্ষাও হোতে পারে!)! কিন্তু গুরুমহারাজ (স্বামী পরমানন্দ) তাঁর অকাট্য যুক্তিজালে রামানন্দজীর কথাগুলি কেটে দিয়েছিলেন । তখন রামানন্দ অবধূতজী গুরুমহারাজকে এই গল্পটি বলেছিলেন ৷ সেইটা এখানে বলা হচ্ছে।
এক সাধুবাবা হিমালয়ের পাদদেশে জঙ্গলের সন্নিকট এক গুহায় সাধন-ভজন বা তপস্যা করতেন। সুতীব্র বৈরাগ্য ও কঠিন সাধনের দ্বারা তিনি আত্মজ্ঞান লাভের দোরগোড়ায় এসে পৌঁছেছিলেন ৷ এমন সময় ঘটল একটা ঘটনা ! সেদিনও সন্ন্যাসী সারারাত ধ্যানান্তে অতিপ্রত্যুষে প্রাতঃকৃত্য করার জন্য গুহার বাইরে যেই বেরিয়েছে_ অমনি এক ভয়ার্ত হরিণ দৌড়াতে দৌড়াতে এসে সাধু বাবার কাছে তার প্রাণ ভিক্ষা চাইল! সে বলল যে, তাকে এক ক্ষুধার্ত বাঘ তাড়া করেছে _সাধুবাবা যেন তাকে আশ্রয় দিয়ে বাঁচতে সাহায্য করেন।
সাধুবাবার অনেক সিদ্ধি ছিল, ফলে তিনি পশুপক্ষীর ভাষা বুঝতে পারতেন তাই পশুরাও তাকে সম্মান করত । যাই হোক সাধুবাবা হরিণটিকে তার গুহার অভ্যন্তরে লুকিয়ে পড়তে বললেন – হরিণ অতিদ্রুত তাই করল । এমন সময় হুংকার ছেড়ে ক্ষুধার্ত বাঘটি সেখানে এসে হাজির ৷ সে সাধুটিকে জিজ্ঞাসা করল – ” এখানে একটি হরিণ এসেছে , আপনি বলতে পারেন সে কোন দিকে গেল ?” সাধু বাবা বলে দিল সে দেখেনি , কারণ সে শাস্ত্রবাক্য অনুসরণ করল এবং ভাবল যে আশ্রিতকে আশ্রয় দেওয়া বা রক্ষা করা মানুষের অন্যতম ধর্ম অর্থাৎ এটি সৎকর্মের মধ্যে পড়ে – তাই তিনি ঐরূপ করলেন! বাঘ সাধুর কথায় বিফল মনোরথ হয়ে স্থান ত্যাগ করল এবং ক্ষুধায় কাতর হয়ে বাঘটি কোথায় যেন চলে গেল ।
এরপর কালের নিয়মে এই সাধন-ভজনে উন্নত সাধুবাবার শরীর পাত হ’ল । কিন্তু তার মুক্তিলাভ ঘটল না – তাকে আবার জন্ম-মৃত্যুর চক্রে ফিরে আসতে হলো ৷ সাধু তার অন্তরাত্মার কাছে এর কারণ জানতে চাইলে — তার ভিতর থেকেই উত্তর এলো এবং তার জীবনে ঘটে যাওয়া ঐ’ বাঘ আর হরিণের’ ঘটনাটি তার সামনে Flash হ’ল! সেখানে দেখা গেলো সেদিন ঐ বাঘটি খুবই ক্ষুধার্ত ছিল , সে বেশ কয়েক দিন কোন আহার পায়নি ৷ কার্য্যকারণ সূত্রে ঐদিন ঐ হরিণটিই বাঘের আহার্য্য হিসাবে বরাদ্দ ছিল ৷ কিন্তু সাধুটির ঐ মিথ্যাচার বাঘকে তার নির্ধারিত আহার্য্য থেকে বঞ্চিত করে , ফলস্বরূপ অনাহারক্লিষ্ট বাঘটি মারা গিয়েছিল ৷ তাই অপরোক্ষ কারণহেতু কর্মদোষ সাধুটির উপর বর্ত্তানোর জন্য এই দশা!
যাইহোক , মৃত্যুর পর সাধুটির আবার নতুন শরীর হোল! এই শরীরেও সে ছোট বয়স থেকেই বৈরাগ্যবান , ফলে অচিরেই সন্ন্যাস নিয়ে সাধন জীবন-যাপন করতে হিমালয়ে চলে গেল ৷ কার্য্যকারণ সূত্রে সেই পূর্বের গুহাতেই তার সাধন স্থল নির্দিষ্ট হল!
সেবারও ঐ সাধুবাবার জীবনে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল ৷ একটি ভয়ার্ত হরিণ ছুটতে ছুটতে হাঁফাতে হাঁফাতে সাধুর কুটীরের সামনে এসে হাজির হলো ৷ হরিণটি তার প্রাণভিক্ষার আবেদনও রাখল , সাধু কিছু বলার আগেই নিরাপদ আশ্রয় ভেবে হরিণটি সাধুর কুটীরে (গুহায়) আশ্রয় নিল ৷ কিছুক্ষণ পরে ক্ষুধার্থ বাঘ এসে হাজির! সে সাধুবাবাকে হরিণের কথা জিজ্ঞাসা করতেই সাধুবাবার পূর্বস্মৃতি মনে পড়ে গেল ৷ তিনি আগের শরীরের ভুল সংশোধন করার জন্য _’ক্ষুধার্থ বাঘের আহার্য্য তো হরিণই হয়’– এই ভেবে ভিতরে যেখানে হরিনটি রয়েছে _সেদিকে ইঙ্গিত করতেই বাঘটি হরিণকে মুখে করে ধরে নিয়ে চলে গেল ।
সেই জন্মেও যথাসময়ে সাধুর মৃত্যু হ’ল – আবার মৃত্যুর পর তার সূক্ষ্মশরীর পিতৃলোকেই স্থিত হ’ল — কোন উর্দ্ধলোকে হোল না! সাধুবাবা আবার তার অন্তর্জগতে জিজ্ঞাসা তোলায়__ উত্তর এল যে তিনি এক্ষেত্রেও অপরোক্ষহেতু কারণ দোষে দোষী , কারণ তিনি তার আশ্রিতকে রক্ষা করেননি এবং একটি নিরীহ প্রাণীর হত্যা তার সামনে হওয়ায় এটি কর্মদোষ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে!
ফলস্বরূপ সাধুবাবার আবার নতুন করে শরীর নিতে হ’ল ৷ …… (ক্রমশঃ)
এক সাধুবাবা হিমালয়ের পাদদেশে জঙ্গলের সন্নিকট এক গুহায় সাধন-ভজন বা তপস্যা করতেন। সুতীব্র বৈরাগ্য ও কঠিন সাধনের দ্বারা তিনি আত্মজ্ঞান লাভের দোরগোড়ায় এসে পৌঁছেছিলেন ৷ এমন সময় ঘটল একটা ঘটনা ! সেদিনও সন্ন্যাসী সারারাত ধ্যানান্তে অতিপ্রত্যুষে প্রাতঃকৃত্য করার জন্য গুহার বাইরে যেই বেরিয়েছে_ অমনি এক ভয়ার্ত হরিণ দৌড়াতে দৌড়াতে এসে সাধু বাবার কাছে তার প্রাণ ভিক্ষা চাইল! সে বলল যে, তাকে এক ক্ষুধার্ত বাঘ তাড়া করেছে _সাধুবাবা যেন তাকে আশ্রয় দিয়ে বাঁচতে সাহায্য করেন।
সাধুবাবার অনেক সিদ্ধি ছিল, ফলে তিনি পশুপক্ষীর ভাষা বুঝতে পারতেন তাই পশুরাও তাকে সম্মান করত । যাই হোক সাধুবাবা হরিণটিকে তার গুহার অভ্যন্তরে লুকিয়ে পড়তে বললেন – হরিণ অতিদ্রুত তাই করল । এমন সময় হুংকার ছেড়ে ক্ষুধার্ত বাঘটি সেখানে এসে হাজির ৷ সে সাধুটিকে জিজ্ঞাসা করল – ” এখানে একটি হরিণ এসেছে , আপনি বলতে পারেন সে কোন দিকে গেল ?” সাধু বাবা বলে দিল সে দেখেনি , কারণ সে শাস্ত্রবাক্য অনুসরণ করল এবং ভাবল যে আশ্রিতকে আশ্রয় দেওয়া বা রক্ষা করা মানুষের অন্যতম ধর্ম অর্থাৎ এটি সৎকর্মের মধ্যে পড়ে – তাই তিনি ঐরূপ করলেন! বাঘ সাধুর কথায় বিফল মনোরথ হয়ে স্থান ত্যাগ করল এবং ক্ষুধায় কাতর হয়ে বাঘটি কোথায় যেন চলে গেল ।
এরপর কালের নিয়মে এই সাধন-ভজনে উন্নত সাধুবাবার শরীর পাত হ’ল । কিন্তু তার মুক্তিলাভ ঘটল না – তাকে আবার জন্ম-মৃত্যুর চক্রে ফিরে আসতে হলো ৷ সাধু তার অন্তরাত্মার কাছে এর কারণ জানতে চাইলে — তার ভিতর থেকেই উত্তর এলো এবং তার জীবনে ঘটে যাওয়া ঐ’ বাঘ আর হরিণের’ ঘটনাটি তার সামনে Flash হ’ল! সেখানে দেখা গেলো সেদিন ঐ বাঘটি খুবই ক্ষুধার্ত ছিল , সে বেশ কয়েক দিন কোন আহার পায়নি ৷ কার্য্যকারণ সূত্রে ঐদিন ঐ হরিণটিই বাঘের আহার্য্য হিসাবে বরাদ্দ ছিল ৷ কিন্তু সাধুটির ঐ মিথ্যাচার বাঘকে তার নির্ধারিত আহার্য্য থেকে বঞ্চিত করে , ফলস্বরূপ অনাহারক্লিষ্ট বাঘটি মারা গিয়েছিল ৷ তাই অপরোক্ষ কারণহেতু কর্মদোষ সাধুটির উপর বর্ত্তানোর জন্য এই দশা!
যাইহোক , মৃত্যুর পর সাধুটির আবার নতুন শরীর হোল! এই শরীরেও সে ছোট বয়স থেকেই বৈরাগ্যবান , ফলে অচিরেই সন্ন্যাস নিয়ে সাধন জীবন-যাপন করতে হিমালয়ে চলে গেল ৷ কার্য্যকারণ সূত্রে সেই পূর্বের গুহাতেই তার সাধন স্থল নির্দিষ্ট হল!
সেবারও ঐ সাধুবাবার জীবনে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল ৷ একটি ভয়ার্ত হরিণ ছুটতে ছুটতে হাঁফাতে হাঁফাতে সাধুর কুটীরের সামনে এসে হাজির হলো ৷ হরিণটি তার প্রাণভিক্ষার আবেদনও রাখল , সাধু কিছু বলার আগেই নিরাপদ আশ্রয় ভেবে হরিণটি সাধুর কুটীরে (গুহায়) আশ্রয় নিল ৷ কিছুক্ষণ পরে ক্ষুধার্থ বাঘ এসে হাজির! সে সাধুবাবাকে হরিণের কথা জিজ্ঞাসা করতেই সাধুবাবার পূর্বস্মৃতি মনে পড়ে গেল ৷ তিনি আগের শরীরের ভুল সংশোধন করার জন্য _’ক্ষুধার্থ বাঘের আহার্য্য তো হরিণই হয়’– এই ভেবে ভিতরে যেখানে হরিনটি রয়েছে _সেদিকে ইঙ্গিত করতেই বাঘটি হরিণকে মুখে করে ধরে নিয়ে চলে গেল ।
সেই জন্মেও যথাসময়ে সাধুর মৃত্যু হ’ল – আবার মৃত্যুর পর তার সূক্ষ্মশরীর পিতৃলোকেই স্থিত হ’ল — কোন উর্দ্ধলোকে হোল না! সাধুবাবা আবার তার অন্তর্জগতে জিজ্ঞাসা তোলায়__ উত্তর এল যে তিনি এক্ষেত্রেও অপরোক্ষহেতু কারণ দোষে দোষী , কারণ তিনি তার আশ্রিতকে রক্ষা করেননি এবং একটি নিরীহ প্রাণীর হত্যা তার সামনে হওয়ায় এটি কর্মদোষ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে!
ফলস্বরূপ সাধুবাবার আবার নতুন করে শরীর নিতে হ’ল ৷ …… (ক্রমশঃ)