(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
……. এবারও ছোটবেলা থেকেই বৈরাগ্যবান ৷ কিশোর বয়সেই গৃহত্যাগ ও সন্ন্যাস গ্রহণ । আবার হিমালয়ের সেই গুহায় তার সাধন-ভজন এবং পরিণত বয়সে কার্য্যকারণে আবার সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি । এবারও ভয়ার্ত হরিণ তার কুঠীয়ার সামনে এসে হাজির , কাতরভাবে প্রাণভিক্ষার আকুতি ! এবারও সাধু বাবার সামনে পূর্ব পূর্ব জীবনের ঘটনার flash !
ঐ সব দেখেই সাধুবাবা সাথে সাথেই ধ্যানস্থ হয়ে গেলেন – বাইরের জগতের কোন ঘটনার মধ্যেই তিনি নিজেকে জড়ালেন না ৷ ফলে হরিণ আশ্রয় পেল কিনা অথবা ক্ষুধার্ত্ত বাঘ হরিণ শিকার করল কিনা – এই নিয়ে তার আর কোনো Action বা Reaction থাকলো না ৷ তিনি ঢুকে গেলেন ৷Proper action-এর জগতে! কিছুদিনের মধ্যেই সাধুবাবার সাধন জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য প্রাপ্তি হ’ল – তিনি আত্মজ্ঞান লাভ করলেন এবং নিজ সত্তাকে পরমব্রহ্মে লীন করে পূর্ণত্ব অর্জন করলেন ৷
এই গল্পটি বলার পর রামানন্দ অবধূতজী গুরু মহারাজকে বলেছিলেন – ” এই তো কর্মজগৎ , এখানে কর্মের সামান্য সামান্য ভুলে কর্মবিপাকে জড়িয়ে যায় মানুষ এবং বারবার জন্ম-মৃত্যুর চক্রে আবর্তিত হয় ৷ সুতরাং এই সমাজের জন্য কর্ম করেই বা কি হবে ? জগৎ যেমন চলছে তাকে তেমন ভাবে চলতে দাও ৷ তোমাকে হিমালয় থেকে আর নেমে সমভূমিতে যেতে হবে না । আমারও বয়স (প্রায় ১৬০) হয়েছে , এখানেই বরং দুজনে একসাথে জীবনের বাকি সময়টা কাটাই ।”
এইসব কথা যখন চলছিল _গুরুজী তখন তাঁর গুরুদেব রামানন্দজীর পদসেবা করছিলেন –তিনি কোন উত্তরই দিচ্ছিলেন না! হিমালয়ের সেই নির্জন গুহায়, সেই পরমজ্ঞানী বৃদ্ধ একা একাই এসব কথা বলে চলছিলেন!
অনেকক্ষণ বলার পর রামানন্দজী গুরুজীকে বললেন – ” কি হল ? আমার কথার কোন উত্তর দিচ্ছ না যে !”
গুরুজী তাঁর গুরুর পদসেবা করতে করতেই বললেন – ” ভাবছিলাম আপনার গল্পের ঐ সাধুটির কথা ! ওই জায়গায় যদি আমি (স্বামী পরমানন্দ) থাকতাম তাহলে সাধুটির মতো ভুল করতাম না !” রামানন্দজী বললেন – ” তুমি হলে কি করতে ?” গুরুজী উত্তর দিয়েছিলেন , ” আমি হলে প্রথমবারেই হরিণকে আশ্রয় দিতাম এবং ক্ষুধার্ত বাঘ যেখানে হাজির হলে তাকে বলতাম – হরিণ আমার আশ্রিত , তাকে রক্ষা করা আমার ধর্ম , কিন্তু তুমিও ক্ষুধার্ত তাই তোমাকে আহার্য্য গ্রহণ করতে দেওয়াও আমার কর্তব্য । সুতরাং হে বাঘ ! তুমি ঐ হরিণের পরিবর্ত্তে আমাকে হত্যা করে আমার শরীরের মাংসে তোমার ক্ষুন্নিবৃত্তি করো ৷”
পরম গুরুদেব রামানন্দজী শুয়েছিলেন , তিনি গুরুজীর কথা শুনেই সটান উঠে পড়ে গুরুজীকে গাঢ়ভাবে আলিঙ্গন করেছিলেন এবং কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন – “আমার এতদিনের অপেক্ষা আজ সার্থক হোল। মানুষের কাজ করার জন্য তুমিই উপযুক্ত ! মানুষের সমাজে গিয়ে তাদের উন্নতি করার জন্য যে বিশাল হৃদয় দরকার তা তোমার রয়েছে! সুতরাং যাও – আমার আশীর্বাদ তোমার সাথে সব সময় থাকবে । বহুদিন ধরে বহু সাধু-সন্ত , মুনি-ঋষি অপেক্ষা করে – তারা সাধনা করে এমনই এক মহামানবের জন্য ! আমার শেষ পরীক্ষাও সম্পূর্ণ হল – এবার তুমি মুক্ত ! তুমি নিজেই গুরু হয়ে – তোমার আরব্ধ কাজ সম্পন্ন করো ৷”
এই ঘটনার পর গুরু মহারাজ হিমালয় ছেড়ে সমভূমিতে নেমে এসেছিলেন এবং বনগ্রাম পরমানন্দ মিশন গড়ে তুলে “বহুজনহিতায় বহুজনসুখায়” কর্মযজ্ঞের শুভ সূচনা করেছিলেন ৷ [ক্রমশঃ]
……. এবারও ছোটবেলা থেকেই বৈরাগ্যবান ৷ কিশোর বয়সেই গৃহত্যাগ ও সন্ন্যাস গ্রহণ । আবার হিমালয়ের সেই গুহায় তার সাধন-ভজন এবং পরিণত বয়সে কার্য্যকারণে আবার সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি । এবারও ভয়ার্ত হরিণ তার কুঠীয়ার সামনে এসে হাজির , কাতরভাবে প্রাণভিক্ষার আকুতি ! এবারও সাধু বাবার সামনে পূর্ব পূর্ব জীবনের ঘটনার flash !
ঐ সব দেখেই সাধুবাবা সাথে সাথেই ধ্যানস্থ হয়ে গেলেন – বাইরের জগতের কোন ঘটনার মধ্যেই তিনি নিজেকে জড়ালেন না ৷ ফলে হরিণ আশ্রয় পেল কিনা অথবা ক্ষুধার্ত্ত বাঘ হরিণ শিকার করল কিনা – এই নিয়ে তার আর কোনো Action বা Reaction থাকলো না ৷ তিনি ঢুকে গেলেন ৷Proper action-এর জগতে! কিছুদিনের মধ্যেই সাধুবাবার সাধন জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য প্রাপ্তি হ’ল – তিনি আত্মজ্ঞান লাভ করলেন এবং নিজ সত্তাকে পরমব্রহ্মে লীন করে পূর্ণত্ব অর্জন করলেন ৷
এই গল্পটি বলার পর রামানন্দ অবধূতজী গুরু মহারাজকে বলেছিলেন – ” এই তো কর্মজগৎ , এখানে কর্মের সামান্য সামান্য ভুলে কর্মবিপাকে জড়িয়ে যায় মানুষ এবং বারবার জন্ম-মৃত্যুর চক্রে আবর্তিত হয় ৷ সুতরাং এই সমাজের জন্য কর্ম করেই বা কি হবে ? জগৎ যেমন চলছে তাকে তেমন ভাবে চলতে দাও ৷ তোমাকে হিমালয় থেকে আর নেমে সমভূমিতে যেতে হবে না । আমারও বয়স (প্রায় ১৬০) হয়েছে , এখানেই বরং দুজনে একসাথে জীবনের বাকি সময়টা কাটাই ।”
এইসব কথা যখন চলছিল _গুরুজী তখন তাঁর গুরুদেব রামানন্দজীর পদসেবা করছিলেন –তিনি কোন উত্তরই দিচ্ছিলেন না! হিমালয়ের সেই নির্জন গুহায়, সেই পরমজ্ঞানী বৃদ্ধ একা একাই এসব কথা বলে চলছিলেন!
অনেকক্ষণ বলার পর রামানন্দজী গুরুজীকে বললেন – ” কি হল ? আমার কথার কোন উত্তর দিচ্ছ না যে !”
গুরুজী তাঁর গুরুর পদসেবা করতে করতেই বললেন – ” ভাবছিলাম আপনার গল্পের ঐ সাধুটির কথা ! ওই জায়গায় যদি আমি (স্বামী পরমানন্দ) থাকতাম তাহলে সাধুটির মতো ভুল করতাম না !” রামানন্দজী বললেন – ” তুমি হলে কি করতে ?” গুরুজী উত্তর দিয়েছিলেন , ” আমি হলে প্রথমবারেই হরিণকে আশ্রয় দিতাম এবং ক্ষুধার্ত বাঘ যেখানে হাজির হলে তাকে বলতাম – হরিণ আমার আশ্রিত , তাকে রক্ষা করা আমার ধর্ম , কিন্তু তুমিও ক্ষুধার্ত তাই তোমাকে আহার্য্য গ্রহণ করতে দেওয়াও আমার কর্তব্য । সুতরাং হে বাঘ ! তুমি ঐ হরিণের পরিবর্ত্তে আমাকে হত্যা করে আমার শরীরের মাংসে তোমার ক্ষুন্নিবৃত্তি করো ৷”
পরম গুরুদেব রামানন্দজী শুয়েছিলেন , তিনি গুরুজীর কথা শুনেই সটান উঠে পড়ে গুরুজীকে গাঢ়ভাবে আলিঙ্গন করেছিলেন এবং কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন – “আমার এতদিনের অপেক্ষা আজ সার্থক হোল। মানুষের কাজ করার জন্য তুমিই উপযুক্ত ! মানুষের সমাজে গিয়ে তাদের উন্নতি করার জন্য যে বিশাল হৃদয় দরকার তা তোমার রয়েছে! সুতরাং যাও – আমার আশীর্বাদ তোমার সাথে সব সময় থাকবে । বহুদিন ধরে বহু সাধু-সন্ত , মুনি-ঋষি অপেক্ষা করে – তারা সাধনা করে এমনই এক মহামানবের জন্য ! আমার শেষ পরীক্ষাও সম্পূর্ণ হল – এবার তুমি মুক্ত ! তুমি নিজেই গুরু হয়ে – তোমার আরব্ধ কাজ সম্পন্ন করো ৷”
এই ঘটনার পর গুরু মহারাজ হিমালয় ছেড়ে সমভূমিতে নেমে এসেছিলেন এবং বনগ্রাম পরমানন্দ মিশন গড়ে তুলে “বহুজনহিতায় বহুজনসুখায়” কর্মযজ্ঞের শুভ সূচনা করেছিলেন ৷ [ক্রমশঃ]