এক স্থানে দশজন ব্যক্তির মধ্যে খুবই বন্ধুত্ব ছিল । তারা অন্যত্র কোথাও গেলে সর্বদা এক সাথেই যেতো ৷ একদিন তারা কোন কর্মোপলক্ষ্যে একটা নদী পেড়িয়ে কোন স্থানে যাচ্ছিল । নদীতে সাঁতার জল । সকলেই সাঁতার জানত ফলে পাড়ে যেতে অসুবিধা হ’ল না । ওপারে পোঁছে তাদের মাথায় এল যে তাদের গুনে দেখা দরকার যে তারা দশজন-ই রয়েছে _কি না! তাদের মধ্যে একজন গুনতে শুরু করল এক – দুই – তিন …….. করতে করতে হ’ল নয়জন ।
তার গুনতে ভুল হয়েছে দেখে _অন্য আর একজন গুনতে লাগল, এক – দুই – তিন – ………. – নয় ৷ এইভাবে ওরা সকলেই পৃথক পৃথক ভাবে নিজেদেরকে গুনল কিন্তু সকলেই গুনে দেখল সেই নয়জনই হচ্ছে!
অাসলে হয়েছিল কি – প্রত্যেকেই গোনার সময় নিজেকে বাদ দিয়ে গুনছিল । নিজেকে বাদ দিচ্ছে – তাই ভাবছে নয়জন ৷ সকলের গোনা শেষ হলে ওরা ভাবতে লাগল যে ওদের একজন জলে ভেসে গেছে । ফলে সকলে তার জন্য শোক প্রকাশ করতে লাগল — কাঁদতে লাগল ৷
ঠিক সেই সময়ে ওই রাস্তা দিয়ে একজন জ্ঞানী ব্যক্তি যাচ্ছিলেন । তিনি অতগুলো ধুমসো লোকের ভ্যাঁ – ভ্যাঁ করে কান্না দেখে সেখানে দাঁড়ালেন। তিনি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করে তাদের কান্নার কারনসহ সবকিছু জানতে পারলেন এবং দেখলেন যে তারা দশজন-ই রয়েছে ৷ তখন সেই জ্ঞানী ব্যক্তি তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন – “তোমরা প্রত্যেকেই পৃথক পৃথক ভাবে গুনে দেখেছো যে তোমরা নয়জন – কি তাইতো ?” ওরা সবাই বলল – “হ্যাঁ”, হ্যাঁ _আপনি ঠিকই বলেছেন।” তখন জ্ঞানী ব্যক্তি বললেন – “দ্যাখো , তোমরা গুনতে জানো, কিন্তু কিভাবে বা কি কৌশলে গুনতে হয় _সেটা জানো না ৷ এসো – সেই সঠিক পদ্ধতিটি আমি তোমাদের শিখিয়ে দিচ্ছি।” এই বলে তিনি এক একজনের হাত ধরে সেই ব্যক্তির নিজ বুকে রেখে বললেন – “এবার গোনো ! বলো “রাম”, “দুই”,” তিন”, ……… ।” এইভাবে প্রথমজন গুনে দেখল ওরা দশজনই রয়েছে। ঐ জ্ঞানীব্যক্তি পাশের জনকেও সেইভাবে তার হাত ধরে বুকে রেখে “রাম” বলে শুরু করালেন – তারপর দুই – তিন – ……. করতে করতে দশজন হ’ল । একই পদ্ধতিতে সকলেই গুনল – সকলেরই লোকসংখ্যা দশ-ই হ’ল । লোকগুলি খুশী হয়ে জ্ঞানী ব্যক্তির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে স্থান ত্যাগ করল । যাবার সময় বলে গেল “মহাশয় আমরা চলে যাচ্ছি , কিন্তু গণনের যে পদ্ধতিটি আপনি আমাদের শেখালেন তা আমরা ভুলব না – আজীবন মনে রাখব ।”
এরপর এই গল্পটির ব্যাখ্যায় গুরুজী বললেন – ওই লোকগুলির মতো সাধারণ যে কোন মানুষ নিজের দিকে না তাকিয়ে জগৎ দেখতে চায় । এর ফলে সে সকলের দোষ দেখতে পায় – তাদের ত্রুটি দেখতে পায় শুধু নিজেরটা ছাড়া ।
অপরের দিকে না তাকিয়ে প্রতিটি মানুষ তার নিজের দিকে দেখুক – তার মধ্যে কি দোষত্রুটি রয়েছে – সেগুলিকে সংশোধন করুক! তা হলেই সঠিকভাবে জগতের বা জীবনের মূল্যায়ন করতে পারবে মানুষ!
এই গল্পটির অন্তর্নিহিত অর্থ হচ্ছে _মানুষ নিজেকে না জেনে বা আত্মজ্ঞান লাভ না করে জগৎজ্ঞান করতে চায়! এটা কি – ওটা কি করতে করতে অনন্ত কোটি ব্রহ্মান্ডের খবর নিতে যায়! কিন্তু ফল কি হয় – কোনটাই ভালো করে জানা হয়ে ওঠে না ৷ অার তা সম্ভবও নয় । তাই জ্ঞানী ব্যক্তি বা ঋষিগণ নিজেকে জানলেন – তারপর মানুষকে শোনালেন সেই চার মহাবাক্য – “প্রজ্ঞানম্ ব্রহ্ম” , “অয়মাত্মা ব্রহ্ম” , “তৎ ত্বমসি” , “অহং ব্রহ্মাস্মি” ।।
ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ ।। (ক্রমশঃ)