গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দ গিরি মহারাজ বনগ্রাম পরমানন্দ মিশনে সকালের দিকে একদিন সিটিং-এ তাঁর নির্দিষ্ট জায়গাটিতে বসে রয়েছেন । অনেক লোকজন অর্থাৎ ভক্তকুল দূর-দূরান্ত থেকে এসে উপস্থিত হয়েছে – আরো দু চার জন একে একে এসে পৌঁছাচ্ছে ৷ যারা আগে থেকেই বসে থাকতো, তাদের প্রাথমিক প্রণাম পর্ব সারা হলেও এইজন্যেই(যেহেতু একজন দুজন করে ভক্তরা আসতেই থাকতো) প্রণাম চলতেই থাকত ( যারা পরে আসতো – তারা এসেই আগে প্রণাম টা সেরে প্রসাদ নিয়ে, তারপরে সিটিং-এর জায়গায় বিছানো ত্রিপলের উপরে গিয়ে বসত।) I
অথচ এইভাবে ওনার আলোচনার মাঝখানে কেউ প্রণাম করতে এলে – ওনার খুবই অসুবিধা হতো! ওনার আলোচনার flow-টা নষ্ট হয়ে যেত , এমন কি ওনার কথা বলা বন্ধও হয়ে যেত! অনেক সময়েই আমরা দেখতাম _ভক্তটির প্রণাম হয়ে গেলে গুরু মহারাজ চুপ করে যেতেন – তখন উপস্থিত জনেদের কেউ হয়তো পূর্ব-প্রসঙ্গ ধরিয়ে দিতেন , তখন উনি আবার কথা শুরু করতেন!
এর কারণ হিসেবে উনি বলতেন – ” আমি যখন কোন প্রসঙ্গ আলোচনা করি তখন তো মুখস্থ কোন কথা বলি না , বই পড়া বিদ্যাও আমার নাই! আমি যখন কথা বলি তখন দেখি আমার সামনে ওই উত্তরগুলি ভেসে ওঠে – আমি সেই গুলি দেখে দেখে বলি ৷ সেই সময় যদি কেউ আমায় স্পর্শ করে বা কথার মাঝে – ‘কেমন আছেন ?’ , ‘ ভালো আছেন তো ?’– এই ধরনের জিজ্ঞাসা করে , তাহলে আমার ওই দৃশ্যপট অদৃশ্য হয়ে যায়! কারণ তখন ঐ ব্যক্তির কথার উত্তর দিতে হয় , ওর ব্যাপারে মনোনিবেশ করতে হয় – ফলে পূর্বের তাল কেটে গিয়ে আবার আমার অন্তর্জগতে অন্য তাল , সুর , ছন্দ ভাসতে থাকে !”
যাইহোক , সেদিন সিঙ্গুরের এক ভৈরব-ভক্ত আমাদেরই আশ্রমের এক সন্ন্যাসীর জীবনে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার উল্লেখ করে গুরু মহারাজকে জিজ্ঞাসা করলেন – “তাহলে ব্রহ্মচর্য ব্যাপারটা কি ?” এর উত্তর দেবার আগে গুরু মহারাজ অনেকক্ষণ চুপ করে থাকলেন – তারপর উত্তর দিয়েছিলেন। উনি বলেছিলেন – ” ব্রহ্মচর্য কথাটির সঠিক সংজ্ঞা এখনো পৃথিবীতে বলা হয়নি! কোন মহাপুরুষ এখনও এই গ্রহে প্রকৃত ব্রহ্মচর্য্যের সংজ্ঞা দিতে পারেন নি! কারন এখনও পৃথিবী গ্রহটি এতটা উন্নতই হয় নি!
যদিও সমাজে এমনকি সাধুসমাজেও ব্রহ্মচর্য নিয়ে প্রচুর কথা চালু রয়েছে , এই নিয়ে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও প্রবচন বা বক্তৃতা হয়ে চলেছে , অনেক আর্টিকেল বা বইও লেখা হয়েছে – কিন্তু তবু বলছি , এখনো পৃথিবীতে ব্রহ্মচর্য্য নিয়ে পুরো কথা গুলি বলাই যায়নি ! বলা যায়নি কারণ পৃথিবীর মানুষ এখনো সে সব কথা শোনার উপযুক্ততা অর্জন করেনি ! এখনি আমি সেসব কথা যদি তোমাদেরকে বলি – তোমরাই ভাববে ‘গুরুদেব এসব কি কথা বলছেন ? ওনার বোধহয় মাথাটা এবার গেছে !’ তাই _জানো! আমাকে অনেক কথাই ঢেকে ঢুকে বলতে হয় ! সব কথা বলা চলে না । আগে আগেও বহু মহাপুরুষ এই পৃথিবীতে শরীর ধারণ করেছেন , তাঁরাও অনেক কথাই বলতে এসেছিলেন – কিন্তু সব কথা বলে যেতে পারেননি – বহু কথা, বহু তত্ত্ব, বহু জ্ঞান সঙ্গে করে ফিরিয়ে নিয়ে গেছেন ৷”
এসব কথা বলার পর উনি প্রাচীন এক ইতিহাসের কাহিনী গল্পাকারে বলেছিলেন । এই গল্পটি বলে উনি বোধহয় বোঝাতে চেয়েছিলেন – আমরা যে অর্থে ব্রহ্মচর্যের মহিমা বর্ণনা করি – তা কত তুচ্ছ , কত নগণ্য এবং প্রায় সবটাই ভুল ! গল্পটা শুরু করা যাক –!
প্রাচীন ভারতবর্ষে (আজ থেকে প্রায় দুই হাজার বছরেরও বেশি আগে) সম্রাট অশোক কিছুকাল রাজত্ব করেছিলেন । উনি ছিলেন মৌর্যবংশীয় রাজা ৷ তখন সবেমাত্র কিছুদিন হল ভগবান বুদ্ধের দেহান্ত হয়েছে – বৌদ্ধ প্লাবনের ঢেউ এসে লাগলো মগধেও ! সম্রাট অশোক , বৌদ্ধ ভিক্ষু উপগুপ্তের সংস্পর্শে এসে নিজেই বৌদ্ধ ধর্মমত গ্রহণ করলেন এবং ‘চন্ডাশোক’ থেকে ‘ধর্মাশোকে’ রূপান্তরিত হলেন ৷ এরপর তিনি নিজেই বৌদ্ধধর্ম দেশের প্রতিটি কোনায় কোনায় পৌঁছে দেবার জন্য সচেষ্ট হন । সে ব্যাপারে কিছুটা সাকসেসফুল হবার পর সম্রাট অশোক এইবার ভারতের বাইরে বিভিন্ন দেশে বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার ও প্রসারের কাজে উদ্যোগী হলেন ।
এই কাজের জন্যে উনি সিংহল (বর্তমানে শ্রীলঙ্কা) দেশে কিছু বয়স্ক জ্ঞানী বৌদ্ধ শ্রমণসহ নিজের কন্যা সংঘমিত্রাকে পাঠিয়েছিলেন ৷ সিংহলের রাজা, সম্রাট অশোকের মিত্র ছিলেন। সম্রাট অশোকের কন্যা ছোট বয়স থেকেই ভগবান বুদ্ধের আদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলেন এবং মাত্র ১৫/১৬ বছর বয়সেই বৌদ্ধ শ্রমণদের কাছে মন্ত্র দীক্ষা গ্রহণ করে একজন বৌদ্ধ-ভিক্ষুণী হয়ে যান! অত্যন্ত সুদর্শনা তরুণী সম্রাট কন্যা এই বৌদ্ধ-ভিক্ষুণী যখন সিংহল দেশে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে গেলেন তখন সে দেশে একটা আলোড়ন পড়ে গিয়েছিল !! ……..[ক্রমশঃ]
অথচ এইভাবে ওনার আলোচনার মাঝখানে কেউ প্রণাম করতে এলে – ওনার খুবই অসুবিধা হতো! ওনার আলোচনার flow-টা নষ্ট হয়ে যেত , এমন কি ওনার কথা বলা বন্ধও হয়ে যেত! অনেক সময়েই আমরা দেখতাম _ভক্তটির প্রণাম হয়ে গেলে গুরু মহারাজ চুপ করে যেতেন – তখন উপস্থিত জনেদের কেউ হয়তো পূর্ব-প্রসঙ্গ ধরিয়ে দিতেন , তখন উনি আবার কথা শুরু করতেন!
এর কারণ হিসেবে উনি বলতেন – ” আমি যখন কোন প্রসঙ্গ আলোচনা করি তখন তো মুখস্থ কোন কথা বলি না , বই পড়া বিদ্যাও আমার নাই! আমি যখন কথা বলি তখন দেখি আমার সামনে ওই উত্তরগুলি ভেসে ওঠে – আমি সেই গুলি দেখে দেখে বলি ৷ সেই সময় যদি কেউ আমায় স্পর্শ করে বা কথার মাঝে – ‘কেমন আছেন ?’ , ‘ ভালো আছেন তো ?’– এই ধরনের জিজ্ঞাসা করে , তাহলে আমার ওই দৃশ্যপট অদৃশ্য হয়ে যায়! কারণ তখন ঐ ব্যক্তির কথার উত্তর দিতে হয় , ওর ব্যাপারে মনোনিবেশ করতে হয় – ফলে পূর্বের তাল কেটে গিয়ে আবার আমার অন্তর্জগতে অন্য তাল , সুর , ছন্দ ভাসতে থাকে !”
যাইহোক , সেদিন সিঙ্গুরের এক ভৈরব-ভক্ত আমাদেরই আশ্রমের এক সন্ন্যাসীর জীবনে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার উল্লেখ করে গুরু মহারাজকে জিজ্ঞাসা করলেন – “তাহলে ব্রহ্মচর্য ব্যাপারটা কি ?” এর উত্তর দেবার আগে গুরু মহারাজ অনেকক্ষণ চুপ করে থাকলেন – তারপর উত্তর দিয়েছিলেন। উনি বলেছিলেন – ” ব্রহ্মচর্য কথাটির সঠিক সংজ্ঞা এখনো পৃথিবীতে বলা হয়নি! কোন মহাপুরুষ এখনও এই গ্রহে প্রকৃত ব্রহ্মচর্য্যের সংজ্ঞা দিতে পারেন নি! কারন এখনও পৃথিবী গ্রহটি এতটা উন্নতই হয় নি!
যদিও সমাজে এমনকি সাধুসমাজেও ব্রহ্মচর্য নিয়ে প্রচুর কথা চালু রয়েছে , এই নিয়ে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও প্রবচন বা বক্তৃতা হয়ে চলেছে , অনেক আর্টিকেল বা বইও লেখা হয়েছে – কিন্তু তবু বলছি , এখনো পৃথিবীতে ব্রহ্মচর্য্য নিয়ে পুরো কথা গুলি বলাই যায়নি ! বলা যায়নি কারণ পৃথিবীর মানুষ এখনো সে সব কথা শোনার উপযুক্ততা অর্জন করেনি ! এখনি আমি সেসব কথা যদি তোমাদেরকে বলি – তোমরাই ভাববে ‘গুরুদেব এসব কি কথা বলছেন ? ওনার বোধহয় মাথাটা এবার গেছে !’ তাই _জানো! আমাকে অনেক কথাই ঢেকে ঢুকে বলতে হয় ! সব কথা বলা চলে না । আগে আগেও বহু মহাপুরুষ এই পৃথিবীতে শরীর ধারণ করেছেন , তাঁরাও অনেক কথাই বলতে এসেছিলেন – কিন্তু সব কথা বলে যেতে পারেননি – বহু কথা, বহু তত্ত্ব, বহু জ্ঞান সঙ্গে করে ফিরিয়ে নিয়ে গেছেন ৷”
এসব কথা বলার পর উনি প্রাচীন এক ইতিহাসের কাহিনী গল্পাকারে বলেছিলেন । এই গল্পটি বলে উনি বোধহয় বোঝাতে চেয়েছিলেন – আমরা যে অর্থে ব্রহ্মচর্যের মহিমা বর্ণনা করি – তা কত তুচ্ছ , কত নগণ্য এবং প্রায় সবটাই ভুল ! গল্পটা শুরু করা যাক –!
প্রাচীন ভারতবর্ষে (আজ থেকে প্রায় দুই হাজার বছরেরও বেশি আগে) সম্রাট অশোক কিছুকাল রাজত্ব করেছিলেন । উনি ছিলেন মৌর্যবংশীয় রাজা ৷ তখন সবেমাত্র কিছুদিন হল ভগবান বুদ্ধের দেহান্ত হয়েছে – বৌদ্ধ প্লাবনের ঢেউ এসে লাগলো মগধেও ! সম্রাট অশোক , বৌদ্ধ ভিক্ষু উপগুপ্তের সংস্পর্শে এসে নিজেই বৌদ্ধ ধর্মমত গ্রহণ করলেন এবং ‘চন্ডাশোক’ থেকে ‘ধর্মাশোকে’ রূপান্তরিত হলেন ৷ এরপর তিনি নিজেই বৌদ্ধধর্ম দেশের প্রতিটি কোনায় কোনায় পৌঁছে দেবার জন্য সচেষ্ট হন । সে ব্যাপারে কিছুটা সাকসেসফুল হবার পর সম্রাট অশোক এইবার ভারতের বাইরে বিভিন্ন দেশে বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার ও প্রসারের কাজে উদ্যোগী হলেন ।
এই কাজের জন্যে উনি সিংহল (বর্তমানে শ্রীলঙ্কা) দেশে কিছু বয়স্ক জ্ঞানী বৌদ্ধ শ্রমণসহ নিজের কন্যা সংঘমিত্রাকে পাঠিয়েছিলেন ৷ সিংহলের রাজা, সম্রাট অশোকের মিত্র ছিলেন। সম্রাট অশোকের কন্যা ছোট বয়স থেকেই ভগবান বুদ্ধের আদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলেন এবং মাত্র ১৫/১৬ বছর বয়সেই বৌদ্ধ শ্রমণদের কাছে মন্ত্র দীক্ষা গ্রহণ করে একজন বৌদ্ধ-ভিক্ষুণী হয়ে যান! অত্যন্ত সুদর্শনা তরুণী সম্রাট কন্যা এই বৌদ্ধ-ভিক্ষুণী যখন সিংহল দেশে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে গেলেন তখন সে দেশে একটা আলোড়ন পড়ে গিয়েছিল !! ……..[ক্রমশঃ]