[আগের এপিসোডে আমরা দেখেছি এক সহজ সরল চাষী তার স্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিল যে _ভগবানের চেয়েও নারীর দুটো কলা বেশি আছে _সেই দুটি কি?(গুরুমহারাজ অবশ্য বলেছিলেন নারীর যে দুটি কলা বেশি, সে দুটি হোল _”ছলাকলা”) চাষীর স্ত্রী বলেছে _”কাল দেখাবো!”__এখন দেখাচ্ছে……..]
……. চাষী বউ যথারীতি অন্যদিনের মতো সেদিনও স্বামীকে যত্ন করে বড় বগিথালায় ভাত-ডাল-শাক-চচ্চরি এবং চুনো মাছের টক দিয়ে ভাত দিল ! চাষী গোগ্রাসে ভাত গিলছে আর ভাবছে – এই বুঝি ওর বউ সর্ষে বাঁটা দিয়ে গরম-গরম ইলিশ মাছের ঝাল নিয়ে আসছে ! কিন্তু হায় ! চুনো মাছের টক যখন দেওয়া হয়ে গেল – তখন চাষী জিজ্ঞাসা করল – ” হ্যাঁরে বউ ! ইলিশ মাছের ঝাল আর ইলিশ মাছ ভাজা দিলি না তো ?”
চাষীর কথা শুনে চাষী-বউ যেন আকাশ থেকে পড়লো _এমন ভাব করে বলল – ” বল কি লালনের বাপ ! ইলিশ মাছের ঝাল কোথা পাব ?”
একথা শুনে ওই চাষির বেদম রাগ হয়ে গেল – ” কোথা থেকে পাবি মানে ? আমি জমি চাষ করতে গিয়ে ইলিশমাছ পেলাম – আর সেই ইলিশ ছেলের হাত দিয়ে পাঠিয়ে দিলাম ! ওকে বলে দিলাম যে সরষে ইলিশ রাঁধতে আর দুখানা ইলিশ মাছ ভাজা খাব !!! আর এখন তুই বলছিস ইলিশ মাছ কোথায় পাব ? দ্যাখ্ তো তোকে কি করি !” – এই বলে চাষী রাগের চোটে এঁটো হাতেই বউকে লাগলো দু-চার ঘা!!
চাষী-বউ হাউ মাউ করে কাঁদতে কাঁদতে চিৎকার করতে লাগলো আর পাড়া-প্রতিবেশীদের নাম ধরে ধরে ডাকতে লাগল! চাষী-বৌয়ের আর্ত চিৎকারে প্রতিবেশীরা দৌড়ে এল – এসে দেখল চাষির রুদ্রমূর্তি! বউকে ধরে বেদম মারছে !
তারা সবাই মিলে চাষীকে ধরে_কোনোক্রমে নিরস্ত্র করল !
বউটা ছাড়া পেয়েই সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকল যে – “ওগো তোমরা ওকে বেঁধে ফ্যালো গো – ওর মাথাটা বোধহয় খারাপ হয়ে গেছে ! দেখো – কি সব উল্টাপাল্টা বকছে গো !”
চাষী, বৌ-এর এই কাঁদুনি শুনে আরো রেগে গিয়ে বলতে লাগল – ” কি ! এত বড় আস্পর্ধা ! আমি জমি থেকে চাষ করতে করতে যে ইলিশ মাছটা পেলাম – সেইটা রান্না করে তুই একা একা খেলি – আর এখন বলছিস আমার মাথা খারাপ?? তোমরা একবার আমাকে ছেড়ে দাও দেখো ওর কি করি ! মেরে ওর মুখ ভেঙ্গেই দেবো !”
চাষী বউ কেঁদে কেঁদে বলতে লাগলো – “ওই দ্যাখো গো ! ওর মাথাটা একেবারে গেছে গো ! বলে কিনা জমিতে ইলিশ মাছ পেয়েছে ? এবার তোমরাই বল – ওর মাথা খারাপ হয়েছে কিনা ?”
পাড়ার লোকেরা বুঝল সত্যিই চাষীর মাথাটা গেছে! চাষী-বউ একটা শক্ত দড়ি এনে ওদেরকে বলল – ” ওকে খুঁটির সাথে বেশ শক্ত করে বেঁধে রাখ গো – নইলে ছাড়া পেলে আমাকে হয়তো মেরেই ফেলবে গো !” প্রতিবেশীরাও দেখল এটাই সবচাইতে ভালো ব্যবস্থা! প্রত্যেকেরই ঘরে কাজ রয়েছে ! পাগলকে ধরে কে আর কতক্ষণ বসে থাকবে ! তারা সকলে চাষীকে বেশ শক্ত করে ঘরের খুঁটির সাথে পিছমোড়া করে বেঁধে রেখে আপন আপন ঘরে ফিরে গেল।
সবাই চলে যেতেই চাষী-বউ চাষীর কাছে গিয়ে বলল – ” কি গো ! নারীর কলা দেখতে চেয়েছিলে না ? আজকে এই ‘এক কলা’ দেখালুম ! এখনো ‘এক কলা’ দেখাতে বাকি রয়েছে – সেইটা এইবার দেখাবো নাকি ?”
চাষী এতক্ষণে সব বুঝতে পারল ! তখন নরম হয়ে বললো – ” ও-ও-ওঃ ! তাহলে এতক্ষণ তুই আমাকে ‘কলা’ দেখাচ্ছিলি ? খোল্-খোল্ বাঁধন খুলে দে !” চাষী বউ তাড়াতাড়ি বাঁধন খুলে দিল । তারপর দুজনে পাশাপাশি বসে সর্ষে দিয়ে ইলিশ মাছের ঝাল আর ইলিশ মাছ ভাজা দিয়ে আনন্দ করে ভাত খেতে বসে গেল। [ ক্রমশঃ]