গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দ খুব ছোটবেলা থেকেই পূর্ণভাবে প্রকাশমান ছিলেন ৷ আর হবেন নাই বা কেন ? বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয়ের শক্তি যেখানে একটা মনুষ্য দেহের মধ্যে ক্রিয়াশীল সেখানে যতই কৌশলে তিনি শক্তি প্রকাশের উচ্ছ্বাসকে আটকে রাখুন না কেন – শক্তির প্রকাশ ঘটে যাবেই ! সেই রকম ভাবে অনেক সময়েই তাঁর জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে নানান ঘটনা ঘটত – আমরা কেউই সেই সমস্ত ঘটনার সন্ধান পাইনি , যেগুলি উনি নিজের মুখে বলেছিলেন , আমরা শুধু সেগুলিই জানি ! তার-ই দু-একটা বলার চেষ্টা করছি।
গুরু মহারাজ তখন খুবই ছোট , টলমল পায়ে সবে হাঁটতে শুরু করেছেন ৷ গুরু মহারাজের দিদিরা (তখনও এদের বিবাহ হয়নি) তাদের এই প্রিয় ভাইটিকে এত ভালোবাসতো যে তাঁকে নিয়ে সবাই মিলে কাড়াকাড়ি করত! গুরু মহারাজের মা একা হাতে সংসারের সমস্ত কাজকর্ম সামলাতেন – তাই সব সময়ই প্রচন্ড ব্যস্ত থাকতেন । সুতরাং শিশু রবি বা রবিন (গুরু মহারাজ)-এর ভার দিদিদের উপর দিয়ে মা নিশ্চিন্ত থাকতেন ! দিদিরা মায়ের মমতা দিয়েই রবিকে স্নেহের আঁচলে সর্বদা আগলে আগলে রাখতেন ! তবু তারই মধ্যে একদিন ঘটে গিয়েছিল চরম একটা অঘটন !
গুরুমহারাজদের বাড়ির পাশেই ছিল একটি পুকুর , সেই পুকুরের একটি ঘাটে গুরু মহারাজের বাড়ির লোকেরা স্নান , বাসন-মাজা বা অন্যান্য কাজ সারতেন । সেদিন কোন দিদি কোন কাজে পুকুর ঘাটে গেছেন এবং সেখানে আপন মনে নির্দিষ্ট কাজটি করছেন ! এদিকে হয়েছে – কি শিশু রবিন টলমল পায়ে দিদির পিছন পিছন হাঁটতে শুরু করেছে ! যখন হাঁটতে পারেনি তখন হামাগুড়ি দিয়ে দিয়ে দিদির পিছু ধরেছে ! দিদি এই ব্যাপারটা একদম খেয়াল করেনি ! এমনই দৈব মহিমা যে , দিদি যতক্ষণ পুকুরের দিকে মুখ করে কাজ করছিলেন – ততক্ষণ শিশু রবিন ওনার পিছনে ছিল , আর যেই মাত্র কাজ সেরে দিদি ফিরে আসার জন্য ঘুরেছেন সেই মুহূর্তে শিশু রবিন হামাগুড়ি দিয়ে জলে নেমে পড়েছে ! ফলে দিদি দেখতেই পায়নি যে , রবিন সেখানে এসেছে বা জলে নেমে পড়েছে !
জলে নেমে পড়েই শিশু রবিন জলের মধ্যে দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে দিয়ে অনেক গভীরে ঢুকে পড়েছিল ! এদিকে ঘাট থেকে দিদি বাড়ি ফিরতেই মা জিজ্ঞাসা করেছেন – ” হ্যাঁরে ! তোর পিছু পিছু যে রবি (গুরু মহারাজ) গেল – সে কই ? তাকে কি কেউ কোলে করে নিয়ে গেছে ?” মায়ের কথা শুনে ওই দিদি তো একেবারে আকাশ থেকে পড়লো ! “আমার পিছু পিছু রবি গেছে ? কই – আমি তো কিছুই দেখিনি ?” – দিদির বিস্ময়-মিশ্রিত উত্তর ! ওর কথা শুনে মা তো হাউ-মাউ করে উঠেছেন ! মায়ের চিৎকার শুনে বাড়ির অন্যান্য মেম্বাররা মায়ের সাথে ছুটে গেলেন পুকুর ঘাটে! মা তো ছুটে জলের ভেতরে নেমে “আমার রবি ডুবে গেছে গো !” – বলে কান্না জুড়ে দিয়েছেন ৷ মায়ের দেখাদেখি অন্যান্য মেয়েরাও কাঁদতে শুরু করে দিয়েছে ! ততক্ষণে পাড়া-প্রতিবেশীরা ভিড় জমিয়েছে ! তাদেরও অনেকে জলে নেমে খোঁজাখুঁজি করতে শুরু করে দিল ! অনেক খোঁজাখুঁজির পর অবশেষে আবিষ্কৃত হল ডুবন্ত শিশু রবিনকে ! কিন্তু কি আশ্চর্য শরীরের মধ্যে একটুও জল প্রবেশ করেনি ! কোন অদ্ভুত কৌশলে মুখ-কান-নাকের ফুটোগুলি পুকুরের কাদা দিয়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ! ফলে অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা যখন শিশুর পেট থেকে জল বের করার চেষ্টা করছিলেন – তখন ভেতর থেকে একফোঁটা জলও বের হয়নি – যদিও প্রায় আধ ঘণ্টা (২০ বা ২৫ মিনিটও হতে পারে) জলের তলায় ছিলেন শিশু রবিন ! মুখ-নাক-কানের কাদাগুলি সরিয়ে দিতেই শিশু কেঁদে উঠেছিল মায়ের কোলে । শিশুর কান্নায় শুধু মা-ই যে নিশ্চিন্ত হয়েছিলেন তাই নয় , দিদিরা , বাড়ির অন্যান্য সদস্যরা , প্রতিবেশীরা সকলেই আশ্বস্ত হয়েছিলেন এই দেখে যে তাদের প্রাণপ্রিয় এই দেব শিশুর কোনো ক্ষতি হয়নি !
কিন্তু কি হয়েছিল ঘটনাটা – এমন অত্যাশ্চর্য ঘটনাটা কিভাবে ঘটল ? এর পিছনে রহস্যটা কি ? চলুন শুনে নেওয়া যাক – গুরু মহারাজের কথায় !
” শিশু বয়সে যখন আমি একবার জলে ডুবে গিয়েছিলাম – সেই ঘটনাটা কি ঘটেছিল , সেটাই বলছি শোন ! আমি তো দিদির পিছন পিছন গিয়ে একেবারে সরাসরি জলে নেমে পরেছিলাম – দিদি কোন কারনে টেরটিও পায়নি ৷ আমি জলের ভেতর নেমে যেতেই এক অদ্ভুত শীতলতা আমার শরীর-মনকে রোমাঞ্চিত করে তুলল । আসলে জল এবং শীতলতা আমার খুবই ভালো লাগে – কারন আমার এই শরীরের সংস্কার যে শতভিষা নক্ষত্র থেকে এসেছে , সেটির প্রকৃতিই শীতলতা ! ফলে আমি ধীরে ধীরে জলের গভীরে ঢুকে গেলাম ! জলের যত গভীরে যেতে শুরু করলাম ততই আমার খুব আনন্দ হতে লাগল এবং শরীরে রোমাঞ্চ হতে লাগলো । তারপর দেখি জলের গভীরে এক আলাদা জগৎ ! সেখানে অনেক আলো , অনেক Decoration , আর অনেক প্রাচীন ঋষিরা সেখানে আমাকে স্বাগত জানানোর জন্য এগিয়ে আসছে ! তাঁরা এত প্রাচীন যে তাঁদের শরীর এবং মুখগুলো সরু ও লম্বা হয়ে সরীসৃপের মতো হয়ে গেছে – ওই সরু সরু মুখে তাঁদের লম্বা লম্বা দাড়ি মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে ! তাঁরা আমাকে পেয়ে – কি আনন্দ করতে লাগলো ! সবাই আমাকে কোলে নিচ্ছে – আদর করছে , আর নাচানাচি করছে ! তাঁরা কিছু অভিষেক-আচার বা এই ধরনের ক্রিয়া ও করেছিল !
যাইহোক , এক অদ্ভুত আনন্দে আমার সময়টা যে কিভাবে দ্রুত কেটে গিয়েছিল আমি বুঝতেই পারিনি ! হঠাৎ আমার মায়ের কথা মনে পড়তেই – ওই তালটা কেটে গেল ! তখন ওঁরা আমাকে জলের গভীরতা থেকে পাড়ের কাছে দিয়ে গেল এবং যারা খোঁজাখুঁজি করছিল তাদের কারও হাতে আমার শরীরটা ঠেকে যেতে – সে জলের বাইরে আমাকে তুলে এনে মায়ের কোলে দিয়েছিল ! তারপরের ঘটনা তো তোমাদের জানা !” [ক্রমশঃ]
গুরু মহারাজ তখন খুবই ছোট , টলমল পায়ে সবে হাঁটতে শুরু করেছেন ৷ গুরু মহারাজের দিদিরা (তখনও এদের বিবাহ হয়নি) তাদের এই প্রিয় ভাইটিকে এত ভালোবাসতো যে তাঁকে নিয়ে সবাই মিলে কাড়াকাড়ি করত! গুরু মহারাজের মা একা হাতে সংসারের সমস্ত কাজকর্ম সামলাতেন – তাই সব সময়ই প্রচন্ড ব্যস্ত থাকতেন । সুতরাং শিশু রবি বা রবিন (গুরু মহারাজ)-এর ভার দিদিদের উপর দিয়ে মা নিশ্চিন্ত থাকতেন ! দিদিরা মায়ের মমতা দিয়েই রবিকে স্নেহের আঁচলে সর্বদা আগলে আগলে রাখতেন ! তবু তারই মধ্যে একদিন ঘটে গিয়েছিল চরম একটা অঘটন !
গুরুমহারাজদের বাড়ির পাশেই ছিল একটি পুকুর , সেই পুকুরের একটি ঘাটে গুরু মহারাজের বাড়ির লোকেরা স্নান , বাসন-মাজা বা অন্যান্য কাজ সারতেন । সেদিন কোন দিদি কোন কাজে পুকুর ঘাটে গেছেন এবং সেখানে আপন মনে নির্দিষ্ট কাজটি করছেন ! এদিকে হয়েছে – কি শিশু রবিন টলমল পায়ে দিদির পিছন পিছন হাঁটতে শুরু করেছে ! যখন হাঁটতে পারেনি তখন হামাগুড়ি দিয়ে দিয়ে দিদির পিছু ধরেছে ! দিদি এই ব্যাপারটা একদম খেয়াল করেনি ! এমনই দৈব মহিমা যে , দিদি যতক্ষণ পুকুরের দিকে মুখ করে কাজ করছিলেন – ততক্ষণ শিশু রবিন ওনার পিছনে ছিল , আর যেই মাত্র কাজ সেরে দিদি ফিরে আসার জন্য ঘুরেছেন সেই মুহূর্তে শিশু রবিন হামাগুড়ি দিয়ে জলে নেমে পড়েছে ! ফলে দিদি দেখতেই পায়নি যে , রবিন সেখানে এসেছে বা জলে নেমে পড়েছে !
জলে নেমে পড়েই শিশু রবিন জলের মধ্যে দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে দিয়ে অনেক গভীরে ঢুকে পড়েছিল ! এদিকে ঘাট থেকে দিদি বাড়ি ফিরতেই মা জিজ্ঞাসা করেছেন – ” হ্যাঁরে ! তোর পিছু পিছু যে রবি (গুরু মহারাজ) গেল – সে কই ? তাকে কি কেউ কোলে করে নিয়ে গেছে ?” মায়ের কথা শুনে ওই দিদি তো একেবারে আকাশ থেকে পড়লো ! “আমার পিছু পিছু রবি গেছে ? কই – আমি তো কিছুই দেখিনি ?” – দিদির বিস্ময়-মিশ্রিত উত্তর ! ওর কথা শুনে মা তো হাউ-মাউ করে উঠেছেন ! মায়ের চিৎকার শুনে বাড়ির অন্যান্য মেম্বাররা মায়ের সাথে ছুটে গেলেন পুকুর ঘাটে! মা তো ছুটে জলের ভেতরে নেমে “আমার রবি ডুবে গেছে গো !” – বলে কান্না জুড়ে দিয়েছেন ৷ মায়ের দেখাদেখি অন্যান্য মেয়েরাও কাঁদতে শুরু করে দিয়েছে ! ততক্ষণে পাড়া-প্রতিবেশীরা ভিড় জমিয়েছে ! তাদেরও অনেকে জলে নেমে খোঁজাখুঁজি করতে শুরু করে দিল ! অনেক খোঁজাখুঁজির পর অবশেষে আবিষ্কৃত হল ডুবন্ত শিশু রবিনকে ! কিন্তু কি আশ্চর্য শরীরের মধ্যে একটুও জল প্রবেশ করেনি ! কোন অদ্ভুত কৌশলে মুখ-কান-নাকের ফুটোগুলি পুকুরের কাদা দিয়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ! ফলে অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা যখন শিশুর পেট থেকে জল বের করার চেষ্টা করছিলেন – তখন ভেতর থেকে একফোঁটা জলও বের হয়নি – যদিও প্রায় আধ ঘণ্টা (২০ বা ২৫ মিনিটও হতে পারে) জলের তলায় ছিলেন শিশু রবিন ! মুখ-নাক-কানের কাদাগুলি সরিয়ে দিতেই শিশু কেঁদে উঠেছিল মায়ের কোলে । শিশুর কান্নায় শুধু মা-ই যে নিশ্চিন্ত হয়েছিলেন তাই নয় , দিদিরা , বাড়ির অন্যান্য সদস্যরা , প্রতিবেশীরা সকলেই আশ্বস্ত হয়েছিলেন এই দেখে যে তাদের প্রাণপ্রিয় এই দেব শিশুর কোনো ক্ষতি হয়নি !
কিন্তু কি হয়েছিল ঘটনাটা – এমন অত্যাশ্চর্য ঘটনাটা কিভাবে ঘটল ? এর পিছনে রহস্যটা কি ? চলুন শুনে নেওয়া যাক – গুরু মহারাজের কথায় !
” শিশু বয়সে যখন আমি একবার জলে ডুবে গিয়েছিলাম – সেই ঘটনাটা কি ঘটেছিল , সেটাই বলছি শোন ! আমি তো দিদির পিছন পিছন গিয়ে একেবারে সরাসরি জলে নেমে পরেছিলাম – দিদি কোন কারনে টেরটিও পায়নি ৷ আমি জলের ভেতর নেমে যেতেই এক অদ্ভুত শীতলতা আমার শরীর-মনকে রোমাঞ্চিত করে তুলল । আসলে জল এবং শীতলতা আমার খুবই ভালো লাগে – কারন আমার এই শরীরের সংস্কার যে শতভিষা নক্ষত্র থেকে এসেছে , সেটির প্রকৃতিই শীতলতা ! ফলে আমি ধীরে ধীরে জলের গভীরে ঢুকে গেলাম ! জলের যত গভীরে যেতে শুরু করলাম ততই আমার খুব আনন্দ হতে লাগল এবং শরীরে রোমাঞ্চ হতে লাগলো । তারপর দেখি জলের গভীরে এক আলাদা জগৎ ! সেখানে অনেক আলো , অনেক Decoration , আর অনেক প্রাচীন ঋষিরা সেখানে আমাকে স্বাগত জানানোর জন্য এগিয়ে আসছে ! তাঁরা এত প্রাচীন যে তাঁদের শরীর এবং মুখগুলো সরু ও লম্বা হয়ে সরীসৃপের মতো হয়ে গেছে – ওই সরু সরু মুখে তাঁদের লম্বা লম্বা দাড়ি মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে ! তাঁরা আমাকে পেয়ে – কি আনন্দ করতে লাগলো ! সবাই আমাকে কোলে নিচ্ছে – আদর করছে , আর নাচানাচি করছে ! তাঁরা কিছু অভিষেক-আচার বা এই ধরনের ক্রিয়া ও করেছিল !
যাইহোক , এক অদ্ভুত আনন্দে আমার সময়টা যে কিভাবে দ্রুত কেটে গিয়েছিল আমি বুঝতেই পারিনি ! হঠাৎ আমার মায়ের কথা মনে পড়তেই – ওই তালটা কেটে গেল ! তখন ওঁরা আমাকে জলের গভীরতা থেকে পাড়ের কাছে দিয়ে গেল এবং যারা খোঁজাখুঁজি করছিল তাদের কারও হাতে আমার শরীরটা ঠেকে যেতে – সে জলের বাইরে আমাকে তুলে এনে মায়ের কোলে দিয়েছিল ! তারপরের ঘটনা তো তোমাদের জানা !” [ক্রমশঃ]