গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দ সিটিংয়ে ওনার পূর্ব জীবন অর্থাৎ কৃষ্ণদেবপুরের ঘটনা খুব একটা বলতে চাইতেন না ! গঙ্গাবাবু (গঙ্গানারায়ন ব্যানার্জি) যখন ‘পরমানন্দম’ এবং ‘জননী নিভাননী’ – বই দুটি লিখেছিলেন তখন উনি খুব বেশি বেশি কৃষ্ণদেবপুরে যেতেন ৷ ওখানে গিয়ে গুরু মহারাজের মা নিভাননী দেবীর সাথে এবং ওখানকার স্থানীয় মানুষ , গুরু মহারাজের ছোটবেলার বন্ধুরা এবং ওখানকার অন্যান্য ভক্তমণ্ডলীদের সাথে আলোচনা করে গুরু মহারাজের ছোটবেলার স্মৃতিকথা কালেকশনের চেষ্টা করতেন ।
সেই সময় একবারের কথা আমার মনে আছে – সেবার আজিমগঞ্জে ২৫-শে ডিসেম্বর উপলক্ষে গুরুমহারাজ রয়েছেন ৷ গঙ্গাবাবু ওই সময় বেশ কয়েকদিন (২৪-শে ডিসেম্বর থেকে ১-লা জানুয়ারি) থেকে গেলেন গুরু মহারাজের শ্রীমুখ থেকে ওনার ছোটবেলাকার কিছু ঘটনা শুনবেন বলে ! দু-চার বার Request-ও করেছেন গুরু মহারাজকে , কিন্তু গুরুমহারাজ উত্তর দিয়েছেন – ” আমি ফরমাসি বক্তব্য বলতে পারি না – মা (জগদম্বা) যখন যা বলায় তাই বলি ! ফরমাস করলে আমার মুখ বন্ধ হয়ে যায় ! অবশ্য মা (জগদম্বা) চাইলে সেইরকম পরিস্থিতিতেও আমি বলব – তবে সেটা অন্য কথা !”
কি আর করা যায় – গঙ্গা বাবু তখনও L.l.C.I.-তে চাকুরীরত , ফলে কতদিন আর অফিস কামাই করা যায় । উনি চলে গেলেন কলকাতা ! আর সেই রাত্রেই – রাত্রি ৯টা – ৯-৩০ থেকে প্রায় সারা রাত ধরে (অন্ততঃ ৩-টে /৩-৩০ টে পর্যন্ত) কৃষ্ণদেবপুরের কথা , মা (গর্ভধারিনী)-য়ের কথা , ওখানে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলির কথা আলোচনা হ’ল ! আসলে কৃষ্ণদেবপুর থেকে গুরু মহারাজের বন্ধু নাড়ু দা , বন্ধুস্থানীয় [সেজদার বন্ধু(!) ] পরিমলদা প্রমুখরা সেদিন এসে হাজির হয়েছিলেন ৷ তাই এই কৃষ্ণদেবপুর প্রসঙ্গ !
সেদিন ভোরে সিটিং যখন শেষ হয়ে গেল – তখন সিটিং-এর ঘর থেকে বেরোতে বেরোতে জয়দীপের (বর্তমান জয়দীপ মহারাজ) সে কি হাসি ! হাসতে হাসতে বলছিল – ” গুরুমহারাজ একটা আজব মানুষ যা হোক ! গঙ্গাবাবু কৃষ্ণদেবপুর এর ঘটনা শুনবেন বলে তিন-চার দিন ধরে বসে থাকলেন – তখন গুরুমহারাজ ওই প্রসঙ্গে একটি কথাও বললেন না ! আর আজকেই ওই ভদ্রলোক (গঙ্গাবাবু) চলে গেলেন এবং গুরু মহারাজ আজকেই সারারাত ধরে শুধু কৃষ্ণদেবপুরের ঘটনা নিয়ে আলোচনা করে গেলেন !”
সেই রাত্রে গুরু মহারাজ কৃষ্ণদেবপুরের নানা ঘটনার মধ্যে এই ঘটনাটিও বলেছিলেন – সেটাই বলা হচ্ছে ।
গুরু মহারাজ খুব ছোটবেলা থেকেই রাতের বেলায় বাড়ির বাইরে কাটাতেন , প্রায় রাত্রে উনি ঘুমাতেনই না ! চলে যেতেন বাড়ি থেকে দূরে কোন মন্দিরে , অথবা কোন শ্মশানে বা কবরস্থানে অথবা কোনো ফাঁকা নির্জন স্থানে খোলা আকাশের নিচে ! সব সময় যে উনি ধ্যানস্থ থাকতেন তা কিন্তু উনি আমাদের বলেননি – উনি বলেছিলেন রাত্রির নক্ষত্রখচিত আকাশের দিকেই ঘন্টার পর ঘন্টা চেয়ে থেকে আমার রাত কেটে যেত! আমার চিন্তা তরঙ্গ নক্ষত্রলোকের পথে পথে খুঁজে বেড়াতো সৃষ্টি ও স্রষ্টার অনুন্মোচিত রহস্যকে ! চন্দ্রালোকিত রাতে চাঁদের দিকে তাকাতাম , চন্দ্রালোকে উদ্ভাসিত প্রকৃতির দিকে চেয়ে রইতাম , কখন যে রাত কেটে ভোর হয়ে যেত – বুঝতেই পারতাম না । ভোরে লোকজন উঠে পড়ে যখন হইচই শুরু করত – তখন চুপটি করে এসে বিছানায় শুয়ে পড়তাম !
খুব ছোটবেলায় প্রায়শই রাত্রে উঠে গুরু মহারাজ (বালক রবীন) ওনাদের বাড়ির সোজাসুজি রেললাইনে (কাটোয়া-ব্যান্ডেল রেললাইন)-র একটি কালভার্ট-এ গিয়ে বসতেন । ওই স্থানটিতে প্রচুর সুইসাইড হতো , Accident ও হোত ! সেই জন্য একটু রাত গভীর হলে ওখানটায় কেউই যেতে চাইত না । গুরু মহারাজ সেই সুযোগটাই কাজে লাগাতেন – অর্থাৎ স্থানটি নির্জন থাকবে কেউ ডিস্টার্ব করবে না – তাই উনি ওখানেই গিয়ে বসতেন । সেদিনও চুপিসারে মা-বাবার অলক্ষ্যে উঠে গিয়ে ওই রেল লাইনের ধারে কালভার্ট-টায় গিয়ে বসে রয়েছেন! রাত্রি কেটে যাচ্ছে – মধ্যরাত্রি অতিক্রান্ত হয়ে গেছে অনেকক্ষণ । হঠাৎ একটা বিকট আওয়াজ আসতে শুরু করলো রেল লাইন বরাবর ! এমন ভয়ঙ্কর শব্দ যেন মনে হচ্ছিল ওই রেল লাইন ধরে বহুদূর থেকে একটা রেল ইঞ্জিন ছুটে আসছে ৷ শব্দ টা হচ্ছিল যেন – সোঁ – ও – ও – ও , ধপ্ – ধপ্ – ধপ্ – ধপ্ , সোঁ – ও – ও – ও , ধপ্ – ধপ্ – ধপ্ – ধপ্ , …. ।
গুরুমহারাজ ভালোমতন জানতেন যে, সেইসময় কোন ট্রেন যাবার কথা নয়। তাই উনি প্রথমটায় মনে করেছিলেন হয়তো রেল কোম্পানির কোন ট্রলি ( অনেক সময় রেল কোম্পানির কর্মচারিরা এক ধরনের ট্রলি ব্যবহার করে যেটা রেল লাইন বরাবর ইঞ্জিন ছাড়াই যেতে পারে ।) অথবা কোন সিঙ্গেল ইঞ্জিন হয়তো রেল লাইন ধরে ওই দিকে আসছে ৷ কোন ট্রেন যে হতে পারে না – সেটা উনি জানতেন। কারণ তখনকার দিনে রাত্রি ১০/১১টার পর ওই লাইনে কোন ট্রেন চলাচল করত না ।
গুরুমহারাজ দূর থেকে অন্ধকারের মধ্যেই দেখতে পাচ্ছিলেন যে কিছু একটা রেল লাইন বরাবর ছুটে আসছে – কিন্তু বস্তুটা কী – সেইটা উনি ঠাহর করতে পারছিলেন না ৷ ভাবতে ভাবতে সেইটা ওনার একেবারে হাতের নাগালের মধ্যে চলে এল – !
উনি দেখলেন যে একটি স্কন্ধকাটা কবন্ধ(কথিত আছে যে একলক্ষ মৃত্যু হলে _একটা কবন্ধ সৃষ্টি হয়!! ) রেল লাইন বরাবর ছুটতে ছুটতে আসছে আর তার কাটা মাথাটা রেললাইন বরাবর প্রবল বেগে গড়াতে গড়াতে আগাচ্ছে ! সেটা এত স্পিডে ঘুরতে ঘুরতে যাচ্ছে যে সোঁ – ও – ও – ও – করে বিকট আওয়াজ হচ্ছে ! আর স্কন্ধকাটা-টি বিশাল শরীর নিয়ে ধপ্-ধপ্ করে রেল লাইনের দুই দিকে পা দিয়ে দিয়ে আগাচ্ছে আর দুই হাত বাড়িয়ে কাটা মুন্ডুটিকে ধরার ব্যর্থ প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে ! মাঝে মাঝে ওর মুন্ডু ধরতে ব্যর্থ হাত দুটো চটাস্ চটাস্ করে ওর বুকে আঘাত করছে ! গুরু মহারাজের (বালক রবীন) ৩/৪ হাত দূর দিয়ে ওই স্কন্ধকাটাটি প্রবল বেগে বেরিয়ে গেল আর একটা বিশ্রী বোঁটকা গন্ধে চারিদিক যেন ভরে গেল !
চোখের সামনে এইরকম ভয়ঙ্কর একটা দৃশ্য দেখে গুরু মহারাজকে প্রচন্ড ভয় গ্রাস করেছিল ! উনি বলেছিলেন – ” দেখলাম আমার মেরুদন্ড বরাবর একটা শীতল স্রোত নিচ থেকে উপরে উঠে আসছিল এবং আমার শরীরটাকে জমাট করে দিচ্ছিল ! আমি নড়াচড়া করতে পারছিলাম না এবং আমি বুঝতে পারছিলাম ওই অবস্থায় কিছুক্ষণ থাকলেই মানুষের মৃত্যু হয় ! তারপর দেখলাম আমার মস্তিষ্কের ঊর্ধ্ব ভাগ থেকে একটা উষ্ণ স্রোত প্রবলবেগে উপর থেকে নিচের দিকে নেমে এল এবং শরীরে যে শীতলতার সৃষ্টি হয়েছিল – তাকে নিউট্রালাইজ করে আবার শরীরকে উষ্ণ করে দিল ! আমার শরীর নড়াচড়া করার সামর্থ্য ফিরে এল ! এই অবস্থায় আমি ওখানে আর তিলার্ধ না থেকে একছুটে বাড়ি চলে এলাম – ঘরে ঢুকেই ঘুমন্ত বাবার (ওনার পিতা ফকির চন্দ্র দাস) বুকে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম ! বাবা ঘুম ভেঙে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন – ” কি রে ! ভয় পেয়েছিস নাকি ? কোথায় গিয়েছিলি – যে ভয় পেলি ?” আমি সব ঘটনা বাবাকে বললাম । উনি বললেন – ” ওখানে যাবি না ! ওখানে বহু মানুষ-জীবজন্তু ইত্যাদির মৃত্যু হয়েছে তাই ওখানে নানা ধরনের প্রেতযোনিরা বাস করে !” এরপর থেকে রাত্রে বাবা আমার গায়ের জামার সাথে ওনার কাপড়ের খুঁট বেঁধে রেখে ঘুমাতেন , যাতে আমি রাতে পালাতে না পারি ।। [ক্রমশঃ]
সেই সময় একবারের কথা আমার মনে আছে – সেবার আজিমগঞ্জে ২৫-শে ডিসেম্বর উপলক্ষে গুরুমহারাজ রয়েছেন ৷ গঙ্গাবাবু ওই সময় বেশ কয়েকদিন (২৪-শে ডিসেম্বর থেকে ১-লা জানুয়ারি) থেকে গেলেন গুরু মহারাজের শ্রীমুখ থেকে ওনার ছোটবেলাকার কিছু ঘটনা শুনবেন বলে ! দু-চার বার Request-ও করেছেন গুরু মহারাজকে , কিন্তু গুরুমহারাজ উত্তর দিয়েছেন – ” আমি ফরমাসি বক্তব্য বলতে পারি না – মা (জগদম্বা) যখন যা বলায় তাই বলি ! ফরমাস করলে আমার মুখ বন্ধ হয়ে যায় ! অবশ্য মা (জগদম্বা) চাইলে সেইরকম পরিস্থিতিতেও আমি বলব – তবে সেটা অন্য কথা !”
কি আর করা যায় – গঙ্গা বাবু তখনও L.l.C.I.-তে চাকুরীরত , ফলে কতদিন আর অফিস কামাই করা যায় । উনি চলে গেলেন কলকাতা ! আর সেই রাত্রেই – রাত্রি ৯টা – ৯-৩০ থেকে প্রায় সারা রাত ধরে (অন্ততঃ ৩-টে /৩-৩০ টে পর্যন্ত) কৃষ্ণদেবপুরের কথা , মা (গর্ভধারিনী)-য়ের কথা , ওখানে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলির কথা আলোচনা হ’ল ! আসলে কৃষ্ণদেবপুর থেকে গুরু মহারাজের বন্ধু নাড়ু দা , বন্ধুস্থানীয় [সেজদার বন্ধু(!) ] পরিমলদা প্রমুখরা সেদিন এসে হাজির হয়েছিলেন ৷ তাই এই কৃষ্ণদেবপুর প্রসঙ্গ !
সেদিন ভোরে সিটিং যখন শেষ হয়ে গেল – তখন সিটিং-এর ঘর থেকে বেরোতে বেরোতে জয়দীপের (বর্তমান জয়দীপ মহারাজ) সে কি হাসি ! হাসতে হাসতে বলছিল – ” গুরুমহারাজ একটা আজব মানুষ যা হোক ! গঙ্গাবাবু কৃষ্ণদেবপুর এর ঘটনা শুনবেন বলে তিন-চার দিন ধরে বসে থাকলেন – তখন গুরুমহারাজ ওই প্রসঙ্গে একটি কথাও বললেন না ! আর আজকেই ওই ভদ্রলোক (গঙ্গাবাবু) চলে গেলেন এবং গুরু মহারাজ আজকেই সারারাত ধরে শুধু কৃষ্ণদেবপুরের ঘটনা নিয়ে আলোচনা করে গেলেন !”
সেই রাত্রে গুরু মহারাজ কৃষ্ণদেবপুরের নানা ঘটনার মধ্যে এই ঘটনাটিও বলেছিলেন – সেটাই বলা হচ্ছে ।
গুরু মহারাজ খুব ছোটবেলা থেকেই রাতের বেলায় বাড়ির বাইরে কাটাতেন , প্রায় রাত্রে উনি ঘুমাতেনই না ! চলে যেতেন বাড়ি থেকে দূরে কোন মন্দিরে , অথবা কোন শ্মশানে বা কবরস্থানে অথবা কোনো ফাঁকা নির্জন স্থানে খোলা আকাশের নিচে ! সব সময় যে উনি ধ্যানস্থ থাকতেন তা কিন্তু উনি আমাদের বলেননি – উনি বলেছিলেন রাত্রির নক্ষত্রখচিত আকাশের দিকেই ঘন্টার পর ঘন্টা চেয়ে থেকে আমার রাত কেটে যেত! আমার চিন্তা তরঙ্গ নক্ষত্রলোকের পথে পথে খুঁজে বেড়াতো সৃষ্টি ও স্রষ্টার অনুন্মোচিত রহস্যকে ! চন্দ্রালোকিত রাতে চাঁদের দিকে তাকাতাম , চন্দ্রালোকে উদ্ভাসিত প্রকৃতির দিকে চেয়ে রইতাম , কখন যে রাত কেটে ভোর হয়ে যেত – বুঝতেই পারতাম না । ভোরে লোকজন উঠে পড়ে যখন হইচই শুরু করত – তখন চুপটি করে এসে বিছানায় শুয়ে পড়তাম !
খুব ছোটবেলায় প্রায়শই রাত্রে উঠে গুরু মহারাজ (বালক রবীন) ওনাদের বাড়ির সোজাসুজি রেললাইনে (কাটোয়া-ব্যান্ডেল রেললাইন)-র একটি কালভার্ট-এ গিয়ে বসতেন । ওই স্থানটিতে প্রচুর সুইসাইড হতো , Accident ও হোত ! সেই জন্য একটু রাত গভীর হলে ওখানটায় কেউই যেতে চাইত না । গুরু মহারাজ সেই সুযোগটাই কাজে লাগাতেন – অর্থাৎ স্থানটি নির্জন থাকবে কেউ ডিস্টার্ব করবে না – তাই উনি ওখানেই গিয়ে বসতেন । সেদিনও চুপিসারে মা-বাবার অলক্ষ্যে উঠে গিয়ে ওই রেল লাইনের ধারে কালভার্ট-টায় গিয়ে বসে রয়েছেন! রাত্রি কেটে যাচ্ছে – মধ্যরাত্রি অতিক্রান্ত হয়ে গেছে অনেকক্ষণ । হঠাৎ একটা বিকট আওয়াজ আসতে শুরু করলো রেল লাইন বরাবর ! এমন ভয়ঙ্কর শব্দ যেন মনে হচ্ছিল ওই রেল লাইন ধরে বহুদূর থেকে একটা রেল ইঞ্জিন ছুটে আসছে ৷ শব্দ টা হচ্ছিল যেন – সোঁ – ও – ও – ও , ধপ্ – ধপ্ – ধপ্ – ধপ্ , সোঁ – ও – ও – ও , ধপ্ – ধপ্ – ধপ্ – ধপ্ , …. ।
গুরুমহারাজ ভালোমতন জানতেন যে, সেইসময় কোন ট্রেন যাবার কথা নয়। তাই উনি প্রথমটায় মনে করেছিলেন হয়তো রেল কোম্পানির কোন ট্রলি ( অনেক সময় রেল কোম্পানির কর্মচারিরা এক ধরনের ট্রলি ব্যবহার করে যেটা রেল লাইন বরাবর ইঞ্জিন ছাড়াই যেতে পারে ।) অথবা কোন সিঙ্গেল ইঞ্জিন হয়তো রেল লাইন ধরে ওই দিকে আসছে ৷ কোন ট্রেন যে হতে পারে না – সেটা উনি জানতেন। কারণ তখনকার দিনে রাত্রি ১০/১১টার পর ওই লাইনে কোন ট্রেন চলাচল করত না ।
গুরুমহারাজ দূর থেকে অন্ধকারের মধ্যেই দেখতে পাচ্ছিলেন যে কিছু একটা রেল লাইন বরাবর ছুটে আসছে – কিন্তু বস্তুটা কী – সেইটা উনি ঠাহর করতে পারছিলেন না ৷ ভাবতে ভাবতে সেইটা ওনার একেবারে হাতের নাগালের মধ্যে চলে এল – !
উনি দেখলেন যে একটি স্কন্ধকাটা কবন্ধ(কথিত আছে যে একলক্ষ মৃত্যু হলে _একটা কবন্ধ সৃষ্টি হয়!! ) রেল লাইন বরাবর ছুটতে ছুটতে আসছে আর তার কাটা মাথাটা রেললাইন বরাবর প্রবল বেগে গড়াতে গড়াতে আগাচ্ছে ! সেটা এত স্পিডে ঘুরতে ঘুরতে যাচ্ছে যে সোঁ – ও – ও – ও – করে বিকট আওয়াজ হচ্ছে ! আর স্কন্ধকাটা-টি বিশাল শরীর নিয়ে ধপ্-ধপ্ করে রেল লাইনের দুই দিকে পা দিয়ে দিয়ে আগাচ্ছে আর দুই হাত বাড়িয়ে কাটা মুন্ডুটিকে ধরার ব্যর্থ প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে ! মাঝে মাঝে ওর মুন্ডু ধরতে ব্যর্থ হাত দুটো চটাস্ চটাস্ করে ওর বুকে আঘাত করছে ! গুরু মহারাজের (বালক রবীন) ৩/৪ হাত দূর দিয়ে ওই স্কন্ধকাটাটি প্রবল বেগে বেরিয়ে গেল আর একটা বিশ্রী বোঁটকা গন্ধে চারিদিক যেন ভরে গেল !
চোখের সামনে এইরকম ভয়ঙ্কর একটা দৃশ্য দেখে গুরু মহারাজকে প্রচন্ড ভয় গ্রাস করেছিল ! উনি বলেছিলেন – ” দেখলাম আমার মেরুদন্ড বরাবর একটা শীতল স্রোত নিচ থেকে উপরে উঠে আসছিল এবং আমার শরীরটাকে জমাট করে দিচ্ছিল ! আমি নড়াচড়া করতে পারছিলাম না এবং আমি বুঝতে পারছিলাম ওই অবস্থায় কিছুক্ষণ থাকলেই মানুষের মৃত্যু হয় ! তারপর দেখলাম আমার মস্তিষ্কের ঊর্ধ্ব ভাগ থেকে একটা উষ্ণ স্রোত প্রবলবেগে উপর থেকে নিচের দিকে নেমে এল এবং শরীরে যে শীতলতার সৃষ্টি হয়েছিল – তাকে নিউট্রালাইজ করে আবার শরীরকে উষ্ণ করে দিল ! আমার শরীর নড়াচড়া করার সামর্থ্য ফিরে এল ! এই অবস্থায় আমি ওখানে আর তিলার্ধ না থেকে একছুটে বাড়ি চলে এলাম – ঘরে ঢুকেই ঘুমন্ত বাবার (ওনার পিতা ফকির চন্দ্র দাস) বুকে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম ! বাবা ঘুম ভেঙে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন – ” কি রে ! ভয় পেয়েছিস নাকি ? কোথায় গিয়েছিলি – যে ভয় পেলি ?” আমি সব ঘটনা বাবাকে বললাম । উনি বললেন – ” ওখানে যাবি না ! ওখানে বহু মানুষ-জীবজন্তু ইত্যাদির মৃত্যু হয়েছে তাই ওখানে নানা ধরনের প্রেতযোনিরা বাস করে !” এরপর থেকে রাত্রে বাবা আমার গায়ের জামার সাথে ওনার কাপড়ের খুঁট বেঁধে রেখে ঘুমাতেন , যাতে আমি রাতে পালাতে না পারি ।। [ক্রমশঃ]