গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দের ছোটবেলাকার কিছু ঘটনার কথা এখানে বলা হচ্ছিল । সেই রাত্রে আজিমগঞ্জে বেশ কয়েকজন কৃষ্ণদেবপুরের লোকজন আসায় স্বাভাবিকভাবেই গুরুজীর জন্মভূমির প্রসঙ্গ উঠে পড়ল – আর উনি গড় গড় করে সে রাতে কত কথাই না বলেছিলেন! উনি ওনার বাবার কথা বলেছিলেন । যিনি একজন সম্মানীয় প্রাইভেট টিউটরকে এক কথায় ছাড়িয়ে দিয়েছিলেন – শুধুমাত্র সে বালক ‘রবি’ (গুরু মহারাজ)-র গায়ে হাত তুলেছিল এই অপরাধে ! গুরু মহারাজ বলেছিলেন, ওনার বাবা _যে কোন প্রকারে জেনে গিয়েছিলেন যে, ‘রবি’ সাধারন বালক নয় অসাধারণ কোন মহাপুরুষ ! তাই উনি বাড়ির সকলকে বলে রেখেছিলেন _যাতে তারা কেউই ‘রবি’-র কোন দোষ না দেখে!!
গুরু মহারাজ সেদিন বলছিলেন ____ একটি মজার ঘটনা ঘটেছিল একদিন, যখন উনি মা/ দিদিদের সাথে বাঘনাপাড়ার বিখ্যাত কৃষ্ণ-বলরাম মন্দিরে রাস অথবা ঝুলন উৎসব দেখতে গিয়েছিলেন ৷ ওই মন্দিরটি বেশ বড়সড় এবং ভেতরটাও সাজানো গোছানো! বিশেষত সেইদিন রাস/ঝুলন উৎসব উপলক্ষে দলে দলে মানুষ মন্দিরে প্রবেশের বড় গেট দিয়ে যাওয়া-আসা করছিল । ওই মন্দিরটির প্রবেশদ্বারের বিপরীত দিকেই একটি ছোট মন্দির রয়েছে – গোপেশ্বর শিব মন্দির ৷ মন্দিরের শিব গোপেশ্বর খুবই জাগ্রত । সেদিন উৎসব উপলক্ষে দলে দলে মানুষ রাস/ঝুলন দেখতে আলোক মালায় সুসজ্জিত কৃষ্ণ-বলরাম মন্দিরে ঢুকছিল বালক রবিও (গুরু মহারাজ) সবার সাথে আনমনে বড় ফটক ধরে ঢুকে যাচ্ছিলেন! হঠাৎ ওনার মনে হল পিছন থেকে কেউ যেন ওনার কানটা টেনে ধরেছে – উনি ভিড়ের মধ্যেই পিছনে চেয়ে দেখলেন যে গোপেশ্বর শিব মন্দির থেকে স্বয়ং গোপেশ্বর শিব ওনার কানটা ধরে কানে কানে বলছেন – ” আমার সাথে দেখা না করে চলে যাচ্ছিস যে ! তুই কি আর পাঁচজন মানুষের ন্যায় সাধারণ!!” গুরুমহারাজ ভূল স্বীকার করেছিলেন!
গুরু মহারাজ তাঁর শিশু বয়সের আরেকটি ঘটনা সেদিন বলেছিলেন , তখন উনি একেবারে কোলের শিশু ! সেই সময় ওনার খুব জ্বর হয়েছিল ! বাবা ফকির চন্দ্র বাড়িতে ছিলেন না – উদাসী মানুষ – কোথায় চলে গিয়েছিলেন ! মা নিভারানী আর কি করেন – বিজারাতে ওনার বাপের বাড়ি , মাত্র কয়েক মাইল হাঁটাপথ , সঙ্গে একজন মহিলাকে নিয়ে জ্বরে বেহুঁশ শিশুকে বুকে করে নিয়ে_ ছুটছিলেন বিজরার দিকে! মাঠে মাঠে হাঁটা পথ (এখন কৃষ্ণদেবপুর থেকে বিজারা যাবার পাকা রাস্তা হয়ে গেছে), পথের মধ্যে একটা ছোট পুল ছিল – সেটা পেরিয়ে একটা গাছের ছায়ায় একটু জিরোবার জন্য দাঁড়িয়েছেন – এমন সময় হঠাৎ করে এক বৈষ্ণব-বৈষ্ণবী(!) [গুরুমহারাজ একবার ওঁদেরকে সাধু এবং সাধুমা হিসাবেও উপস্থাপনা করছিলেন] দম্পতির আবির্ভাব ঘটে গেল সেখানে ! তাঁরা মায়ের কাছ থেকে শিশুকে একবার কোলে নিয়েছিলেন । তারপর আদর করতে করতে বললেন – ” কই মা ! শিশুর তো কোন জ্বর-জ্বালা নেই ! ও তো সম্পূর্ণ সুস্থ !” গুরু মহারাজ পরে বলেছিলেন – ” ওঁরা ছিলেন সাক্ষাৎ বৈদ্যনাথ মহেশ্বর এবং মহেশ্বরী স্বয়ং !”
তবে সবচাইতে উল্লেখযোগ্য ঘটনাটা ঘটেছিল ওনার যখন পাঁচ বছর বয়স –সেই সময় ! উনি বলেছিলেন – তখন উনি দিদিদের সাথে প্রাইমারি স্কুলে যেতেন ( সবে ভর্তি হয়েছিলেন) । একদিন দিদিরা কোন পেয়ারাবাগানে পেয়ারা তুলতে যাবে বলে ওনাকে একা একাই বাড়ির পথ ধরিয়ে দিয়ে বলেছিল – ” তুই একাই বাড়ি চলে যা !” বালক রবি (গুরু মহারাজ) দিদির কথায় সুবোধ বালকের মতো একা একাই বাড়ি ফিরছিলেন । হঠাৎ বাঁশবাগানের মধ্যে এক দেবী মন্দিরের সামনে উনি দেখেন দুটি মৈথুনরত কুকুরকে ! উনি এই দৃশ্য তার আগে কখনো দেখেননি বলেই একটু অবাক হয়ে সেই দিকে তাকিয়ে ছিলেন ! ঠিক তখনই ওনার নজরে পড়ল – মৈথুনরত কুকুরদ্বয়ের ঠিক উল্টোদিকে একটি ওনারই বয়সী (পাঁচ বছর) একটি কালো রংয়ের মেয়ে , যার উজ্বল দুটি বড় বড় চোখ , একঢাল কালো চুল পিঠ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে , আর তার কপালে ছিল একটা মস্ত লাল টিপ !
সেই মেয়েটি বালক রবীন (গুরু মহারাজ)-কে হাতের ইশারায় কাছে ডেকে নিলো – সে দুইহাতে কুকুরদুটিকে যেন আগলে ধরে ছিল – আর ওই অবস্থায় সেই কালো মেয়েটি গুরুজি অর্থাৎ বালক রবীনকে বলল – “আয় তোকে জগৎ দেখাই !” এরপর গুরুজি ওই অত্যাশ্চর্য বালিকার মুখের দিকে হাঁ করে চেয়ে রইলেন ! গুরু মহারাজের চোখে পড়ছিল তার কপালের উজ্জ্বল লাল বড় টিপটি ! উনি ধীরে ধীরে দেখলেন – সেই টিপটি বড় হতে হতে এত বড় হলো যে , যেন তা দিকচক্রবাল-কে ছাপিয়ে গেল ! তারপর ওনার আর কিছু মনে নেই ! যখন ওনার আবেশের রেশটা কাটলো তখন উনি দেখলেন যে উনি মা (গর্ভধারিনী জননী)-য়ের কোলে শুয়ে রয়েছেন ! মা ব্যাকুল হয়ে ঝুঁকে পড়ে সন্তানের চোখে চোখ রেখে চেয়েছিলেন ! গুরুজি মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলেন , মায়ের কপালেও ছিল বড় লাল টিপ – উনি সেটার দিকেও তাকিয়ে থাকতে থাকতে আবার ডুবে গেলেন চেতনার গভীরে !
এই অবস্থাটা ওনার বেশ কিছুদিন ধরেই চলেছিল ! সেই কালো মেয়েটি এরপর থেকে ওনাকে নিয়ে রাতে রাতে পাহাড়ে ,পর্বতে ,জঙ্গলে , নদীর পাড়ে ,ফাঁকা মাঠে তুলে নিয়ে যেত এবং জগত-জ্ঞান শেখাতো ! যেহেতু গুরু মহারাজের সংস্কার পৃথিবী গ্রহের ছিল না – ছিল শতভিষা নক্ষত্রের ! তাই পৃথিবীর যাবতীয় জ্ঞান রাশি ওনাকে ছোটবেলাতেই acquire করতে হয়েছিল – সেই ব্যাপারে ওই মেয়েটি ওনাকে সব সময় সাহায্য করত ! আমরা যখন জিজ্ঞাসা করলাম – ” গুরুজি ! ওই কালো মেয়েটা প্রকৃতপক্ষে কে ?” উনি উত্তর দিয়েছিলেন – ” ও হলো আমারই অন্তঃপ্রকৃতি , উনি-ই মা জগদম্বা !” [ক্রমশঃ]
গুরু মহারাজ সেদিন বলছিলেন ____ একটি মজার ঘটনা ঘটেছিল একদিন, যখন উনি মা/ দিদিদের সাথে বাঘনাপাড়ার বিখ্যাত কৃষ্ণ-বলরাম মন্দিরে রাস অথবা ঝুলন উৎসব দেখতে গিয়েছিলেন ৷ ওই মন্দিরটি বেশ বড়সড় এবং ভেতরটাও সাজানো গোছানো! বিশেষত সেইদিন রাস/ঝুলন উৎসব উপলক্ষে দলে দলে মানুষ মন্দিরে প্রবেশের বড় গেট দিয়ে যাওয়া-আসা করছিল । ওই মন্দিরটির প্রবেশদ্বারের বিপরীত দিকেই একটি ছোট মন্দির রয়েছে – গোপেশ্বর শিব মন্দির ৷ মন্দিরের শিব গোপেশ্বর খুবই জাগ্রত । সেদিন উৎসব উপলক্ষে দলে দলে মানুষ রাস/ঝুলন দেখতে আলোক মালায় সুসজ্জিত কৃষ্ণ-বলরাম মন্দিরে ঢুকছিল বালক রবিও (গুরু মহারাজ) সবার সাথে আনমনে বড় ফটক ধরে ঢুকে যাচ্ছিলেন! হঠাৎ ওনার মনে হল পিছন থেকে কেউ যেন ওনার কানটা টেনে ধরেছে – উনি ভিড়ের মধ্যেই পিছনে চেয়ে দেখলেন যে গোপেশ্বর শিব মন্দির থেকে স্বয়ং গোপেশ্বর শিব ওনার কানটা ধরে কানে কানে বলছেন – ” আমার সাথে দেখা না করে চলে যাচ্ছিস যে ! তুই কি আর পাঁচজন মানুষের ন্যায় সাধারণ!!” গুরুমহারাজ ভূল স্বীকার করেছিলেন!
গুরু মহারাজ তাঁর শিশু বয়সের আরেকটি ঘটনা সেদিন বলেছিলেন , তখন উনি একেবারে কোলের শিশু ! সেই সময় ওনার খুব জ্বর হয়েছিল ! বাবা ফকির চন্দ্র বাড়িতে ছিলেন না – উদাসী মানুষ – কোথায় চলে গিয়েছিলেন ! মা নিভারানী আর কি করেন – বিজারাতে ওনার বাপের বাড়ি , মাত্র কয়েক মাইল হাঁটাপথ , সঙ্গে একজন মহিলাকে নিয়ে জ্বরে বেহুঁশ শিশুকে বুকে করে নিয়ে_ ছুটছিলেন বিজরার দিকে! মাঠে মাঠে হাঁটা পথ (এখন কৃষ্ণদেবপুর থেকে বিজারা যাবার পাকা রাস্তা হয়ে গেছে), পথের মধ্যে একটা ছোট পুল ছিল – সেটা পেরিয়ে একটা গাছের ছায়ায় একটু জিরোবার জন্য দাঁড়িয়েছেন – এমন সময় হঠাৎ করে এক বৈষ্ণব-বৈষ্ণবী(!) [গুরুমহারাজ একবার ওঁদেরকে সাধু এবং সাধুমা হিসাবেও উপস্থাপনা করছিলেন] দম্পতির আবির্ভাব ঘটে গেল সেখানে ! তাঁরা মায়ের কাছ থেকে শিশুকে একবার কোলে নিয়েছিলেন । তারপর আদর করতে করতে বললেন – ” কই মা ! শিশুর তো কোন জ্বর-জ্বালা নেই ! ও তো সম্পূর্ণ সুস্থ !” গুরু মহারাজ পরে বলেছিলেন – ” ওঁরা ছিলেন সাক্ষাৎ বৈদ্যনাথ মহেশ্বর এবং মহেশ্বরী স্বয়ং !”
তবে সবচাইতে উল্লেখযোগ্য ঘটনাটা ঘটেছিল ওনার যখন পাঁচ বছর বয়স –সেই সময় ! উনি বলেছিলেন – তখন উনি দিদিদের সাথে প্রাইমারি স্কুলে যেতেন ( সবে ভর্তি হয়েছিলেন) । একদিন দিদিরা কোন পেয়ারাবাগানে পেয়ারা তুলতে যাবে বলে ওনাকে একা একাই বাড়ির পথ ধরিয়ে দিয়ে বলেছিল – ” তুই একাই বাড়ি চলে যা !” বালক রবি (গুরু মহারাজ) দিদির কথায় সুবোধ বালকের মতো একা একাই বাড়ি ফিরছিলেন । হঠাৎ বাঁশবাগানের মধ্যে এক দেবী মন্দিরের সামনে উনি দেখেন দুটি মৈথুনরত কুকুরকে ! উনি এই দৃশ্য তার আগে কখনো দেখেননি বলেই একটু অবাক হয়ে সেই দিকে তাকিয়ে ছিলেন ! ঠিক তখনই ওনার নজরে পড়ল – মৈথুনরত কুকুরদ্বয়ের ঠিক উল্টোদিকে একটি ওনারই বয়সী (পাঁচ বছর) একটি কালো রংয়ের মেয়ে , যার উজ্বল দুটি বড় বড় চোখ , একঢাল কালো চুল পিঠ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে , আর তার কপালে ছিল একটা মস্ত লাল টিপ !
সেই মেয়েটি বালক রবীন (গুরু মহারাজ)-কে হাতের ইশারায় কাছে ডেকে নিলো – সে দুইহাতে কুকুরদুটিকে যেন আগলে ধরে ছিল – আর ওই অবস্থায় সেই কালো মেয়েটি গুরুজি অর্থাৎ বালক রবীনকে বলল – “আয় তোকে জগৎ দেখাই !” এরপর গুরুজি ওই অত্যাশ্চর্য বালিকার মুখের দিকে হাঁ করে চেয়ে রইলেন ! গুরু মহারাজের চোখে পড়ছিল তার কপালের উজ্জ্বল লাল বড় টিপটি ! উনি ধীরে ধীরে দেখলেন – সেই টিপটি বড় হতে হতে এত বড় হলো যে , যেন তা দিকচক্রবাল-কে ছাপিয়ে গেল ! তারপর ওনার আর কিছু মনে নেই ! যখন ওনার আবেশের রেশটা কাটলো তখন উনি দেখলেন যে উনি মা (গর্ভধারিনী জননী)-য়ের কোলে শুয়ে রয়েছেন ! মা ব্যাকুল হয়ে ঝুঁকে পড়ে সন্তানের চোখে চোখ রেখে চেয়েছিলেন ! গুরুজি মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলেন , মায়ের কপালেও ছিল বড় লাল টিপ – উনি সেটার দিকেও তাকিয়ে থাকতে থাকতে আবার ডুবে গেলেন চেতনার গভীরে !
এই অবস্থাটা ওনার বেশ কিছুদিন ধরেই চলেছিল ! সেই কালো মেয়েটি এরপর থেকে ওনাকে নিয়ে রাতে রাতে পাহাড়ে ,পর্বতে ,জঙ্গলে , নদীর পাড়ে ,ফাঁকা মাঠে তুলে নিয়ে যেত এবং জগত-জ্ঞান শেখাতো ! যেহেতু গুরু মহারাজের সংস্কার পৃথিবী গ্রহের ছিল না – ছিল শতভিষা নক্ষত্রের ! তাই পৃথিবীর যাবতীয় জ্ঞান রাশি ওনাকে ছোটবেলাতেই acquire করতে হয়েছিল – সেই ব্যাপারে ওই মেয়েটি ওনাকে সব সময় সাহায্য করত ! আমরা যখন জিজ্ঞাসা করলাম – ” গুরুজি ! ওই কালো মেয়েটা প্রকৃতপক্ষে কে ?” উনি উত্তর দিয়েছিলেন – ” ও হলো আমারই অন্তঃপ্রকৃতি , উনি-ই মা জগদম্বা !” [ক্রমশঃ]