যাইহোক সেদিন শৈবসাধুটি কুঠিয়ার বাইরে বেড়া দেওয়া প্রাঙ্গনে একটা খাটিয়ায় বসেছিল আর অতিথিদের জন্যও আসনের ব্যবস্থা ছিল ৷ কিন্তু অন্যান্য সেবা শুশ্রুষার (জল বা খাবার-দাবার) কোন ব্যাবস্থা ভিতর থেকে আসছিল না । অপ্সরাজীর ব্যবহারে সকলেই একটু অবাক হচ্ছিল কিন্তু সবচেয়ে বেশি অবাক হচ্ছিল কুঠিয়ার মালিক শৈবসাধুটি । সে বলেই ফেলল – ” কি হলো অপ্সরা মায়ি ! অতিথিরা এসেছে , এদের জন্য নাস্তা-পানির বন্দোবস্ত হয়ে যাক্ ।” ভিতর থেকে কোন সাড়া-ই পাওয়া যাচ্ছে না – ব্যাপারটা কি ? একটু আগেই অপ্সরা ভিতরে ঢুকল – অতিথি দেখে আর বেরোচ্ছে না কেন ? এবার গুরু মহারাজের সঙ্গী নাথ-যোগীটি (যিনি অপ্সরা মায়ি-র পূর্ব পরিচিত-ও বটে) ভিতরে ঢুকে দেখতে গেল ব্যাপারটা কি ? সে দৌড়ে ফিরে এসেই বৃদ্ধ সাধুটিকে জানাল যে মায়ি ভেতরে কেমন করছে – বোধয় খুব ভয় পেয়েছে ! বৃদ্ধ একথা শুনেই ওকে আবার পাঠাল – “দ্যাখো তো কি বলছে আর কি করছে ?” নাথ-যোগী দৌড়ে গিয়ে সব দেখে ফিরে এসে Report দিল – “ভীষণ ভয় পেয়েছে , বিড়বিড় করে বলছে _ঐ ছেলেটাকে চলে যেতে বল – ওকে আমি সহ্য করতে পারছি না ।”
শৈবসাধু-টি অবাক হয়ে নির্লিপ্তভাবে আকাশের দিকে চেয়ে থাকা বালক গুরু মহারাজের দিকে চাইল আর তারপরেই খপ্ করে বালকের(গুরুজীর) পা দুটো চেপে ধরে হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগল – ” এই প্রথম আমার সিদ্ধিপ্রাপ্ত অপ্সরা কাউকে ভয় পেল! আমার ইষ্ট শিবজী আমার প্রার্থনা শুনেছেন , তাই তোমাকে পাঠিয়েছেন অথবা বালকবেশে তিনি স্বয়ং এসেছেন ৷ হে প্রভু ! এসেই যখন পড়েছ , তখন তুমি আমাকে রক্ষা কর ৷”
যেই না সাধুটি গুরু মহারাজের পা দুটো চেপে ধরে কেঁদে কেঁদে প্রার্থনা করতে শুরু করেছে , অমনি ভিতর থেকে অপ্সরা মায়ির সেকি কান্না ! “ওগো – তুমি ওকে তাড়িয়ে দাও , আমি যে ঐ ছেলেটিকে আর সহ্য করতে পারছি না ! ওকে তুমি ছেড়ে দাও , ছেড়ে দাও !” অপ্সরা যতই ছেড়ে দেবার কথা বলে সাধুটি গুরু মহারাজকে ততই শক্ত করে ধরে ! এই প্রথম সে অপ্সরার হাত থেকে মুক্তির রাস্তা পেয়েছে – আর ছাড়ে !
নাথ-যোগীটি – একবার দৌড়ে গিয়ে কুঠিয়ার ভিতরটা দেখে আসছে , আবার বাইরে এসে কি দেখল __তা বলে যাচ্ছে ৷ সে ও কিছু যে একটা ঘটতে চলেছে __সেটা বেশ বুঝতে পারছিল!
এই রকম চলতে চলতে একবার _নাথ-যোগী দৌড়ে গিয়ে ভিতরে দেখে এসে বলল – ” সাধুজী! ভিতরে দেখলাম মায়ি খুব কাঁদছে আর তার শরীরের লাবণ্য যেন ঝড়ে যাচ্ছে!কেমন যেন মায়িকে দেখে বয়স্ক মনে হচ্ছে !” একথা শুনে সাধুটি আরো দৃঢ়বদ্ধভাবে গুরুমহারাজের চরণ ধরে বলতে লাগল , “প্রভু ! রক্ষা কর ! এই অপ্সরার মায়াজাল থেকে আমাকে মুক্ত করো প্রভু !” নাথযোগী ইতিমধ্যে আবার দৌড়ে গিয়ে ভিতরে দেখে এসেছে – হাঁফাতে হাঁফাতে ওনাদের কাছে ফিরে এসেই ‘রিলে’করার মতো বলছে – ” সাধুজী ! মায়ি কেমন বৃদ্ধা , লোলচর্মসার হয়ে গেছে !”
সাধুজী এটি শুনে গুরু মহারাজকে আরও দৃঢ় করে ধরে কাঁদতে লাগল , ” আমার অপরাধ ক্ষমা করো প্রভু ! আমাকে মুক্ত করো প্রডু!”
নাথ সাধুটি এবার দৌড়ে কুঠিয়ার ভিতরে দেখল _অপ্সরামায়ির কান্না আর মানুষের মতো লাগছিল না , কেমন যেন খোনা খোনা অর্থাৎ নাকি সুরে এবং ক্ষীণ হয়ে গেল তারপর একেবারেই থেমে গেল!!
নাথযোগীটি দৌড়ে গেল কি হ’ল তা দেখার জন্য ! এসে বলল , ” সাধুজী ! মায়ি ধীরে কালো রঙের কঙ্কালসার রমণীতে পরিণত হ’ল , তারপর ছোট হতে শুরু করল এবং শেষে একটা কালো রঙের কাকের মতো হয়ে উড়ে চলে গেল পাহাড়ের দিকে ৷”
নাথ সাধুর কাছে একথা শুনে হাউ হাউ করে কাঁদতে লাগল বৃদ্ধ সাধুটি_ বালক পরমানন্দের পা দুটো ধরে! কেবল মুখে বলছিল_”তুমি-ই আমার প্রভু ! তুমি-ই আমার ইষ্ট ! ছদ্মবেশে আমাকে বাঁচাতে তুমি এখানে এসেছ । আমাকে ৪০ বছরের অভিশাপগ্রস্থ জীবন থেকে তুমি মুক্তি দিয়েছ! আমার এই জীবনের সাধনার ফসল ঐঅপ্সরা-সিদ্ধি-ই খেয়ে নিয়েছে! আমার আর কিছুই অবশিষ্ট নাই , আর সে বয়সও নাই যে সাধন করে অর্জন করব! হে প্রভু! তুমি অসহায়ের সহায় হও ! তুমি আমাকে পথ দেখাও !”
আশ্চর্যের বিষয় হোল এটাই যে, বালক গুরু মহারাজ রাজী হলেন ঐ বৃদ্ধকে দীক্ষা দিতে ৷ নাথযোগীটিও এতক্ষণে সব বুঝে গেছে , সে যোগাড় করে ফেলল হিমালয়ান ধুতুরা ফুল , বেলপাতা!! সেদিন সেই হিমালয়ের গিরি কন্দরে রচিত হোল এক আশ্চর্য ইতিহাস!! বালক পরমানন্দকে তারা একটা বড় পাথরের উপর বসিয়ে শিবজ্ঞানে শিবমন্ত্রে পূজা করল!!
পূজার শেষে বালক গুরুমহারাজ ঐ বৃদ্ধ শৈবসাধুকে দীক্ষা দিলেন । উনি জানতেন অতি সত্বর এই বৃদ্ধের স্থুলশরীরের মৃত্যু ঘটবে, কিন্তু পরের শরীরে ঐ সাধু আবার নতুন উদ্যমে সাধন করে তার অভীষ্টলাভ করতে পারবে ।৷ [গল্প কথা প্রসঙ্গে _সমাপ্ত]
ওঁ নমঃ শ্রীভগবতে পরমানন্দায় নমো নমঃ
শৈবসাধু-টি অবাক হয়ে নির্লিপ্তভাবে আকাশের দিকে চেয়ে থাকা বালক গুরু মহারাজের দিকে চাইল আর তারপরেই খপ্ করে বালকের(গুরুজীর) পা দুটো চেপে ধরে হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগল – ” এই প্রথম আমার সিদ্ধিপ্রাপ্ত অপ্সরা কাউকে ভয় পেল! আমার ইষ্ট শিবজী আমার প্রার্থনা শুনেছেন , তাই তোমাকে পাঠিয়েছেন অথবা বালকবেশে তিনি স্বয়ং এসেছেন ৷ হে প্রভু ! এসেই যখন পড়েছ , তখন তুমি আমাকে রক্ষা কর ৷”
যেই না সাধুটি গুরু মহারাজের পা দুটো চেপে ধরে কেঁদে কেঁদে প্রার্থনা করতে শুরু করেছে , অমনি ভিতর থেকে অপ্সরা মায়ির সেকি কান্না ! “ওগো – তুমি ওকে তাড়িয়ে দাও , আমি যে ঐ ছেলেটিকে আর সহ্য করতে পারছি না ! ওকে তুমি ছেড়ে দাও , ছেড়ে দাও !” অপ্সরা যতই ছেড়ে দেবার কথা বলে সাধুটি গুরু মহারাজকে ততই শক্ত করে ধরে ! এই প্রথম সে অপ্সরার হাত থেকে মুক্তির রাস্তা পেয়েছে – আর ছাড়ে !
নাথ-যোগীটি – একবার দৌড়ে গিয়ে কুঠিয়ার ভিতরটা দেখে আসছে , আবার বাইরে এসে কি দেখল __তা বলে যাচ্ছে ৷ সে ও কিছু যে একটা ঘটতে চলেছে __সেটা বেশ বুঝতে পারছিল!
এই রকম চলতে চলতে একবার _নাথ-যোগী দৌড়ে গিয়ে ভিতরে দেখে এসে বলল – ” সাধুজী! ভিতরে দেখলাম মায়ি খুব কাঁদছে আর তার শরীরের লাবণ্য যেন ঝড়ে যাচ্ছে!কেমন যেন মায়িকে দেখে বয়স্ক মনে হচ্ছে !” একথা শুনে সাধুটি আরো দৃঢ়বদ্ধভাবে গুরুমহারাজের চরণ ধরে বলতে লাগল , “প্রভু ! রক্ষা কর ! এই অপ্সরার মায়াজাল থেকে আমাকে মুক্ত করো প্রভু !” নাথযোগী ইতিমধ্যে আবার দৌড়ে গিয়ে ভিতরে দেখে এসেছে – হাঁফাতে হাঁফাতে ওনাদের কাছে ফিরে এসেই ‘রিলে’করার মতো বলছে – ” সাধুজী ! মায়ি কেমন বৃদ্ধা , লোলচর্মসার হয়ে গেছে !”
সাধুজী এটি শুনে গুরু মহারাজকে আরও দৃঢ় করে ধরে কাঁদতে লাগল , ” আমার অপরাধ ক্ষমা করো প্রভু ! আমাকে মুক্ত করো প্রডু!”
নাথ সাধুটি এবার দৌড়ে কুঠিয়ার ভিতরে দেখল _অপ্সরামায়ির কান্না আর মানুষের মতো লাগছিল না , কেমন যেন খোনা খোনা অর্থাৎ নাকি সুরে এবং ক্ষীণ হয়ে গেল তারপর একেবারেই থেমে গেল!!
নাথযোগীটি দৌড়ে গেল কি হ’ল তা দেখার জন্য ! এসে বলল , ” সাধুজী ! মায়ি ধীরে কালো রঙের কঙ্কালসার রমণীতে পরিণত হ’ল , তারপর ছোট হতে শুরু করল এবং শেষে একটা কালো রঙের কাকের মতো হয়ে উড়ে চলে গেল পাহাড়ের দিকে ৷”
নাথ সাধুর কাছে একথা শুনে হাউ হাউ করে কাঁদতে লাগল বৃদ্ধ সাধুটি_ বালক পরমানন্দের পা দুটো ধরে! কেবল মুখে বলছিল_”তুমি-ই আমার প্রভু ! তুমি-ই আমার ইষ্ট ! ছদ্মবেশে আমাকে বাঁচাতে তুমি এখানে এসেছ । আমাকে ৪০ বছরের অভিশাপগ্রস্থ জীবন থেকে তুমি মুক্তি দিয়েছ! আমার এই জীবনের সাধনার ফসল ঐঅপ্সরা-সিদ্ধি-ই খেয়ে নিয়েছে! আমার আর কিছুই অবশিষ্ট নাই , আর সে বয়সও নাই যে সাধন করে অর্জন করব! হে প্রভু! তুমি অসহায়ের সহায় হও ! তুমি আমাকে পথ দেখাও !”
আশ্চর্যের বিষয় হোল এটাই যে, বালক গুরু মহারাজ রাজী হলেন ঐ বৃদ্ধকে দীক্ষা দিতে ৷ নাথযোগীটিও এতক্ষণে সব বুঝে গেছে , সে যোগাড় করে ফেলল হিমালয়ান ধুতুরা ফুল , বেলপাতা!! সেদিন সেই হিমালয়ের গিরি কন্দরে রচিত হোল এক আশ্চর্য ইতিহাস!! বালক পরমানন্দকে তারা একটা বড় পাথরের উপর বসিয়ে শিবজ্ঞানে শিবমন্ত্রে পূজা করল!!
পূজার শেষে বালক গুরুমহারাজ ঐ বৃদ্ধ শৈবসাধুকে দীক্ষা দিলেন । উনি জানতেন অতি সত্বর এই বৃদ্ধের স্থুলশরীরের মৃত্যু ঘটবে, কিন্তু পরের শরীরে ঐ সাধু আবার নতুন উদ্যমে সাধন করে তার অভীষ্টলাভ করতে পারবে ।৷ [গল্প কথা প্রসঙ্গে _সমাপ্ত]
ওঁ নমঃ শ্রীভগবতে পরমানন্দায় নমো নমঃ