গুরু মহারাজ তখন ছেলেমানুষ । ভারতবর্ষের নানান প্রান্ত ঘুরে বেড়াচ্ছেন — কখনও পায়ে হেঁটে, কখনও ট্রেনে বা বাসে ৷ সেইরকম ঘুরতে ঘুরতে একবার উনি এসে পৌঁছেছেন হরিয়ানার কোন স্থানের ভারত সেবাশ্রম সংঘের এক শাখায় । আশ্রমটির পরিধি খুব একটা বড় নয় – যে সাধুবাবা ঐ শাখার দায়িত্বে রয়েছেন তিনি বেশ শক্ত-সামর্থ্য দীর্ঘদেহী মানুষ, ভালো মানুষ ৷ মাথায় দীর্ঘ জটা, মুখে দাড়ি-গোঁফ ঢাকা ৷ হাতে বেশীরভাগ সময়েই একটা ত্রিশূল রাখতেন ৷ গুরু মহারাজের ছোট বয়েস হওয়া সত্ত্বেও ঐ সাধুটির সাথে ওনার বেশ ভাব হয়ে গিয়েছিল, তাই গুরু মহারাজ কয়েক দিন ছিলেন ওখানে । সাধুবাবা সারাদিনের এবং সন্ধ্যার নিত্যকর্ম অন্তে ধুনি জ্বালিয়ে একটি নির্দিষ্ট স্থানে বসতেন এবং ধর্মগ্রন্থ পাঠ করতেন । স্থানীয় অনেক মানুষজন প্রত্যহ সন্ধ্যায় সেখানে আসত সাধুবাবার পাঠ ও ব্যাখ্যা শোনার জন্য ।
সে দিন হয়েছে কি — অন্যান্য শ্রোতৃবৃন্দের সাথে দুজন তরুণ-যুবক ঐ আসরে এসে বসেছিল ৷ বসার পর থেকেই উসখুস করছে, এদিক-ওদিক চাইছে, অন্যরা একটু disturbed বোধও করছিল । কিন্তু কে আর কি করবে ! সাধুবাবা সেদিন গীতা অর্থাৎ শ্রীমদ্ভাগবতগীতার ব্যাখ্যা করবেন বলে শ্রীশ্রী গীতা নিয়ে বসলেন এবং গীতামাহাত্ম্য বর্ণনা করে এবার প্রথম অধ্যায়ের প্রথম থেকে পাঠ করতে বসলেন — “ধর্মক্ষেত্রে কুরুক্ষেত্রে সমবেতা যুযুৎসবঃ_ মামকাঃ পান্ডবাশ্চৈব কিমকুর্ব্বতঃ সঞ্জয় ” । এবার উনি এই শ্লোকের ব্যাখ্যা করলেন সুন্দরভাবে ৷ হরিয়ানার মানুষ হিন্দিভাষী — তাই উনি হিন্দিতে-ই ব্যাখ্যা করছিলেন ৷ আর ব্যাখ্যার শেষে শ্রোতৃমন্ডলীকে উদ্দেশ্য করে বললেন “সমঝা – ইয়া নহি সমঝা! কিসি-কা কোই অসুবিস্তা হোনে সে ম্যায় ফির বলুঙ্গা”। ফট্ করে ঔ যুবকদ্বয়ের মধ্যে একজন বলে উঠল “ম্যায় নেহি সমঝা, মহারাজ !” মহারাজ ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন – “কিয়া নহি সমঝা ?” যুবকটি বলল – “ওহি — ধর্মক্ষেত্রে কুরুক্ষেত্রে ….!”
সাধুবাবা (মহারাজ) পুনরায় সুন্দরভাবে আর একবার ব্যাখ্যা করলেন ধর্মক্ষেত্র কি, কুরুক্ষেত্র কি ; — ইত্যাদি ইত্যাদি । তারপর তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন ” বাবা ! আভি সমঝা ?” ছেলেটি বদমায়েশী করে আবার বলে উঠল – ” জী নেহি , ‘ধর্মক্ষেত্রে কুরুক্ষেত্রে’ কিউ বোলা, – নেহি সমঝা ৷”
সাধুবাবা আবার প্রথম থেকে খুবই ধৈর্য্য সহকারে ব্যাখ্যা করতে লাগলেন ৷ উনি খেয়াল করলেন যে উপস্থিত জনেরা ছেলেটির ব্যবহারে খুবই বিরক্ত — কিন্তু উনি সেদিকে দৃকপাত না করে বোঝাতে লাগলেন যত্ন সহকারে । উদাহরণ সহযোগে সব কিছু বুঝিয়ে উনি থামলেন ৷ তারপর ছেলেটিকে উদ্দেশ্য করে বললেন – ” অব্ তো জরুর সমঝা ?”
ছেলেটি তো বদমায়েশী করার জন্যই এসেছে । সে বলল – “নেহি মহারাজ ! নেহি সমঝা — ওহি ‘ধর্মক্ষেত্রে কুরুক্ষেত্রে ‘ – ইয়ে বাত নেহি সমঝা !” তারপর ঘটনাটা যে কি ঘটল তারজন্য কেউ-ই প্রস্তুত ছিল না ৷ মহারাজ তার পাশে পড়ে থাকা ধুনির একটা চেলা কাঠ আচমকা তুলে নিয়ে ছেলেটির চুলের মুঠি ধরে ধপাধপ্ গোটা দু-চার ঘা লাগিয়ে দিলেন ৷ বলশালী মহারাজের অকস্মাৎ ঐরকম Treatment -এ যুবক ছেলেটি ভয়ে বিবর্ণ হয়ে গেছিল ৷ মহারাজ ওর চুলের মুঠি ধরে মুখটা তুলে বলল_ “বল্ , আভি সমঝা ?” ছেলেটি প্রাণপণে জোড়হাতে বলল ” হাঁ , হাঁ , মহারাজ! সমঝা! সমঝা! ঠিক সে সমঝা ! মুঝে মাফ কর দো , ছোড় দো মুঝে !”
মহারাজ চুলের মুঠি না ছেড়েই বললেন – “পহলে যিস্ তরিকা সে সমঝায়া, উও থা ‘ধর্মক্ষেত্র’! আউর অব জিস তরিকা সে সমঝাতা_ উও হ্যায় ‘কুরুক্ষেত্র’ ! সমঝা ইয়া নেহি সমঝা!!” তারপর যেই সাধুবাবা ছেলেটির চুলের মুঠি ছেড়ে দিল – অমনি ছেলেটি ৪/৫ হাত ছিটকে পিছনে চলে গেল ৷ তারপর প্রণাম করে_”সমঝা-সমঝা”-বলতে বলতে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে চলে গেল ।
গল্পটি (এটি সত্য ঘটনা। গুরুমহারাজ যখন সমগ্র ভারতবর্ষ পরিক্রমা করছিলেন, সেই সময় ওনার সামনেই হরিয়ানায় এই ঘটনাটি ঘটেছিল।) বলার পর গুরু মহারাজ আমাদের সকলকে বললেন — এই যে চিত্রটি এখানে তুলে ধরা হোল , এইটি-ই কিন্তু সর্বকালে সর্বক্ষেত্রেই সত্য এবং প্রযোজ্য বলে জানবে । কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের আগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ চেষ্টা করেছিলেন আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে , শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিবাদ মিটিয়ে নিতে — কিন্তু দুর্যোধনের একগুঁয়েমির জন্য তা সম্ভব হয়নি। তাই ভগবানের প্রথম উদ্যোগটি ছিল ‘ধর্মক্ষেত্র’ – এটি Successful হোল না বলেই তো সংঘটিত হোল তৎকালীন ছোটখাটো বিশ্বযুদ্ধ ‘কুরুক্ষেত্র’ !!(ক্রমশঃ)
সে দিন হয়েছে কি — অন্যান্য শ্রোতৃবৃন্দের সাথে দুজন তরুণ-যুবক ঐ আসরে এসে বসেছিল ৷ বসার পর থেকেই উসখুস করছে, এদিক-ওদিক চাইছে, অন্যরা একটু disturbed বোধও করছিল । কিন্তু কে আর কি করবে ! সাধুবাবা সেদিন গীতা অর্থাৎ শ্রীমদ্ভাগবতগীতার ব্যাখ্যা করবেন বলে শ্রীশ্রী গীতা নিয়ে বসলেন এবং গীতামাহাত্ম্য বর্ণনা করে এবার প্রথম অধ্যায়ের প্রথম থেকে পাঠ করতে বসলেন — “ধর্মক্ষেত্রে কুরুক্ষেত্রে সমবেতা যুযুৎসবঃ_ মামকাঃ পান্ডবাশ্চৈব কিমকুর্ব্বতঃ সঞ্জয় ” । এবার উনি এই শ্লোকের ব্যাখ্যা করলেন সুন্দরভাবে ৷ হরিয়ানার মানুষ হিন্দিভাষী — তাই উনি হিন্দিতে-ই ব্যাখ্যা করছিলেন ৷ আর ব্যাখ্যার শেষে শ্রোতৃমন্ডলীকে উদ্দেশ্য করে বললেন “সমঝা – ইয়া নহি সমঝা! কিসি-কা কোই অসুবিস্তা হোনে সে ম্যায় ফির বলুঙ্গা”। ফট্ করে ঔ যুবকদ্বয়ের মধ্যে একজন বলে উঠল “ম্যায় নেহি সমঝা, মহারাজ !” মহারাজ ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন – “কিয়া নহি সমঝা ?” যুবকটি বলল – “ওহি — ধর্মক্ষেত্রে কুরুক্ষেত্রে ….!”
সাধুবাবা (মহারাজ) পুনরায় সুন্দরভাবে আর একবার ব্যাখ্যা করলেন ধর্মক্ষেত্র কি, কুরুক্ষেত্র কি ; — ইত্যাদি ইত্যাদি । তারপর তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন ” বাবা ! আভি সমঝা ?” ছেলেটি বদমায়েশী করে আবার বলে উঠল – ” জী নেহি , ‘ধর্মক্ষেত্রে কুরুক্ষেত্রে’ কিউ বোলা, – নেহি সমঝা ৷”
সাধুবাবা আবার প্রথম থেকে খুবই ধৈর্য্য সহকারে ব্যাখ্যা করতে লাগলেন ৷ উনি খেয়াল করলেন যে উপস্থিত জনেরা ছেলেটির ব্যবহারে খুবই বিরক্ত — কিন্তু উনি সেদিকে দৃকপাত না করে বোঝাতে লাগলেন যত্ন সহকারে । উদাহরণ সহযোগে সব কিছু বুঝিয়ে উনি থামলেন ৷ তারপর ছেলেটিকে উদ্দেশ্য করে বললেন – ” অব্ তো জরুর সমঝা ?”
ছেলেটি তো বদমায়েশী করার জন্যই এসেছে । সে বলল – “নেহি মহারাজ ! নেহি সমঝা — ওহি ‘ধর্মক্ষেত্রে কুরুক্ষেত্রে ‘ – ইয়ে বাত নেহি সমঝা !” তারপর ঘটনাটা যে কি ঘটল তারজন্য কেউ-ই প্রস্তুত ছিল না ৷ মহারাজ তার পাশে পড়ে থাকা ধুনির একটা চেলা কাঠ আচমকা তুলে নিয়ে ছেলেটির চুলের মুঠি ধরে ধপাধপ্ গোটা দু-চার ঘা লাগিয়ে দিলেন ৷ বলশালী মহারাজের অকস্মাৎ ঐরকম Treatment -এ যুবক ছেলেটি ভয়ে বিবর্ণ হয়ে গেছিল ৷ মহারাজ ওর চুলের মুঠি ধরে মুখটা তুলে বলল_ “বল্ , আভি সমঝা ?” ছেলেটি প্রাণপণে জোড়হাতে বলল ” হাঁ , হাঁ , মহারাজ! সমঝা! সমঝা! ঠিক সে সমঝা ! মুঝে মাফ কর দো , ছোড় দো মুঝে !”
মহারাজ চুলের মুঠি না ছেড়েই বললেন – “পহলে যিস্ তরিকা সে সমঝায়া, উও থা ‘ধর্মক্ষেত্র’! আউর অব জিস তরিকা সে সমঝাতা_ উও হ্যায় ‘কুরুক্ষেত্র’ ! সমঝা ইয়া নেহি সমঝা!!” তারপর যেই সাধুবাবা ছেলেটির চুলের মুঠি ছেড়ে দিল – অমনি ছেলেটি ৪/৫ হাত ছিটকে পিছনে চলে গেল ৷ তারপর প্রণাম করে_”সমঝা-সমঝা”-বলতে বলতে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে চলে গেল ।
গল্পটি (এটি সত্য ঘটনা। গুরুমহারাজ যখন সমগ্র ভারতবর্ষ পরিক্রমা করছিলেন, সেই সময় ওনার সামনেই হরিয়ানায় এই ঘটনাটি ঘটেছিল।) বলার পর গুরু মহারাজ আমাদের সকলকে বললেন — এই যে চিত্রটি এখানে তুলে ধরা হোল , এইটি-ই কিন্তু সর্বকালে সর্বক্ষেত্রেই সত্য এবং প্রযোজ্য বলে জানবে । কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের আগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ চেষ্টা করেছিলেন আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে , শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিবাদ মিটিয়ে নিতে — কিন্তু দুর্যোধনের একগুঁয়েমির জন্য তা সম্ভব হয়নি। তাই ভগবানের প্রথম উদ্যোগটি ছিল ‘ধর্মক্ষেত্র’ – এটি Successful হোল না বলেই তো সংঘটিত হোল তৎকালীন ছোটখাটো বিশ্বযুদ্ধ ‘কুরুক্ষেত্র’ !!(ক্রমশঃ)