জিজ্ঞাসু :—আচ্ছা গুরুমহারাজ অষ্টসিদ্ধি এবং ষড়ৈশ্বর্য কি?
গুরু মহারাজ:—-অষ্টসিদ্ধি হলো অনিমা, লঘিমা, মহিমা, প্রাপ্তি, প্রাকাম্য, ঈশিতা, বশিতা ও কামবশয়িতা । আর ষড়ৈশ্বর্য হোল __শ্রী, বল, যশ,ঐশ্বর্য, জ্ঞান ও বৈরাগ্য ।
সাধকেরা যোগসাধনার দ্বারা এই সমস্ত সিদ্ধি অর্জন করতে পারেন। অনেকে এই সমস্ত সিদ্ধি অর্জন করে ঠিকই, কিন্তু সেই সিদ্ধির প্রয়োগ ঘটাতে গিয়ে তাতেই ফেঁসে যায়! আবার কেউ কেউ এগুলিকে অতিক্রম করে পৌঁছে যান অন্তিম লক্ষ্যে!
তখন আবার ষড়ৈশ্বর্যের একটি একটি করে ঐশ্বর্য তাঁর মধ্যে প্রকাশ ঘটতে থাকে ! তবে ষড়ৈশ্বর্য একসাথে প্রকাশিত যাঁর মধ্যে থাকে, তাঁকেই বলা হয় ভগবান !! এইজন্যেই বলা হয়_ “ষড়ৈশ্বর্যবান ভগবান”!
এবার এদের প্রত্যেকটি সম্বন্ধে বলছি শোনো:—
অণিমা:—অনুবৎ হয়ে যাওয়া ! এই সিদ্ধি থাকলে অনুর মতো আনুবিক্ষণিক হয়ে থাকা যায়।
আবার এই সিদ্ধি থাকলে, যে কোনো জটিল সমস্যার গভীরে ঢুকে গিয়ে তার মীমাংসা করে দেওয়া সম্ভব হয় !
লঘিমা:—লঘু অথবা গুরু উভয় অবস্খাতেই বহুকাল থেকে যাওয়া যায় । প্রয়োজনে শরীর অতি হালকা করা যায়, আবার প্রয়োজনে শরীর এতো ভারী করা সম্ভব হয় যে, একটা মানুষকে হতো আট দশ জনে তুলতেই পারলো না!
অনেক বড় সমস্যাকেও এঁরা নিজের মধ্যে নিয়ে তার সমাধান করতে পারেন।
মহিমা:—যে কোনো স্থানে প্রকট হওয়া বা অদৃশ্য হওয়া অথবা একই সময়ে নানা স্থানে শরীর গ্রহণের ক্ষমতা জন্মে যায়_ এই সিদ্ধি অর্জন করতে পারলে!
প্রাপ্তি:—এই সিদ্ধি অর্জিত হলে, ইচ্ছা মাত্রই যে কোনো বস্তু প্রাপ্তির ক্ষমতা জন্মে ! সেই বস্তু খাদ্যবস্তু বা যে কোনো ভোগ্যবস্তুও হতে পারে বা কোন ব্যক্তির সান্নিধ্যও হতে পারে।
প্রাকাম্য:—এই সিদ্ধি যে সাধকের থাকে, তিনি নিজে তো সিদ্ধির প্রয়োগ ঘটাতেই পারেন, প্রয়োজনে তিনি ইচ্ছা মাত্রই_ অপর কোনো উপযুক্ত আধারের মধ্যে দিয়ে অন্যান্য যে কোনো সিদ্ধির প্রকাশ ঘটিয়ে দিতে পারেন!
ঈশিতা:—ঈশিতা শক্তির সাহায্যে সাধক যে কোনো ব্যক্তি বা বস্তু কি তার নিজের কাছে আকর্ষণ করে নিয়ে আসতে পারেন!
বশিতা:— বশিতা শক্তির সাহায্যে শক্তিশালী সাধক নিজের ইন্দ্রিয়াদিকে যেমন বশে রাখতে পারেন, তেমনি যে কোনো ব্যক্তি, পশুপাখি বা প্রাণীকেও নিজের বশে রাখতে সমর্থ হন ।
কামবশয়িতা:–এই শক্তি বা এই সিদ্ধি অর্জন করলে সাধকের মধ্যে অপর সাতটি ইন্দ্রিয় অপর সাতটি সিদ্ধি অপর কাউকে প্রদানের ক্ষমতা জন্মায় এই অষ্টসিদ্ধি সবকটি আয়ত্তে থাকে অর্থাৎ যিনি এই শক্তিগুলি অর্জন করেও অযথা প্রয়োগ ঘটান না, তিনি সাক্ষাৎ যোগীশ্বর, শিব-স্বরূপ ! শাস্ত্রে বলা হয়েছে _”বন্দে যোগীশ্বরম্ শিবম্”!!
সাধারণ সাধকেরা সারা জীবন সাধন-ভজন করে হয়তো সারা জীবনে একটা দুটো সিদ্ধি অর্জন করতে পারেন এবং তার ফলে সামান্য কিছুটা শক্তি লাভ করেই_ তারা তার প্রয়োগ ঘটাতে যায় ! আর তাতেই ফেঁসে যায়! এরূপভাবে বহু সাধকের জীবনে দুর্গতি নেমে আসে! কিন্তু যাঁরা প্রকৃত অধিকারী, বা শিব-স্বরূপ__ তাঁরাই পারেন একে একে সমস্ত সিদ্ধি করায়ত্ত করতে এবং সমস্ত সিদ্ধি অর্জন করা সত্ত্বেও নির্দিষ্ট লক্ষ্যে অবিচল থাকতে! শ্মশানবাসী, পশুচর্ম বসন ধারী শিব অষ্টসিদ্ধির অধিকারী ! এই যে শিবের বাহ্যিক রূপের কথা ঋষিরা বর্ণনা করে গেছেন __এটা সংযমের চূড়ান্ত পরাকাষ্ঠা ! শিবের সব আছে কিন্তু ঐশ্বর্যের কোথাও কোনো প্রকাশ পায় নাই!
অপরপক্ষে, হরির অবতারে ঐশ্বর্যের প্রকাশ থাকে ! তাই বলা হয় “যোগৈশ্বরম্ বন্দে হরিম্”। “ঐশ্বর্য” অর্থাৎ শ্রী, বল,যশ, ঐশ্বর্য, জ্ঞান এবং বৈরাগ্য ! এগুলি আবার স্থুল,সুক্ষ ও কারণ বা আধিভৌতিক,আধিদৈবিকও আধ্যাত্মিক__এই ত্রিবিধ প্রকারের প্রকাশ থাকে ! ফলে হরির অবতারে 6×3=18 টি গুনের প্রকাশ থাকে! উদাহরণ হিসেবে বলা যায়,যেমন__ ঐশ্বর্যের ত্রিবিধ প্রকাশের প্রথমটি আধি-ভৌতিক অর্থাৎ ব্যবহারিক ঐশ্বর্য ! যেখানে লক্ষ্মী স্বয়ং তার সেবা করার জন্য প্রস্তুত থাকেন এবং তাঁর শরীরে অপূর্ব রূপেরও প্রকাশ থাকে! তাঁর কখনো কোনোরূপ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের অসুবিধা হয়না __তা তিনি পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তেই থাকুন না কেন!
আধিদৈবিক হোল__যোগৈশ্বর্য । তিনি যৌবনপ্রাপ্ত হবার মধ্যেই সমস্ত রকম যোগের সিদ্ধি তাঁর আয়ত্তাধীনে চলে আসে।।
আধ্যাত্মিক ঐশ্বর্য হোল__ প্রকৃতপক্ষে পরমার্থিক ঐশ্বর্য !
অষ্টসিদ্ধি সকল যোগৈশ্বর্যের মধ্যেই পড়ে যায় ! তাহলে বুঝতে পারছো তো__ হরির অবতার যখন শরীর গ্রহণ করেন, তখন কি অসাধারণ শক্তি নিয়ে অবতীর্ণ হন !! লীলাময় লীলাহেতু অবতরণ করেন_ ষড়ৈশ্বর্যময় ভাগবতী-তনু ধারণ করেন_ তাইতো তিনি ভগবান।।