(ন’কাকা শেষের দিকে আমাকে বলেছিলেন যে, এবার হয়তো চরৈবেতি পত্রিকায় লেখা দেওয়া একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে।)
ন’কাকার এসব কথার মর্মার্থ আমি তখন কিছুই বুঝতে পারিনি । তারপরে সেইসময় আরও একটা ঘটনা ঘটেছিল – সেইটা বলি। সিঙ্গুরের তপন, পাপু, রীতাদি প্রমুখরা উদ্যোগ নিয়ে প্রতিবছর গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দ-কে নিয়ে একটা অনুষ্ঠান করে । ওরা গুরু মহারাজের জীবন বা জীবনী নিয়ে একটা করে ‘নাটক’ পরিবেশন করে এবং বিভিন্ন পরমানন্দ ভক্তদেরকে ও পরমানন্দ মিশনের বিভিন্ন শাখার মহারাজদেরকে আমন্ত্রণ করে নিয়ে গিয়ে – একটি অনুষ্ঠান করে ৷ ওই অনুষ্ঠান উপলক্ষে তপন-রা ‘শরণাগত’ নামে একটি ‘ম্যাগাজিন’ প্রকাশ করে । ওই ম্যাগাজিনেও ন’কাকার কাছ থেকে একটি করে লেখা নিতো – সম্পাদক তপন— ৷
প্রতিবছর দুর্গাপূজার আগে থাকতেই ওরা পত্রিকার লেখা কালেকশনের ব্যাপারটা শুরু করে দেয় – সেবারও অর্থাৎ ২০১৮ সালেও ওরা ন’কাকাকে লেখা দেবার অনুরোধ জানিয়েছিল ৷ ন’কাকা ফোনে আমাকে কথাটা জানালেন, বললেন – ” বাবা ! সিঙ্গুরের তপন, পাপু -এরা সব এসেছিল ! ওরা তো নাছোড়বান্দা, লেখা দিতেই হবে ৷ আমি ওদেরকে আশ্বাস দিয়েছি কিন্তু এটাও বলে দিয়েছি “ফরমায়েশি লেখা”- দিতে পারবো না (অনেক সময় পত্রিকার সম্পাদকেরা আগে থাকতেই ফরমাশ দিয়ে দেয় যে “অমুক বিষয়ের”- উপর লিখতে হবে)।” এই শেষ লেখাটি ন’কাকা কিভাবে আমাকে পাঠিয়েছিলেন_সেই কথাটাও একটু বলে নিচ্ছি।
বনগ্রাম আশ্রমের ‘চরৈবেতি’ পত্রিকা হলো ত্রৈমাসিক, অর্থাৎ প্রতি তিন মাস অন্তর বনগ্রাম আশ্রম থেকে এই পত্রিকাটি প্রকাশিত হয় ৷ আমাদের এখানে অর্থাৎ কাটোয়া অঞ্চলে প্রায় দেড় হাজার পত্রিকা (বেশিও হোতে পারে)-র সার্কুলেশন হয় ৷ বনগ্রাম আশ্রম থেকে কোনো না কোনো মহারাজ বা ব্রহ্মচারী প্রতি সংখ্যাতেই এই বিশাল সংখ্যক পত্রিকা মানুষের কাছে কাছে পৌঁছানো এবং পত্রিকার মূল্যাদি কালেকশনের জন্য আসেন । চরৈবেতি পত্রিকার প্রতি বৎসরের প্রথম সংখ্যা বের হয় ফাল্গুন মাসে, এরপর থেকে পরবর্তী সংখ্যাগুলো প্রকাশিত হয় যথাক্রমে জ্যৈষ্ঠ, ভাদ্র ও অগ্রহায়ণ মাসে । যাইহোক, আগেই বলা হোল প্রতি সংখ্যাতেই বনগ্রাম আশ্রম থেকে কোনো না কোনো মহারাজ এই অঞ্চলে পত্রিকার কাজের জন্য আসেন । ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর সংখ্যা বা ভাদ্র সংখ্যার পত্রিকা নিয়ে যে মহারাজ এই অঞ্চলে এসেছিলেন তার হাত দিয়ে ন’কাকা সিঙ্গুরের তপনদের ‘সুভেনিয়রের’ জন্য একটা লেখা পাঠিয়ে দিয়েছিলেন এবং বলে দিয়েছিলেন_ওইটা একটু ঠিকঠাক করে তপনদের পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য ! লেখাটা হাতে পাওয়ার পর আমি সেদিন যখন ওনাকে ফোন করলাম, তখন ন’কাকা বললেন – ” ওঃ – তুমি লেখাটা হাতে পেয়ে গেছো ! যাক্ নিশ্চিন্ত হ’লাম, চরৈবেতি-র জন্য লেখাও তোমার কাছে রয়েছে, এটাও দেওয়া হয়ে গেল – এবার আমার শান্তি হলো ! সব কাজ সারা হয়ে গেল_আমার আর কোনো পিছুটান রইলো না !”
ন’কাকার এই কথাগুলো শুনেই আমার মনে সেদিন কেমন যেন একটা খটকা লেগেছিল, কিন্তু আমি ভাবলাম হয়তো এই বছরের মতো লেখাগুলি দেওয়া হয়ে গেল – এটা ভেবেই উনি তাৎক্ষণিক ভাবে এই ধরনের কথা বললেন !
কিন্তু ঘটনাটা ঘটেই গেল ! সিঙ্গুরের ‘শরণাগত’ ম্যাগাজিনের জন্য (২০১৮-১৯) ওই লেখাটাই ছিল ন’কাকার দেওয়া শেষ লেখা ! ন’কাকার চলে যাবার পর চরৈবেতি পত্রিকায় মাত্র একটি সংখ্যায় দেবার মতোই লেখা অবশিষ্ট ছিল, সেইটা স্বরূপানন্দ মহারাজকে পাঠিয়ে দিয়ে বলে দিলাম – ” এটাই ন’কাকার শেষ লেখা !” সেই লেখাটা ছাপা হবার পর থেকে আর আমরা কোনো দিনই ন’কাকার নতুন কোনো লেখা আর পড়তে পারিনি ! এখনো বহু পাঠক (বিশেষতঃ বোলপুর অঞ্চলের মাস্টারমশাইরা) আমাকে এই কথাটা বারবার স্মরণ করায় – ওরা বলে, ” ‘চরৈবেতি’ পত্রিকায় আর ন’কাকার লেখা পাই না, ওই লেখাটা পড়ে আমাদের খুবই উপকার হতো । বৈষ্ণব ধর্মের বিভিন্ন মহান সাধকদের সম্বন্ধে আমরা অনেক কিছু জানতে পারতাম । সবসময় বই পড়াও হয় না আর বই পড়ে সব জিনিস জানাও সম্ভব হয় না !”
আমি আর ওনাদেরকে কি বলি ! আমরা তো মর্মে মর্মে জানি যে, ওই মহাপুরুষের অভাবে আমাদের প্রত্যেকের (যারাই ন’কাকার সাথে যুক্ত ছিল) কতটা অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে ! গুরুমহারাজ চলে যাবার পর আমরা পিতৃহীন হয়েছিলাম, আর ন’কাকা চলে যাবার পর আমরা পুরোনো ভক্তরা যেন মাতৃহীন হলাম , আর নতুন করে যে সমস্ত ভক্ত ওনাকে দেখেই অধ্যাত্ম পথে চলতে শুরু করেছিল তারা পিতা এবং মাতা উভয়কেই হারিয়েছিল।।
যাইহোক, তবু ঐ মাস্টারমশাইরা যখন ন’কাকার লেখা চরৈবেতি পত্রিকায় না পাওয়ার জন্য আফসোস করতেন – তখন আমার কিন্তু মন্দ লাগতো না, বরং বলা চলে বেশ ভালোই লাগতো । ন’কাকার লেখার যে একটা পাঠককুল ছিল – ন’কাকার লেখার যে ফ্যান-ফলোয়ার্স -এর দল ছিল – এইটা দেখে আনন্দ হবার-ই তো কথা ! সেইজন্যেই আমার মনে মনে ঐ আকাঙ্ক্ষাটা তৈরি হয়েছে যে – ন’কাকার সব ছাপানো লেখাগুলিকে এক জায়গা করে একটা গ্রন্থের আকার দিলে কেমন হয় ? ন’কাকার ভক্তরা সবাই মিলে উদ্যোগ নিলে এই কাজটা সহজেই সম্পন্ন হয়ে যাবে – এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস ! … [ক্রমশঃ]
বিঃ দ্রঃ:—*[ন’কাকার লেখা বই টি ২৫-শে মাঘ(১৪২৭) ন’কাকার জন্মদিনে বনগ্রাম আশ্রম থেকে বের হোচ্ছে। আগ্রহী পাঠকেরা আশ্রমে যোগাযোগ করতে পারেন।]
ন’কাকার এসব কথার মর্মার্থ আমি তখন কিছুই বুঝতে পারিনি । তারপরে সেইসময় আরও একটা ঘটনা ঘটেছিল – সেইটা বলি। সিঙ্গুরের তপন, পাপু, রীতাদি প্রমুখরা উদ্যোগ নিয়ে প্রতিবছর গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দ-কে নিয়ে একটা অনুষ্ঠান করে । ওরা গুরু মহারাজের জীবন বা জীবনী নিয়ে একটা করে ‘নাটক’ পরিবেশন করে এবং বিভিন্ন পরমানন্দ ভক্তদেরকে ও পরমানন্দ মিশনের বিভিন্ন শাখার মহারাজদেরকে আমন্ত্রণ করে নিয়ে গিয়ে – একটি অনুষ্ঠান করে ৷ ওই অনুষ্ঠান উপলক্ষে তপন-রা ‘শরণাগত’ নামে একটি ‘ম্যাগাজিন’ প্রকাশ করে । ওই ম্যাগাজিনেও ন’কাকার কাছ থেকে একটি করে লেখা নিতো – সম্পাদক তপন— ৷
প্রতিবছর দুর্গাপূজার আগে থাকতেই ওরা পত্রিকার লেখা কালেকশনের ব্যাপারটা শুরু করে দেয় – সেবারও অর্থাৎ ২০১৮ সালেও ওরা ন’কাকাকে লেখা দেবার অনুরোধ জানিয়েছিল ৷ ন’কাকা ফোনে আমাকে কথাটা জানালেন, বললেন – ” বাবা ! সিঙ্গুরের তপন, পাপু -এরা সব এসেছিল ! ওরা তো নাছোড়বান্দা, লেখা দিতেই হবে ৷ আমি ওদেরকে আশ্বাস দিয়েছি কিন্তু এটাও বলে দিয়েছি “ফরমায়েশি লেখা”- দিতে পারবো না (অনেক সময় পত্রিকার সম্পাদকেরা আগে থাকতেই ফরমাশ দিয়ে দেয় যে “অমুক বিষয়ের”- উপর লিখতে হবে)।” এই শেষ লেখাটি ন’কাকা কিভাবে আমাকে পাঠিয়েছিলেন_সেই কথাটাও একটু বলে নিচ্ছি।
বনগ্রাম আশ্রমের ‘চরৈবেতি’ পত্রিকা হলো ত্রৈমাসিক, অর্থাৎ প্রতি তিন মাস অন্তর বনগ্রাম আশ্রম থেকে এই পত্রিকাটি প্রকাশিত হয় ৷ আমাদের এখানে অর্থাৎ কাটোয়া অঞ্চলে প্রায় দেড় হাজার পত্রিকা (বেশিও হোতে পারে)-র সার্কুলেশন হয় ৷ বনগ্রাম আশ্রম থেকে কোনো না কোনো মহারাজ বা ব্রহ্মচারী প্রতি সংখ্যাতেই এই বিশাল সংখ্যক পত্রিকা মানুষের কাছে কাছে পৌঁছানো এবং পত্রিকার মূল্যাদি কালেকশনের জন্য আসেন । চরৈবেতি পত্রিকার প্রতি বৎসরের প্রথম সংখ্যা বের হয় ফাল্গুন মাসে, এরপর থেকে পরবর্তী সংখ্যাগুলো প্রকাশিত হয় যথাক্রমে জ্যৈষ্ঠ, ভাদ্র ও অগ্রহায়ণ মাসে । যাইহোক, আগেই বলা হোল প্রতি সংখ্যাতেই বনগ্রাম আশ্রম থেকে কোনো না কোনো মহারাজ এই অঞ্চলে পত্রিকার কাজের জন্য আসেন । ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর সংখ্যা বা ভাদ্র সংখ্যার পত্রিকা নিয়ে যে মহারাজ এই অঞ্চলে এসেছিলেন তার হাত দিয়ে ন’কাকা সিঙ্গুরের তপনদের ‘সুভেনিয়রের’ জন্য একটা লেখা পাঠিয়ে দিয়েছিলেন এবং বলে দিয়েছিলেন_ওইটা একটু ঠিকঠাক করে তপনদের পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য ! লেখাটা হাতে পাওয়ার পর আমি সেদিন যখন ওনাকে ফোন করলাম, তখন ন’কাকা বললেন – ” ওঃ – তুমি লেখাটা হাতে পেয়ে গেছো ! যাক্ নিশ্চিন্ত হ’লাম, চরৈবেতি-র জন্য লেখাও তোমার কাছে রয়েছে, এটাও দেওয়া হয়ে গেল – এবার আমার শান্তি হলো ! সব কাজ সারা হয়ে গেল_আমার আর কোনো পিছুটান রইলো না !”
ন’কাকার এই কথাগুলো শুনেই আমার মনে সেদিন কেমন যেন একটা খটকা লেগেছিল, কিন্তু আমি ভাবলাম হয়তো এই বছরের মতো লেখাগুলি দেওয়া হয়ে গেল – এটা ভেবেই উনি তাৎক্ষণিক ভাবে এই ধরনের কথা বললেন !
কিন্তু ঘটনাটা ঘটেই গেল ! সিঙ্গুরের ‘শরণাগত’ ম্যাগাজিনের জন্য (২০১৮-১৯) ওই লেখাটাই ছিল ন’কাকার দেওয়া শেষ লেখা ! ন’কাকার চলে যাবার পর চরৈবেতি পত্রিকায় মাত্র একটি সংখ্যায় দেবার মতোই লেখা অবশিষ্ট ছিল, সেইটা স্বরূপানন্দ মহারাজকে পাঠিয়ে দিয়ে বলে দিলাম – ” এটাই ন’কাকার শেষ লেখা !” সেই লেখাটা ছাপা হবার পর থেকে আর আমরা কোনো দিনই ন’কাকার নতুন কোনো লেখা আর পড়তে পারিনি ! এখনো বহু পাঠক (বিশেষতঃ বোলপুর অঞ্চলের মাস্টারমশাইরা) আমাকে এই কথাটা বারবার স্মরণ করায় – ওরা বলে, ” ‘চরৈবেতি’ পত্রিকায় আর ন’কাকার লেখা পাই না, ওই লেখাটা পড়ে আমাদের খুবই উপকার হতো । বৈষ্ণব ধর্মের বিভিন্ন মহান সাধকদের সম্বন্ধে আমরা অনেক কিছু জানতে পারতাম । সবসময় বই পড়াও হয় না আর বই পড়ে সব জিনিস জানাও সম্ভব হয় না !”
আমি আর ওনাদেরকে কি বলি ! আমরা তো মর্মে মর্মে জানি যে, ওই মহাপুরুষের অভাবে আমাদের প্রত্যেকের (যারাই ন’কাকার সাথে যুক্ত ছিল) কতটা অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে ! গুরুমহারাজ চলে যাবার পর আমরা পিতৃহীন হয়েছিলাম, আর ন’কাকা চলে যাবার পর আমরা পুরোনো ভক্তরা যেন মাতৃহীন হলাম , আর নতুন করে যে সমস্ত ভক্ত ওনাকে দেখেই অধ্যাত্ম পথে চলতে শুরু করেছিল তারা পিতা এবং মাতা উভয়কেই হারিয়েছিল।।
যাইহোক, তবু ঐ মাস্টারমশাইরা যখন ন’কাকার লেখা চরৈবেতি পত্রিকায় না পাওয়ার জন্য আফসোস করতেন – তখন আমার কিন্তু মন্দ লাগতো না, বরং বলা চলে বেশ ভালোই লাগতো । ন’কাকার লেখার যে একটা পাঠককুল ছিল – ন’কাকার লেখার যে ফ্যান-ফলোয়ার্স -এর দল ছিল – এইটা দেখে আনন্দ হবার-ই তো কথা ! সেইজন্যেই আমার মনে মনে ঐ আকাঙ্ক্ষাটা তৈরি হয়েছে যে – ন’কাকার সব ছাপানো লেখাগুলিকে এক জায়গা করে একটা গ্রন্থের আকার দিলে কেমন হয় ? ন’কাকার ভক্তরা সবাই মিলে উদ্যোগ নিলে এই কাজটা সহজেই সম্পন্ন হয়ে যাবে – এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস ! … [ক্রমশঃ]
বিঃ দ্রঃ:—*[ন’কাকার লেখা বই টি ২৫-শে মাঘ(১৪২৭) ন’কাকার জন্মদিনে বনগ্রাম আশ্রম থেকে বের হোচ্ছে। আগ্রহী পাঠকেরা আশ্রমে যোগাযোগ করতে পারেন।]