[ ন’কাকার প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মানুষের ‘ইগো’-বা সেন্টিমেন্ট নিয়ে কথা উঠে এসেছিল। আসলে ন’কাকা ছিলেন egoless মানুষ, কিন্তু আমরা সাধারণ মানুষেরা তো তা নই!! গুরু মহারাজ বলেছিলেন_কিছু বুদ্ধিজীবি মানুষ, রাজনৈতিক বা ধর্মনৈতিক নেতারা তার সুযোগ গ্রহণ করে।]
কিছু স্বার্থান্বেষী নেতা ( সাধারণ মানুষদের থেকে এরা কিন্তু চেতনায় একটু উন্নত, কিন্তু সেই উন্নত চেতনা সৃজনাত্মক হয় না বা মহাপ্রকৃতির অনুকূলেও হয় না – ওই ব্যক্তিরা অহং-কে চরিতার্থ করতে তাদের শক্তিকে কাজে লাগায়) সাধারণ মানুষের _বিশেষত কমবয়সী ছাত্র-ছাত্রীদের সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগিয়ে – তাদের সকলকে বিপথগামী করে তোলে । একমাত্র আধ্যাত্মিক মানুষ ছাড়া বেশিরভাগ মানুষই গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসানোর দলে । যে কোনো ধর্মনৈতিক বা রাজনৈতিক মহামিছিলে হাঁটা লোকজনদেরকে যদি ধরে ধরে জিজ্ঞাসা করা হয় তাহলে দেখা যাবে ১০০ জনের মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ জন জানেই না যে কেন এই মিছিল, কেনই বা সে হাঁটছে ! সে হয়তো বলবে – ” ‘অমুক বাবু’ বা ‘তমুক স্যার’ বলল – তাই যাচ্ছি !”
কেন অমুক বাবু বা তমুক স্যারের কথা শুনতে হবে ?_কারণ সমাজে থাকতে হলে , সমাজ নেতার কথা শুনতেই হবে__ না শুনলে যে তার সেখানে বাস করা মুশকিল হবে, সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে সে যে বঞ্চিত হবে, সামাজিক সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হতে পারে (গ্রামের মানুষ এই চিত্রের সাথে খুবই পরিচিত) ! তাহলে বেচারা সাধারণ মানুষেরা আর কি করে !!
যাইহোক, আমরা মূল প্রসঙ্গ থেকে অনেকটা দূরে চলে এসেছি – আমাদের কথা হচ্ছিলো ‘ন’কাকার সিটিং’ বা ন’কাকার কথা বলা নিয়ে ৷
আমরা প্রথমেই বলে নিয়েছিলাম যে, ন’কাকার কথা বলার স্টাইল-টা ছিল সম্পূর্ণ আলাদারকম ! কেমনটা ছিল – তার কিছুটা বলার চেষ্টা করছি ! ন’কাকা কখনোই টানা কোনো প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করতেন না (যেটা গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দ করতেন বা এখনও আমাদের আশ্রমের অর্থাৎ পরমানন্দ মিশনের সিনিয়র সন্ন্যাসীরা করে থাকেন), দুটো চারটে কথা বলার পরেই সুন্দরভাবে হেসে– মুখের-হাতের এক অদ্ভুত ভঙ্গিমা করে কথাটা এমনভাবে শেষ করে দিতেন যে , জিজ্ঞাসাকারী তার পরের উত্তরটা নিজেই বলে দিতো ! অর্থাৎ ন’কাকার ঐ যে দু’চারটি কথা এবং সস্নেহ বা সপ্রেম চাহনি – মুখের মধুর হাসি –চোখ-মুখ-হাতসহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গের অদ্ভুত ভঙ্গিমা – এইগুলি দিয়েই ন’কাকা তাঁর বক্তব্য ঐ জিজ্ঞাসাকারীদের চেতনার মধ্যে ঢুকিয়ে দিতে পারতেন । এ এক অদ্ভুত ভঙ্গিমা, অপূর্ব কৌশল !
এছাড়াও ন’কাকার অন্য একটা স্টাইল বা ভঙ্গিমার কথাও বলতে পারি ! সেটা হলো – একজন জিজ্ঞাসাকারী যেই না কোনো জিজ্ঞাসা ওনার দিকে ছুঁড়ে দিলো, অমনি ন’কাকা তাঁর কাছাকাছি বসে থাকা কোনো মাস্টারমশাই বা কোনো পন্ডিত ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে – তাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠতেন – ” আরে ! ওই তো “অমুক” (স্থানীয়ভাবে সম্মানীয় ব্যক্তি হলে “অমুক বাবু”) রয়েছে ! ও-ই এর উত্তর ভালোভাবে বলে দিতে পারবে !” আর কী আশ্চর্য্য ! উদ্দিষ্ট ব্যক্তিটি প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই জিজ্ঞাসাকারীর উত্তর দেবার জন্য কথা বলতে শুরু করে দিতো ! আর যতক্ষণ ঐ উদ্দিষ্ট ব্যক্তিটি কথা বলতো – ততক্ষণ ন’কাকা গভীর অন্তর্দৃষ্টি সহকারে তার দিকে চেয়ে থাকতেন ! যদি কোনো বেচাল বা বেফাঁস কথা সেই ব্যক্তিটি বলে ফেলতো – তাহলে সাথে সাথেই ন’কাকা ডান হাতটা আগিয়ে নিয়ে গিয়ে ওই ব্যক্তির চোখে স্থির এবং তাঁর ঠাণ্ডা-শীতল দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে, আঙ্গুল নাড়িয়ে নাড়িয়ে দুটি-একটি কথায় ব্যাপারটা ঠিক করে দিতেন ।
এও এক আশ্চর্য Style ! উনি-ই বলছেন, কিন্তু অন্যজনকে দিয়ে বলিয়ে নিচ্ছেন ! সদাসর্বদা Passive হয়ে থাকার কি অপূর্ব ভঙ্গিমা ! খুব কাছ থেকে এবং ভালোভাবে যারা এই ব্যাপারগুলিকে নিরীক্ষণ না করেছেন, তাদের পক্ষে ন’কাকার ব্যাপারসমূহ ঠিকমত ধরা বা বোঝা সত্যিই যথেষ্ট মুশকিলের কাজ ! আমরা-ই বা কতটুকু বুঝেছি ? আর এটা তো সত্যিই – কিছুই বোঝা যায়-ও না ! এক বিন্দু জল ধারণের পাত্র কি কখনও সাগরকে ধারণ করতে পারে ? কিন্তু সে হয়তো সেই বিশালতার স্পর্শ পেয়ে তার অন্তর্ভুক্ত হতে পারে – ! তবে তা হতে পারলেই তো হয়ে গেল ! জীবাত্মা-পরমাত্মায় লীন হয়ে গেল – আর তো তখন ব্যক্তিসত্তা নাই, অহংবোধ নাই ! সেখানে অভিমানাদির কোনো প্রশ্নই ওঠে না – কিন্তু ওই অবস্থা প্রাপ্ত হওয়া কি অত সহজ ? বহু জন্ম-জন্মান্তরের সাধন-ভজনের ফলে ব্যক্তিজীবনে ঈশ্বরে মতি জন্মায় – এই ভাবে কয়েক জন্ম চলার পর, সেই জীবনে সদগুরু লাভ হয়! তবে,একবার সদগুরু লাভ হয়ে গেলে তাঁর নির্দেশে ঠিকঠাক সাধন-ভজন করতে পারলে পরবর্তী তিনজন্মের মধ্যে ওই ব্যক্তির আত্মবোধ বা আত্মসাক্ষাৎকার হয় । … [ক্রমশঃ]
কিছু স্বার্থান্বেষী নেতা ( সাধারণ মানুষদের থেকে এরা কিন্তু চেতনায় একটু উন্নত, কিন্তু সেই উন্নত চেতনা সৃজনাত্মক হয় না বা মহাপ্রকৃতির অনুকূলেও হয় না – ওই ব্যক্তিরা অহং-কে চরিতার্থ করতে তাদের শক্তিকে কাজে লাগায়) সাধারণ মানুষের _বিশেষত কমবয়সী ছাত্র-ছাত্রীদের সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগিয়ে – তাদের সকলকে বিপথগামী করে তোলে । একমাত্র আধ্যাত্মিক মানুষ ছাড়া বেশিরভাগ মানুষই গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসানোর দলে । যে কোনো ধর্মনৈতিক বা রাজনৈতিক মহামিছিলে হাঁটা লোকজনদেরকে যদি ধরে ধরে জিজ্ঞাসা করা হয় তাহলে দেখা যাবে ১০০ জনের মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ জন জানেই না যে কেন এই মিছিল, কেনই বা সে হাঁটছে ! সে হয়তো বলবে – ” ‘অমুক বাবু’ বা ‘তমুক স্যার’ বলল – তাই যাচ্ছি !”
কেন অমুক বাবু বা তমুক স্যারের কথা শুনতে হবে ?_কারণ সমাজে থাকতে হলে , সমাজ নেতার কথা শুনতেই হবে__ না শুনলে যে তার সেখানে বাস করা মুশকিল হবে, সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে সে যে বঞ্চিত হবে, সামাজিক সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হতে পারে (গ্রামের মানুষ এই চিত্রের সাথে খুবই পরিচিত) ! তাহলে বেচারা সাধারণ মানুষেরা আর কি করে !!
যাইহোক, আমরা মূল প্রসঙ্গ থেকে অনেকটা দূরে চলে এসেছি – আমাদের কথা হচ্ছিলো ‘ন’কাকার সিটিং’ বা ন’কাকার কথা বলা নিয়ে ৷
আমরা প্রথমেই বলে নিয়েছিলাম যে, ন’কাকার কথা বলার স্টাইল-টা ছিল সম্পূর্ণ আলাদারকম ! কেমনটা ছিল – তার কিছুটা বলার চেষ্টা করছি ! ন’কাকা কখনোই টানা কোনো প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করতেন না (যেটা গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দ করতেন বা এখনও আমাদের আশ্রমের অর্থাৎ পরমানন্দ মিশনের সিনিয়র সন্ন্যাসীরা করে থাকেন), দুটো চারটে কথা বলার পরেই সুন্দরভাবে হেসে– মুখের-হাতের এক অদ্ভুত ভঙ্গিমা করে কথাটা এমনভাবে শেষ করে দিতেন যে , জিজ্ঞাসাকারী তার পরের উত্তরটা নিজেই বলে দিতো ! অর্থাৎ ন’কাকার ঐ যে দু’চারটি কথা এবং সস্নেহ বা সপ্রেম চাহনি – মুখের মধুর হাসি –চোখ-মুখ-হাতসহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গের অদ্ভুত ভঙ্গিমা – এইগুলি দিয়েই ন’কাকা তাঁর বক্তব্য ঐ জিজ্ঞাসাকারীদের চেতনার মধ্যে ঢুকিয়ে দিতে পারতেন । এ এক অদ্ভুত ভঙ্গিমা, অপূর্ব কৌশল !
এছাড়াও ন’কাকার অন্য একটা স্টাইল বা ভঙ্গিমার কথাও বলতে পারি ! সেটা হলো – একজন জিজ্ঞাসাকারী যেই না কোনো জিজ্ঞাসা ওনার দিকে ছুঁড়ে দিলো, অমনি ন’কাকা তাঁর কাছাকাছি বসে থাকা কোনো মাস্টারমশাই বা কোনো পন্ডিত ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে – তাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠতেন – ” আরে ! ওই তো “অমুক” (স্থানীয়ভাবে সম্মানীয় ব্যক্তি হলে “অমুক বাবু”) রয়েছে ! ও-ই এর উত্তর ভালোভাবে বলে দিতে পারবে !” আর কী আশ্চর্য্য ! উদ্দিষ্ট ব্যক্তিটি প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই জিজ্ঞাসাকারীর উত্তর দেবার জন্য কথা বলতে শুরু করে দিতো ! আর যতক্ষণ ঐ উদ্দিষ্ট ব্যক্তিটি কথা বলতো – ততক্ষণ ন’কাকা গভীর অন্তর্দৃষ্টি সহকারে তার দিকে চেয়ে থাকতেন ! যদি কোনো বেচাল বা বেফাঁস কথা সেই ব্যক্তিটি বলে ফেলতো – তাহলে সাথে সাথেই ন’কাকা ডান হাতটা আগিয়ে নিয়ে গিয়ে ওই ব্যক্তির চোখে স্থির এবং তাঁর ঠাণ্ডা-শীতল দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে, আঙ্গুল নাড়িয়ে নাড়িয়ে দুটি-একটি কথায় ব্যাপারটা ঠিক করে দিতেন ।
এও এক আশ্চর্য Style ! উনি-ই বলছেন, কিন্তু অন্যজনকে দিয়ে বলিয়ে নিচ্ছেন ! সদাসর্বদা Passive হয়ে থাকার কি অপূর্ব ভঙ্গিমা ! খুব কাছ থেকে এবং ভালোভাবে যারা এই ব্যাপারগুলিকে নিরীক্ষণ না করেছেন, তাদের পক্ষে ন’কাকার ব্যাপারসমূহ ঠিকমত ধরা বা বোঝা সত্যিই যথেষ্ট মুশকিলের কাজ ! আমরা-ই বা কতটুকু বুঝেছি ? আর এটা তো সত্যিই – কিছুই বোঝা যায়-ও না ! এক বিন্দু জল ধারণের পাত্র কি কখনও সাগরকে ধারণ করতে পারে ? কিন্তু সে হয়তো সেই বিশালতার স্পর্শ পেয়ে তার অন্তর্ভুক্ত হতে পারে – ! তবে তা হতে পারলেই তো হয়ে গেল ! জীবাত্মা-পরমাত্মায় লীন হয়ে গেল – আর তো তখন ব্যক্তিসত্তা নাই, অহংবোধ নাই ! সেখানে অভিমানাদির কোনো প্রশ্নই ওঠে না – কিন্তু ওই অবস্থা প্রাপ্ত হওয়া কি অত সহজ ? বহু জন্ম-জন্মান্তরের সাধন-ভজনের ফলে ব্যক্তিজীবনে ঈশ্বরে মতি জন্মায় – এই ভাবে কয়েক জন্ম চলার পর, সেই জীবনে সদগুরু লাভ হয়! তবে,একবার সদগুরু লাভ হয়ে গেলে তাঁর নির্দেশে ঠিকঠাক সাধন-ভজন করতে পারলে পরবর্তী তিনজন্মের মধ্যে ওই ব্যক্তির আত্মবোধ বা আত্মসাক্ষাৎকার হয় । … [ক্রমশঃ]