[ন’কাকার সাথে ব্রহ্মচারী কৌশিকের কথাবার্তা র কথা হচ্ছিল। ব্রহ্মচারী জানতে চাইছিল তার আশ্রমটি আশু গঙ্গাগর্ভে বিলীন হবার কোন সম্ভাবনা আছে কি না!]
ন’কাকা স্বভাবসিদ্ধভাবেই তাৎক্ষণিক উত্তর দিলেন – ” যা মায়ের ইচ্ছা ! তোমার অত চিন্তা কি ? যার চিন্তা সে করছে – তুমি তাঁর চিন্তা নিয়ে থাকো ! যখন যেখানে রাখবে – তখন সেখানেই থাকবে ৷ তুমি যখন সংসারের সমস্ত প্রলোভনের মায়া ত্যাগ করে ৺মায়ের স্মরণ নিয়েছো – তখন তো তোমার সব ভার তাঁর ! তুমি অত ভাবছো কেন ? সব ভাবনা তার ওপর ছেড়ে দিয়ে তুমি নিশ্চিন্ত হও – নির্ভাবনা হও !”
এই ঘটনাটা ২০০৪/৫ সালের কিম্বা আর একটু পরের হবে বোধয় ! কিন্তু এই ২০২০ সালে এসেও আমি কৌশিকের আশ্রমটি সম্বন্ধে Regular খবর রাখার চেষ্টা করি – শুনতে পাই ওর গঙ্গাগর্ভের অত্যন্ত সন্নিকট আশ্রমটি এখনও অক্ষতই রয়েছে ! বরং চারিদিকে কাশ, বেনা – ইত্যাদি গজিয়ে উঠে ওই স্থানে গঙ্গার ভাঙ্গন রোধ হয়ে গেছে ।
এই প্রসঙ্গে ‘কৌতুহল’ সম্বন্ধে কিছু কথা বলে নিয়ে আবার ‘ন’কাকা ও কৌশিক’- প্রসঙ্গে ফিরে আসবো । ওই যে একটু আগে বলা হলো – কৌশিকের নিবিষ্টভাবে ন’কাকার সাথে আলোচনা দেখে – ওর জিজ্ঞাসার ব্যাপারে ‘কৌতুহলী’ হয়েছিলাম, – এই ‘কৌতুহলে’-র ব্যাপারে গুরুমহারাজ একবার চরৈবেতির সম্পাদক স্বামী স্বরূপানন্দ-কে কি বলেছিলেন সেইটা বলে রাখি ! গুরু মহারাজের অনুপস্থিতিতে গুরু মহারাজেরই অনুমতিক্রমে একবার স্বরূপানন্দ মহারাজ গুরুজীর ঘরে কয়েকটি ‘বই’ খুঁজে নিয়ে আসার জন্য ঢুকেছিলেন । গুরুজীর ঘরে ঐ বইগুলির সাথে দু-একটি খাতা বা ডায়েরিও ছিল, যেগুলিতে গুরু মহারাজের স্বহস্তে লিখিত কিছু Article বা কবিতা ইত্যাদি ছিল ৷ স্বরূপানন্দ মহারাজ কৌতুহলবশতঃ সেদিন গুরু মহারাজের লেখাগুলি একটু উল্টে পাল্টে দেখেছিলেন এবং পরে যখন গুরু মহারাজের সাথে ওনার সাক্ষাৎ হয়েছিল, তখন কথাপ্রসঙ্গে স্বরূপানন্দ মহারাজ গুরু মহারাজকে ওই ডায়েরিগুলিতে (অথবা খাতা) থাকা লেখাগুলির উল্লেখ করেছিলেন ! হয়তো উনি ‘চরৈবেতি’ পত্রিকার জন্য সেই লেখাগুলি চেয়েছিলেন বা পুস্তকাকারে প্রকাশ করার কথা বলেছিলেন !
সে যাই হোক, গুরুমহারাজ কিন্তু স্বামী স্বরূপানন্দের মুখ থেকে ওনার ঘরে থাকা ডায়েরির লেখার ব্যাপারে শুনেই একটু গম্ভীর হয়ে গিয়েছিলেন ! তারপর উনি স্বামী স্বরূপানন্দকে বলেছিলেন – ” স্বরূপানন্দ ! তোমার মধ্যেও ‘কৌতূহল’-বোধ রয়েছে ! আমি ভেবেছিলাম তুমি হয়তো ‘কৌতুহল’ থেকে মুক্ত হয়েছো ! সাধারণ মানুষের মনে ‘কৌতুহল’ থাকে, অসাধারণদের থাকে না !”
এবার আবার ‘ন’কাকা ও কৌশিক’ প্রসঙ্গে ফিরে আসি । কিছুদিন আগে আমাদের বনগ্রাম আশ্রমের একজন মহারাজের সাথে কৌশিকের ব্যাপারে কথা হচ্ছিল,– ওই মহারাজ কার্যোপলক্ষে প্রায়ই অগ্রদ্বীপ-পাটুলী (পূর্ব বর্ধমান) অঞ্চলে যান এবং কৌশিক মহারাজের সাথে এঁর যোগাযোগও রয়েছে ! বনগ্রামের ঐ মহারাজের সাথে কথা বলার সময় কৌশিক মহারাজ তার জীবনে ঘটে যাওয়া একদিনের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনার কথা বলেছিল । ঘটনাটি হলো – একদিন কৌশিক মহারাজের গঙ্গাতীরের কুঠিয়ায় দুপুরের খাবার মতো কোনো জোগাড়-ই ছিল না ! ওই সময় হয়তো কৌশিক কোনো সংকল্প-সাধনা (কোন ব্রত বা সংকল্পকে দৃঢ় ভাবে পালন করা ! উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যেমন – অজগরবৃত্তি ! কাছে কোন খাবার এসে পৌঁছালে তা গ্রহণ করবে অথবা উপবাসে-ই থাকবে। সাধুরা এই ধরণের ব্রত বা সংকল্প মাঝে মধ্যেই পালন করে থাকেন।)-র মধ্যে ছিল ৷ প্রতিদিন-ই মধ্যাহ্নভোজনের ঠিকই ব্যবস্থা হয়ে যায় – কিন্তু সেদিন দুপুর বারোটা বেজে গেল – অথচ মধ্যাহ্নভোজনের কোনো ব্যবস্থা নাই দেখে কৌশিক মহারাজ ধরেই নিয়েছিল যে, ‘ আজ আর বোধয় মধ্যাহ্নের আহার জুটবে না !’
ঠিক আছে – তাতেই বা কি ! দৃঢ়সংকল্পকারী ব্রহ্মচারী বা সন্ন্যাসীর কাছে কৃচ্ছসাধন তো সাধনার অঙ্গ – তাই একদিন বা দুদিনের অনাহার তার সংকল্পকে কি টলাতে পারে ?
গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দের কাছেও আমরা শুনেছিলাম – পরিব্রাজন কালে তাঁর দীর্ঘ অনাহারের কথা ! কোনো কোনো সময় শরীর রক্ষার খাতিরে সারাদিনে দুটো তিনটে হরতকি খেয়েছেন – কোন সময় খেয়েছেন শাকপাতা, কোনসময় জলাশয়ের শেওলা ! অবশ্য এগুলো সবই ছিল ওনার এক্সপেরিমেন্ট – কারণ সূর্য বিজ্ঞান (সূর্য রশ্মির সাহায্যে-ই শরীরের যাবতীয় পুষ্টি সংসাধন করা) ওনার যে করায়ত্ত ছিল, সে কথা বলাই বাহুল্য ! ভারতবর্ষের মহা মহা সাধকদের জীবনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে – এই ধরনের ঘটনা প্রায় সবার জীবনেই আমরা দেখতে পাই – তাই কৌশিক মহারাজও নিশ্চয়ই “মহাজন যেন গতাঃ স পন্থা শ্রেয়”– এটাই মেনে নিয়েছিল ।
কিন্তু সেদিন যে আশ্চর্য্য বা অলৌকিক ঘটনা ঘটেছিল তা শুনে আমরাও হয়তো একটু বিস্মিত হবো – সেদিন ওই নির্জন দুপুরে, একাকী গঙ্গাতীরের ছোট্ট কুঠিয়ায় থাকা ব্রহ্মচারী কৌশিক যখন মধ্যাহ্নের আহারের কোনো ব্যবস্থা না হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত ছিল – ঠিক তখনই সে দেখেছিল ন’কাকা কয়েকজন ভক্তদেরকে নিয়ে ওই সময়ে ওর কাছে এসে উপস্থিত হয়েছিলেন এবং উনিই কৌশিকের সেদিনকার দুপুরের আহার্য্যের সমস্ত ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন ৷ ব্যাপারটা আমাদের কাছে এটা অতি সাধারন মনে হলেও – একটা ক্ষুধার্ত যুবক-সন্ন্যাসীর কাছে ঘটনাটা সাধারণ ছিল না । আর ছিল না বলেই তো এই ঘটনাটি কৌশিক মহারাজ আজও মনে রেখেছে ! … [ক্রমশঃ]
ন’কাকা স্বভাবসিদ্ধভাবেই তাৎক্ষণিক উত্তর দিলেন – ” যা মায়ের ইচ্ছা ! তোমার অত চিন্তা কি ? যার চিন্তা সে করছে – তুমি তাঁর চিন্তা নিয়ে থাকো ! যখন যেখানে রাখবে – তখন সেখানেই থাকবে ৷ তুমি যখন সংসারের সমস্ত প্রলোভনের মায়া ত্যাগ করে ৺মায়ের স্মরণ নিয়েছো – তখন তো তোমার সব ভার তাঁর ! তুমি অত ভাবছো কেন ? সব ভাবনা তার ওপর ছেড়ে দিয়ে তুমি নিশ্চিন্ত হও – নির্ভাবনা হও !”
এই ঘটনাটা ২০০৪/৫ সালের কিম্বা আর একটু পরের হবে বোধয় ! কিন্তু এই ২০২০ সালে এসেও আমি কৌশিকের আশ্রমটি সম্বন্ধে Regular খবর রাখার চেষ্টা করি – শুনতে পাই ওর গঙ্গাগর্ভের অত্যন্ত সন্নিকট আশ্রমটি এখনও অক্ষতই রয়েছে ! বরং চারিদিকে কাশ, বেনা – ইত্যাদি গজিয়ে উঠে ওই স্থানে গঙ্গার ভাঙ্গন রোধ হয়ে গেছে ।
এই প্রসঙ্গে ‘কৌতুহল’ সম্বন্ধে কিছু কথা বলে নিয়ে আবার ‘ন’কাকা ও কৌশিক’- প্রসঙ্গে ফিরে আসবো । ওই যে একটু আগে বলা হলো – কৌশিকের নিবিষ্টভাবে ন’কাকার সাথে আলোচনা দেখে – ওর জিজ্ঞাসার ব্যাপারে ‘কৌতুহলী’ হয়েছিলাম, – এই ‘কৌতুহলে’-র ব্যাপারে গুরুমহারাজ একবার চরৈবেতির সম্পাদক স্বামী স্বরূপানন্দ-কে কি বলেছিলেন সেইটা বলে রাখি ! গুরু মহারাজের অনুপস্থিতিতে গুরু মহারাজেরই অনুমতিক্রমে একবার স্বরূপানন্দ মহারাজ গুরুজীর ঘরে কয়েকটি ‘বই’ খুঁজে নিয়ে আসার জন্য ঢুকেছিলেন । গুরুজীর ঘরে ঐ বইগুলির সাথে দু-একটি খাতা বা ডায়েরিও ছিল, যেগুলিতে গুরু মহারাজের স্বহস্তে লিখিত কিছু Article বা কবিতা ইত্যাদি ছিল ৷ স্বরূপানন্দ মহারাজ কৌতুহলবশতঃ সেদিন গুরু মহারাজের লেখাগুলি একটু উল্টে পাল্টে দেখেছিলেন এবং পরে যখন গুরু মহারাজের সাথে ওনার সাক্ষাৎ হয়েছিল, তখন কথাপ্রসঙ্গে স্বরূপানন্দ মহারাজ গুরু মহারাজকে ওই ডায়েরিগুলিতে (অথবা খাতা) থাকা লেখাগুলির উল্লেখ করেছিলেন ! হয়তো উনি ‘চরৈবেতি’ পত্রিকার জন্য সেই লেখাগুলি চেয়েছিলেন বা পুস্তকাকারে প্রকাশ করার কথা বলেছিলেন !
সে যাই হোক, গুরুমহারাজ কিন্তু স্বামী স্বরূপানন্দের মুখ থেকে ওনার ঘরে থাকা ডায়েরির লেখার ব্যাপারে শুনেই একটু গম্ভীর হয়ে গিয়েছিলেন ! তারপর উনি স্বামী স্বরূপানন্দকে বলেছিলেন – ” স্বরূপানন্দ ! তোমার মধ্যেও ‘কৌতূহল’-বোধ রয়েছে ! আমি ভেবেছিলাম তুমি হয়তো ‘কৌতুহল’ থেকে মুক্ত হয়েছো ! সাধারণ মানুষের মনে ‘কৌতুহল’ থাকে, অসাধারণদের থাকে না !”
এবার আবার ‘ন’কাকা ও কৌশিক’ প্রসঙ্গে ফিরে আসি । কিছুদিন আগে আমাদের বনগ্রাম আশ্রমের একজন মহারাজের সাথে কৌশিকের ব্যাপারে কথা হচ্ছিল,– ওই মহারাজ কার্যোপলক্ষে প্রায়ই অগ্রদ্বীপ-পাটুলী (পূর্ব বর্ধমান) অঞ্চলে যান এবং কৌশিক মহারাজের সাথে এঁর যোগাযোগও রয়েছে ! বনগ্রামের ঐ মহারাজের সাথে কথা বলার সময় কৌশিক মহারাজ তার জীবনে ঘটে যাওয়া একদিনের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনার কথা বলেছিল । ঘটনাটি হলো – একদিন কৌশিক মহারাজের গঙ্গাতীরের কুঠিয়ায় দুপুরের খাবার মতো কোনো জোগাড়-ই ছিল না ! ওই সময় হয়তো কৌশিক কোনো সংকল্প-সাধনা (কোন ব্রত বা সংকল্পকে দৃঢ় ভাবে পালন করা ! উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যেমন – অজগরবৃত্তি ! কাছে কোন খাবার এসে পৌঁছালে তা গ্রহণ করবে অথবা উপবাসে-ই থাকবে। সাধুরা এই ধরণের ব্রত বা সংকল্প মাঝে মধ্যেই পালন করে থাকেন।)-র মধ্যে ছিল ৷ প্রতিদিন-ই মধ্যাহ্নভোজনের ঠিকই ব্যবস্থা হয়ে যায় – কিন্তু সেদিন দুপুর বারোটা বেজে গেল – অথচ মধ্যাহ্নভোজনের কোনো ব্যবস্থা নাই দেখে কৌশিক মহারাজ ধরেই নিয়েছিল যে, ‘ আজ আর বোধয় মধ্যাহ্নের আহার জুটবে না !’
ঠিক আছে – তাতেই বা কি ! দৃঢ়সংকল্পকারী ব্রহ্মচারী বা সন্ন্যাসীর কাছে কৃচ্ছসাধন তো সাধনার অঙ্গ – তাই একদিন বা দুদিনের অনাহার তার সংকল্পকে কি টলাতে পারে ?
গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দের কাছেও আমরা শুনেছিলাম – পরিব্রাজন কালে তাঁর দীর্ঘ অনাহারের কথা ! কোনো কোনো সময় শরীর রক্ষার খাতিরে সারাদিনে দুটো তিনটে হরতকি খেয়েছেন – কোন সময় খেয়েছেন শাকপাতা, কোনসময় জলাশয়ের শেওলা ! অবশ্য এগুলো সবই ছিল ওনার এক্সপেরিমেন্ট – কারণ সূর্য বিজ্ঞান (সূর্য রশ্মির সাহায্যে-ই শরীরের যাবতীয় পুষ্টি সংসাধন করা) ওনার যে করায়ত্ত ছিল, সে কথা বলাই বাহুল্য ! ভারতবর্ষের মহা মহা সাধকদের জীবনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে – এই ধরনের ঘটনা প্রায় সবার জীবনেই আমরা দেখতে পাই – তাই কৌশিক মহারাজও নিশ্চয়ই “মহাজন যেন গতাঃ স পন্থা শ্রেয়”– এটাই মেনে নিয়েছিল ।
কিন্তু সেদিন যে আশ্চর্য্য বা অলৌকিক ঘটনা ঘটেছিল তা শুনে আমরাও হয়তো একটু বিস্মিত হবো – সেদিন ওই নির্জন দুপুরে, একাকী গঙ্গাতীরের ছোট্ট কুঠিয়ায় থাকা ব্রহ্মচারী কৌশিক যখন মধ্যাহ্নের আহারের কোনো ব্যবস্থা না হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত ছিল – ঠিক তখনই সে দেখেছিল ন’কাকা কয়েকজন ভক্তদেরকে নিয়ে ওই সময়ে ওর কাছে এসে উপস্থিত হয়েছিলেন এবং উনিই কৌশিকের সেদিনকার দুপুরের আহার্য্যের সমস্ত ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন ৷ ব্যাপারটা আমাদের কাছে এটা অতি সাধারন মনে হলেও – একটা ক্ষুধার্ত যুবক-সন্ন্যাসীর কাছে ঘটনাটা সাধারণ ছিল না । আর ছিল না বলেই তো এই ঘটনাটি কৌশিক মহারাজ আজও মনে রেখেছে ! … [ক্রমশঃ]