[ ন’কাকার সাথে বিভিন্ন মহারাজদের নানারকম লীলার কথা আগের এপিসোডগুলিতে বলা হয়েছে। সেখানে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে যে মহাপুরুষগন সবার কাছে একই রকম ভাবে ধরা দেন না। তাঁদের চারিপাশের প্রতিটি ব্যক্তির কাছেই তাঁরা যেন নতুন এক ব্যক্তিত্ব! ]
ন’কাকার সাথে ঐ মহারাজদের প্রসঙ্গটা আমাদের আলোচনায় এইজন্যেই আনলাম – যাতে এই কথাটা আমরা সবাই বুঝতে পারি যে, গুরু মহারাজ বা ন’কাকার মতো মহাপুরুষরা সবার কাছে ধরা দেন না ! আর যার কাছে তিনি একবারের জন্য হলেও ধরা দেন , জীবন চলে গেলেও আর তার বিশ্বাসের জায়গা থেকে সে এক পা-ও টলবে না ! “মহাপুরুষরা সবাইকে ধরা দেন না”– এই কথাটাই বা কেন বলা হোল ? এর কারণ হচ্ছে – মহাপুরুষরা যেন সূর্যের মতো, তাঁদের কৃপার আলো সব জায়গাতেই পতিত হয়, কিন্তু স্বচ্ছ বস্তুতে যতটা প্রতিফলিত হয়, অস্বচ্ছ্ব বস্তুতে তো আর অতটা ক্রিয়া হয় না । আবার যে সকল বস্তু কোনো কিছুর আড়ালে রয়েছে বা মাটির তলায় রয়েছে সেখানে সূর্যের ক্রিয়ার প্রভাব আরও কমে যায় । এক্ষেত্রেও তেমনটাই হয় – মানুষ চায় না বলেই পায় না । কৃপার কোনো কমবেশি নেই – শুধু আধারের তারতম্যে , আবার আধার উন্নত হলেও তাদের চাহিদার তারতম্যে__প্রকাশের কম-বেশি হয় – এইমাত্র !
গুরুমহারাজ (স্বামী পরমানন্দ) একদিন বনগ্রাম আশ্রমে সিটিং-এ বসে বললেন – “এইখানেই বসে আছে এমন কজনকে দেখছি যারা কয়েক কল্প ধরে শরীর নিয়ে যাচ্ছে (জন্ম-মৃত্যুর আবর্তনে বারবার পাক খাচ্ছে), আত্মোন্নতির কোন প্রচেষ্টাই নাই । তবে এবার হবে ! কাল প্রসন্ন হয়েছে বলে এখানে এসে পড়েছে !”
এই ঘটনা থেকে আমরা বেশ বুঝতে পেরেছিলাম যে, কৃপার বাতাস সব সময় বয়ে গেলেও যার নৌকায় পাল টাঙানো হয়নি – সে বাতাসের গতিকে কি করে কাজে লাগাবে ? এই যে পাল টাঙানো__ওইটুকুই প্রচেষ্টা ! গুরু মহারাজ বলতেন “প্রযত্ন”! ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছিলেন – “ব্যক্তি ইচ্ছা”! সবই ঈশ্বরের ইচ্ছা কিন্তু ওইটুকু ‘ব্যক্তি ইচ্ছা’ !”
আমরা বেশিরভাগই তো ওই দলে । আমাদের প্রচেষ্টা বা প্রযত্নেরই অভাব ! বৈষ্ণব শাস্ত্র সাধে বলে নি – “একের কৃপা বিনা জীব ছারেখারে গেল।” ওই কৃপাটাই তো “আত্মকৃপা” !
ন’কাকার কথা বলতে গিয়ে গুরু মহারাজের বলা একটা আলোচনার কথা এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে যাচ্ছে_ফলে সেইটা এখন বলে রাখি।
তখন উপসাগরীয় যুদ্ধ শুরু হয়েছে (২-রা আগষ্ট, ১৯৯০ সাল), ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এবং তার Associate দেশগুলির মধ্যে ! গুরুমহারাজ আমাদের অনেক আগেই এসব যুদ্ধের সম্ভাবনার কথা বলে গিয়েছিলেন । উনি বলেছিলেন – পৃথিবীতে এখন বৈশ্যযুগ চলছে, অর্থাৎ পৃথিবীর Control এখন ধনী সম্প্রদায়, ধনী রাষ্ট্র, ধনী ব্যক্তিদের হাতে ৷ এই যে বিশ্বজোড়া Consumerisation এবং Business-এর globalisation , এগুলির সৃষ্টিকর্তা বিভিন্ন দেশের ঐ ধনী ব্যবসাদারেরা ! U.N.O-র সমস্ত শাখার কার্যকারিতা, আন্তর্জাতিক যে কোনো সন্মেলনের রূপরেখা ও সিদ্ধান্ত – এই ধনিক সম্প্রদায়ের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হোচ্ছে এখন ! বর্তমান পৃথিবীর তাবড় তাবড় বুদ্ধিজীবী, বিজ্ঞানী, চিন্তাশীল মানুষকে এরা নিজেদের হাতে নিয়ে নিয়েছে, আর তার বিনিময়ে তাদেরকে নানান সুখ-স্বাচ্ছন্দ-নিরাপত্তা দিচ্ছে ! পৃথিবীর প্রায় সমস্ত ধর্মীয় সংগঠনগুলিও ধনী সম্প্রদায়ের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে উঠেছে, এমনকি তাদের কার্যপ্রণালীও নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টায় রয়েছে এরা ! আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এদের প্রভাব বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন দেশের যে রাজনৈতিক উত্থান-পতন দেখা যাচ্ছে – তাও ঘটাচ্ছে এরাই ! দেশের সাধারণ জনগণ ধর্মীয় নেতা, রাজনৈতিক নেতাদের ভাষণ শুনে অকারণ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বার্থ অথবা নিজের Sentiment-কে বজায় রাখার জন্য পার্টির হয়ে ঝগড়া মারামারি করে, ধর্মীয় বিভেদ লাগিয়ে রক্তারক্তি করে _কিন্তু সবকিছুর নাটের গুরু কিন্তু সেই ধনী সম্প্রদায়!!
যাইহোক, কথা হচ্ছিলো উপসাগরীয় যুদ্ধ নিয়ে । গুরুমহারাজ বলেছিলেন – আরবের বেশিরভাগ দেশই তৈলসমৃদ্ধ দেশ । বলা হয় “সৌদিয়া আরাবিয়া” অর্থাৎ “সৌভাগ্যের দেশ”। হযরত মুহাম্মদ ওই দেশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলেই হয়তো – এইরূপ নামকরণ হয়েছিল ! কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেল আরব সাগরের তীরে তীরে অবস্থিত ছোট ছোট দেশগুলির সীমানায় থাকা সমুদ্রের তলায় বিশাল বিশাল তৈলভাণ্ডার রয়েছে ৷ সেই পেট্রোলিয়াম সারা বিশ্বে রপ্তানি করে মরুভূমির দেশগুলি এখন পৃথিবীতে অর্থনৈতিকভাবে সবচাইতে ধনী দেশগুলির অন্যতম হয়ে উঠেছে । এখন প্রকৃত অর্থেই তারা “সৌভাগ্যের দেশ” !
প্রকৃতি ওদের প্রতি অকৃপন হলেও, প্রাশ্চাত্যের ধনী এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে উন্নত দেশগুলির কাছে এই দেশগুলির বাড়বাড়ন্ত মোটেই ভালো লাগে না ৷ তারা চায় আরব সাগরের তলায় থাকা সুবিশাল তৈলভান্ডারের অধিকার ! – আর সেইজন্যেই উপসাগরীয় যুদ্ধ ! ওই দেশগুলিতে যত অশান্তি লেগে থাকবে, ততোই প্রাশ্চাত্যের উন্নত দেশগুলির ফায়দা ! এমনিতেই তারা সমুদ্র থেকে তেল নিষ্কাশনের যাবতীয় যন্ত্র আগে থাকতেই ওই দেশগুলিতে সরবরাহ করে রেখেছে(কারন আরব দেশগুলির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি তো মোটেই উন্নত নয়), তাদের-ই ইঞ্জিনিয়ার, মেকানিকস্-দের কাজে লাগিয়ে রেখেছে! হয়তো উন্নত প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ওখানকার তেলকে drainage করে ওদের নিজেদের সীমানায় নিয়ে চলেও যাচ্ছে ! কিন্তু তাতেও শান্তি নাই –আরও চাই, সবটা চাই,সবটার অধিকার চাই –তারই ফলশ্রুতিতে যুদ্ধ ! (বাকি অংশ পরের দিন) … [ক্রমশঃ]
ন’কাকার সাথে ঐ মহারাজদের প্রসঙ্গটা আমাদের আলোচনায় এইজন্যেই আনলাম – যাতে এই কথাটা আমরা সবাই বুঝতে পারি যে, গুরু মহারাজ বা ন’কাকার মতো মহাপুরুষরা সবার কাছে ধরা দেন না ! আর যার কাছে তিনি একবারের জন্য হলেও ধরা দেন , জীবন চলে গেলেও আর তার বিশ্বাসের জায়গা থেকে সে এক পা-ও টলবে না ! “মহাপুরুষরা সবাইকে ধরা দেন না”– এই কথাটাই বা কেন বলা হোল ? এর কারণ হচ্ছে – মহাপুরুষরা যেন সূর্যের মতো, তাঁদের কৃপার আলো সব জায়গাতেই পতিত হয়, কিন্তু স্বচ্ছ বস্তুতে যতটা প্রতিফলিত হয়, অস্বচ্ছ্ব বস্তুতে তো আর অতটা ক্রিয়া হয় না । আবার যে সকল বস্তু কোনো কিছুর আড়ালে রয়েছে বা মাটির তলায় রয়েছে সেখানে সূর্যের ক্রিয়ার প্রভাব আরও কমে যায় । এক্ষেত্রেও তেমনটাই হয় – মানুষ চায় না বলেই পায় না । কৃপার কোনো কমবেশি নেই – শুধু আধারের তারতম্যে , আবার আধার উন্নত হলেও তাদের চাহিদার তারতম্যে__প্রকাশের কম-বেশি হয় – এইমাত্র !
গুরুমহারাজ (স্বামী পরমানন্দ) একদিন বনগ্রাম আশ্রমে সিটিং-এ বসে বললেন – “এইখানেই বসে আছে এমন কজনকে দেখছি যারা কয়েক কল্প ধরে শরীর নিয়ে যাচ্ছে (জন্ম-মৃত্যুর আবর্তনে বারবার পাক খাচ্ছে), আত্মোন্নতির কোন প্রচেষ্টাই নাই । তবে এবার হবে ! কাল প্রসন্ন হয়েছে বলে এখানে এসে পড়েছে !”
এই ঘটনা থেকে আমরা বেশ বুঝতে পেরেছিলাম যে, কৃপার বাতাস সব সময় বয়ে গেলেও যার নৌকায় পাল টাঙানো হয়নি – সে বাতাসের গতিকে কি করে কাজে লাগাবে ? এই যে পাল টাঙানো__ওইটুকুই প্রচেষ্টা ! গুরু মহারাজ বলতেন “প্রযত্ন”! ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছিলেন – “ব্যক্তি ইচ্ছা”! সবই ঈশ্বরের ইচ্ছা কিন্তু ওইটুকু ‘ব্যক্তি ইচ্ছা’ !”
আমরা বেশিরভাগই তো ওই দলে । আমাদের প্রচেষ্টা বা প্রযত্নেরই অভাব ! বৈষ্ণব শাস্ত্র সাধে বলে নি – “একের কৃপা বিনা জীব ছারেখারে গেল।” ওই কৃপাটাই তো “আত্মকৃপা” !
ন’কাকার কথা বলতে গিয়ে গুরু মহারাজের বলা একটা আলোচনার কথা এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে যাচ্ছে_ফলে সেইটা এখন বলে রাখি।
তখন উপসাগরীয় যুদ্ধ শুরু হয়েছে (২-রা আগষ্ট, ১৯৯০ সাল), ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এবং তার Associate দেশগুলির মধ্যে ! গুরুমহারাজ আমাদের অনেক আগেই এসব যুদ্ধের সম্ভাবনার কথা বলে গিয়েছিলেন । উনি বলেছিলেন – পৃথিবীতে এখন বৈশ্যযুগ চলছে, অর্থাৎ পৃথিবীর Control এখন ধনী সম্প্রদায়, ধনী রাষ্ট্র, ধনী ব্যক্তিদের হাতে ৷ এই যে বিশ্বজোড়া Consumerisation এবং Business-এর globalisation , এগুলির সৃষ্টিকর্তা বিভিন্ন দেশের ঐ ধনী ব্যবসাদারেরা ! U.N.O-র সমস্ত শাখার কার্যকারিতা, আন্তর্জাতিক যে কোনো সন্মেলনের রূপরেখা ও সিদ্ধান্ত – এই ধনিক সম্প্রদায়ের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হোচ্ছে এখন ! বর্তমান পৃথিবীর তাবড় তাবড় বুদ্ধিজীবী, বিজ্ঞানী, চিন্তাশীল মানুষকে এরা নিজেদের হাতে নিয়ে নিয়েছে, আর তার বিনিময়ে তাদেরকে নানান সুখ-স্বাচ্ছন্দ-নিরাপত্তা দিচ্ছে ! পৃথিবীর প্রায় সমস্ত ধর্মীয় সংগঠনগুলিও ধনী সম্প্রদায়ের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে উঠেছে, এমনকি তাদের কার্যপ্রণালীও নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টায় রয়েছে এরা ! আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এদের প্রভাব বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন দেশের যে রাজনৈতিক উত্থান-পতন দেখা যাচ্ছে – তাও ঘটাচ্ছে এরাই ! দেশের সাধারণ জনগণ ধর্মীয় নেতা, রাজনৈতিক নেতাদের ভাষণ শুনে অকারণ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বার্থ অথবা নিজের Sentiment-কে বজায় রাখার জন্য পার্টির হয়ে ঝগড়া মারামারি করে, ধর্মীয় বিভেদ লাগিয়ে রক্তারক্তি করে _কিন্তু সবকিছুর নাটের গুরু কিন্তু সেই ধনী সম্প্রদায়!!
যাইহোক, কথা হচ্ছিলো উপসাগরীয় যুদ্ধ নিয়ে । গুরুমহারাজ বলেছিলেন – আরবের বেশিরভাগ দেশই তৈলসমৃদ্ধ দেশ । বলা হয় “সৌদিয়া আরাবিয়া” অর্থাৎ “সৌভাগ্যের দেশ”। হযরত মুহাম্মদ ওই দেশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলেই হয়তো – এইরূপ নামকরণ হয়েছিল ! কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেল আরব সাগরের তীরে তীরে অবস্থিত ছোট ছোট দেশগুলির সীমানায় থাকা সমুদ্রের তলায় বিশাল বিশাল তৈলভাণ্ডার রয়েছে ৷ সেই পেট্রোলিয়াম সারা বিশ্বে রপ্তানি করে মরুভূমির দেশগুলি এখন পৃথিবীতে অর্থনৈতিকভাবে সবচাইতে ধনী দেশগুলির অন্যতম হয়ে উঠেছে । এখন প্রকৃত অর্থেই তারা “সৌভাগ্যের দেশ” !
প্রকৃতি ওদের প্রতি অকৃপন হলেও, প্রাশ্চাত্যের ধনী এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে উন্নত দেশগুলির কাছে এই দেশগুলির বাড়বাড়ন্ত মোটেই ভালো লাগে না ৷ তারা চায় আরব সাগরের তলায় থাকা সুবিশাল তৈলভান্ডারের অধিকার ! – আর সেইজন্যেই উপসাগরীয় যুদ্ধ ! ওই দেশগুলিতে যত অশান্তি লেগে থাকবে, ততোই প্রাশ্চাত্যের উন্নত দেশগুলির ফায়দা ! এমনিতেই তারা সমুদ্র থেকে তেল নিষ্কাশনের যাবতীয় যন্ত্র আগে থাকতেই ওই দেশগুলিতে সরবরাহ করে রেখেছে(কারন আরব দেশগুলির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি তো মোটেই উন্নত নয়), তাদের-ই ইঞ্জিনিয়ার, মেকানিকস্-দের কাজে লাগিয়ে রেখেছে! হয়তো উন্নত প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ওখানকার তেলকে drainage করে ওদের নিজেদের সীমানায় নিয়ে চলেও যাচ্ছে ! কিন্তু তাতেও শান্তি নাই –আরও চাই, সবটা চাই,সবটার অধিকার চাই –তারই ফলশ্রুতিতে যুদ্ধ ! (বাকি অংশ পরের দিন) … [ক্রমশঃ]