[আর মাত্র দুটি এপিসোড। ন’কাকা প্রসঙ্গ_আপাতত শেষ! ভক্তদের অনুরোধ ছিল ন’কাকার ছোটবেলা সম্বন্ধে লেখার!! কিন্তু ওইটা করতে গেলে একটু সময় দরকার এবং বাড়ির লোকজনেদের সাথে কথা বলা দরকার। যদি সেটা সম্ভব হয়, তাহলে পরে আবার ন’কাকা প্রসঙ্গশুরু হবে ।]
ন’কাকা ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় খুবই মনোযোগী ছিলেন – অবশ্য এটা বলাই যায়, একজন মহাযোগী তো সমস্ত ব্যাপারেই মনোযোগী হবেন, এতে আর বিচিত্র কি আছে ! উনি তৎকালীন সময়ে B.A. পাস করেছিলেন – ওনার হাতের লেখা ছিল মুক্তোর মতো ঝকঝকে ! যাইহোক, সে যুগে (আজ থেকে প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে) B.A. পাশ করা যে কোনো ব্যক্তির জন্য চাকরি পিছু-পিছু ঘুরতো ! ন’কাকাও আসানসোলের কাছাকাছি কোনো কোলিয়ারীতে চাকরি পেয়েছিলেন – কিন্তু উনি বেশিদিন চাকরি করতে পারেন নি ৷ ফিরে এসেছিলেন বনগ্রামে ওনাদের নিজের বাড়িতে ৷ তৎকালীন যুগে বিভিন্ন স্থানে তখন প্রাইমারি স্কুল, হাই স্কুল গজিয়ে উঠছিল এবং সেইসব বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দ্বারা স্থানীয় শিক্ষিত মানুষদেরকে ডেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে চাকরি দেওয়া হতো । ন’কাকার ক্ষেত্রেও এমন অনেক অফার এসেছিল – সে কথা আমি ওনার মুখ থেকেই শুনেছিলাম ।
কিন্তু এই সবগুলিকেই উনি নিজেই যে কোনো ভাবে এড়িয়ে গিয়েছিলেন অথবা বলা যায় ৺রী মা জগদম্বা তাঁকে ওইসব করতে দেন নি ! কারণ তিনি (৺রী মা) হয়তো তাঁর এই প্রিয় পুত্রটিকে সবার ছোঁয়া বাঁচিয়ে নিজের জিম্মায় রেখে দিয়েছিলেন – এযুগের যুগপুরুষ’ গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের কাজের সহযোগী হিসাবে কাজের জন্য !
গুরুমহারাজ নিজের অবতরণের ব্যাপারে বলেছিলেন যে, তাঁকে কেন্দ্র করে মোট দুশোরও বেশী নির্দিষ্ট মানুষ মিলে তৈরি হয়েছে “পরমানন্দ মন্ডল”! সেখানে কেন্দ্রে রয়েছে একজন (গুরুমহারাজ স্বয়ং) এবং তাঁকে কেন্দ্র করে প্রথমেই আছেন দু-জন, এইভাবে এক এবং দুই মিলে একটি Triangle বা ত্রিভুজ তৈরি হয় ! যে কোনো শক্তি-সৃষ্টির এবং তাকে ধারণ করার এটাই রহস্য ! এটাই তন্ত্র সাধনায় (সাধারণ পূজাপাঠেও ব্যবহার হয়) শ্রীযন্ত্র ! সাধারণ পূজাপাঠে তিনটি সরকাঠি বা অন্য কোনো কাঠিকে বেঁধে ত্রিভুজাকৃতি এই শ্রীযন্ত্র তৈরি করা হয় । যন্ত্র-মন্ত্র-তন্ত্র- এই তিনটির কথা রয়েছে ৷ এর মধ্যে ‘যন্ত্র’ কথাটির প্রকৃত অর্থ হল field বা ক্ষেত্র ! ঠিক ঠিক field তৈরি হলেই সেখান থেকে শক্তির ক্রিয়া শুরু হয়ে যায়, আর সেই field-এ যদি সঠিক সময়ে উপযুক্ত আধার বিশিষ্ট (স্থান-কাল-পাত্র) ব্যক্তি বা সাধকের আবির্ভাব ঘটে যায় – তাহলেই সিদ্ধি !
গুরু মহারাজ বলেছিলেন – হিমালয়ে এমন সাতটি Point রয়েছে, যেখানে যে কোনো ব্যক্তিকে ধ্যানে বসিয়ে দিলেই তার কুলকুন্ডলিনীর ক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে ! ওই ব্যক্তি যদি প্রকৃত আধ্যাত্নিক হয় – তাহলে তার সমাধিও হয়ে যেতে পারে । আর তা যদি না-ও হয়, তাহলেও ওই ব্যক্তির শারীরিক বা মানসিক যতকিছু disharmony – সেগুলি ঠিক হয়ে যাবে !
ভারতবর্ষের বিভিন্ন শক্তিপীঠগুলিও এক একটি শক্তির কেন্দ্র, সেখানেও কোনো সাধক মনঃসংযোগ করলে বুঝতে পারে – কিভাবে সেই স্থানের সঞ্চিত শক্তি ওই সাধকের মধ্যে হু হু করে প্রবেশ করে তার আভ্যন্তরীণ শক্তিকে জাগিয়ে তুলছে । বনগ্রাম আশ্রমে গুরু মহারাজের ঘরটিও এমনই একটি Field ! উনি নিজের মুখে বলেছিলে যে – ” আমার ঘরে আমার উপস্থিতিতে একটা field সৃষ্টি করে যে কাউকে কিছুক্ষণ বসিয়ে দিলেই চড়-চড় করে তার কুলকুন্ডলিনী শক্তি ঊর্ধ্বগামী হয়ে সহস্রারে পৌঁছে যাবে । কিন্তু ওই field-টি তৈরি করতে হলে আরও দুজনের উপস্থিতি প্রয়োজন ৷”
আর এই কথাটা বলতেই – এতগুলি কথা বলতে হলো, বা উপক্রমণিকা সারতে হোলো ! গুরু মহারাজকে কেন্দ্র করে যে মহাশক্তিধর দুজনের কথা উনি (গুরুমহারাজ) বলেছিলেন – তার একজনের নারী শরীর এবং অন্যজন (আমার ধারণা) অবশ্যই ন’কাকা ! উপযুক্ত আধার (শরীর) তৈরি করতে না পারলে যে আধ্যাত্মিক শক্তিকে ধারণ করতে পারা যায় না – এর উদাহরণ হিসেবে গুরুমহারাজ একবার বলেছিলেন – ” সিংহের দুধ সোনার পাত্র ছাড়া অন্য কোনো পাত্রে রাখা যায় না – কেটে যায় বা নষ্ট হয়ে যায় ।” এই কথা যেদিন প্রথম ওনার মুখ থেকে শুনেছিলাম – তখন মনে হয়েছিল ‘শ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত’- বইটি পড়ে যেমন জীবনে বহু নতুন নতুন কথা – নতুন নতুন তত্ত্ব ও তথ্য লাভ করতাম – স্বামী পরমানন্দ-ও ঠিক তেমন-ই একজন ! যাঁর কাছে কিছুক্ষণ বসলেই অনেক অজানা কথা জানা যায়, ওনার কথা শুনতে শুনতে অবাক বিস্ময়ের ঘোরে কখন যেন বিহ্বল হয়ে পড়া যায় !
আমার স্থির বিশ্বাস ন’কাকা ছিলেন যেন সেই রকমই সোনার পাত্র!! [ক্রমশঃ]
ন’কাকা ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় খুবই মনোযোগী ছিলেন – অবশ্য এটা বলাই যায়, একজন মহাযোগী তো সমস্ত ব্যাপারেই মনোযোগী হবেন, এতে আর বিচিত্র কি আছে ! উনি তৎকালীন সময়ে B.A. পাস করেছিলেন – ওনার হাতের লেখা ছিল মুক্তোর মতো ঝকঝকে ! যাইহোক, সে যুগে (আজ থেকে প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে) B.A. পাশ করা যে কোনো ব্যক্তির জন্য চাকরি পিছু-পিছু ঘুরতো ! ন’কাকাও আসানসোলের কাছাকাছি কোনো কোলিয়ারীতে চাকরি পেয়েছিলেন – কিন্তু উনি বেশিদিন চাকরি করতে পারেন নি ৷ ফিরে এসেছিলেন বনগ্রামে ওনাদের নিজের বাড়িতে ৷ তৎকালীন যুগে বিভিন্ন স্থানে তখন প্রাইমারি স্কুল, হাই স্কুল গজিয়ে উঠছিল এবং সেইসব বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দ্বারা স্থানীয় শিক্ষিত মানুষদেরকে ডেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে চাকরি দেওয়া হতো । ন’কাকার ক্ষেত্রেও এমন অনেক অফার এসেছিল – সে কথা আমি ওনার মুখ থেকেই শুনেছিলাম ।
কিন্তু এই সবগুলিকেই উনি নিজেই যে কোনো ভাবে এড়িয়ে গিয়েছিলেন অথবা বলা যায় ৺রী মা জগদম্বা তাঁকে ওইসব করতে দেন নি ! কারণ তিনি (৺রী মা) হয়তো তাঁর এই প্রিয় পুত্রটিকে সবার ছোঁয়া বাঁচিয়ে নিজের জিম্মায় রেখে দিয়েছিলেন – এযুগের যুগপুরুষ’ গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের কাজের সহযোগী হিসাবে কাজের জন্য !
গুরুমহারাজ নিজের অবতরণের ব্যাপারে বলেছিলেন যে, তাঁকে কেন্দ্র করে মোট দুশোরও বেশী নির্দিষ্ট মানুষ মিলে তৈরি হয়েছে “পরমানন্দ মন্ডল”! সেখানে কেন্দ্রে রয়েছে একজন (গুরুমহারাজ স্বয়ং) এবং তাঁকে কেন্দ্র করে প্রথমেই আছেন দু-জন, এইভাবে এক এবং দুই মিলে একটি Triangle বা ত্রিভুজ তৈরি হয় ! যে কোনো শক্তি-সৃষ্টির এবং তাকে ধারণ করার এটাই রহস্য ! এটাই তন্ত্র সাধনায় (সাধারণ পূজাপাঠেও ব্যবহার হয়) শ্রীযন্ত্র ! সাধারণ পূজাপাঠে তিনটি সরকাঠি বা অন্য কোনো কাঠিকে বেঁধে ত্রিভুজাকৃতি এই শ্রীযন্ত্র তৈরি করা হয় । যন্ত্র-মন্ত্র-তন্ত্র- এই তিনটির কথা রয়েছে ৷ এর মধ্যে ‘যন্ত্র’ কথাটির প্রকৃত অর্থ হল field বা ক্ষেত্র ! ঠিক ঠিক field তৈরি হলেই সেখান থেকে শক্তির ক্রিয়া শুরু হয়ে যায়, আর সেই field-এ যদি সঠিক সময়ে উপযুক্ত আধার বিশিষ্ট (স্থান-কাল-পাত্র) ব্যক্তি বা সাধকের আবির্ভাব ঘটে যায় – তাহলেই সিদ্ধি !
গুরু মহারাজ বলেছিলেন – হিমালয়ে এমন সাতটি Point রয়েছে, যেখানে যে কোনো ব্যক্তিকে ধ্যানে বসিয়ে দিলেই তার কুলকুন্ডলিনীর ক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে ! ওই ব্যক্তি যদি প্রকৃত আধ্যাত্নিক হয় – তাহলে তার সমাধিও হয়ে যেতে পারে । আর তা যদি না-ও হয়, তাহলেও ওই ব্যক্তির শারীরিক বা মানসিক যতকিছু disharmony – সেগুলি ঠিক হয়ে যাবে !
ভারতবর্ষের বিভিন্ন শক্তিপীঠগুলিও এক একটি শক্তির কেন্দ্র, সেখানেও কোনো সাধক মনঃসংযোগ করলে বুঝতে পারে – কিভাবে সেই স্থানের সঞ্চিত শক্তি ওই সাধকের মধ্যে হু হু করে প্রবেশ করে তার আভ্যন্তরীণ শক্তিকে জাগিয়ে তুলছে । বনগ্রাম আশ্রমে গুরু মহারাজের ঘরটিও এমনই একটি Field ! উনি নিজের মুখে বলেছিলে যে – ” আমার ঘরে আমার উপস্থিতিতে একটা field সৃষ্টি করে যে কাউকে কিছুক্ষণ বসিয়ে দিলেই চড়-চড় করে তার কুলকুন্ডলিনী শক্তি ঊর্ধ্বগামী হয়ে সহস্রারে পৌঁছে যাবে । কিন্তু ওই field-টি তৈরি করতে হলে আরও দুজনের উপস্থিতি প্রয়োজন ৷”
আর এই কথাটা বলতেই – এতগুলি কথা বলতে হলো, বা উপক্রমণিকা সারতে হোলো ! গুরু মহারাজকে কেন্দ্র করে যে মহাশক্তিধর দুজনের কথা উনি (গুরুমহারাজ) বলেছিলেন – তার একজনের নারী শরীর এবং অন্যজন (আমার ধারণা) অবশ্যই ন’কাকা ! উপযুক্ত আধার (শরীর) তৈরি করতে না পারলে যে আধ্যাত্মিক শক্তিকে ধারণ করতে পারা যায় না – এর উদাহরণ হিসেবে গুরুমহারাজ একবার বলেছিলেন – ” সিংহের দুধ সোনার পাত্র ছাড়া অন্য কোনো পাত্রে রাখা যায় না – কেটে যায় বা নষ্ট হয়ে যায় ।” এই কথা যেদিন প্রথম ওনার মুখ থেকে শুনেছিলাম – তখন মনে হয়েছিল ‘শ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত’- বইটি পড়ে যেমন জীবনে বহু নতুন নতুন কথা – নতুন নতুন তত্ত্ব ও তথ্য লাভ করতাম – স্বামী পরমানন্দ-ও ঠিক তেমন-ই একজন ! যাঁর কাছে কিছুক্ষণ বসলেই অনেক অজানা কথা জানা যায়, ওনার কথা শুনতে শুনতে অবাক বিস্ময়ের ঘোরে কখন যেন বিহ্বল হয়ে পড়া যায় !
আমার স্থির বিশ্বাস ন’কাকা ছিলেন যেন সেই রকমই সোনার পাত্র!! [ক্রমশঃ]