[শ্রীরামপুরে(হুগলি) তথাগত নামে এক তরুন সন্ন্যাসীর সাথে ন’কাকার সাক্ষাৎ হয়েছিল।ওর সাথে ন’কাকার প্রথম আলাপের ঘটনাটা আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।]
যাইহোক, ওর সাথে ন’কাকার প্রথম আলাপচারিতার কথায় আসি , যেটা সত্যিই ছিল খুবই Interesting ! তথাগত ঐ ঘরে(শ্রীরামপুর,হুগলী-র অসীম ব্যনার্জীর বাড়ি) এসে আসনে বসার পর থেকেই ন’কাকা তাঁর অন্তর্ভেদী দৃষ্টি দিয়ে ওর দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিলেন । তথাগত-ই প্রথম কথা বললো – ” আপনিই ‘কাকাবাবু’ তো ! আপনাকে আমি ‘কাকাবাবু’-ই বলছি , কেনো বলছি _কারণ ‘কাকাবাবু’ হচ্ছে একটা Post, একটা সম্মানীয় ‘পদ’ ! আমি ঠিক বলছি তো ‘কাকাবাবু’ ?” ন’কাকা এর উত্তরে মিষ্টি হেসে বললেন – ” হ্যাঁ , তা তো বটেই ! তুমি তো ঠিক-ই বলেছো বাবা I”
তখন তথাগত একটু সময় নিয়ে আবার বলল – “আচ্ছা কাকাবাবু ! আপনার বাড়ীটা তো মাটির তৈরী , খড়ের চাল – তাই তো ? আর একটা গোয়াল রয়েছে – আপনি গরুর সেবা নিজের হাতেই করেন ! ঠিক বলছি তো !”
তথাগত-র কথা চলাকালীন নকাকার মুখের হাসি লেগেই ছিল – তবু একটু শব্দ করে হেসে উত্তর দিলেন ” হ্যাঁ-হ্যাঁ , ঠিকই বলেছো বাবা ! আমরা গ্রামের মানুষ! আমাদের মাটির বাড়ি – খড়ের চাল-ই তো হবে! ”
তখন তথাগত সবাইকে অবাক করে দিয়ে এবার জিজ্ঞাসা করল – ” আচ্ছা ! আপনি আমাকে ঐ গোয়ালঘরে বসিয়ে কি যেন খাইয়েছিলেন ?” ন’কাকাও অম্লানবদনে তাৎক্ষণিক উত্তর দিলেন – “পায়েস, মানে পরমান্ন খাইয়েছিলাম !”
” কেন – কেন – পরমান্ন কেন ?” – তথাগতের ব্যাগ্রতাপূর্ণ জিজ্ঞাসা !
ন’কাকার Prompt Answer – ” ঐ যে ! তোমার শরীরটা তো দুর্বল হয়ে পড়েছে – তাই পরমান্ন ! দুধ-গুড়-আতপচালের পরমান্ন খেলে শক্তি বৃদ্ধি হয় – এইজন্যেই পরমান্ন খাওয়ানো !”
তথাগত ন’কাকার এই উত্তর শুনে যেন খুবই সন্তুষ্ট হ’ল ! অনেকক্ষণ মাথা নিচু করে মাথা নেড়ে-ই গেল , তারপর মুখে শুধু বলল – ” ও – আচ্ছা , আচ্ছা !”
ওনাদের মধ্যে কথাবার্তা যাইহোক __প্রথম দর্শনেই ন’কাকার সাথে তথাগতের এই কথোপকথন কিন্তু আমাদের খুবই অবাক করেছিল ! সেদিন একটা কথা বেশ ভালো করে বুঝতে পেরেছিলাম যে, আমরা গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দ বা ন’কাকা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় সম্বন্ধে কত কম জানি ! আমরা যেটুকু দেখেছি বা দেখছি __তার বাইরে লোকচক্ষুর অন্তরালে এঁরা কত কাজ করে চলেছেন, তার খবর কেউ কোনদিনই পাবে না !
এই প্রসঙ্গে ন’কাকার সাথে হাওড়ার ইন্দ্রদা (ইন্দ্রনাথ .. )-র প্রথম দর্শনের কথাও প্রাসঙ্গিক হতে পারে – তাই উল্লেখ করছি ! হাওড়ার দেবকুমার রায় ন’কাকার ভক্ত , ওরা খুব ছোট থেকেই বেলুড় মঠের সাথে যুক্ত ! প্রতি সপ্তাহেই মঠে গিয়ে Volunteer হিসাবে কাজ করে – তাই ওখানকার কর্তৃপক্ষের সাথে ওদের খুবই হৃদ্যতা ! ওখানেই বেলুড় মঠের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ✓স্বামী ভূতেশানন্দের শিষ্য ইন্দ্রনাথের সাথে দেবকুমারের আলাপ হয় এবং ধীরে ধীরে অন্তরঙ্গতা গড়ে ওঠে । ইন্দ্রদা স্বামী ভূতেশানন্দের নির্দেশে ১৯৭৯/৮০ সালে বনগ্রামে এসে গুরু মহারাজকে দেখে গিয়েছিলেন । পরে ১৯৮৪/৮৫ সালেও একবার এসেছিলেন , গুরুমহারাজের শরীর ছাড়ার পর থেকে আর আসে নি। তবে অতি সম্প্রতি উনি আবার আসা যাওয়া শুরু করেছেন (অর্থাৎ ২০১৬/১৭ সাল থেকে ) ন’কাকার জন্য, উনি আসেন ন’কাকার সাথে দেখা করতে !
যাইহোক, যে কথা হচ্ছিল – বেলুড় মঠেই Volunteer হিসাবে কাজ করাকালীন একদিন দেবকুমার ‘বনগ্রাম পরমানন্দ মিশন’ , ‘ন’কাকা’ এইসব কথা বলতে শুরু করতেই ইন্দ্রদা বলে ওঠেন – ” ওসব আমি গিয়ে দেখে এসেছি ! স্বামী পরমানন্দের পরে ন’কাকার মধ্যেই রয়েছে আধ্যাত্মিক শক্তি , তোমরা যাওয়া আসা করছো যখন_ তখন ওনাকে (ন’কাকাকে) চেপে ধরো , কৃপা চেয়ে নাও ! ওনার কাছে অনেক সম্পদ আছে !” ইন্দ্রদার কথা শুনে দেবকুমার-রা (দেবকুমার, ভূতনাথ, দেবমাল্য, স্বরূপ, বাবুল প্রমুখরা) আরও উৎসাহিত হয়েছিল ।
তবে আপনারা শুনে হয়তো অবাক হবেন, প্রকৃতপক্ষে ইন্দ্রদার কখনও সেভাবে ন’কাকার সাথে মুখোমুখি আলাপ হয়নি ! কারণ ও আগে দুবার বনগ্রাম এসেছিলো ঠিকই কিন্তু গুরু মহারাজের সাথে দেখা করেই চলে গেছিল ! অথচ বেলুড় মঠে দেবুদের সাথে ওনার দেখা হলেই (রবিবার ওরা volunteer Duty দিতে ওখানে যেত) ইন্দ্রদা ন’কাকার কথা দেবকুমারদেরকে বলতো _”ওর ধ্যান-জপের সময় ন’কাকার দর্শন হয় , ওনার সাথে নানা কথা হয় “– এইসব গল্প করতো !
এতে চরম উৎসাহিত হয়ে দেবকুমার(দেবকুমার অবশ্য অনেক আগে থেকেই ন’কাকার বাড়ি আসা যাওয়া শুরু করেছিল) ইন্দ্রদাকে নিয়ে একবার বনগ্রামে আসে (২০১৬/১৭ সালে) ৷ মেমারী থেকে বনগ্রাম পর্যন্ত যে ট্রেকারটি চলে – ঐ ট্রেকার থেকে ন’কাকার বাড়ীর সামনে শিবমন্দিরের কাছে নেমে ওরা শিবমন্দিরের গলিটা cross করে যেইমাত্র ন’কাকার বাড়ীতে পা দিয়েছে – অমনি ন’কাকা হাসতে হাসতে বলে উঠছিলেন – ” ও বাবা ৷ এতদিন এই ছেলে বাড়ীর আশেপাশে ঘুরঘুর করছিল – আজ দেখছি সোজা বাড়ীতেই ঢুকে পড়ল যে !”
তথাগতর কথা বলতে গিয়ে ইন্দ্রদার কথা প্রাসঙ্গিক__ তাই উল্লেখ করা হলো ! তথাগত ভালো সাধক ছিল – কিন্তু ওর কোনো স্থূল গুরু ছিল না ৷ ও মনে মনে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণকে গুরু হিসেবে মেনে সাধন-ভজন বা সবকিছু করতো । ও বলতো যে , ওর নাকি ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের দর্শন হয় এবং উনি (ঠাকুর)-ই ওকে সাধনের বিভিন্ন Step সম্বন্ধে নির্দেশ দেন । তথাগত যে হঠাৎ করে সন্ন্যাস নিয়েছিল – সেটাও নাকি ছিল ওর উপর ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের নির্দেশ !(ক্রমশঃ)