যাইহোক, মূল কথায় ফিরে আসি – ন’কাকার সঙ্গে যখন থেকে আমার পরিচয় হয়েছিল এবং যখন থেকে স্বয়ং গুরুমহারাজের শ্রীমুখ থেকে ন’কাকা সম্বন্ধে নানা কথা শুনলাম – তখন থেকেই আমার মনে হয়েছিল – ন’কাকার মতো (আরো দু-চার জন নিশ্চয়ই রয়েছে, এমনকি নারী শরীরেও মহাশক্তির প্রকাশ রয়েছে) মহাশক্তিধর মানুষেরা না থাকলে স্বামী পরমানন্দের মতো মহামানবদের (শক্তিমান স্বয়ং) আটকে রাখবে কে ? মহামানবের অবতরণের জন্য যেমন উপযুক্ত আধার অর্থাৎ মায়ের পবিত্র গর্ভের প্রয়োজন – তেমনি তার আগে থাকতেই একটা field তৈরি হয়ে থাকে, যেটা তৈরি হয় বেশ কয়েকজন মহা মহা শক্তিধর আধ্যাত্মিক ব্যক্তির (নারী ও পুরুষ শরীর) শরীর ধারণের ফলে । এই field-টি তৈরি না হোলে অবতার পুরুষেরা শরীর নিতে পারেন না ! ঐ যে আগের সংখ্যায় বলা হয়েছিল শ্রীযন্ত্র বা Triangular field-এর কথা,যে field সৃষ্টি হলেই তাতে শক্তি সৃষ্টি হয় ! তেমনি এটাও বলা যায় যে, কোনো মহাশক্তিকে আবদ্ধ করে রাখার জন্যেও field-এর প্রয়োজন হয়।
এমনকি শরীর (আধার) প্রস্তুত না হোলে_সেই শরীরে আধ্যাত্মিক শক্তির ক্রিয়াও হয় না! গুরুমহারাজ নিজেই বলেছিলেন – “গঙ্গার অবতরণের জন্য স্বয়ং শিবকে প্রয়োজন হয় – কারণ সেই প্রচন্ড বেগ ধারণ করার সামর্থ্য শিব ছাড়া আর কারও নাই ! তেমনি উন্নত সাধকের সাধনকালে যখন সহস্রার থেকে শক্তির Charging হয় – তখন তার প্রভাবে অনুপযুক্ত শরীর(আধার) বেঁকে-চুড়ে কুঁকড়ে যায় ! মহাযোগী, মহাসংযমী না হোলে, প্রাণ-মন-শরীর সম্পূর্ণ কলুষমুক্ত না হোলে_ সেই শক্তির ক্রিয়া সহ্য করা সাধকের পক্ষে মুশকিল হয়ে পড়ে । ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ এই তত্ত্বকে বোঝাতে গিয়ে বলেছিলেন – ” মনে হয় যেন কুড়েঁ ঘরে হাতি ঢুকেছে !” – ঘরটি যদি পাকাদালান বাড়ি হোতো – তাহলে কিন্তু কোনো অসুবিধাই হোতো না ! বাউলগণ বলেছেন – ” কাঁচা হাঁড়িতে গো – হাঁড়িতে, রাখিতে নারিলি প্রেমজল ।”
এইসব কথাগুলি যখন আমি প্রথম প্রথম শুনেছিলাম, তখন থেকেই আমার মনে হোতো – ব্যক্তি-শরীর যেমন রয়েছে, তেমনি তো সমাজ-শরীরও রয়েছে (এই ধারণাও গুরুমহারাজই তৈরি করে দিয়েছিলেন)! তাহলে ব্যক্তি শরীরকে যেমন ধ্যান-জপ, আসন-প্রাণায়াম, নিষ্ঠা-সংযম ইত্যাদির দ্বারা প্রস্তুত করতে হয় – তবে সেই শরীরে আধ্যাত্মিক শক্তির অবতরণ হয়, ঠিক তেমনি সমাজ শরীরেও কয়েকজন মহাশক্তিধর মানুষের প্রয়োজন হয় _ঈশ্বরের অবতারকে পৃথিবী গ্রহে আনার জন্য এবং পৃথিবী গ্রহে আনার পর সেই মহাশক্তিকে আটকে ধরে রাখার জন্য ! যুগ যুগ ধরে ঋষিকুল , উন্নত সাধককুল এই কাজটিই করে আসছেন ! অথবা বলা যায় মহাপ্রকৃতির মহানিয়মে-ই ঐ উন্নত আধারগুলিকে আগে থাকতেই পাঠানো হয় বা নির্দিষ্ট করে রাখা হয় – যাতে করে তাঁদের মিলিত শক্তি ঈশ্বরের ওই মহাশক্তিকে ধরে রাখে !
এই সব ঋষিকুলের রাশ একটু আলগা হলেই – সেই মহাতত্ত্ব – সেই অবতার তত্ত্ব ‘ফুরুৎ’ করে চলে যেতে পারে । হাজার হাজার মানুষের হাহাকার-আর্তনাদেও আর পিছন ফিরে তাকাবার তাঁর উপায় থাকে না –অবশ্য এগুলি তাঁকে স্পর্শও করতে পারে না ! কারণ তাঁর সেই শরীরের কাজ যে শেষ ! যতক্ষন তাঁর চারিপাশের মহাশক্তিধরেরা তাঁকে ধরে রাখতে পেরেছিল – তিনি (অবতার পুরুষ) ততক্ষণই এই ধরণীর ধূলায় লীলা করে গেলেন – এখানে আমাদের মতো সাধারন মানুষদের তো কোনো ভূমিকাই নাই ! তাই আফসোস বা হা-হুতাশ করে আর কি হবে – আমাদের কোনো মুরােদ তো সেই পরমতত্ত্বকে, মহাপ্রকৃতির সেই মহাশক্তিকে স্পর্শই করতে পারবে না – তাহলে ? তাহলে আমাদের কি করনীয়?
মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য বলে গিয়েছেন – “কেঁদে কেঁদে নাম করতে”, অর্থাৎ চোখের জলে সেই মহান মানুষটির গুনের কথা স্মরণ করা আর তাঁর নির্দেশিত পথে এগিয়ে চলা ! ” ছোট্ট ছোট্ট পায়ে চলতে চলতে ঠিক পৌঁছে যাবো ” – এই সংকল্পে অবিচল থাকা !
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ এই যুগের যুগপুরুষ’ (গুরুমহারাজ বলেছিলেন – এই যুগে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণকে অতিক্রম করে অন্য কোনো মহাপুরুষই যেতে পারবে না ! যে কোনো মহাপুরুষ নতুন ভাবে যে শিক্ষাই সমাজকে দিতে আসুক না কেন – তাঁকে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের দেওয়া মতাদর্শকে follow করেই কথা বলতে হবে), তিনিও বলে গিয়েছেন – “এ যুগে নারদীয় ভক্তি!”
“নারদীয় ভক্তি”– কথাটির-ও ঠিক ঠিক মানে আমরা জানতাম না ! একদিন ন’কাকাকে জিজ্ঞাসা করায় উনি বললেন, ” পরমানন্দকে (গুরু মহারাজ) একবার এই কথাটাই জানতে চেয়েছিলাম, তা পরমানন্দ বললো – ‘সদা-সর্বদা ঈশ্বরের নাম করা ! তবে মনে রাখতে হবে যেন নাম-নামী অভেদ জ্ঞানটা বজায় থাকে ! নাহলে সবই বৃথা হয়ে যাবে ।’– ওই মহাপ্রভুর দাওয়াই কেঁদে কেঁদে নাম করা !” এই বলেই ন’কাকার সেই অপার্থিব হাসি ! যে হাসিতে উনি সকল ভক্তদেরকে মাতিয়ে রাখতেন ৷ সহজ-সরল ঐ মহান মানুষটির অনাবিল নির্মল হাসি-ই ছিল যেন ওনার মহাপুরুষত্বের পরিচায়ক !
তাঁর স্নেহচ্ছায়ায় যারা আসতে পেরেছিল , তাদের সকলেরই হৃদয়ে, মনের মণিকোঠায়___ ন’কাকার স্নেহপূর্ণভাবে ওই তার(ভক্তটির) নাম ধরে ডাকা, দেখা হবার পর –আন্তরিকভাবে স্বাগত জানানো, আত্মীয়-স্বজন-পরিজন সকলের খোঁজখবর নেওয়া, সকলের আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে ওঠা এবং যে কোনো দুঃখে – তার ভাগীদার হয়ে ওঠার যে অসামান্য ক্ষমতা, ইত্যাদি আরও অনেক বিষয়গুলি চির-জাগরুক হয়ে রয়ে গেছে । একবার যে বা যারা ন’কাকার সান্নিধ্যে এসেছে এবং তার অপার্থিব ভালোবাসার ছোঁয়া পেয়েছে – সে বা তারা তাদের বাকি জীবন ধরে সেই ভালোবাসা বা স্নেহের অথবা অযাচিতভাবে দেওয়া আধ্যাত্মিকতার স্পর্শ পেতে চাইবেই চাইবে ! অন্য কোথাও পাবে না নিশ্চয়ই, কিন্তু খুঁজতে যে ছাড়বে না _ এটাও নিশ্চিত ! … [ক্রমশঃ]
এমনকি শরীর (আধার) প্রস্তুত না হোলে_সেই শরীরে আধ্যাত্মিক শক্তির ক্রিয়াও হয় না! গুরুমহারাজ নিজেই বলেছিলেন – “গঙ্গার অবতরণের জন্য স্বয়ং শিবকে প্রয়োজন হয় – কারণ সেই প্রচন্ড বেগ ধারণ করার সামর্থ্য শিব ছাড়া আর কারও নাই ! তেমনি উন্নত সাধকের সাধনকালে যখন সহস্রার থেকে শক্তির Charging হয় – তখন তার প্রভাবে অনুপযুক্ত শরীর(আধার) বেঁকে-চুড়ে কুঁকড়ে যায় ! মহাযোগী, মহাসংযমী না হোলে, প্রাণ-মন-শরীর সম্পূর্ণ কলুষমুক্ত না হোলে_ সেই শক্তির ক্রিয়া সহ্য করা সাধকের পক্ষে মুশকিল হয়ে পড়ে । ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ এই তত্ত্বকে বোঝাতে গিয়ে বলেছিলেন – ” মনে হয় যেন কুড়েঁ ঘরে হাতি ঢুকেছে !” – ঘরটি যদি পাকাদালান বাড়ি হোতো – তাহলে কিন্তু কোনো অসুবিধাই হোতো না ! বাউলগণ বলেছেন – ” কাঁচা হাঁড়িতে গো – হাঁড়িতে, রাখিতে নারিলি প্রেমজল ।”
এইসব কথাগুলি যখন আমি প্রথম প্রথম শুনেছিলাম, তখন থেকেই আমার মনে হোতো – ব্যক্তি-শরীর যেমন রয়েছে, তেমনি তো সমাজ-শরীরও রয়েছে (এই ধারণাও গুরুমহারাজই তৈরি করে দিয়েছিলেন)! তাহলে ব্যক্তি শরীরকে যেমন ধ্যান-জপ, আসন-প্রাণায়াম, নিষ্ঠা-সংযম ইত্যাদির দ্বারা প্রস্তুত করতে হয় – তবে সেই শরীরে আধ্যাত্মিক শক্তির অবতরণ হয়, ঠিক তেমনি সমাজ শরীরেও কয়েকজন মহাশক্তিধর মানুষের প্রয়োজন হয় _ঈশ্বরের অবতারকে পৃথিবী গ্রহে আনার জন্য এবং পৃথিবী গ্রহে আনার পর সেই মহাশক্তিকে আটকে ধরে রাখার জন্য ! যুগ যুগ ধরে ঋষিকুল , উন্নত সাধককুল এই কাজটিই করে আসছেন ! অথবা বলা যায় মহাপ্রকৃতির মহানিয়মে-ই ঐ উন্নত আধারগুলিকে আগে থাকতেই পাঠানো হয় বা নির্দিষ্ট করে রাখা হয় – যাতে করে তাঁদের মিলিত শক্তি ঈশ্বরের ওই মহাশক্তিকে ধরে রাখে !
এই সব ঋষিকুলের রাশ একটু আলগা হলেই – সেই মহাতত্ত্ব – সেই অবতার তত্ত্ব ‘ফুরুৎ’ করে চলে যেতে পারে । হাজার হাজার মানুষের হাহাকার-আর্তনাদেও আর পিছন ফিরে তাকাবার তাঁর উপায় থাকে না –অবশ্য এগুলি তাঁকে স্পর্শও করতে পারে না ! কারণ তাঁর সেই শরীরের কাজ যে শেষ ! যতক্ষন তাঁর চারিপাশের মহাশক্তিধরেরা তাঁকে ধরে রাখতে পেরেছিল – তিনি (অবতার পুরুষ) ততক্ষণই এই ধরণীর ধূলায় লীলা করে গেলেন – এখানে আমাদের মতো সাধারন মানুষদের তো কোনো ভূমিকাই নাই ! তাই আফসোস বা হা-হুতাশ করে আর কি হবে – আমাদের কোনো মুরােদ তো সেই পরমতত্ত্বকে, মহাপ্রকৃতির সেই মহাশক্তিকে স্পর্শই করতে পারবে না – তাহলে ? তাহলে আমাদের কি করনীয়?
মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য বলে গিয়েছেন – “কেঁদে কেঁদে নাম করতে”, অর্থাৎ চোখের জলে সেই মহান মানুষটির গুনের কথা স্মরণ করা আর তাঁর নির্দেশিত পথে এগিয়ে চলা ! ” ছোট্ট ছোট্ট পায়ে চলতে চলতে ঠিক পৌঁছে যাবো ” – এই সংকল্পে অবিচল থাকা !
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ এই যুগের যুগপুরুষ’ (গুরুমহারাজ বলেছিলেন – এই যুগে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণকে অতিক্রম করে অন্য কোনো মহাপুরুষই যেতে পারবে না ! যে কোনো মহাপুরুষ নতুন ভাবে যে শিক্ষাই সমাজকে দিতে আসুক না কেন – তাঁকে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের দেওয়া মতাদর্শকে follow করেই কথা বলতে হবে), তিনিও বলে গিয়েছেন – “এ যুগে নারদীয় ভক্তি!”
“নারদীয় ভক্তি”– কথাটির-ও ঠিক ঠিক মানে আমরা জানতাম না ! একদিন ন’কাকাকে জিজ্ঞাসা করায় উনি বললেন, ” পরমানন্দকে (গুরু মহারাজ) একবার এই কথাটাই জানতে চেয়েছিলাম, তা পরমানন্দ বললো – ‘সদা-সর্বদা ঈশ্বরের নাম করা ! তবে মনে রাখতে হবে যেন নাম-নামী অভেদ জ্ঞানটা বজায় থাকে ! নাহলে সবই বৃথা হয়ে যাবে ।’– ওই মহাপ্রভুর দাওয়াই কেঁদে কেঁদে নাম করা !” এই বলেই ন’কাকার সেই অপার্থিব হাসি ! যে হাসিতে উনি সকল ভক্তদেরকে মাতিয়ে রাখতেন ৷ সহজ-সরল ঐ মহান মানুষটির অনাবিল নির্মল হাসি-ই ছিল যেন ওনার মহাপুরুষত্বের পরিচায়ক !
তাঁর স্নেহচ্ছায়ায় যারা আসতে পেরেছিল , তাদের সকলেরই হৃদয়ে, মনের মণিকোঠায়___ ন’কাকার স্নেহপূর্ণভাবে ওই তার(ভক্তটির) নাম ধরে ডাকা, দেখা হবার পর –আন্তরিকভাবে স্বাগত জানানো, আত্মীয়-স্বজন-পরিজন সকলের খোঁজখবর নেওয়া, সকলের আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে ওঠা এবং যে কোনো দুঃখে – তার ভাগীদার হয়ে ওঠার যে অসামান্য ক্ষমতা, ইত্যাদি আরও অনেক বিষয়গুলি চির-জাগরুক হয়ে রয়ে গেছে । একবার যে বা যারা ন’কাকার সান্নিধ্যে এসেছে এবং তার অপার্থিব ভালোবাসার ছোঁয়া পেয়েছে – সে বা তারা তাদের বাকি জীবন ধরে সেই ভালোবাসা বা স্নেহের অথবা অযাচিতভাবে দেওয়া আধ্যাত্মিকতার স্পর্শ পেতে চাইবেই চাইবে ! অন্য কোথাও পাবে না নিশ্চয়ই, কিন্তু খুঁজতে যে ছাড়বে না _ এটাও নিশ্চিত ! … [ক্রমশঃ]