(আগের এপিসোডে মহাপুরুষদের অপার্থিব ভালোবাসাই যে শ্রীকৃষ্ণের বাঁশির পাগল করা সুর _সেই সব কথা বলা হয়েছিল। গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের মধ্যে এটা তো আমরা প্রত্যক্ষ করেছিলামই, পরবর্তীতে দেখেছিলাম ন’কাকার মধ্যেও এই একই মহিমা প্রকটিত! এইসব কথা নিয়েই আগিয়ে যাওয়া!!)
….. এইসব গল্প(ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাঁশি শুনে গোপিনীদের আকুল হয়ে ছুটে বেরিয়ে যাওয়া)- ছোটবেলা থেকে অনেক শুনেছিলাম ৷ কীর্ত্তনের আসরে কীর্ত্তনীয়ারা কেঁদে কেঁদে এইসব বর্ণনা কোরতো ৷ ঐ কথাগুলি শুনে ছোটবেলায় মনটা কেমন যেন খালি খালি বোধ হোত , যেন মনে হোত – আমিও ওদের(গোপিনীদের) সাথী , ওদের ব্যাথার ব্যাথী ! তারপর ১৯৮৩ সালে জীবনে পেলাম গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দকে। ধীরে ধীরে তাঁর সঙ্গে মেলামেশা করতে করতে বুঝতে পারলাম ‘অপার্থিব’ ব্যাপারগুলি ঠিক কি ! পৃথিবীর যাবতীয় বস্তু , ব্যক্তি , বিষয়ের সঙ্গে যা মেলে না – তাই অপার্থিব । এই ব্যাপারটা পৃথিবীর নয় – যাঁরা এটি অর্জন করেছেন বা পৃথিবীর বাইরে কোথাও থেকে তা সঙ্গে করে এনেছেন – তাঁরাই অপার্থিব সম্পদের অধিকারী , তাঁরাই অপরকে দিতে পারেন এই সম্পদ !
গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দের কাছে এই অপার্থিব ভালোবাসা লাভ করেছিল অগণিত মানুষ । পরমানন্দ ভক্তগণেরা সবাই কিছু না কিছু তাঁর সেই অপার্থিব ভালোবাসার সুখ-স্মৃতি আজও বহন করে চলেছে ৷ হয়তো কেউ প্রকাশ করছে – হয়তো অনেকে তার নিজের মধ্যেই তা সযত্নে লালন করে চলেছে ! ১৯৯৯ সালের ২৭শে নভেম্বর নশ্বর জগতের কাজ শেষ করে চিন্ময়লোকে চলে গেলেন গুরু মহারাজ !
আমরা ভেবেছিলাম – যাঃ ! এই পৃথিবী থেকেও অপার্থিব ভালোবাসার যে স্বাদ তিনি সকলকে দিয়েছিলেন , সেই স্বাদ পাওয়ার দিন আমাদের শেষ হয়ে গেল ! কিন্তু আমাদের ভাবনাকে ভুল করে দিয়ে সামনে এসে গেলেন ন’কাকা , শ্রীযুক্ত শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় , বনগাঁয়ের মুখার্জী বাড়ীর ন’কর্ত্তা !
আমাদের সৌভাগ্য ‘বাবা’র পরে ‘কাকা’ আমাদের মাথায় বিরাট ছাতা ধরে আমাদের সমস্ত দায় নিজের কাঁধে তুলে নিলেন ৷ পরমানন্দ ভক্তরা সবাই যে এই মানুষটিকে ‘বাবা’র পরে ‘কাকা’ হিসাবে মেনে নিয়েছিলেন – তা হয়তো নিশ্চয়ই নয় ! কিন্তু আমরা যারা তাঁর স্নেহচ্ছায়ার এসে পড়েছিলাম — তারা তো প্রত্যক্ষ করলাম ব্যাপারটা ! মর্মে মর্মে তাঁর স্বাদ গ্রহণ করলাম ! তাঁকে কেন্দ্র করে যে ছোটখাটো দলটি গড়ে উঠেছিল – সেটি ধীরে ধীরে বড় হতে শুরু করতেই উনিও ঠিক সেই সময়ে আমাদেরকে ছেড়ে চলে গেলেন!!
২০১৮ সালের ২২-শে অক্টোবর শরীর ছেড়েছিলেন ন’কাকা ! তাঁর অগণিত ভক্ত , শিষ্য-সন্তানেরা আর একবার অনাথ হোল ! হঠাৎ করে তাদের মাথার উপর ছাতাটা সরে গেল ! তাদের অনেকে হয়তো বুঝতে পারলো যে আর তাদের ‘বাবার ছেলে’ হয়ে থাকা যাবে না , এবার তাদের ‘বড়’ হতে হবে । কিন্তু সবাই তো নয় __অনেকেই এখনও ছেলেমানুষী নিয়েই বেঁচে থাকতে চেয়েছে – তারা এখনও ‘বাবা’র জন্য , ন’কাকার জন্য নীরবে চোখের জল ফেলে ,অন্তরে কাঁদে !
শেষের দিকে ন’কাকার কাছে সারাদিনে ১০০/১৫০ ফোন-কল আসতো !! যারা ন’কাকার ঐ প্রেমের স্পর্শ্য পেয়েছিল তাদের বেশীরভাগের সারাদিনে একবার ওনাকে ফোন না করলে একটা কেমন যেন অপরাধবোধ জাগতো ৷ আবার কারণে-অকারণে অনেকেই__ এমনি এমনিই ফোন কোরতো। আনন্দের খবর , দুঃখের খবর , ভালোখবর-মন্দখবর ন’কাকার সাথে শেয়ার করা চাই-ই চাই ! খুব বিপদে পড়লে ন’কাকাকে ফোন করে করে উত্যক্ত করার ঘটনাও বহুবার ঘটতে দেখেছি ! আমি নিজেও দু-একজনের হয়ে ন’কাকাকে ঐরকম পীড়াপীড়ি করেছিলাম বা তাদেরকেও ওনাকে বারবার ফোন করে তাদের চরম-সমস্যার কথা জানাতে বলেছিলাম ! এতে তাদের উপকারও হয়েছিল – যা হবার কথা নয় , তাই-ই হয়েছিল ! কিন্তু এতে হোল কি – সেইসব ব্যক্তিদের সাথে এই ঘটনার পরেই আমার সম্পর্ক নষ্ট হয়ে গিয়েছিল !
ঐ ঘটনাগুলি থেকে এটা বুঝতে পেরেছিলাম যে , প্রাকৃতিকভাবে যা হবার – তাই ঘটতে দেওয়াটাই উচিৎ ! তুমি যদি ‘পাকামি’ করে, মহাপুরুষদের ধরে অন্য কিছু ঘটাতে চাও – তাহলে তার জন্য তোমাকে “কিছু না কিছু” ভোগান্তি ভুগতেই হবে !
ন’কাকার স্নেহভাজন হওয়ায় এবং ন’কাকার মহিমা একটু-আধটু বুঝে সেগুলি প্রকাশ করতে থাকায়__ আমরা যারা গুরু মহারাজের সন্তান , তারা তথাকথিত অনেক পরমানন্দ ভক্তদের কাছে ভৎর্সনাও শুনেছি ! সেই সব ভক্তরা আমাদেরকে বলেছে , “গুরু ছেড়ে গোবিন্দ ভজে , সে পাপী নরকে মজে” ! কিন্তু বিশ্বাস করুন – ন’কাকাকে ভালোবেসে আমরা গুরু মহারাজকে আরও বেশি বেশি করে ভালেবাসতে শিখতাম ! ন’কাকা সবসময়েই গুরু মহারাজের মহান দিকগুলির কথা আমাদেরকে প্রতি পদে পদে মনে পাড়িয়ে দিতেন ৷ আমাকে প্রায়ই মনে পাড়াতেন – ” বাবা ! এই যে দেখছো_ মানুষজন আমাদেরকে একটু মান্যিগন্যি করছে , এটা কেন করছে বলো দেখি — গুরু মহারাজের জন্য ! সেই মহান মানুষটি আমাদেরকে একটু কৃপা করেছিল , তাই মানুষজন আমাদেরকে মানে ৷ না হলে আমাদের আর কি আছে বলো” ?
আমি অবাক হয়ে ওনার মুখের দিকে চেয়ে থাকতাম। এই মানুষটা যে অসাধারণ , ইনি যে একজন মহাপুরুষ , ইনি যে একজন মহাসাধক – মহাশক্তিমান – যোগীপুরুষ , এসব সম্বন্ধে আমার কোন সন্দেহ-ই ছিল না ! তাই তাঁর মুখে এই ধরণের কথা শুনে — তাঁর প্রতি আমার শ্রদ্ধা আরও বেড়ে যেতো ! সুতরাং বাইরের কোন বিরূপ মন্তব্য আমাদের মনকে স্পর্শ্য করতে পারতো না । বরং আমরা সবসময়_ আমাদের প্রতি গুরু মহারাজের কৃপার কথা স্মরণ করে তাঁর প্রতি আরো বেশী বেশী কৃতজ্ঞ হোতাম! এই ভেবে কৃতজ্ঞ হোতাম যে, তিনি স্থূলশরীরে না থেকেও ন’কাকার মাধ্যমে আমাদেরকে স্নেহ দিয়ে চলেছেন , ভালোবাসা দিয়ে চলেছেন , হৃদয় তাপিত হলে – তাতে কোমল শান্তির স্পর্শ্য দিয়ে চলেছেন ! … [ক্রমশঃ]
….. এইসব গল্প(ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাঁশি শুনে গোপিনীদের আকুল হয়ে ছুটে বেরিয়ে যাওয়া)- ছোটবেলা থেকে অনেক শুনেছিলাম ৷ কীর্ত্তনের আসরে কীর্ত্তনীয়ারা কেঁদে কেঁদে এইসব বর্ণনা কোরতো ৷ ঐ কথাগুলি শুনে ছোটবেলায় মনটা কেমন যেন খালি খালি বোধ হোত , যেন মনে হোত – আমিও ওদের(গোপিনীদের) সাথী , ওদের ব্যাথার ব্যাথী ! তারপর ১৯৮৩ সালে জীবনে পেলাম গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দকে। ধীরে ধীরে তাঁর সঙ্গে মেলামেশা করতে করতে বুঝতে পারলাম ‘অপার্থিব’ ব্যাপারগুলি ঠিক কি ! পৃথিবীর যাবতীয় বস্তু , ব্যক্তি , বিষয়ের সঙ্গে যা মেলে না – তাই অপার্থিব । এই ব্যাপারটা পৃথিবীর নয় – যাঁরা এটি অর্জন করেছেন বা পৃথিবীর বাইরে কোথাও থেকে তা সঙ্গে করে এনেছেন – তাঁরাই অপার্থিব সম্পদের অধিকারী , তাঁরাই অপরকে দিতে পারেন এই সম্পদ !
গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দের কাছে এই অপার্থিব ভালোবাসা লাভ করেছিল অগণিত মানুষ । পরমানন্দ ভক্তগণেরা সবাই কিছু না কিছু তাঁর সেই অপার্থিব ভালোবাসার সুখ-স্মৃতি আজও বহন করে চলেছে ৷ হয়তো কেউ প্রকাশ করছে – হয়তো অনেকে তার নিজের মধ্যেই তা সযত্নে লালন করে চলেছে ! ১৯৯৯ সালের ২৭শে নভেম্বর নশ্বর জগতের কাজ শেষ করে চিন্ময়লোকে চলে গেলেন গুরু মহারাজ !
আমরা ভেবেছিলাম – যাঃ ! এই পৃথিবী থেকেও অপার্থিব ভালোবাসার যে স্বাদ তিনি সকলকে দিয়েছিলেন , সেই স্বাদ পাওয়ার দিন আমাদের শেষ হয়ে গেল ! কিন্তু আমাদের ভাবনাকে ভুল করে দিয়ে সামনে এসে গেলেন ন’কাকা , শ্রীযুক্ত শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় , বনগাঁয়ের মুখার্জী বাড়ীর ন’কর্ত্তা !
আমাদের সৌভাগ্য ‘বাবা’র পরে ‘কাকা’ আমাদের মাথায় বিরাট ছাতা ধরে আমাদের সমস্ত দায় নিজের কাঁধে তুলে নিলেন ৷ পরমানন্দ ভক্তরা সবাই যে এই মানুষটিকে ‘বাবা’র পরে ‘কাকা’ হিসাবে মেনে নিয়েছিলেন – তা হয়তো নিশ্চয়ই নয় ! কিন্তু আমরা যারা তাঁর স্নেহচ্ছায়ার এসে পড়েছিলাম — তারা তো প্রত্যক্ষ করলাম ব্যাপারটা ! মর্মে মর্মে তাঁর স্বাদ গ্রহণ করলাম ! তাঁকে কেন্দ্র করে যে ছোটখাটো দলটি গড়ে উঠেছিল – সেটি ধীরে ধীরে বড় হতে শুরু করতেই উনিও ঠিক সেই সময়ে আমাদেরকে ছেড়ে চলে গেলেন!!
২০১৮ সালের ২২-শে অক্টোবর শরীর ছেড়েছিলেন ন’কাকা ! তাঁর অগণিত ভক্ত , শিষ্য-সন্তানেরা আর একবার অনাথ হোল ! হঠাৎ করে তাদের মাথার উপর ছাতাটা সরে গেল ! তাদের অনেকে হয়তো বুঝতে পারলো যে আর তাদের ‘বাবার ছেলে’ হয়ে থাকা যাবে না , এবার তাদের ‘বড়’ হতে হবে । কিন্তু সবাই তো নয় __অনেকেই এখনও ছেলেমানুষী নিয়েই বেঁচে থাকতে চেয়েছে – তারা এখনও ‘বাবা’র জন্য , ন’কাকার জন্য নীরবে চোখের জল ফেলে ,অন্তরে কাঁদে !
শেষের দিকে ন’কাকার কাছে সারাদিনে ১০০/১৫০ ফোন-কল আসতো !! যারা ন’কাকার ঐ প্রেমের স্পর্শ্য পেয়েছিল তাদের বেশীরভাগের সারাদিনে একবার ওনাকে ফোন না করলে একটা কেমন যেন অপরাধবোধ জাগতো ৷ আবার কারণে-অকারণে অনেকেই__ এমনি এমনিই ফোন কোরতো। আনন্দের খবর , দুঃখের খবর , ভালোখবর-মন্দখবর ন’কাকার সাথে শেয়ার করা চাই-ই চাই ! খুব বিপদে পড়লে ন’কাকাকে ফোন করে করে উত্যক্ত করার ঘটনাও বহুবার ঘটতে দেখেছি ! আমি নিজেও দু-একজনের হয়ে ন’কাকাকে ঐরকম পীড়াপীড়ি করেছিলাম বা তাদেরকেও ওনাকে বারবার ফোন করে তাদের চরম-সমস্যার কথা জানাতে বলেছিলাম ! এতে তাদের উপকারও হয়েছিল – যা হবার কথা নয় , তাই-ই হয়েছিল ! কিন্তু এতে হোল কি – সেইসব ব্যক্তিদের সাথে এই ঘটনার পরেই আমার সম্পর্ক নষ্ট হয়ে গিয়েছিল !
ঐ ঘটনাগুলি থেকে এটা বুঝতে পেরেছিলাম যে , প্রাকৃতিকভাবে যা হবার – তাই ঘটতে দেওয়াটাই উচিৎ ! তুমি যদি ‘পাকামি’ করে, মহাপুরুষদের ধরে অন্য কিছু ঘটাতে চাও – তাহলে তার জন্য তোমাকে “কিছু না কিছু” ভোগান্তি ভুগতেই হবে !
ন’কাকার স্নেহভাজন হওয়ায় এবং ন’কাকার মহিমা একটু-আধটু বুঝে সেগুলি প্রকাশ করতে থাকায়__ আমরা যারা গুরু মহারাজের সন্তান , তারা তথাকথিত অনেক পরমানন্দ ভক্তদের কাছে ভৎর্সনাও শুনেছি ! সেই সব ভক্তরা আমাদেরকে বলেছে , “গুরু ছেড়ে গোবিন্দ ভজে , সে পাপী নরকে মজে” ! কিন্তু বিশ্বাস করুন – ন’কাকাকে ভালোবেসে আমরা গুরু মহারাজকে আরও বেশি বেশি করে ভালেবাসতে শিখতাম ! ন’কাকা সবসময়েই গুরু মহারাজের মহান দিকগুলির কথা আমাদেরকে প্রতি পদে পদে মনে পাড়িয়ে দিতেন ৷ আমাকে প্রায়ই মনে পাড়াতেন – ” বাবা ! এই যে দেখছো_ মানুষজন আমাদেরকে একটু মান্যিগন্যি করছে , এটা কেন করছে বলো দেখি — গুরু মহারাজের জন্য ! সেই মহান মানুষটি আমাদেরকে একটু কৃপা করেছিল , তাই মানুষজন আমাদেরকে মানে ৷ না হলে আমাদের আর কি আছে বলো” ?
আমি অবাক হয়ে ওনার মুখের দিকে চেয়ে থাকতাম। এই মানুষটা যে অসাধারণ , ইনি যে একজন মহাপুরুষ , ইনি যে একজন মহাসাধক – মহাশক্তিমান – যোগীপুরুষ , এসব সম্বন্ধে আমার কোন সন্দেহ-ই ছিল না ! তাই তাঁর মুখে এই ধরণের কথা শুনে — তাঁর প্রতি আমার শ্রদ্ধা আরও বেড়ে যেতো ! সুতরাং বাইরের কোন বিরূপ মন্তব্য আমাদের মনকে স্পর্শ্য করতে পারতো না । বরং আমরা সবসময়_ আমাদের প্রতি গুরু মহারাজের কৃপার কথা স্মরণ করে তাঁর প্রতি আরো বেশী বেশী কৃতজ্ঞ হোতাম! এই ভেবে কৃতজ্ঞ হোতাম যে, তিনি স্থূলশরীরে না থেকেও ন’কাকার মাধ্যমে আমাদেরকে স্নেহ দিয়ে চলেছেন , ভালোবাসা দিয়ে চলেছেন , হৃদয় তাপিত হলে – তাতে কোমল শান্তির স্পর্শ্য দিয়ে চলেছেন ! … [ক্রমশঃ]