[আদিত্যপুর আশ্রমে ভোরবেলায় চা-চক্রের আসর বসতো। আর সেখানে চলতো নানান প্রসঙ্গ। তবে মজার মজার কথাই বেশি হোত! এইরকম এক একটা কথার শেষে ন’কাকার হাততালি দিয়ে হাসি! সেই সাথে বাকিদের হাস্যরোল __আশ্রমের প্রাতঃকালীন পরিবেশকে মধুর করে তুলতো। এখন সেই সব কথাই হচ্ছে….!]
ন’কাকা ছাড়া সকাল বেলার হাস্যরস পরিবেশনের ব্যাপারে সিদ্ধহস্ত ছিলেন আদিত্যপুর আশ্রমের মহারাজ ভুবনেশ্বরানন্দ বা নন্দ মহারাজ ৷ ওনার পূর্বাশ্রম করিমপুর-এর ছোট বেলার কিছু মজার মজার ঘটনা উনি বেশ রসিয়ে রসিয়ে বলতেন! সেই মজার Character গুলোর মধ্যে জনৈক ‘সাধন`-দার গল্পগুলিই ছিল সবচাইতে interesting ! যে সাধন দা সত্যি সত্যিই ৭/৮ বছর ক্লাস টেন-এ থেকে অবশেষে মাধ্যমিক পাস করেছিল ! সে একবার জমি বেচে জুতোর দোকান দিয়েছিল। তারপর পাশের জুতোর দোকানদারকে টাইট দিতে গিয়ে নিজের দোকানের জুতোগুলিকে লোকসানে বিক্রি করতো এবং এর ফলে দোকান তো উঠে গেলই – ২/৪ বিঘা জমি-সম্পত্তিও বিক্রি করতে হয়েছিল ৷ শুধু এই দুটি একটিই নয় – সেই সাধন চন্দ্রের ভোটে দাঁড়ানো , পার্টি পাল্টানো , জমি-জায়গা – বাঁশবাগান সবকিছু হারানো এবং শেষে পূজারী বামুন হওয়া বা পৌরহিত্য বৃত্তি অবলম্বন – এইসব গল্প মহারাজ এত রস দিয়ে বলতেন যে ন’কাকার প্রাতঃকালীন চায়ের আসরে ন’কাকা সহ বাকি সকলে হো-হো করে হাসতো !
এক ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় ধরে চলা এই চায়ের আসরে ২/৩ রাউন্ড চা এবং প্রতি রাউন্ড-এর সাথে নতুন নতুন ধরনের বিস্কুট থাকতো – এটাও ঐ আসরের একটা বিশেষত্ব ছিল ! আশ্রমের ছেলেরা (বনগ্রাম থেকে টেন ক্লাস পাস করার পর কিছু ছেলে প্রতি বৎসরই আদিত্যপুর আশ্রমে আবাসিক ভাবে থাকতে আসে ৷ ফলে ওই আশ্রমে সবসময়ই ১০/১২ জন ছেলে থেকেই যায় ।)-ও ন’কাকার হাত থেকে বিস্কুট-প্রসাদ পাবার লোভে একে একে হাজির হোত । অর্থাৎ সকালটা আশ্রমিকদের এবং ন’কাকার সাথে থাকা আমাদের মত বহিরাগতদের খুবই ভালো কাটতো –এ কথা বলার কোন অপেক্ষাই রাখে না !
ন’কাকার শরীর ছাড়ার আগে, শেষ দু-তিন বছর ধরে সকালের চা-চক্র ছাড়াও যোগ হয়েছিল আর একটা ব্যাপার! ন’কাকা আদিত্যপুর আশ্রমে যাওয়া মানেই অন্তত একবার কঙ্কালীতলা (বীরভূমের একটি অন্যতম সতীপীঠ) যাওয়া ! বিশেষত যখন থেকে বোলপুরের দেবাশীষ মাস্টার চারচাকা গাড়ি কিনলেন – তারপর থেকে তো এই ব্যাপারটা parmanant হয়ে গিয়েছিল!
ন’কাকা থাকাকালীন সময়ে যেদিন কঙ্কালীতলা যাওয়া নির্দিষ্ট হতো, সেদিন ভোরবেলায় চা চক্রের আসর সেরেই সকলের কাজই ছিল ঝটপট স্নান করে সকাল সকাল বেরিয়ে পড়া!
খুব ভোরে কঙ্কালী মায়ের মন্দির খোলে না – পুরোহিতেরা আসেন একটু বেলায় – এই ধরুন সকাল আটটা বা এর কাছাকাছি কোন সময়ে ! তার আগে থাকতেই অবশ্য পুণ্যার্থীরা চলে আসে এবং পূজা দেবার লাইন পড়ে । কিন্তু ন’কাকা যতবার গেছিলেন – দু-একবার ছাড়া প্রায়শঃই দেখতাম আমরাই ওখানকার প্রথম পূজা প্রদানকারী ! ন’কাকা একেবারে মন্দিরের মধ্যে ঢুকে গিয়ে ঠাকুরের মূর্তি(ওখানে মায়ের ফটো মূর্তি। প্রকৃত মূর্তি পাশের জলাশয়ে ডোবানো থাকে ।)-র বাঁ পাশে (আমাদের ডান পাশে) জোড় হাতে দাঁড়িয়ে থাকতেন , দেবীকে ফুলও দিতেন । পুরোহিতেরা আদিত্যপুর আশ্রমের নন্দ মহারাজ বা শশাঙ্ক মহারাজকে খুবই চিনতেন – তাই ন’কাকা যে, মহারাজদেরও শ্রদ্ধাস্পদ এটা বুঝে গিয়ে ন’কাকার সব কিছুকেই তারা Allow করতেন! আমরা, অর্থাৎ যারা ন’কাকার সাথে যেতাম, সবার হয়ে ন’কাকার নামেই পূজার সংকল্প হোত । পূজা হয়ে গেলে – প্রসাদ এবং স্নানজল খাওয়ার ধুম! তারপর ওখানে ভক্তদের দানে গড়ে ওঠা একটি কেন্দ্রের শীতল জল পান!
এই সব সেরে মন্দির থেকে বের হয়ে একটা দোকানে বসে চপ-মুড়ি সহযোগে চা পান ! সেই সব সুখের দিনগুলোর স্মৃতি একাধারে যেমন আনন্দময় তেমনি অন্যধারে এখন ন’কাকার অবর্তমানে শতগুণে বেদনাদায়ক!
আদিত্যপুরে যখন থেকে ন’কাকা পাকাপাকিভাবে নিয়মিত যাওয়া শুরু করলেন – তার কিছুদিন পরেই তাপস দা ( উনি আসলে মুর্শিদাবাদ জেলার মানুষ , কর্মপোলক্ষে বোলপুরে থাকতেন , পরে অবশ্য আদিত্যপুর আশ্রমেও কিছুদিন ছিলেন !) এই আশ্রমে যাওয়া আসা শুরু করেছিলেন । তাপস দা-ও বহুদর্শী মানুষ , উনি বহু সাধুসন্ত , অনেকের অনেক অলৌকিকত্ব সবকিছুই দেখেছেন খুব কাছ থেকে! একজন খুবই উন্নত গুরুর সাথে ওনার অনেকদিনের যোগাযোগ ছিল । ধর্মগ্রন্থ পড়াশোনাও করেছেন অনেক I প্রথম প্রথম আশ্রমে এসে ওনার এইসব কথা , ওনার অভিজ্ঞতা , ওনার জীবন-সংগ্রাম , সাধন-ভজন ইত্যাদি সম্বন্ধে অনেক কথা বলতেন! একটু আধটু তর্ক বিতর্কও করতেন (প্রথম প্রথম এই ব্যাপারটা অবশ্য সবাই করে থাকে !) ! কিন্তু যত দিন কাটতে লাগলো – ততই তাপস দা Soft থেকে Soft-তর হয়ে গেলেন এবং কখন যে ন’কাকার কাছে মাথা নুইয়ে ফেললেন – আমরা তা বুঝতেও পারলাম না! ধীরে ধীরে তাপস দা আদিত্যপুর আশ্রমের একজন অন্যতম সদস্য হয়ে উঠলেন ! কিছুদিন আগে পর্যন্ত দেখতাম ওই আশ্রমের যেকোনো ভালো-মন্দের সঙ্গে তাপস দা অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে রয়েছেন ।(ক্রমশঃ)
ন’কাকা ছাড়া সকাল বেলার হাস্যরস পরিবেশনের ব্যাপারে সিদ্ধহস্ত ছিলেন আদিত্যপুর আশ্রমের মহারাজ ভুবনেশ্বরানন্দ বা নন্দ মহারাজ ৷ ওনার পূর্বাশ্রম করিমপুর-এর ছোট বেলার কিছু মজার মজার ঘটনা উনি বেশ রসিয়ে রসিয়ে বলতেন! সেই মজার Character গুলোর মধ্যে জনৈক ‘সাধন`-দার গল্পগুলিই ছিল সবচাইতে interesting ! যে সাধন দা সত্যি সত্যিই ৭/৮ বছর ক্লাস টেন-এ থেকে অবশেষে মাধ্যমিক পাস করেছিল ! সে একবার জমি বেচে জুতোর দোকান দিয়েছিল। তারপর পাশের জুতোর দোকানদারকে টাইট দিতে গিয়ে নিজের দোকানের জুতোগুলিকে লোকসানে বিক্রি করতো এবং এর ফলে দোকান তো উঠে গেলই – ২/৪ বিঘা জমি-সম্পত্তিও বিক্রি করতে হয়েছিল ৷ শুধু এই দুটি একটিই নয় – সেই সাধন চন্দ্রের ভোটে দাঁড়ানো , পার্টি পাল্টানো , জমি-জায়গা – বাঁশবাগান সবকিছু হারানো এবং শেষে পূজারী বামুন হওয়া বা পৌরহিত্য বৃত্তি অবলম্বন – এইসব গল্প মহারাজ এত রস দিয়ে বলতেন যে ন’কাকার প্রাতঃকালীন চায়ের আসরে ন’কাকা সহ বাকি সকলে হো-হো করে হাসতো !
এক ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় ধরে চলা এই চায়ের আসরে ২/৩ রাউন্ড চা এবং প্রতি রাউন্ড-এর সাথে নতুন নতুন ধরনের বিস্কুট থাকতো – এটাও ঐ আসরের একটা বিশেষত্ব ছিল ! আশ্রমের ছেলেরা (বনগ্রাম থেকে টেন ক্লাস পাস করার পর কিছু ছেলে প্রতি বৎসরই আদিত্যপুর আশ্রমে আবাসিক ভাবে থাকতে আসে ৷ ফলে ওই আশ্রমে সবসময়ই ১০/১২ জন ছেলে থেকেই যায় ।)-ও ন’কাকার হাত থেকে বিস্কুট-প্রসাদ পাবার লোভে একে একে হাজির হোত । অর্থাৎ সকালটা আশ্রমিকদের এবং ন’কাকার সাথে থাকা আমাদের মত বহিরাগতদের খুবই ভালো কাটতো –এ কথা বলার কোন অপেক্ষাই রাখে না !
ন’কাকার শরীর ছাড়ার আগে, শেষ দু-তিন বছর ধরে সকালের চা-চক্র ছাড়াও যোগ হয়েছিল আর একটা ব্যাপার! ন’কাকা আদিত্যপুর আশ্রমে যাওয়া মানেই অন্তত একবার কঙ্কালীতলা (বীরভূমের একটি অন্যতম সতীপীঠ) যাওয়া ! বিশেষত যখন থেকে বোলপুরের দেবাশীষ মাস্টার চারচাকা গাড়ি কিনলেন – তারপর থেকে তো এই ব্যাপারটা parmanant হয়ে গিয়েছিল!
ন’কাকা থাকাকালীন সময়ে যেদিন কঙ্কালীতলা যাওয়া নির্দিষ্ট হতো, সেদিন ভোরবেলায় চা চক্রের আসর সেরেই সকলের কাজই ছিল ঝটপট স্নান করে সকাল সকাল বেরিয়ে পড়া!
খুব ভোরে কঙ্কালী মায়ের মন্দির খোলে না – পুরোহিতেরা আসেন একটু বেলায় – এই ধরুন সকাল আটটা বা এর কাছাকাছি কোন সময়ে ! তার আগে থাকতেই অবশ্য পুণ্যার্থীরা চলে আসে এবং পূজা দেবার লাইন পড়ে । কিন্তু ন’কাকা যতবার গেছিলেন – দু-একবার ছাড়া প্রায়শঃই দেখতাম আমরাই ওখানকার প্রথম পূজা প্রদানকারী ! ন’কাকা একেবারে মন্দিরের মধ্যে ঢুকে গিয়ে ঠাকুরের মূর্তি(ওখানে মায়ের ফটো মূর্তি। প্রকৃত মূর্তি পাশের জলাশয়ে ডোবানো থাকে ।)-র বাঁ পাশে (আমাদের ডান পাশে) জোড় হাতে দাঁড়িয়ে থাকতেন , দেবীকে ফুলও দিতেন । পুরোহিতেরা আদিত্যপুর আশ্রমের নন্দ মহারাজ বা শশাঙ্ক মহারাজকে খুবই চিনতেন – তাই ন’কাকা যে, মহারাজদেরও শ্রদ্ধাস্পদ এটা বুঝে গিয়ে ন’কাকার সব কিছুকেই তারা Allow করতেন! আমরা, অর্থাৎ যারা ন’কাকার সাথে যেতাম, সবার হয়ে ন’কাকার নামেই পূজার সংকল্প হোত । পূজা হয়ে গেলে – প্রসাদ এবং স্নানজল খাওয়ার ধুম! তারপর ওখানে ভক্তদের দানে গড়ে ওঠা একটি কেন্দ্রের শীতল জল পান!
এই সব সেরে মন্দির থেকে বের হয়ে একটা দোকানে বসে চপ-মুড়ি সহযোগে চা পান ! সেই সব সুখের দিনগুলোর স্মৃতি একাধারে যেমন আনন্দময় তেমনি অন্যধারে এখন ন’কাকার অবর্তমানে শতগুণে বেদনাদায়ক!
আদিত্যপুরে যখন থেকে ন’কাকা পাকাপাকিভাবে নিয়মিত যাওয়া শুরু করলেন – তার কিছুদিন পরেই তাপস দা ( উনি আসলে মুর্শিদাবাদ জেলার মানুষ , কর্মপোলক্ষে বোলপুরে থাকতেন , পরে অবশ্য আদিত্যপুর আশ্রমেও কিছুদিন ছিলেন !) এই আশ্রমে যাওয়া আসা শুরু করেছিলেন । তাপস দা-ও বহুদর্শী মানুষ , উনি বহু সাধুসন্ত , অনেকের অনেক অলৌকিকত্ব সবকিছুই দেখেছেন খুব কাছ থেকে! একজন খুবই উন্নত গুরুর সাথে ওনার অনেকদিনের যোগাযোগ ছিল । ধর্মগ্রন্থ পড়াশোনাও করেছেন অনেক I প্রথম প্রথম আশ্রমে এসে ওনার এইসব কথা , ওনার অভিজ্ঞতা , ওনার জীবন-সংগ্রাম , সাধন-ভজন ইত্যাদি সম্বন্ধে অনেক কথা বলতেন! একটু আধটু তর্ক বিতর্কও করতেন (প্রথম প্রথম এই ব্যাপারটা অবশ্য সবাই করে থাকে !) ! কিন্তু যত দিন কাটতে লাগলো – ততই তাপস দা Soft থেকে Soft-তর হয়ে গেলেন এবং কখন যে ন’কাকার কাছে মাথা নুইয়ে ফেললেন – আমরা তা বুঝতেও পারলাম না! ধীরে ধীরে তাপস দা আদিত্যপুর আশ্রমের একজন অন্যতম সদস্য হয়ে উঠলেন ! কিছুদিন আগে পর্যন্ত দেখতাম ওই আশ্রমের যেকোনো ভালো-মন্দের সঙ্গে তাপস দা অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে রয়েছেন ।(ক্রমশঃ)