[বীরভূমে ন’কাকা প্রসঙ্গে আলোচনা হচ্ছিল। ফলতঃ বীরভূমের বিভিন্ন ভক্তদের কথাও এই আলোচনায় এসে যাচ্ছে..! এই আলোচনায় কারো ব্যাপারে কোন অতিরঞ্জিত কথাবার্তা বলা হয় নি! যা সত্যি _তাই বলা হয়েছে।]
গুরু মহারাজের মতোই ন’কাকার মধ্যে যে গুণটি আমি লক্ষ্য করেছিলাম তা হল , উচ্চ-নীচ, ধনী-নির্ধন, ছোট-বড় যে কোনো ব্যক্তিকে মান্যতা দেওয়া ! বিশেষতঃ , গুণী মানুষদেরকে উনি বিশেষ মর্যাদা দিতেন । ইদানিংকালে দেখতাম আমাদের পরিচিতিদের মধ্যে উনি ডঃ চিন্ময় ব্যানার্জি (দুবরাজপুর , যার কলকাতার বউবাজারে চেম্বার রয়েছে) এবং বোলপুরের শ্রীনিকেতনের প্রফেসর গৌতম ঘোষ-কে খুবই মর্যাদা দিতেন ! কোনো কারনে কথা প্রসঙ্গে যখনই ওই দু’জনের কোনো প্রসঙ্গ আসতো – ন’কাকা হাত দুটো জড়ো করে কপালে ঠেকিয়ে নিতেন , বলতেন – “আজকালকার দিনে এমন মানুষ বিরল !” গৌতমের সম্বন্ধে বলতেন – “ও-তো দেবার জন্যই জন্মেছে ! ওর ডান হাত দিলে বাঁ-হাত জানতে পারে না !”
চিন্ময় ডাক্তার সম্বন্ধে বলতেন – “ডাক্তারের চোখ দুটো দেখেছো ? দেবচক্ষু ! আশ্রমের মুরারীর চোখও দেবচক্ষু ! খুব উন্নত আধার ! আর ডাক্তার হিসাবে তো সাক্ষাৎ ধন্বন্তরি ! আমাকে(ন’কাকা) অনেক ডাক্তার-ই ওষুধ দিয়ে যায় , আমি কিন্তু চিন্ময়ের ওষুধটা-ই খাই !”
ন’কাকার সাথে আমি বেশ কয়েকবার নবদ্বীপ গেছিলাম । সাধারণত প্রলয় মহারাজ (চিন্ময়ানন্দ ব্রহ্মচারী,যেহেতু ওনার নবদ্বীপে বাড়ি)-এর ব্যবস্থাপনাতেই ওনার নবদ্বীপ আসা-যাওয়া হোতো । ওখানে প্রলয় মহারাজদের বাড়ি ছাড়াও উনি আমাদের আশ্রমের পুরোনো ভক্ত যারা রয়েছে অর্থাৎ শিবু , গৌড় প্রমুখদের বাড়িতেও যেতেন ৷ ওখানেও দেখতাম, যেসব বাড়িতে উনি যেতেন – সেই বাড়ির সদস্যরা ওনাকে বিশেষ মর্যাদা দিতেন , গুরুর মতই সম্মান করতেন ! এইকথা এইজন্য বলতে চাইছি যে – গুরুমহারাজ থাকাকালীন সময়েই পরমানন্দ ভক্তদের মধ্যে ন’কাকার যে শ্রদ্ধা বা ভক্তির জায়গাটা তৈরী হয়ে গিয়েছিল , সেটা কিন্তু পরেও বজায় ছিল! আমি আগেও বলেছি এখনও আবার বলছি – গুরু মহারাজ শরীরে থাকাকালীন সময়ে আশ্রমের ব্রহ্মচারী-সন্ন্যাসীদের মধ্যে ন’কাকার প্রতি যে শ্রদ্ধা-ভক্তির ভাব দেখতাম , সেটা কিন্তু গুরুমহারাজ পরবর্তী সময়ে অতোটা দেখতাম না!
আসলে ব্রহ্মচারী-সন্ন্যাসীদের_আলাদা life style! তাই সাধু-সন্ত হওয়া মানেই যেন অনেকটা উঁচুতে ওঠা , যেন ‘কুলীন’ হয়ে যাওয়া __এমন একটা ভাব ভারতবর্ষের সর্বত্রই পরিলক্ষিত হয় – এখানেও তার ব্যতিক্রম নয় !
সেই অর্থে ন’কাকা বিয়ে-থা করা গৃহী মানুষ – সুতরাং সাধু-সন্ত হয়ে একজন গৃহীকে অতটা মর্যাদা দেবার কি প্রয়োজন – এমন একটা ভাব সবার (দু-একজন ছাড়া) থাকাটাই তো স্বাভাবিক ! যদিও গুরু মহারাজ বহুকাল থেকে চলে আসা এই গৃহী-সন্ন্যাসীর দ্বন্দ্ব মেটানোর জন্য নানা কথা বলে গিয়েছিলেন ৷ উনি বলেছিলেন – সন্ন্যাসীরা প্রতিদিন যে মন্ত্রে গুরু পরম্পরাকে প্রণতি জানায় – সেই মন্ত্রে উল্লিখিত গুরুদের মধ্যে অনেক গৃহীও রয়েছেন , অনেক সন্ন্যাসীও রয়েছেন । life style-এর দিক থেকে গৃহী বা সন্ন্যাসী শ্রেষ্ঠ নন , যিনি ঈশ্বর দর্শন করেছেন বা যাঁর ঈশ্বরলাভ হয়েছে – তিনিই শ্রেষ্ঠ । গৃহী হয়েও যদি কারো ঈশ্বরলাভ হয়, তাহলে তিনি শ্রেষ্ঠ বা সবার প্রণম্য , আবার কোনো সন্ন্যাসীর ঈশ্বরদর্শন হলে __তবেই তিনি শ্রেষ্ঠ বা সবার প্রণম্য ।
যাইহোক , কথা হচ্ছিল “নবদ্বীপে ন’কাকা” প্রসঙ্গে।একবারকার ঘটনা এখানে উল্লেখ করছি – ন’কাকা গেছেন নবদ্বীপে গৌড়দের বাড়ি । প্রলয় মহারাজ আর আমিও সঙ্গে রয়েছি! বিকেল হয়ে গেছে – সন্ধ্যা আগতপ্রায় , ওদের বাড়ির বউরা অর্থাৎ গৌড়ের স্ত্রী এবং শিবুর স্ত্রী পরস্পর দুই বোন ! ওরা ন’কাকাকে জোর করে সেই রাত্রিটা ওখানে রাখবেই , আর ন’কাকা আমাকে কথা দিয়েছেন – “দ্যাখো তো_বাবা ! আমরা ঠিকই ফিরে যাবো ৷” আমি ন’কাকাকে বললাম – ” এই মেয়ে দুটোর আপনার প্রতি যে ভক্তি ও ভালোবাসা দেখছি , তাতে আজ আপনি কিছুতেই এদের হাত থেকে রেহাই পাবেন না।” ন’কাকা বললেন – “দ্যাখো না , কি হয় !”
এরপর যা ঘটলো তা আমার নিজের চোখে দেখা – তাই বলছি ! ওই মেয়ে দু’টো (গৌড়ের স্ত্রী এবং শিবুর স্ত্রী) ন’কাকাকে নিজেদের বাবার মতো মনে করে দু দিক থেকে ধরে রেখেছিল – কিছুতেই ছাড়বে না _কিছুতেই আসতে দেবে না ! ন’কাকা ওদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন – ” দ্যাখো ! কাল সংক্রান্তি , বাড়িতে পূজা রয়েছে , তাই আমাকে আজকেই যেতে হবে।”
ন’কাকার কথা শেষ হতে না হতেই ওরা দুজনেই এই কথার উচ্চৈস্বরে প্রতিবাদ করে উঠলো – “ন’কাকা ! কি বললে – সংকরান্তি (সংক্রান্তি, ওদের কথায় পূর্ববঙ্গীয় টান ছিল) ? তোমার আবার সংকরান্তি (সংক্রান্তি) কি ন’কাকা ? তোমার আবার তিথি-নক্ষত্র আলাদা কিছু আছে নাকি ? তোমার কাছে সব দিনই তো সমান ! তাহলে এই দিনটাকে এত গুরুত্ব দিচ্ছো কেন? ওসব কথা বললেও আমরা মানছি না!” এই বলে মেয়ে দুটি ন’কাকাকে আরো জোর করে ধরে থাকলো!
এই মেয়ে দুটি গুরুমহারাজের দীক্ষিত , কিন্তু ন’কাকার প্রতি এই অসাধারণ ভক্তি ও ভালোবাসা দেখে আমি সেদিন সত্যিই অবাক হয়ে গেছিলাম ! এরপর কিন্তু ন’কাকা ঠিকই কায়দা করে ওদেরকে যাহোক করে রাজী করিয়ে বেরিয়ে পড়লেন!
তবে এই ঘটনাটা আমার মনে গভীর রেখাপাত করেছিল , তাই এখানে উল্লেখ করলাম ৷(ক্রমশঃ)
গুরু মহারাজের মতোই ন’কাকার মধ্যে যে গুণটি আমি লক্ষ্য করেছিলাম তা হল , উচ্চ-নীচ, ধনী-নির্ধন, ছোট-বড় যে কোনো ব্যক্তিকে মান্যতা দেওয়া ! বিশেষতঃ , গুণী মানুষদেরকে উনি বিশেষ মর্যাদা দিতেন । ইদানিংকালে দেখতাম আমাদের পরিচিতিদের মধ্যে উনি ডঃ চিন্ময় ব্যানার্জি (দুবরাজপুর , যার কলকাতার বউবাজারে চেম্বার রয়েছে) এবং বোলপুরের শ্রীনিকেতনের প্রফেসর গৌতম ঘোষ-কে খুবই মর্যাদা দিতেন ! কোনো কারনে কথা প্রসঙ্গে যখনই ওই দু’জনের কোনো প্রসঙ্গ আসতো – ন’কাকা হাত দুটো জড়ো করে কপালে ঠেকিয়ে নিতেন , বলতেন – “আজকালকার দিনে এমন মানুষ বিরল !” গৌতমের সম্বন্ধে বলতেন – “ও-তো দেবার জন্যই জন্মেছে ! ওর ডান হাত দিলে বাঁ-হাত জানতে পারে না !”
চিন্ময় ডাক্তার সম্বন্ধে বলতেন – “ডাক্তারের চোখ দুটো দেখেছো ? দেবচক্ষু ! আশ্রমের মুরারীর চোখও দেবচক্ষু ! খুব উন্নত আধার ! আর ডাক্তার হিসাবে তো সাক্ষাৎ ধন্বন্তরি ! আমাকে(ন’কাকা) অনেক ডাক্তার-ই ওষুধ দিয়ে যায় , আমি কিন্তু চিন্ময়ের ওষুধটা-ই খাই !”
ন’কাকার সাথে আমি বেশ কয়েকবার নবদ্বীপ গেছিলাম । সাধারণত প্রলয় মহারাজ (চিন্ময়ানন্দ ব্রহ্মচারী,যেহেতু ওনার নবদ্বীপে বাড়ি)-এর ব্যবস্থাপনাতেই ওনার নবদ্বীপ আসা-যাওয়া হোতো । ওখানে প্রলয় মহারাজদের বাড়ি ছাড়াও উনি আমাদের আশ্রমের পুরোনো ভক্ত যারা রয়েছে অর্থাৎ শিবু , গৌড় প্রমুখদের বাড়িতেও যেতেন ৷ ওখানেও দেখতাম, যেসব বাড়িতে উনি যেতেন – সেই বাড়ির সদস্যরা ওনাকে বিশেষ মর্যাদা দিতেন , গুরুর মতই সম্মান করতেন ! এইকথা এইজন্য বলতে চাইছি যে – গুরুমহারাজ থাকাকালীন সময়েই পরমানন্দ ভক্তদের মধ্যে ন’কাকার যে শ্রদ্ধা বা ভক্তির জায়গাটা তৈরী হয়ে গিয়েছিল , সেটা কিন্তু পরেও বজায় ছিল! আমি আগেও বলেছি এখনও আবার বলছি – গুরু মহারাজ শরীরে থাকাকালীন সময়ে আশ্রমের ব্রহ্মচারী-সন্ন্যাসীদের মধ্যে ন’কাকার প্রতি যে শ্রদ্ধা-ভক্তির ভাব দেখতাম , সেটা কিন্তু গুরুমহারাজ পরবর্তী সময়ে অতোটা দেখতাম না!
আসলে ব্রহ্মচারী-সন্ন্যাসীদের_আলাদা life style! তাই সাধু-সন্ত হওয়া মানেই যেন অনেকটা উঁচুতে ওঠা , যেন ‘কুলীন’ হয়ে যাওয়া __এমন একটা ভাব ভারতবর্ষের সর্বত্রই পরিলক্ষিত হয় – এখানেও তার ব্যতিক্রম নয় !
সেই অর্থে ন’কাকা বিয়ে-থা করা গৃহী মানুষ – সুতরাং সাধু-সন্ত হয়ে একজন গৃহীকে অতটা মর্যাদা দেবার কি প্রয়োজন – এমন একটা ভাব সবার (দু-একজন ছাড়া) থাকাটাই তো স্বাভাবিক ! যদিও গুরু মহারাজ বহুকাল থেকে চলে আসা এই গৃহী-সন্ন্যাসীর দ্বন্দ্ব মেটানোর জন্য নানা কথা বলে গিয়েছিলেন ৷ উনি বলেছিলেন – সন্ন্যাসীরা প্রতিদিন যে মন্ত্রে গুরু পরম্পরাকে প্রণতি জানায় – সেই মন্ত্রে উল্লিখিত গুরুদের মধ্যে অনেক গৃহীও রয়েছেন , অনেক সন্ন্যাসীও রয়েছেন । life style-এর দিক থেকে গৃহী বা সন্ন্যাসী শ্রেষ্ঠ নন , যিনি ঈশ্বর দর্শন করেছেন বা যাঁর ঈশ্বরলাভ হয়েছে – তিনিই শ্রেষ্ঠ । গৃহী হয়েও যদি কারো ঈশ্বরলাভ হয়, তাহলে তিনি শ্রেষ্ঠ বা সবার প্রণম্য , আবার কোনো সন্ন্যাসীর ঈশ্বরদর্শন হলে __তবেই তিনি শ্রেষ্ঠ বা সবার প্রণম্য ।
যাইহোক , কথা হচ্ছিল “নবদ্বীপে ন’কাকা” প্রসঙ্গে।একবারকার ঘটনা এখানে উল্লেখ করছি – ন’কাকা গেছেন নবদ্বীপে গৌড়দের বাড়ি । প্রলয় মহারাজ আর আমিও সঙ্গে রয়েছি! বিকেল হয়ে গেছে – সন্ধ্যা আগতপ্রায় , ওদের বাড়ির বউরা অর্থাৎ গৌড়ের স্ত্রী এবং শিবুর স্ত্রী পরস্পর দুই বোন ! ওরা ন’কাকাকে জোর করে সেই রাত্রিটা ওখানে রাখবেই , আর ন’কাকা আমাকে কথা দিয়েছেন – “দ্যাখো তো_বাবা ! আমরা ঠিকই ফিরে যাবো ৷” আমি ন’কাকাকে বললাম – ” এই মেয়ে দুটোর আপনার প্রতি যে ভক্তি ও ভালোবাসা দেখছি , তাতে আজ আপনি কিছুতেই এদের হাত থেকে রেহাই পাবেন না।” ন’কাকা বললেন – “দ্যাখো না , কি হয় !”
এরপর যা ঘটলো তা আমার নিজের চোখে দেখা – তাই বলছি ! ওই মেয়ে দু’টো (গৌড়ের স্ত্রী এবং শিবুর স্ত্রী) ন’কাকাকে নিজেদের বাবার মতো মনে করে দু দিক থেকে ধরে রেখেছিল – কিছুতেই ছাড়বে না _কিছুতেই আসতে দেবে না ! ন’কাকা ওদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন – ” দ্যাখো ! কাল সংক্রান্তি , বাড়িতে পূজা রয়েছে , তাই আমাকে আজকেই যেতে হবে।”
ন’কাকার কথা শেষ হতে না হতেই ওরা দুজনেই এই কথার উচ্চৈস্বরে প্রতিবাদ করে উঠলো – “ন’কাকা ! কি বললে – সংকরান্তি (সংক্রান্তি, ওদের কথায় পূর্ববঙ্গীয় টান ছিল) ? তোমার আবার সংকরান্তি (সংক্রান্তি) কি ন’কাকা ? তোমার আবার তিথি-নক্ষত্র আলাদা কিছু আছে নাকি ? তোমার কাছে সব দিনই তো সমান ! তাহলে এই দিনটাকে এত গুরুত্ব দিচ্ছো কেন? ওসব কথা বললেও আমরা মানছি না!” এই বলে মেয়ে দুটি ন’কাকাকে আরো জোর করে ধরে থাকলো!
এই মেয়ে দুটি গুরুমহারাজের দীক্ষিত , কিন্তু ন’কাকার প্রতি এই অসাধারণ ভক্তি ও ভালোবাসা দেখে আমি সেদিন সত্যিই অবাক হয়ে গেছিলাম ! এরপর কিন্তু ন’কাকা ঠিকই কায়দা করে ওদেরকে যাহোক করে রাজী করিয়ে বেরিয়ে পড়লেন!
তবে এই ঘটনাটা আমার মনে গভীর রেখাপাত করেছিল , তাই এখানে উল্লেখ করলাম ৷(ক্রমশঃ)