[‘বীরভূমে ন’কাকা প্রসঙ্গে’ _কথা বলতে বলতে আমরা অন্যান্য স্থানে যখন ন’কাকা যেতেন __সেই প্রসঙ্গও আলোচনা হচ্ছে! তাছাড়া একটু গুরুমহারাজের কথাও হয়ে যাক্!]
নবদ্বীপে প্রলয় মহারাজের বাড়ির লোকজনও ন’কাকাকে খুবই ভক্তি-শ্রদ্ধা কোরতো । গুরু মহারাজের অবর্তমানে ওদের বাড়ির লোকজন যেকোনো প্রয়োজনে ন’কাকার কাছেই পরামর্শ গ্রহণ করত এবং আরো বড় প্রয়োজনে ন’কাকাকে ওদের বাড়ি আমন্ত্রণ করে নিয়ে যেতো । অনেক সময় ন’কাকা ভক্তদের বাড়িতে কোনো কোনো সময় পূজাপাঠও করে দিতেন! ন’কাকাদের পরিবারে পৌরহিত্য ব্যাপারটা পুরুষানুক্রমে ছিল! গুরু মহারাজ বলেছিলেন – কোন মানুষ যে পরিবারে জন্মগ্রহণ করে , সেই পরিবারের কিছু ঋণ তাকে গ্রহণ করতে হয় । মহাপুরুষরা এটা যথাযথভাবে পালন করেন ৷ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ স্বয়ং ভগবান হওয়া সত্বেও তাদের পারিবারিক বৃত্তি পৌরহিত্য ত্যাগ করেন নি , কিছুদিন হলেও পালন করেছিলেন । হয়তো এইসব কারণেই ন’কাকাও পৌরহিত্য করতেন ।বনগ্রামে আশ্রম(পরমানন্দ মিশন) প্রতিষ্ঠা হবার পর যখন থেকে বাইরে থেকে দলে দলে ভক্তজনেরা আসতে শুরু করলো এবং তারা ন’কাকা যে একজন মহাপুরুষ – তা জানতে পারলো , তখন থেকেই ভক্তমণ্ডলীর একটা আকাঙ্ক্ষা বা প্রচেষ্টা হলো – যে করেই হোক ন’কাকাকে দিয়ে তাদের বাড়ীর বাস্তুপূজা-গৃহপূজা বা গৃহ দেবতার পূজাটা করাতে পারলে – তার ধর্ম-অর্থ-কাম-মোক্ষ এই চতুর্বর্গ ফললাভ হয়ে যাবে !!!
কিন্তু এই ব্যাপারটা আমার(ব্যক্তিগতভাবে) চূড়ান্ত খারাপ লাগতো__যখন কোনো আশ্রমের ভক্ত তার ছেলে বা মেয়ের বিয়েতে ন’কাকাকে দিয়ে পৌরহিত্য করিয়ে নেবার অনুরোধ জানাতো!
এরকম একটি ভক্ত বাড়িতে আমি, ন’কাকার প্রতি সেই বাড়ির আত্মীয়-স্বজনদের আব্দার অত্যাচার দেখে – ওনাকে অনুরোধ করেছিলাম , ” ন’কাকা ! আপনি আর কখনো কোথাও এই কাজ করবেন না ! আপনি যদি কোন ভক্তের অনুরোধ উপেক্ষা করতে না পারেন – তাহলে আপনি সেখানে উপস্থিত থাকবেন , কিন্তু কোন পুরোহিত দিয়ে কাজটা চালিয়ে নেবেন !”
আমার অনুরোধের জন্যই হোক অথবা ঈশ্বরের ইচ্ছাতে – এরপর থেকে ন’কাকা অন্ততঃ কোথাও বিয়ে-থা দেননি ! তবে অনেক ভক্তদের বাড়িতেই পূজা করে দিতেন – শেষের ২/৩ বছর দেখলাম উনি ওনার পাশের বাড়ির ছেলে রাজু (গাঙ্গুলীদের ভাগ্নে)-কে সঙ্গে করে সব জায়গায় নিয়ে যেতেন এবং ওকে দিয়েই পূজার কাজগুলো করিয়ে নিতেন ।
ন’কাকা যে divine plan অনুযায়ী আধ্যাত্মিকভাবে দীক্ষাদানের অধিকারী ছিলেন, সেটা আমি অনেক আগে থাকতেই জানতাম ! কারণ গুরু মহারাজ একাধিকবার মুখার্জি বাড়িতে সন্ধ্যার আসরে (সিটিং) ন’কাকাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন – ” ন’কাকা দীক্ষা দাও ! তুমি আশ্রমের কিছু কিছু ভার নাও – তাহলে তো আমার ভারটা অনেক লাঘব হয়! ছদ্মবেশে আর কতকাল থাকবে ন’কাকা !” এর উত্তরে ন’কাকা দুটো হাত কপালে ঠেকিয়ে বলতেন – ” কি যে বলো , তার ঠিক নাই ঠাকুর ! তুমি স্বয়ং যজ্ঞেশ্বর নারায়ণ ! তুমি থাকতে কখনও অন্য কেউ গুরুয হোতে পারে !” তখন গুরু মহারাজ একটু হতাশার সুরে বলতেন – ” আমার কথা শুনছো না তো ন’কাকা ? দেখবে এর জন্য পস্তাতে হবে ! একটা ঢাক বাজাতে বাজাতে দেখবে কোন্ দিন সেটা ফেটে যাবে – তখন কি করবে ?”
আবার অন্য একদিন ওই একই আলোচনার প্রসঙ্গ তুলে গুরুমহারাজ ন’কাকাকে একই অনুরোধ জানালে – ন’কাকা সেই একই রকম কায়দায় যখন এড়িয়ে গেলেন , সেদিন গুরু মহারাজ বলেছিলেন – ” ন’কাকা ! এই শরীরটায় বেশ আরামে কাটিয়ে দিলে বলো ! তোমার কাজগুলো আমাকে দিয়ে করিয়ে নিচ্ছো – আর নিজে সবার চোখের আড়ালে থেকে যাচ্ছো ! তুমি , পূর্ণানন্দ (রায়না আশ্রমের মহারাজ) , মুরারী – সবাই মিলে যদি অন্ততঃ দীক্ষার দায়িত্বটা নিয়ে নিতে – তাহলে আমি নিশ্চিন্ত হয়ে অন্যান্য দিকগুলো দেখতে পারতাম !” এর উত্তরেও ন’কাকার সেই দেবদুর্লভ মৃদু হাসি , আর জোড়হাত কপালে ঠেকিয়ে উত্তর – ” তাই কখনও হয় ! তুমি স্বয়ং যেখানে বর্তমান , সেখানে লোকজন কি কাঞ্চন ফেলে কাঁচকে গ্রহণ করবে ! তুমি – এই যে বলছো , এটাই আমার চরম সৌভাগ্য !”(ক্রমশঃ)
নবদ্বীপে প্রলয় মহারাজের বাড়ির লোকজনও ন’কাকাকে খুবই ভক্তি-শ্রদ্ধা কোরতো । গুরু মহারাজের অবর্তমানে ওদের বাড়ির লোকজন যেকোনো প্রয়োজনে ন’কাকার কাছেই পরামর্শ গ্রহণ করত এবং আরো বড় প্রয়োজনে ন’কাকাকে ওদের বাড়ি আমন্ত্রণ করে নিয়ে যেতো । অনেক সময় ন’কাকা ভক্তদের বাড়িতে কোনো কোনো সময় পূজাপাঠও করে দিতেন! ন’কাকাদের পরিবারে পৌরহিত্য ব্যাপারটা পুরুষানুক্রমে ছিল! গুরু মহারাজ বলেছিলেন – কোন মানুষ যে পরিবারে জন্মগ্রহণ করে , সেই পরিবারের কিছু ঋণ তাকে গ্রহণ করতে হয় । মহাপুরুষরা এটা যথাযথভাবে পালন করেন ৷ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ স্বয়ং ভগবান হওয়া সত্বেও তাদের পারিবারিক বৃত্তি পৌরহিত্য ত্যাগ করেন নি , কিছুদিন হলেও পালন করেছিলেন । হয়তো এইসব কারণেই ন’কাকাও পৌরহিত্য করতেন ।বনগ্রামে আশ্রম(পরমানন্দ মিশন) প্রতিষ্ঠা হবার পর যখন থেকে বাইরে থেকে দলে দলে ভক্তজনেরা আসতে শুরু করলো এবং তারা ন’কাকা যে একজন মহাপুরুষ – তা জানতে পারলো , তখন থেকেই ভক্তমণ্ডলীর একটা আকাঙ্ক্ষা বা প্রচেষ্টা হলো – যে করেই হোক ন’কাকাকে দিয়ে তাদের বাড়ীর বাস্তুপূজা-গৃহপূজা বা গৃহ দেবতার পূজাটা করাতে পারলে – তার ধর্ম-অর্থ-কাম-মোক্ষ এই চতুর্বর্গ ফললাভ হয়ে যাবে !!!
কিন্তু এই ব্যাপারটা আমার(ব্যক্তিগতভাবে) চূড়ান্ত খারাপ লাগতো__যখন কোনো আশ্রমের ভক্ত তার ছেলে বা মেয়ের বিয়েতে ন’কাকাকে দিয়ে পৌরহিত্য করিয়ে নেবার অনুরোধ জানাতো!
এরকম একটি ভক্ত বাড়িতে আমি, ন’কাকার প্রতি সেই বাড়ির আত্মীয়-স্বজনদের আব্দার অত্যাচার দেখে – ওনাকে অনুরোধ করেছিলাম , ” ন’কাকা ! আপনি আর কখনো কোথাও এই কাজ করবেন না ! আপনি যদি কোন ভক্তের অনুরোধ উপেক্ষা করতে না পারেন – তাহলে আপনি সেখানে উপস্থিত থাকবেন , কিন্তু কোন পুরোহিত দিয়ে কাজটা চালিয়ে নেবেন !”
আমার অনুরোধের জন্যই হোক অথবা ঈশ্বরের ইচ্ছাতে – এরপর থেকে ন’কাকা অন্ততঃ কোথাও বিয়ে-থা দেননি ! তবে অনেক ভক্তদের বাড়িতেই পূজা করে দিতেন – শেষের ২/৩ বছর দেখলাম উনি ওনার পাশের বাড়ির ছেলে রাজু (গাঙ্গুলীদের ভাগ্নে)-কে সঙ্গে করে সব জায়গায় নিয়ে যেতেন এবং ওকে দিয়েই পূজার কাজগুলো করিয়ে নিতেন ।
ন’কাকা যে divine plan অনুযায়ী আধ্যাত্মিকভাবে দীক্ষাদানের অধিকারী ছিলেন, সেটা আমি অনেক আগে থাকতেই জানতাম ! কারণ গুরু মহারাজ একাধিকবার মুখার্জি বাড়িতে সন্ধ্যার আসরে (সিটিং) ন’কাকাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন – ” ন’কাকা দীক্ষা দাও ! তুমি আশ্রমের কিছু কিছু ভার নাও – তাহলে তো আমার ভারটা অনেক লাঘব হয়! ছদ্মবেশে আর কতকাল থাকবে ন’কাকা !” এর উত্তরে ন’কাকা দুটো হাত কপালে ঠেকিয়ে বলতেন – ” কি যে বলো , তার ঠিক নাই ঠাকুর ! তুমি স্বয়ং যজ্ঞেশ্বর নারায়ণ ! তুমি থাকতে কখনও অন্য কেউ গুরুয হোতে পারে !” তখন গুরু মহারাজ একটু হতাশার সুরে বলতেন – ” আমার কথা শুনছো না তো ন’কাকা ? দেখবে এর জন্য পস্তাতে হবে ! একটা ঢাক বাজাতে বাজাতে দেখবে কোন্ দিন সেটা ফেটে যাবে – তখন কি করবে ?”
আবার অন্য একদিন ওই একই আলোচনার প্রসঙ্গ তুলে গুরুমহারাজ ন’কাকাকে একই অনুরোধ জানালে – ন’কাকা সেই একই রকম কায়দায় যখন এড়িয়ে গেলেন , সেদিন গুরু মহারাজ বলেছিলেন – ” ন’কাকা ! এই শরীরটায় বেশ আরামে কাটিয়ে দিলে বলো ! তোমার কাজগুলো আমাকে দিয়ে করিয়ে নিচ্ছো – আর নিজে সবার চোখের আড়ালে থেকে যাচ্ছো ! তুমি , পূর্ণানন্দ (রায়না আশ্রমের মহারাজ) , মুরারী – সবাই মিলে যদি অন্ততঃ দীক্ষার দায়িত্বটা নিয়ে নিতে – তাহলে আমি নিশ্চিন্ত হয়ে অন্যান্য দিকগুলো দেখতে পারতাম !” এর উত্তরেও ন’কাকার সেই দেবদুর্লভ মৃদু হাসি , আর জোড়হাত কপালে ঠেকিয়ে উত্তর – ” তাই কখনও হয় ! তুমি স্বয়ং যেখানে বর্তমান , সেখানে লোকজন কি কাঞ্চন ফেলে কাঁচকে গ্রহণ করবে ! তুমি – এই যে বলছো , এটাই আমার চরম সৌভাগ্য !”(ক্রমশঃ)