[ন’কাকাদের পারিবারিকভাবে দীক্ষাদান ও যজমানবৃত্তি এই ব্যাপারগুলি অনেক আগে থেকে ছিল_ তবে ন’কাকাদের generation থেকে এই সব বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু গুরুমহারাজ শেষের দিকে (1997/98)ন’কাকাকে প্রায়ই দীক্ষা দানের ব্যাপারে পীড়াপীড়ি করতেন। আর ন’কাকা অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে এড়িয়ে যেতেন। সেখান থেকেই আজকের আলোচনা শুরু!]
এইসব কথোপকথন শোনার পর থেকেই আমি জানতাম যে ন’কাকা আজ নয় কাল দীক্ষা ঠিকই দেবেন ! এছাড়াও অন্য আর একটা কারণের কথাও বলা যায়,যেটা আগে একটু উল্লেখ করা হয়েছে – ন’কাকাদের বাড়ির পূর্বপুরুষরাও দীক্ষাদান করতেন । ন’কাকার বাবার কিছু যজমানও ছিল ৷ কিন্তু ন’কাকাদের generation-এর লোকেরা ওই পরম্পরা আর বজায় রাখেন নি । ন’কাকাকে জিজ্ঞাসা করলে , উনি বলতেন – “বাবা ! ‘যজমানী বামুন’ (যারা গৃহী মানুষদের দীক্ষা দিয়ে যজমান করে) হওয়া ভালো নয় । এরা খুবই দৃষ্টিকৃপণ হয় , বড্ড উঞ্ছবৃত্তি করতে হয় ! এসব ভালো লাগে না ! তাই আমাদের পারিবারিক যজমানদের সব ছেড়ে দিয়েছি ৷ ওইসব পরিবারের লোকেরা এসেছিল আমাদের কাছে – আমার বড় দাদা (দেবীপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়) হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন – ওনার তো এসব কাজ করার সময়ই ছিল না ৷ মেজদা (রমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়)-র এইসব ব্যাপারে একেবারেই অনীহা ! আমার সেজদা (উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়) এবং ছোটো ভাই (গোলক প্রসাদ মুখোপাধ্যায়) তো বাইরে চাকরি করে, ফলে তাদের পক্ষে যজমান বৃত্তি চালানো অসম্ভব ! এবার বাকি থাকলাম আমি – তাই বাবাদের যজমানরা আমার কাছেই অনেকে আসতো – আমি তাদের সবাইকে জবাব দিয়ে দিয়েছিলাম I অনেককে ঠাকুরের (স্বামী পরমানন্দ) কাছে দীক্ষার ব্যবস্থা করে দিয়েছি , বাকিদের বলেছি – তোমরা তোমাদের মনোমতো গুরু খুঁজে, তার কাছে দীক্ষা নিয়ে নাও । আমাদের পরিবার থেকে আর কেউ তোমাদেরকে দীক্ষা দেবে না !”
এইভাবে ন’কাকা এবং ওনার দাদারা পারিবারিক বংশপরম্পরার গুরুগিরি করা থেকে সরে এসেছিলেন ৷
কিন্তু ন’কাকা যেহেতু একজন আধ্যাত্মিক ব্যক্তি , তার উপর গুরু মহারাজের কাছে ওনার দীক্ষাদানের ব্যাপারে আমার শোনা ছিল – তাই আমি মনেপ্রাণে জানতাম যে উনি নিশ্চয়ই দীক্ষা দেবেন ! গুরু মহারাজ (স্বামী পরমানন্দ)-এর অন্তর্ধানের পরে আমার দু চারজন আত্মীয় (ভাগ্নিরা) ন’কাকার কাছেই দীক্ষা নিতে চাইলো। আমার এক ভাগ্নি(রমারানী) আমাকে বলেছিল যে ওর নাকি দর্শন হয়েছে __ধুতি-পাঞ্জাবি পরা একজন ব্যক্তি ওকে দীক্ষা দিচ্ছে ! তাই আমি ন’কাকাকে ধরলাম ওকে দীক্ষা দেবার জন্য – কিন্তু ন’কাকা এক কথায় উড়িয়ে দিলেন ! বললেন – ” বাবা ! আমরা সংসারী মানুষ । ওসব দীক্ষা-টীক্ষা এগুলো সন্ন্যাসীদেরই দেওয়া ভালো । তুমি ভাগ্নিকে বলো – মুরারীর কাছে দীক্ষা নিয়ে নিতে (তখনও তৃষাণ মহারাজ গেরুয়া নেননি । গুরু মহারাজের মহাপ্রয়ানের পর বনগ্রাম আশ্রমে তখন মুরারী মহারাজই দীক্ষা দিতেন) ৷”
ন’কাকার কথামতো সেইরকমই ব্যবস্থা হল – তবু দেখতাম ওই ভাগ্নির (রমা ভট্টাচার্য) ন’কাকার প্রতি বাবার মতো ভক্তি ও ভালবাসা ছিল , ন’কাকাও ‘রমা’-কে কন্যার মতো স্নেহ করতেন । আমাকে প্রায়ই বলতেন – “তোমার ওই ভাগ্নি রমারানীর মধ্যে মাতৃত্ব ঝরে পড়ছে ! খুব ভালো মেয়েটি।” বনগ্রামের দু-একজনের কাছেও শুনেছিলাম যে ন’কাকা তাদেরকেও দীক্ষা দিতে রাজি হন নি।
কিন্তু সেই হেন ন’কাকা যেই বীরভূমে গেলেন – অমনি উনি দীক্ষার ব্যাপারে উদার হয়ে গেলেন ! পরপর যারাই সেইসময় ওনার কাছে দীক্ষার জন্য প্রার্থনা করছিল – তাদেরটাই Grant হয়ে যাচ্ছিল ! ওখানে ন’কাকা অন্য গুরুর শিষ্যদেরকে(অর্থাৎ যারা অন্য জায়গায় দীক্ষিত)-ও মন্ত্র পুরশ্চারণ করে দিয়েছেন বা নতুন করে দীক্ষাও দিয়েছেন ! সেই সময় অনেক ভক্তরাই আমার মাধ্যমে ন’কাকাকে দীক্ষার জন্য অনুরোধ জানাতো – দেখতাম তাদের প্রায় সবারই দীক্ষা হয়ে যেতো। ন’কাকা বীরভূমের লোকেদের কখনও প্রত্যাখ্যান করেছেন বলে আমার মনে নাই !
অথচ বর্ধমানের লোক বা অন্য কোনো স্থানের লোকেদেরকে উনি বারবার ফিরিয়ে দিয়েছেন – নানারকম কথার ছল-চাতুরী করে ব্যাপারটিকে এড়িয়ে গেছেন ।
চন্দ্রহাটি-র (বর্ধমানের সন্নিকটস্থ একটি গ্রাম) করুণাকেতন -কে উনি,ওর যাওয়া-আসা শুরু করার অন্ততঃ ১০/১২ বছর পরে দীক্ষা দিয়েছেন ! আরো এইরকমই একজন হোল_ ধাত্রীগ্রামের আনন্দ ! ও অন্ততঃ ৫/৭ বছর ঘোরাঘুরি , জোরাজুরি , অনুনয়-বিনয় ইত্যাদি নানারকম ভাবে চেষ্টা করেছিল ! ওর বাড়িতেও ন’কাকাকে নিয়ে গিয়েছিল – কিন্তু ন’কাকা ওর দীক্ষার ব্যাপারটা কেমন যেন কৌশল করে এড়িয়ে এড়িয়ে যাচ্ছিলেন ! আমিও আনন্দ-র দীক্ষার জন্য বহুবার বহুরকমভাবে ন’কাকাকে অনুরোধ জানিয়েছিলাম , কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে, ন’কাকার কাছে ওর সরাসরি দীক্ষা হয় নি! হয়তো ওর স্বপ্নদীক্ষা বা অন্যভাবে দীক্ষা হবে কিনা তা জানি না !
তবে ন’কাকা আমাকে বলতেন (যখনই আমি আনন্দের জন্য সুপারিশ করতাম) – “বাবা ! আনন্দ-র দীক্ষা তো হয়েই আছে ! ওর আবার কি চিন্তা ! সে একদিন দিয়ে দিলেই হবে !”
কিন্তু হলো না __! ন’কাকা পার্থিব শরীর ছেড়ে অমৃতময় লোকে চলে গেলেন! ওনার অকস্মাৎ চলে যাওয়ায় হাজার হাজার ন’কাকার ভক্ত__ বুকফাটা কষ্ট বুকে নিয়ে জীবন কাটাচ্ছে! তাদের মধ্যে আনন্দও একজন! কিন্তু দীক্ষা না হওয়ার ব্যাপারটা আনন্দ-র জীবনে একটা বিরাট আফসোস এবং ন’কাকার মতো একজন মাতৃসম,করুনাময় মহাপুরুষের এই ব্যাপারটা আমার কাছেও কম বিস্ময়ের ছিল না !(ক্রমশঃ)
এইসব কথোপকথন শোনার পর থেকেই আমি জানতাম যে ন’কাকা আজ নয় কাল দীক্ষা ঠিকই দেবেন ! এছাড়াও অন্য আর একটা কারণের কথাও বলা যায়,যেটা আগে একটু উল্লেখ করা হয়েছে – ন’কাকাদের বাড়ির পূর্বপুরুষরাও দীক্ষাদান করতেন । ন’কাকার বাবার কিছু যজমানও ছিল ৷ কিন্তু ন’কাকাদের generation-এর লোকেরা ওই পরম্পরা আর বজায় রাখেন নি । ন’কাকাকে জিজ্ঞাসা করলে , উনি বলতেন – “বাবা ! ‘যজমানী বামুন’ (যারা গৃহী মানুষদের দীক্ষা দিয়ে যজমান করে) হওয়া ভালো নয় । এরা খুবই দৃষ্টিকৃপণ হয় , বড্ড উঞ্ছবৃত্তি করতে হয় ! এসব ভালো লাগে না ! তাই আমাদের পারিবারিক যজমানদের সব ছেড়ে দিয়েছি ৷ ওইসব পরিবারের লোকেরা এসেছিল আমাদের কাছে – আমার বড় দাদা (দেবীপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়) হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন – ওনার তো এসব কাজ করার সময়ই ছিল না ৷ মেজদা (রমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়)-র এইসব ব্যাপারে একেবারেই অনীহা ! আমার সেজদা (উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়) এবং ছোটো ভাই (গোলক প্রসাদ মুখোপাধ্যায়) তো বাইরে চাকরি করে, ফলে তাদের পক্ষে যজমান বৃত্তি চালানো অসম্ভব ! এবার বাকি থাকলাম আমি – তাই বাবাদের যজমানরা আমার কাছেই অনেকে আসতো – আমি তাদের সবাইকে জবাব দিয়ে দিয়েছিলাম I অনেককে ঠাকুরের (স্বামী পরমানন্দ) কাছে দীক্ষার ব্যবস্থা করে দিয়েছি , বাকিদের বলেছি – তোমরা তোমাদের মনোমতো গুরু খুঁজে, তার কাছে দীক্ষা নিয়ে নাও । আমাদের পরিবার থেকে আর কেউ তোমাদেরকে দীক্ষা দেবে না !”
এইভাবে ন’কাকা এবং ওনার দাদারা পারিবারিক বংশপরম্পরার গুরুগিরি করা থেকে সরে এসেছিলেন ৷
কিন্তু ন’কাকা যেহেতু একজন আধ্যাত্মিক ব্যক্তি , তার উপর গুরু মহারাজের কাছে ওনার দীক্ষাদানের ব্যাপারে আমার শোনা ছিল – তাই আমি মনেপ্রাণে জানতাম যে উনি নিশ্চয়ই দীক্ষা দেবেন ! গুরু মহারাজ (স্বামী পরমানন্দ)-এর অন্তর্ধানের পরে আমার দু চারজন আত্মীয় (ভাগ্নিরা) ন’কাকার কাছেই দীক্ষা নিতে চাইলো। আমার এক ভাগ্নি(রমারানী) আমাকে বলেছিল যে ওর নাকি দর্শন হয়েছে __ধুতি-পাঞ্জাবি পরা একজন ব্যক্তি ওকে দীক্ষা দিচ্ছে ! তাই আমি ন’কাকাকে ধরলাম ওকে দীক্ষা দেবার জন্য – কিন্তু ন’কাকা এক কথায় উড়িয়ে দিলেন ! বললেন – ” বাবা ! আমরা সংসারী মানুষ । ওসব দীক্ষা-টীক্ষা এগুলো সন্ন্যাসীদেরই দেওয়া ভালো । তুমি ভাগ্নিকে বলো – মুরারীর কাছে দীক্ষা নিয়ে নিতে (তখনও তৃষাণ মহারাজ গেরুয়া নেননি । গুরু মহারাজের মহাপ্রয়ানের পর বনগ্রাম আশ্রমে তখন মুরারী মহারাজই দীক্ষা দিতেন) ৷”
ন’কাকার কথামতো সেইরকমই ব্যবস্থা হল – তবু দেখতাম ওই ভাগ্নির (রমা ভট্টাচার্য) ন’কাকার প্রতি বাবার মতো ভক্তি ও ভালবাসা ছিল , ন’কাকাও ‘রমা’-কে কন্যার মতো স্নেহ করতেন । আমাকে প্রায়ই বলতেন – “তোমার ওই ভাগ্নি রমারানীর মধ্যে মাতৃত্ব ঝরে পড়ছে ! খুব ভালো মেয়েটি।” বনগ্রামের দু-একজনের কাছেও শুনেছিলাম যে ন’কাকা তাদেরকেও দীক্ষা দিতে রাজি হন নি।
কিন্তু সেই হেন ন’কাকা যেই বীরভূমে গেলেন – অমনি উনি দীক্ষার ব্যাপারে উদার হয়ে গেলেন ! পরপর যারাই সেইসময় ওনার কাছে দীক্ষার জন্য প্রার্থনা করছিল – তাদেরটাই Grant হয়ে যাচ্ছিল ! ওখানে ন’কাকা অন্য গুরুর শিষ্যদেরকে(অর্থাৎ যারা অন্য জায়গায় দীক্ষিত)-ও মন্ত্র পুরশ্চারণ করে দিয়েছেন বা নতুন করে দীক্ষাও দিয়েছেন ! সেই সময় অনেক ভক্তরাই আমার মাধ্যমে ন’কাকাকে দীক্ষার জন্য অনুরোধ জানাতো – দেখতাম তাদের প্রায় সবারই দীক্ষা হয়ে যেতো। ন’কাকা বীরভূমের লোকেদের কখনও প্রত্যাখ্যান করেছেন বলে আমার মনে নাই !
অথচ বর্ধমানের লোক বা অন্য কোনো স্থানের লোকেদেরকে উনি বারবার ফিরিয়ে দিয়েছেন – নানারকম কথার ছল-চাতুরী করে ব্যাপারটিকে এড়িয়ে গেছেন ।
চন্দ্রহাটি-র (বর্ধমানের সন্নিকটস্থ একটি গ্রাম) করুণাকেতন -কে উনি,ওর যাওয়া-আসা শুরু করার অন্ততঃ ১০/১২ বছর পরে দীক্ষা দিয়েছেন ! আরো এইরকমই একজন হোল_ ধাত্রীগ্রামের আনন্দ ! ও অন্ততঃ ৫/৭ বছর ঘোরাঘুরি , জোরাজুরি , অনুনয়-বিনয় ইত্যাদি নানারকম ভাবে চেষ্টা করেছিল ! ওর বাড়িতেও ন’কাকাকে নিয়ে গিয়েছিল – কিন্তু ন’কাকা ওর দীক্ষার ব্যাপারটা কেমন যেন কৌশল করে এড়িয়ে এড়িয়ে যাচ্ছিলেন ! আমিও আনন্দ-র দীক্ষার জন্য বহুবার বহুরকমভাবে ন’কাকাকে অনুরোধ জানিয়েছিলাম , কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে, ন’কাকার কাছে ওর সরাসরি দীক্ষা হয় নি! হয়তো ওর স্বপ্নদীক্ষা বা অন্যভাবে দীক্ষা হবে কিনা তা জানি না !
তবে ন’কাকা আমাকে বলতেন (যখনই আমি আনন্দের জন্য সুপারিশ করতাম) – “বাবা ! আনন্দ-র দীক্ষা তো হয়েই আছে ! ওর আবার কি চিন্তা ! সে একদিন দিয়ে দিলেই হবে !”
কিন্তু হলো না __! ন’কাকা পার্থিব শরীর ছেড়ে অমৃতময় লোকে চলে গেলেন! ওনার অকস্মাৎ চলে যাওয়ায় হাজার হাজার ন’কাকার ভক্ত__ বুকফাটা কষ্ট বুকে নিয়ে জীবন কাটাচ্ছে! তাদের মধ্যে আনন্দও একজন! কিন্তু দীক্ষা না হওয়ার ব্যাপারটা আনন্দ-র জীবনে একটা বিরাট আফসোস এবং ন’কাকার মতো একজন মাতৃসম,করুনাময় মহাপুরুষের এই ব্যাপারটা আমার কাছেও কম বিস্ময়ের ছিল না !(ক্রমশঃ)