[আজকে আমরা ন’কাকার কিছু কিছু বিশেষ বিশেষত্ব নিয়ে আলোচনা করব। গুরুমহারাজ বলেছিলেন _”ন’কাকা মহাভৈরব”! আজকে সেই মহাভৈরবকে গুরুমহারাজ কিভাবে কঠিন একটা দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন _সেই কথা !]
‘ন’কাকা প্রসঙ্গে’ – বলতে গেলে যে কথাটা খুব বেশি বেশি করে বলা উচিত , সেটা হলো – ন’কাকার সাথে প্রেতযোনীদের মুক্তি পাবার একটি নিবিড় সংযোগ ছিল ! সেকথায় পড়ে আসবো, আগে আমরা আগের কথা কিছুটা আলোচনা করে নিই!!
গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দ যখন বনগ্রামে রোঙা পুকুরের(আশ্রমের বড় পুকুরটি) পাড়ে , ভাগাড়ের উপরে প্রথম ওনার কুঠিয়া বানিয়ে “পরমানন্দ মিশন”-এর শুভ সূচনা করেন , তখন ওখানে আজকের বটগাছটিই ছিল, কিন্তু সেটি তখন ন্যাড়ামতো – মৃতপ্রায় অবস্থায় ছিল ! এখন অবশ্য গাছটি অনেক সতেজ , জীবনীশক্তিতে ভরপুর! যাইহোক, তখন ঐটিকে কেন্দ্র করে অনেকগুলি প্রেতযোনী বাস কোরতো ! বনগ্রামের অধিবাসীরাও ব্যাপারটা আঁচ কোরতো – ফলে সন্ধ্যার পর গ্রামবাসীরা খুব প্রয়োজন না পড়লে রোঙার পারে যেতো না ! এক্ষেত্রে অবশ্য গুরু মহারাজের বলা একটা কথা এখানে উল্লেখ করা যায় , সেটি হল – “কোন দেবস্থান বা পূণ্যভূমিকে রক্ষা করার জন্য প্রাকৃতিকভাবেই ওই রকম ব্যাপার-স্যাপার হয়ে থাকে! অর্থাৎ স্থানটি শ্মশান , ভাগাড় রূপে দীর্ঘদিন ধরে মানুষের অব্যবহারযোগ্য হয়ে পড়ে থাকে , অথবা স্থানটিতে কিছু ভয়ানক ভৌতিক ক্রিয়াকর্ম এমন হয় যে , জনগণ কোন কারনেই সেইসব স্থানে বসবাসের জন্য ঘর বাড়ি তৈরি করে না।
আর এসব হয়__ যাতে উপযুক্ত সময়ে , উপযুক্ত ব্যক্তি এসে ওই স্থানে নির্দিষ্ট দেবস্থান বা জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য ঘরবাড়ি বানাতে পারেন ! বিভিন্ন পূণ্যক্ষেত্রের ইতিহাস খুঁজলে জনশ্রুতিতে এই একই কাহিনীর পুনরাবৃত্তি শুনতে পাওয়া যায়।”
এসব কথা থাক্, আমাদের আলোচনায় ফিরে আসি – বনগ্রাম পরমানন্দ মিশনের জন্য নির্দিষ্ট স্থানটিও এই একই রকমভাবে বহুকাল থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছিল ৷ ন’কাকার মুখে শুনেছিলাম ওই স্থানটি ‘হাটতলা’ নামে পরিচিত ছিল অর্থাৎ বহু পূর্বে আশ্রমের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া শুরু ক্ষীণকায় কাঁদরের (ক্যানেল বা অতি ক্ষুদ্র নদীর বিশেষ) মতো – ‘মায়ানদী’, কোন সময় প্রকৃতই তীব্র স্রোতস্বিনী নদী ছিল এবং তখন হয়তো স্থানীয় ব্যবসায়ীরা নৌকা বেয়ে এসে ওখানে বিভিন্ন সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসতো। নিকটবর্তী গ্রামগুলি থেকে দলে দলে নর-নারীরা এসে সেখানে জড়ো হতো , চলত বিকিকিনি ! তারপর কালের গর্ভে নদীটি তার স্রোত হারিয়েছে ! পণ্য পরিবহনের অসুবিধার জন্য ব্যবসায়ীরা আর আসে না , তাই হাট-ও বসে না ! কিন্তু লোকমুখে ‘হাটতলা’ কথাটি রয়ে গিয়েছিল !
১৯৭৮-সাল থেকে বনগ্রামে শুরু হোল নতুন ‘কাল’ বা নতুন যূগের সূচনা! সেখানে নতুন মানুষ এসে গেলো , যে মানুষ – পূর্ণ মানুষ, যে মানুষ সোনার মানুষ , মে মানুষ সহজ মানুষ ! আর তাঁর নাম স্বামী পরমানন্দ!!
ওই স্থানের এখন নতুন নাম “পরমানন্দ মিশন” ! এখন স্থানটিকে আর কেউ ভুলেও ‘হাটতলা’ – বলে না! এখন থেকে হয়তো কয়েক হাজার বছর ধরে স্থানীয় মানুষের মুখে মুখে ‘পরমানন্দ মিশন’ – এই নামটিই প্রচারিত হবে !
এবার আবার আমরা ফিরে আসি পরমানন্দ মিশনের একেবারে সূচনার দিনগুলোর কথায় – যখন আশ্রমের বটগাছটিতে বাস কোরতো অনেকগুলি প্রেতযোনী ! ওরা সবাই তাদের জীবিত অবস্থায় উন্নত চেতনার মানুষ ছিল । কিন্তু সেই সময় কিছু মারাত্মক অন্যায় কর্ম করার জন্য_ওরা ঐ অবস্থায় থেকে Punishment ভোগ করছিল ! ওরা যেকোনো প্রকারে জানতে পেরেছিল যে , তারা যদি ওখানে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে পারে – তাহলে ওই স্থানে শীঘ্রই একজন মহাপুরুষ আসবেন , যিনি ওদের মুক্তির পথ বাৎলে দেবেন !
ব্যাপারটা কিন্তু সেই রকমই হয়েছিল – স্বামী পরমানন্দ যখন ১৯৭৮ সালে যখন বনগ্রামে এসেছিলেন , তখন-ই উনি ওই প্রেতযোনীগুলির সাথে Contact করেছিলেন। দু-এক বছরের মধ্যেই ওদের মুক্তির দিন নির্ধারিত হয়েছিল কার্তিক মাসের কালীপুজোর আগের দিন , যেদিন পাঁজিতে ‘ভূত চতুর্দশী’ নামে উল্লেখ রয়েছে ! ঐ দিন গুরু মহারাজ গভীর রাত্রে একাকী ওই প্রেতযোনীগুলির মুক্তির জন্য কিছু অভিচারিক ক্রিয়া সম্পন্ন করে, নিজের হাতে খিচুড়ি জাতীয় কিছু রান্না করে তাদেরকে পাতা পেতে খেতে দিয়েছিলেন ! ঐ পুরো ঘটনাটি লুকিয়ে লুকিয়ে আশ্রমের প্রথম দিকের এক ভক্ত(দেবেন্দ্রনাথ) দেখেছিল!
গুরু মহারাজের নিষেধ সত্ত্বেও দেবেন্দ্র এটা করেছিল! সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল কিন্তু যেই মাত্র ও দেখল যে গুরু মহারাজ সেই অন্ধকারের মধ্যে পর পর শালপাতা সাজিয়ে দিয়ে খাবার পরিবেশন করতে শুরু করেছেন এবং সেই খাবারগুলি সাথে সাথেই উধাও হয়ে যাচ্ছে_অমনি ভয়ের চোটে দেবেন্দ্র ওই যে চিৎকার করে অন্ধকারের মধ্যে মাঠের দিকে ছুট লাগিয়েছিল– সারারাত আর আশ্রমে ঢোকেনি !
ছেলেটি(দেবেন্দ্রনাথ) সারারাত মাঠে মাঠে চেঁচামেচি করে ঘুরে বেরিয়েছিল এবং ভোরের দিকে অসুস্থ অবস্থায় সারা গায়ে কাদামাটি মেখে আশ্রমে ফিরে এসেছিল!!
এই ঘটনার পর আশ্রমের (বনগ্রাম) বটগাছকে কেন্দ্র করে থাকা প্রেতযোনীগুলির মুক্তি ঘটেছিল ! গাছটিও ধীরে ধীরে তার হারিয়ে যাওয়া গৌরব ফিরে পেতে লাগলো । এখন যারা আপনারা বটগাছটাকে দেখেছেন – তারা একদম বুঝতেই পারবেন না যে ওই প্রেতযোনীগুলির প্রভাবে বটগাছটি একদিন ন্যাড়া এবং মৃতপ্রায় হয়ে পড়েছিল !(ক্রমশঃ)