[গুরুমহারাজ বলেছিলেন ‘মহাভৈরব’ হচ্ছে “তন্ত্রক্রিয়ায় আরাধ্য” – শিবের রুপ। গুরুমহারাজ প্রেতমুক্তির যে ক্রিয়াটি সেদিন ভুতচতুর্দশী তিথিতে শুরু করেছিলেন _সেটাও তো মন্ত্র-তন্ত্রেরই একটা ক্রিয়া ছিল। আর সেই দায়িত্বটা গুরুমহারাজ _ন’কাকাকে দিয়ে দিয়েছিলেন!!]
এই ঘটনার পর(বনগ্রাম আশ্রমের বটগাছ থেকে প্রেতযোনীগুলির মুক্তি প্রদান) _থেকে গুরুমহারাজ ভূত-চতুর্দশীর দিন আর কখনোই প্রেত মুক্তির আয়োজন নিজের হাতে রাখেননি – উনি ওই ভারটা দিয়ে দিয়েছিলেন ন’কাকা কে। সেই থেকে প্রতিবছর ঐ দিনটায় ন’কাকাই ওনাদের কালীমন্দির প্রাঙ্গনে প্রেত মুক্তির ক্রিয়া করে আসছিলেন। ন’কাকা ওই বিশেষ রাত্রে কালী মন্দিরের পাশটায় ‘জবা গাছে’র বন-ঝোপের মধ্যে চড়ুর মতো কিছু রান্না করে – প্রেতযোনীদের উদ্দেশ্যে নিবেদন করতেন। আমরা কয়েকজন মিলে বেশ কয়েক বছর ধরে ওনার সাথে থেকেছি এবং ওনাকে ঐসব ক্রিয়া করতে দেখেছি ! কিন্তু রাত্রি বারোটা হয়ে গেলেই উনি আমাদেরকে চলে যেতে বলতেন ৷ আমরাও চলে আসতাম।কিন্তু উনি থেকে যেতেন! ফলে ওখানে উপস্থিত থেকেও আসল ক্রিয়াটাই হয়তো কোনদিন‌ই আমাদের দেখা হয়ে ওঠেনি !
কিন্তু পরবর্তীতে আমরা দেখেছিলাম – ন’কাকার ক্ষেত্রে যে শুধু ওই একদিনই প্রেত মুক্তির দিন ছিল – তা হয়তো নয় ! কেন একথা বললাম, সেটাই এখন বলছি __আমাকে সঙ্গে নিয়ে উনি যখন যেখানেই যেতেন, সেখানেই শুনতাম রাত্রে ওনার সাথে কারো না কারো অর্থাৎ একজনের বা একাধিকজনের Contact হয়েছিল এবং উনি তাদের মুক্তির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন !!
ন’কাকাকে একদিন জিজ্ঞাসা করেছিলাম – ” আচ্ছা , ন’কাকা ! এই যে প্রতি বৎসর আপনি ভূত চতুর্দশীতে প্রেতযোনিদের মুক্তির ব্যবস্থা করে দেন – তো – এরা কারা ? কোথা থেকে এসে এরা আপনার তালিকাভূক্ত হয় – আর তারা এখানেই বা আসে কি করে ??
উনি বলেছিলেন – “সারা বছর ধরেই List তৈরি হয় , ঝাড়াই-বাছাই হোতে হোতে শেষপর্যন্ত যে কটা টেকে – সেই গুলোর মুক্তির ব্যবস্থা ওই দিনে করা হয় ।”
ওই যে একটু আগেই বলা হচ্ছিলো_ ন’কাকা যে কোনো ভক্তের বাড়ি গেলেই সেই বাড়ি_নানারকম আদিভৌতিক সমস্যা থেকে মুক্ত হয়ে যেতো(যে কোন মহাপুরুষের ক্ষেত্রেই অবশ্য এটা হয়ে থাকে)। আর কোনো বাড়িকে কেন্দ্র করে হয়তো কোনো অতৃপ্ত প্রেতযোনী সেই বাড়িতে নানা রকম disturb করছিল –ন’কাকা গেলেই তাদের মুক্তি হয়ে যেতো ! সেই অর্থে ন’কাকার কাছে সারা বছরই ছিল ভূত চতুর্দশী । অবশ্য যদি ওইসব ভক্তবাড়ির প্রেতযোনীরাই ন’কাকার ভুতচতুর্দশীর দিনের জন্য ‘entisted প্রেতযোনী’ হয় – তাহলে অবশ্য আলাদা কথা!
সে যাইহোক , যে কথা বলছিলাম ন’কাকা যে বাড়িতেই যেতেন – সেই বাড়ির অপদেবতার উপদ্রব , সেই বাড়ির বাস্তুদোষ ইত্যাদি অনেককিছুই কেটে যেতো ! বহু ভক্তকে দেখেছি – যারা শুধুমাত্র বাড়ির নানা রকম বাস্তুদোষ যাতে কেটে যায় – সেইজন্যেই ন’কাকাকে আমন্ত্রণ করে তার বাড়িতে নিয়ে যেতো ! ভক্তদের সবার বিশ্বাস ছিল যে _উনি সেই বাড়িতে পা দেওয়া মাত্রই সে সব দোষ কেটে যাবে ! কেটেও যেতো__কদাচিৎ শুনতাম উনি বাড়ির মালিককে বলতেন, “একবার গয়ায় গিয়ে একটা পিন্ডদান করে এসো !” অথবা বলতেন – “বাড়িতে একটা হরিনাম দিয়ে দিও !” কিন্তু আমরা বুঝতে পারতাম , যা করার তা ন’কাকা-ই করে দিয়েছেন _এখন যেটা বলছেন, সেটা মন ভোলানো কথা অথবা ঐ কথাগুলো – গৃহকর্তার আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য বলা !
ন’কাকার এবারকার শরীরধারন লীলার একদম শেষের দিকে আমরা এই ধরনের ঘটনা দু-একবার চাক্ষুষ ঘটতে দেখেছিলাম ( যদিও প্রথম ঘটনাটায় আমি ন’কাকার সাথে ছিলাম না কিন্তু সেদিন আমি ছাড়া ন’কাকাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা আমাদের বিশেষ টিমটির বাকি সবাই ছিল) হাওড়ার ইন্দ্রদার বাড়িতে (ইন্দ্রদা মানে হচ্ছে সেই ইন্দ্রদা যিনি রামকৃষ্ণ মিশনের ভূতপূর্ব প্রেসিডেন্ট ভূতেশানন্দের শিষ্য !) ! ওদের বাড়িতে প্রেতযোনীদের খুবই উৎপাত ছিল – নানারকম অত্যাচারে বাড়ির সবাই একেবারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল ! ইন্দ্রদা বহু সাধু-মহারাজদের বাড়িতে নিয়েও এসেছিল , কিছু শান্তি স্বস্ত্যয়ন যাগ-যজ্ঞও করেছিল , কিন্তু কিছুতেই কোন কাজ হয়নি!
এরপর ওর মনে হয় ন’কাকাকে একবার বাড়িতে নিয়ে গেলে হয়তো এর কোনো সুরাহা হোতে পারে! তাই ইন্দ্রদা ওনাকে ওর বাড়ি নিয়ে গিয়েছিল। ন’কাকা হয়তো মাত্র এক ঘন্টা মতো ওদের বাড়িতে ছিলেন – ওতেই সব কাজ হয়ে গিয়েছিল ! পরবর্তীকালে ইন্দ্রদা এবং ওর পরিবারের লোকেরা সকলেই স্বীকার করেছে যে ন’কাকা যাবার পর – ওদের বাড়ির সমস্ত উৎপাত-ই বন্ধ হয়ে গেছিলো ।
এছাড়াও আর একটা ঘটনা একবার আমি দেখেছিলাম, সেটাও বলি! দুই ভাই-বোন যারা বহুদিন ধরেই আশ্রমের সঙ্গে যুক্ত এবং ন’কাকাকে খুবই ভক্তি কোরতো , তারা কলকাতায় একটা ঘর ভাড়া করে পড়াশোনা করছিল! ঐ ঘরটায় কিছু ভৌতিক সমস্যা ছিল – ওদেরকেও ন’কাকাকে সমস্যামুক্ত করতে দেখেছিলাম ! ওরা তখন পাগলের মতো ন’কাকার কাছে আসতো, বারে বারে ফোন কোরতো এবং ওদের অসুবিধার কথা ন’কাকাকে জানাতো ! ওই ভাই-বোনের ঠিক সমস্যাটা কি _সেকথা আমি ন’কাকাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম । উনি উত্তর দিয়েছিলেন – ” যে ঘরটিতে ঐ ছেলেমেয়ে দুটি এখন রয়েছে, ঐ ঘরটায় আগে একটি অন্য মেয়ে ভাড়া থাকতো! কোনো কারণে সে ওই ঘরেই আত্মহত্যা করেছিল ৷ আর তার-ই অতৃপ্ত সূক্ষ্ম শরীর এই ভাই-বোনকে disturb কোরছে ।”
খুব সম্ভবত ন’কাকা সেখানে একবার গিয়ে ওদেরকে সমস্যামুক্ত করেছিলেন !(ক্রমশঃ)