[ন’কাকার সাথে প্রেতযোনী মুক্তির একটা সম্পর্ক ছিল __সেই ব্যাপারে কথা হচ্ছিল। এখন ঐ প্রসঙ্গটাকেই আগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাক্!]
ন’কাকার সঙ্গে সূক্ষ্ম শরীরধারীদের যোগাযোগের অথবা তাদের মুক্তির ব্যবস্থা করার যে একটা ব্যাপার ছিলই তা আমরা অন্য আরোও কয়েকটি ঘটনা থেকে প্রমাণ পেতে পারি ! এখানে কয়েকটা এই রকম ঘটনার উল্লেখ করা হচ্ছে ––
আমরা আগেই বলেছিলাম যে ন’কাকা সিউড়ি যাওয়া বা আসার পথে বেশ কয়েকবার আমোদপুরে ভোলা বা লাল্টুদের বাড়ি গিয়েছিলেন । ওখান থেকে অর্থাৎ লাল্টুদের বাড়ি থেকেই আমোদপুরের অন্যান্য ভক্তদের বাড়ি যেমন – উদয় চ্যাটার্জী , চন্দন মুখার্জি প্রমুখদের বাড়ি যাওয়া হতো ৷
সেই সময় লাল্টুর এক সাথী রাহুল নামের একটি কিশোর ছেলেকে ন’কাকা খুবই স্নেহ করতেন । ছেলেটি খুবই দুরন্ত , কিন্তু খুব ভালো ছেলে ৷ রাহুলের অনুরোধে বা লাল্টুর পীড়াপীড়িতে ন’কাকা ওদের বাড়ি বার দুই-তিন গিয়েছিলেন ৷ ন’কাকার সাথে আমরাও (আমি , নন্দ মহারাজ , অসিত দা, চন্দন – উদয় প্রমুখরা) ঐ বাড়িতে যেতাম ! ওখানে গিয়ে আমরা শুনলাম যে , ওদের পারিবারিক বড় বড় ব্যবসা ছিল ৷ রাহুলের বাবাও একসময় বড়ো ব্যবসাদার ছিল – সেই সময় প্রচুর পয়সা -কড়ি রোজগার হোত কিন্তু হঠাৎ কি করে সময় ফেরে সমস্ত ব্যবসাতেই লোকসান হতে শুরু কোরলো এবং ওদের পরিবার শ্রীহীন হয়ে পড়লো । আমরাও দেখলাম যে ওদের বিরাট পুরোনো বাড়ি কেমন যেন বিবর্ণ হয়ে পড়েছে – বহুদিন কোন রিপেয়ারিং হয়নি , সিঁড়িগুলো অন্ধকার কেমন যেন গা-ছমছম ভাব !
ন’কাকা যাবার পর রাহুলের মা-বাবা খুবই যত্ন করে সবাইকে বসিয়ে, নানা কিছু খাবারের যোগাড় করে, খুবই আপ্যায়ন করেছিল !
আমার যতদূর মনে পড়ছে প্রথম যেদিন যাওয়া হয়েছিল ঐদিন আমাদের সাথে অনেক কজনাই ছিল ৷ রাহুলের বাবা মা ওদের পুরোনো দিনের ভালো অবস্থা এবং বর্তমান দুরবস্থার কথা _ন’কাকাকে সবিস্তারে জানাতে লাগলো ৷ ন’কাকা সব শুনে পুনরায় রাহুলের বাবাকে ব্যবসা শুরু করার বিধান দিলেন ৷ উনি ঐ ভদ্রলোককে বলেছিলেন – ” মানুষ যে মাটিতে পড়ে , আবার সে সেই মাটিকে ধরেই ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায় । আপনার ব্যবসা থেকে ক্ষতি হয়েছিল _আবার ব্যবসা করেই সংসারের উন্নতি করতে হবে।” এরপর সেদিন আমরা সবাই মিলে রাহুলদের বাড়ি থেকে চলে এসেছিলাম !
রাহুলদের বাড়িটা ছিল একটা বড় ধান মিলের একদম পাশেই ! ওদের বাড়ির বারান্দায় দাঁড়ালে মিলের প্রশস্ত উঠোন দেখা যেতো । ন’কাকা ওখান থেকে ফেরার পর আমাদেরকে বলেছিলেন – ” ওদের বাড়ির উন্নতি হবে কি করে বাবা ! ওই যে ধানের মিলটি রয়েছে – ওখানে দুর্ঘটনায় বেশ কিছু মানুষ মারা গিয়েছিল , ওদের অতৃপ্ত সূক্ষ্ম-শরীরধারীরা বাড়ির চারিপাশে ঘুরে বেড়ায়! এই জন্যই ওদের সংসারে নানাবিধ ক্ষতিসাধন ! তাছাড়া ওই বাড়িতেও এক অতৃপ্ত প্রেতশরীরের বিধবা মহিলারও প্রভাব রয়েছে – হয়তো মহিলাটি এই পরিবারেরই কারো দ্বারা অত্যাচারের শিকার হয়েছিল !”
যাইহোক , আমরা স্বচক্ষে দেখে ছিলাম করুণাময় ন’কাকা খানিকটা ইচ্ছা করেই পরপর দুই-তিনবার ওই বাড়ি গিয়েছিলেন ৷ আর বলাই বাহুল্য উনি ওই বাড়িতে পা দেবার পর থেকেই ওদের সংসারের ধীরে ধীরে উন্নতি হতে শুরু করেছিল ! অতি সম্প্রতি (২০১৯) আমি খবর নিয়ে দেখেছি যে , রাহুল ওদের বাড়ির নিচে একটা দোকান করেছে – দোকানটি ভালোই চলে । ওদের আর কোন অভাব নাই !
আমোদপুরের-ই আরেক ভক্ত উদয় চ্যাটার্জির কথা আগেই বলা হয়েছে ৷ উদয়ের বাবা শিক্ষক ছিলেন , ওর এক দাদাও সম্ভবত হাই স্কুলের শিক্ষক – কিন্তু উদয় সেই অর্থে তেমন ভালো কিছু চাকরি করে না, কোনো একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করে সংসার নির্বাহ করে । ওর শিশুকন্যার জন্মাবধি একটা ‘সমস্যা এবং সমাধান’-এর কথাও আগে বলা হয়েছে । কিন্তু ন’কাকা যেদিন উদয়ের বাড়ি প্রথম গিয়েছিলেন , সেদিন বাড়িতে ঢোকার পরেই ওনার পায়ে হঠাৎ করে কোন সামান্য সমস্যা হয়েছিল (হয়তো পা-টা একটু পিছলে গেছিল বা জুতো খুলতে গিয়ে একটু ঠোক্কর লেগেছিল) ! পরে উনি বলেছিলেন – ওই বাড়িতেও অতৃপ্ত একটি সূক্ষ্ম শরীরধারীর উপস্থিতি ছিল ! ওর জন্যেই ওই পরিবারের মধ্যে নানান অশান্তি লেগেই থাকতো I ওই বাড়িতেও ন’কাকা দু-তিন বার গিয়েছিলেন । আমরা জানি, তার ফলে বর্তমানে বাড়িটির আধিভৌতিক সমস্যা একদমই কেটে গেছে !(ক্রমশঃ)