[ন’কাকার সাথে একান্ত কথাবার্তায় একদিন যে সমস্ত কথা উঠে এসেছিল _সেই গুলি এখন আলোচনা করা হচ্ছে!]
(জিজ্ঞাসার উত্তরে).. ন’কাকা সহজ-সরলভাবে বলতেন – ” বাবা ! মায়ের যা ইচ্ছা তাই তো হবে ! মা – নাই কোনখানে বলো ! মা তো জগৎজুড়ে আঁচল পেতে বসে রয়েছে ! তুমি দেখতে পাচ্ছো না বলে মানতে পারছো না ৷ আমি তো তাই দেখি ! তবে মন্দির-মঠ-মিশন এসব আলাদা আলাদা স্থানে তৈরি করা কেন – ওগুলো স্থান মাহাত্ম্যের জন্য, স্থানের প্রভাব রয়েছে না _সেইজন্য ! যেখানে কোনো ধর্মস্থান বা পীঠস্থান রয়েছে দেখতে পাচ্ছো– সেখানে ওটাই হবার ছিল, অন্য কিছু করতে গেলে টিকবে না, ধ্বংস হয়ে যাবে –ধর্মস্থান ছাড়া অন্য কোনো কিছুই করতে পারবে না ! মন্দির-মসজিদ-গির্জা ইত্যাদি দেবস্থানের জন্য স্থান নির্বাচন করাই থাকে – আর ওগুলি সেখানেই হয় ! তবে যদি কেউ অহংকারবশতঃ জোর করে করতে চায় – তাহলে তা টিকবে না , ঐ যে বললাম _ধ্বংস হয়ে যাবে ! বাবা ! মায়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কি কেউ টিকতে পারে ! স্বয়ং জগৎপতি শিব পারলো না – তো সাধারন মানুষ কি করে পারবে ?”
ন’কাকার কথাগুলো যখন শুনতাম , তখন মনে হোতো এত জোর দিয়ে এত বিশ্বাস নিয়ে উনি কথাগুলো বলেন যে , ওনার কথাগুলো ১০০ ভাগই সঠিক , এই কথার কখনোই অন্যথা হতে পারে না ! এগুলি বোধের জগতের কথা – সেখান থেকে টেনে টেনে উনি কথাগুলো বের করে নিয়ে আসছেন !
অট্টহাস সতীপীঠে(বীরভূম এবং বর্ধমানের বর্ডারে এই পীঠটি) যখন ন’কাকা গেছিলেন – তখন ওখানকার যিনি পীঠাধ্যক্ষ ছিলেন , তাঁর নাম ছিল রামজী মহারাজ । সুন্দর প্রেমপূর্ণ ব্যবহার ছিল ওনার ! উনি আগে থাকতেই ন’কাকা সম্বন্ধে কিছু কথা জানতেন অর্থাৎ বিভিন্ন ভক্তদের কাছে ওনার সম্বন্ধে নানা কথা শুনেছিলেন, তাই অট্টহাসে ন’কাকা গেলে – ওনাকে রামজী মহারাজ বিশেষ মর্যাদা দিয়েছিলেন ৷ ন’কাকাও ঐ সাধুবাবার সাধুসুলভ ব্যবহারে (সাধু দের সাধুসুলভ ব্যবহার সত্যি সত্যিই এখন খুবই দূর্লভ হয়ে যাচ্ছে।) খুবই সন্তুষ্ট হয়েছিলেন ৷ পরবর্তীকালে দেখেছি বহুদিন পর্যন্ত রামজী মহারাজ ন’কাকার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন ! ন’কাকার সাথে রামজীর সাক্ষাতের কিছুদিন পর, যখন রামজী মহারাজ বিভিন্ন চাপে অট্টহাস থেকে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন – তখনও ন’কাকা রামজীর খবর রাখতেন । প্রায়ই আমাকে ফোনে অথবা দেখা হলে জিজ্ঞাসা করতেন – অট্টহাসের সেই সাধুবাবা এখন কোথায় রয়েছে বা কেমন রয়েছে ? মোটের উপর এইটা আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে ন’কাকা ওনাকে যথেষ্টই স্নেহ করতেন বা ভালোবাসতেন ! আর মহাপুরুষদের স্বভাবই হোল _কাউকে একবার ভালবাসতে শুরু করলে আর তাকে ছাড়বেন না। ভল্লুকে ধরা সেই সাধুবাবা জলে ভেসে যেতে যেতে বলেছিল না___”হম্ তো কমলি ছোড়না চাহতা _লেকিন কমলি হামকো ছোড়তা নেহি”। এই ব্যাপারটাও খানিকটা সেরকমই!
ন’কাকার সাথে আমার প্রতিদিনই বিকাল ৪-৩০ থেকে ৫-৩০ -র মধ্যে যে কোনো সময়ে ফোনে কথা হতো ! যখন আমি বনগ্রাম আশ্রমে থাকতাম , তখনও প্রতিদিন ওই একই সময়ের মধ্যে ন’কাকার সাথে আমার দেখা হোতো – কথাবার্তা হোতো ৷ আশ্রম থেকে চলে আসার পর প্রতিদিন বিকালে যখন আমি নদীর ধার বরাবর একা একা বেড়াতে যেতাম – তখনই ন’কাকার সাথে ফোনে কথা হোতো ৷ এক একদিন ন’কাকা বলতেন – ” বাবা ! আজ একটু ব্যস্ত আছি।” তারপরেই “জয় গুরু” , “জয় গুরু” – বলেই ফোন রেখে দিতেন ৷ ন’কাকার ফোন রেখে দেওয়ার ব্যাপারে একটা জিনিস লক্ষ্য করেছিলাম __প্রায় দিনই ন’কাকা ফোন ছেড়ে দিলেও, ফোনটা কাটতেন না(এই ফোন কাটার অভ্যাসটাই ওনার ছিল না) ! ফলে উনি আমার সাথে কথা বন্ধ করে যে অন্য কারো সাথে কথা বলছেন _ তা বেশ বুঝতে পারতাম। অনেক সময় আমি ফোনটা কানে রেখে দিয়ে শোনার চেষ্টা করতাম উনি কার সাথে বা কার কার সাথে কথা বলছেন , কি ব্যাপারে বলছেন _কিন্তু সবটা বুঝতে পারতাম না !
তবে বিকালের দিকে ফোন করাকালীন বেশীরভাগ দিনই ন’কাকা ফোনে আমার সাথে অনেকক্ষণ ধরে কথা বলতেন ৷ আশ্রমের নানান খবর দিতেন , আশ্রমে যেসব গুরুভ্রাতারা আসতেন তাঁদের খবর দিতেন (যেহেতু পুরোনো যেকোনো ভক্তরা বনগ্রাম আশ্রমে এলে প্রায় সবাই ন’কাকার সাথে দেখা কোরতো) , ন’কাকাকে কেন্দ্র করে নতুন যে ভক্তমন্ডলী গড়ে উঠেছিল – তাদের সবার খবর দিতেন ৷ এর ফলে হোত কি__ সবার সাথে আমার সবসময়ের জন্য একটা আত্মীয়তার বন্ধন বজায় থাকতো (যেটা এখন অর্থাৎ ন’কাকার স্থুলশরীর ছাড়ার পর একেবারেই চলে গেছে) ।
আসলে ন’কাকার ভক্তমন্ডলীরা সারাদিনে ওনাকে অন্তত একবার ফোন কোরতোই – সেখান থেকে তাদের খবর নিয়ে উনি বিকেলে যখন আমার সাথে কথা হতো তখন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য খবরগুলি আমাকে দিয়ে দিতেন ! উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যেমন – সিউড়ির মিলুর ভাই-এর বিয়ের খবর কতটা আগালো , ওই বাড়িতে মিলুর ছোট ছেলেটা অসুস্থতা কাটিয়ে উঠেছে কিনা , পড়ে যাবার পর মিলুর বাবার হাতের অবস্থা এখন কেমন ! চাকপাড়ার মুখুজ্জে মশাই-এর ছেলের কোন রোজগারের ব্যবস্থা হলো কিনা – কীর্ণাহারের সনৎ কাকুর শরীর এখন কেমন রয়েছে – ওনার দাদা মাস্টারমশাই সুশীল বাবুর বাড়ির খবর , ওনার নাতনির বিবাহ এখন হবে কি না – শিবপুরের শান্তনুর স্ত্রী সুমনার দাঁতের খুব ব্যথা , লিলুয়ার দেবকুমারের ব্যবসা এখন কেমন চলছে – ওর ছেলের পড়াশোনা, ভদ্রেশ্বরের বাবুলের ছেলেমেয়েরা এখন কেমন আছে , বাবুলের শরীর ভালো যাচ্ছে না – ইত্যাদি ইত্যাদি ! আধঘন্টা – পঁয়তাল্লিশ মিনিট সময় গাল-গল্পে , লোকজনের খোঁজখবরে কোথায় যে চলে যেতো – বুঝতেই পারতাম না ! আর এই নেশাতেই পরেরদিন বিকাল হোলেই আবার ফোন করা !(ক্রমশঃ)
(জিজ্ঞাসার উত্তরে).. ন’কাকা সহজ-সরলভাবে বলতেন – ” বাবা ! মায়ের যা ইচ্ছা তাই তো হবে ! মা – নাই কোনখানে বলো ! মা তো জগৎজুড়ে আঁচল পেতে বসে রয়েছে ! তুমি দেখতে পাচ্ছো না বলে মানতে পারছো না ৷ আমি তো তাই দেখি ! তবে মন্দির-মঠ-মিশন এসব আলাদা আলাদা স্থানে তৈরি করা কেন – ওগুলো স্থান মাহাত্ম্যের জন্য, স্থানের প্রভাব রয়েছে না _সেইজন্য ! যেখানে কোনো ধর্মস্থান বা পীঠস্থান রয়েছে দেখতে পাচ্ছো– সেখানে ওটাই হবার ছিল, অন্য কিছু করতে গেলে টিকবে না, ধ্বংস হয়ে যাবে –ধর্মস্থান ছাড়া অন্য কোনো কিছুই করতে পারবে না ! মন্দির-মসজিদ-গির্জা ইত্যাদি দেবস্থানের জন্য স্থান নির্বাচন করাই থাকে – আর ওগুলি সেখানেই হয় ! তবে যদি কেউ অহংকারবশতঃ জোর করে করতে চায় – তাহলে তা টিকবে না , ঐ যে বললাম _ধ্বংস হয়ে যাবে ! বাবা ! মায়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কি কেউ টিকতে পারে ! স্বয়ং জগৎপতি শিব পারলো না – তো সাধারন মানুষ কি করে পারবে ?”
ন’কাকার কথাগুলো যখন শুনতাম , তখন মনে হোতো এত জোর দিয়ে এত বিশ্বাস নিয়ে উনি কথাগুলো বলেন যে , ওনার কথাগুলো ১০০ ভাগই সঠিক , এই কথার কখনোই অন্যথা হতে পারে না ! এগুলি বোধের জগতের কথা – সেখান থেকে টেনে টেনে উনি কথাগুলো বের করে নিয়ে আসছেন !
অট্টহাস সতীপীঠে(বীরভূম এবং বর্ধমানের বর্ডারে এই পীঠটি) যখন ন’কাকা গেছিলেন – তখন ওখানকার যিনি পীঠাধ্যক্ষ ছিলেন , তাঁর নাম ছিল রামজী মহারাজ । সুন্দর প্রেমপূর্ণ ব্যবহার ছিল ওনার ! উনি আগে থাকতেই ন’কাকা সম্বন্ধে কিছু কথা জানতেন অর্থাৎ বিভিন্ন ভক্তদের কাছে ওনার সম্বন্ধে নানা কথা শুনেছিলেন, তাই অট্টহাসে ন’কাকা গেলে – ওনাকে রামজী মহারাজ বিশেষ মর্যাদা দিয়েছিলেন ৷ ন’কাকাও ঐ সাধুবাবার সাধুসুলভ ব্যবহারে (সাধু দের সাধুসুলভ ব্যবহার সত্যি সত্যিই এখন খুবই দূর্লভ হয়ে যাচ্ছে।) খুবই সন্তুষ্ট হয়েছিলেন ৷ পরবর্তীকালে দেখেছি বহুদিন পর্যন্ত রামজী মহারাজ ন’কাকার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন ! ন’কাকার সাথে রামজীর সাক্ষাতের কিছুদিন পর, যখন রামজী মহারাজ বিভিন্ন চাপে অট্টহাস থেকে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন – তখনও ন’কাকা রামজীর খবর রাখতেন । প্রায়ই আমাকে ফোনে অথবা দেখা হলে জিজ্ঞাসা করতেন – অট্টহাসের সেই সাধুবাবা এখন কোথায় রয়েছে বা কেমন রয়েছে ? মোটের উপর এইটা আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে ন’কাকা ওনাকে যথেষ্টই স্নেহ করতেন বা ভালোবাসতেন ! আর মহাপুরুষদের স্বভাবই হোল _কাউকে একবার ভালবাসতে শুরু করলে আর তাকে ছাড়বেন না। ভল্লুকে ধরা সেই সাধুবাবা জলে ভেসে যেতে যেতে বলেছিল না___”হম্ তো কমলি ছোড়না চাহতা _লেকিন কমলি হামকো ছোড়তা নেহি”। এই ব্যাপারটাও খানিকটা সেরকমই!
ন’কাকার সাথে আমার প্রতিদিনই বিকাল ৪-৩০ থেকে ৫-৩০ -র মধ্যে যে কোনো সময়ে ফোনে কথা হতো ! যখন আমি বনগ্রাম আশ্রমে থাকতাম , তখনও প্রতিদিন ওই একই সময়ের মধ্যে ন’কাকার সাথে আমার দেখা হোতো – কথাবার্তা হোতো ৷ আশ্রম থেকে চলে আসার পর প্রতিদিন বিকালে যখন আমি নদীর ধার বরাবর একা একা বেড়াতে যেতাম – তখনই ন’কাকার সাথে ফোনে কথা হোতো ৷ এক একদিন ন’কাকা বলতেন – ” বাবা ! আজ একটু ব্যস্ত আছি।” তারপরেই “জয় গুরু” , “জয় গুরু” – বলেই ফোন রেখে দিতেন ৷ ন’কাকার ফোন রেখে দেওয়ার ব্যাপারে একটা জিনিস লক্ষ্য করেছিলাম __প্রায় দিনই ন’কাকা ফোন ছেড়ে দিলেও, ফোনটা কাটতেন না(এই ফোন কাটার অভ্যাসটাই ওনার ছিল না) ! ফলে উনি আমার সাথে কথা বন্ধ করে যে অন্য কারো সাথে কথা বলছেন _ তা বেশ বুঝতে পারতাম। অনেক সময় আমি ফোনটা কানে রেখে দিয়ে শোনার চেষ্টা করতাম উনি কার সাথে বা কার কার সাথে কথা বলছেন , কি ব্যাপারে বলছেন _কিন্তু সবটা বুঝতে পারতাম না !
তবে বিকালের দিকে ফোন করাকালীন বেশীরভাগ দিনই ন’কাকা ফোনে আমার সাথে অনেকক্ষণ ধরে কথা বলতেন ৷ আশ্রমের নানান খবর দিতেন , আশ্রমে যেসব গুরুভ্রাতারা আসতেন তাঁদের খবর দিতেন (যেহেতু পুরোনো যেকোনো ভক্তরা বনগ্রাম আশ্রমে এলে প্রায় সবাই ন’কাকার সাথে দেখা কোরতো) , ন’কাকাকে কেন্দ্র করে নতুন যে ভক্তমন্ডলী গড়ে উঠেছিল – তাদের সবার খবর দিতেন ৷ এর ফলে হোত কি__ সবার সাথে আমার সবসময়ের জন্য একটা আত্মীয়তার বন্ধন বজায় থাকতো (যেটা এখন অর্থাৎ ন’কাকার স্থুলশরীর ছাড়ার পর একেবারেই চলে গেছে) ।
আসলে ন’কাকার ভক্তমন্ডলীরা সারাদিনে ওনাকে অন্তত একবার ফোন কোরতোই – সেখান থেকে তাদের খবর নিয়ে উনি বিকেলে যখন আমার সাথে কথা হতো তখন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য খবরগুলি আমাকে দিয়ে দিতেন ! উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যেমন – সিউড়ির মিলুর ভাই-এর বিয়ের খবর কতটা আগালো , ওই বাড়িতে মিলুর ছোট ছেলেটা অসুস্থতা কাটিয়ে উঠেছে কিনা , পড়ে যাবার পর মিলুর বাবার হাতের অবস্থা এখন কেমন ! চাকপাড়ার মুখুজ্জে মশাই-এর ছেলের কোন রোজগারের ব্যবস্থা হলো কিনা – কীর্ণাহারের সনৎ কাকুর শরীর এখন কেমন রয়েছে – ওনার দাদা মাস্টারমশাই সুশীল বাবুর বাড়ির খবর , ওনার নাতনির বিবাহ এখন হবে কি না – শিবপুরের শান্তনুর স্ত্রী সুমনার দাঁতের খুব ব্যথা , লিলুয়ার দেবকুমারের ব্যবসা এখন কেমন চলছে – ওর ছেলের পড়াশোনা, ভদ্রেশ্বরের বাবুলের ছেলেমেয়েরা এখন কেমন আছে , বাবুলের শরীর ভালো যাচ্ছে না – ইত্যাদি ইত্যাদি ! আধঘন্টা – পঁয়তাল্লিশ মিনিট সময় গাল-গল্পে , লোকজনের খোঁজখবরে কোথায় যে চলে যেতো – বুঝতেই পারতাম না ! আর এই নেশাতেই পরেরদিন বিকাল হোলেই আবার ফোন করা !(ক্রমশঃ)