[প্রতিদিন বিকালে ন’কাকার সাথে ফোনে কথা হওয়ার কথা হচ্ছিলো। সেইসময় কথাপ্রসঙ্গে ন’কাকা অনেক কথা আলোচনা করতেন।]
বিকালে যখন আমি ওনাকে ফোন করতাম – তখন উনি হয় আশ্রমে যাচ্ছেন অথবা আশ্রমে পৌঁছে অফিসঘরে চা খাচ্ছেন। ওখানে বিকালের দিকে ওনার সাথে যোগদান করতো পাহাড়হাটির গোপাল ডাক্তার (ঘোষ) এবং গঙ্গাবাবু । ন’কাকা অফিস ঘরে থাকলে অনেক সময় আমার সাথে ফোনে মুরারী মহারাজ , প্রলয় মহারাজ , গঙ্গাবাবু অথবা গোপাল ডাক্তারের সাথে কথা বলিয়ে দিতেন । তবে ফোন করার সময় ন’কাকা অফিসে না থেকে, একা একা থাকলেই আমার বেশি ভালো লাগতো ! তখনই অনেক কথা হোতো । হালকা হালকা কথাও হোতো, আবার হোতো ভারি ভারি কথাও ! তবে ন’কাকা যখন আমাকে কোনো না কোনো শিক্ষামূলক উপদেশ দিতেন – সেটা এক অদ্ভুত কায়দায় ! এমনভাবে বলতেন যেন মনে হোতো – উনি আমাকে বলছেন না _ অন্যদেরকে উদ্দেশ্য করে বলছেন , কিন্তু আমি বেশ বুঝতে পারতাম কথাগুলো উনি আমার জন্যই বলছেন – আমার শিক্ষার জন্যই বলছেন ।
ন’কাকার বিশেষ বিশেষত্ব ছিল সহজতা ও সারল্য ! উনি নিজে জীবনে আচরন করে – এইগুলি আমাদেরকে শেখাতেন ৷ আর ছিল ওনার অসম্ভব সহ্যশক্তি – কোনো ঘটনা বা অঘটন, চট্ করে ওনাকে বিচলিত করতে পারতো না ! সেটা হয়তো উনি কালদ্রষ্টা পুরুষ ছিলেন বলেই সম্ভব হোতো, অর্থাৎ উনি তো জানতেনই _কি ঘটবে , কি কারনে ঘটবে , কখন ঘটবে – তাই উনি বিচলিত হোতেন না । আমরা ওনাকে দেখে মনে মনে ভাবতাম – এ একটা বেশ অবস্থা ! আমাদেরও যদি এমন অবস্থা হয় – তাহলে কত ভালো হোতো ! কেমন ভবিষ্যৎ দেখে দেখে সকলকে সব কথা বলে দিতে পারতাম অথবা কোনো ঘটনা ঘটলে – সেটি কেন ঘটলো তা দেখতে পেয়ে একটুও বিচলিত হোতাম না , কোন ঘটনার ফল কেমন হবে তা জানতে পেরে উদ্বিগ্ন হোতাম না !
কিন্তু ওটি তো হবার নয় ! বহু জন্মের বহু সাধনার ফল এক একটা সিদ্ধি ! এইভাবে অষ্টসিদ্ধি অর্থাৎ অনিমা , লঘিমা , মহিমা , প্রাকাম্য , প্রাপ্তি , ঈশিতা , বশিতা , কামবশয়িতা – এই আট রকমের সিদ্ধি করায়ত্ত করতে কত জন্মের নিরন্তর সাধনা লেগে যায় ৷ এরপরে আবার ঝামেলা রয়েছে , সিদ্ধি করায়ত্ত হবার পর যদি তুমি নিজের ইচ্ছায় খরচ করতে শুরু করো – তাহলেই তো হয়ে গেল !! কিছুদিনের মধ্যেই হুর্ হুর্ করে সিদ্ধির শক্তিও শেষ – সিদ্ধিও শেষ ! তুমি যে হরিদাস ছিলে – সেই হরিদাস !
আর যদি সমস্ত সিদ্ধি করায়ত্ত হবার পরও তোমার নিজের কোনো ইচ্ছা ক্রিয়াশীল না হয় , তাহলে যিনি সিদ্ধি দিয়েছেন সেই ✓রী মা জগদম্বা খুশি হন । তিনি তখন বর এবং অভয় দেন , ‘বর’ লাভের ফলে ওই সিদ্ধিগুলি অপরের কল্যাণে , জীবের মঙ্গলকার্যে ব্যয়িত হয় আর ‘অভয়’ দেন এইজন্য যে , শক্তি যতই ক্রিয়াশীল হোক না কেন – ওই মহাসাধকের সঞ্চয় থেকে এর ফলে কোনো ক্ষয় হয় না ! যেটুকু ক্ষয় হয় – তা আবার মহাশক্তির ভান্ডার থেকে সাথে সাথেই পূরণ হয়ে যায় ৷ এইরকম ব্যক্তিদেরকেই বলা হয় ‘আদিষ্ট পুরুষ’ । এঁরা জগত কল্যাণের কাজে নিজের সারা জীবনের কঠোর সাধনার ফল নিঃস্বার্থে মানবকল্যাণে , জীবজগতের কল্যাণে দান করে যান ! ন’কাকা ছিলেন সেই ধরনের মহাপুরুষ !
বনগ্রাম পরমানন্দ মিশনে যতদিন আমি ছিলাম _ন’কাকাদের পুকুরে মাছ ধরলেই (বোধহয় ন’কাকাদের বনগ্রামে দু-তিনটে পুকুরের অংশ রয়েছে , প্রায়ই মাছ ধরতো – জেলেরা) ন’কাকা আমাকে মধ্যাহ্নভোজে নিমন্ত্রণ করতেন । খাওয়া-দাওয়া যা হোত_সেটা তো খুবই আনন্দের ছিল , কিন্তু সবচাইতে বড় কথা ছিল সারা দুপুর ধরে ওনার সাথে গল্প-গুজব হোতো নানান রকমের !
সেই সব দিনের কথা এখন মনে পড়ছে – আর মনটায় যেমন একদিকে আনন্দও হচ্ছে – তেমনি অপরদিকে মনটা বিষাদগ্রস্থ হয়ে যাচ্ছে ! অমন একটা মহান মানুষ , একজন মহাপুরুষকে এত কাছে কাছে পেয়েও – কি তাঁর যথার্থ মর্যাদা দিতে পেরেছি ? তা যদি না হয়ে থাকে – তাহলে তো সেটা মহা অপরাধ হয়ে গেছে ! এটা ঠিকই যে – কোন মহাপুরুষই ভক্তদের দোষ ধরেন না , কিন্তু আমাদের নিজেদের তো একটা অপরাধবোধ থেকেই যায় ! সেটা থেকে মুক্ত হতে পারি কই– মাঝেমাঝেই সেটা কাঁটার মতো বুকে খিচ্ খিচ্ করে বেঁধে !
যেকোনো আপদে-বিপদে-সম্পদে ন’কাকার পরামর্শ চাইতাম , উনি বক্তব্য গুলিকে মন দিয়ে শুনতেন , আর সব সময় সুপরামর্শ দিতেন । ওনার যে কোনো পরামর্শ , যে কোনো কথার এতো গভীরতা ছিল যে , সেইগুলি সঙ্গে সঙ্গে না ঘটলেও – পরে পরে ঠিকই ঘটে যেতো অর্থাৎ ওনার বলা কথা দেরিতে হলেও ঠিকই সত্যে পরিণত হতো ! এমন বহু প্রমাণ আমি নিজের জীবনেই পেয়েছি ।(ক্রমশঃ)
বিকালে যখন আমি ওনাকে ফোন করতাম – তখন উনি হয় আশ্রমে যাচ্ছেন অথবা আশ্রমে পৌঁছে অফিসঘরে চা খাচ্ছেন। ওখানে বিকালের দিকে ওনার সাথে যোগদান করতো পাহাড়হাটির গোপাল ডাক্তার (ঘোষ) এবং গঙ্গাবাবু । ন’কাকা অফিস ঘরে থাকলে অনেক সময় আমার সাথে ফোনে মুরারী মহারাজ , প্রলয় মহারাজ , গঙ্গাবাবু অথবা গোপাল ডাক্তারের সাথে কথা বলিয়ে দিতেন । তবে ফোন করার সময় ন’কাকা অফিসে না থেকে, একা একা থাকলেই আমার বেশি ভালো লাগতো ! তখনই অনেক কথা হোতো । হালকা হালকা কথাও হোতো, আবার হোতো ভারি ভারি কথাও ! তবে ন’কাকা যখন আমাকে কোনো না কোনো শিক্ষামূলক উপদেশ দিতেন – সেটা এক অদ্ভুত কায়দায় ! এমনভাবে বলতেন যেন মনে হোতো – উনি আমাকে বলছেন না _ অন্যদেরকে উদ্দেশ্য করে বলছেন , কিন্তু আমি বেশ বুঝতে পারতাম কথাগুলো উনি আমার জন্যই বলছেন – আমার শিক্ষার জন্যই বলছেন ।
ন’কাকার বিশেষ বিশেষত্ব ছিল সহজতা ও সারল্য ! উনি নিজে জীবনে আচরন করে – এইগুলি আমাদেরকে শেখাতেন ৷ আর ছিল ওনার অসম্ভব সহ্যশক্তি – কোনো ঘটনা বা অঘটন, চট্ করে ওনাকে বিচলিত করতে পারতো না ! সেটা হয়তো উনি কালদ্রষ্টা পুরুষ ছিলেন বলেই সম্ভব হোতো, অর্থাৎ উনি তো জানতেনই _কি ঘটবে , কি কারনে ঘটবে , কখন ঘটবে – তাই উনি বিচলিত হোতেন না । আমরা ওনাকে দেখে মনে মনে ভাবতাম – এ একটা বেশ অবস্থা ! আমাদেরও যদি এমন অবস্থা হয় – তাহলে কত ভালো হোতো ! কেমন ভবিষ্যৎ দেখে দেখে সকলকে সব কথা বলে দিতে পারতাম অথবা কোনো ঘটনা ঘটলে – সেটি কেন ঘটলো তা দেখতে পেয়ে একটুও বিচলিত হোতাম না , কোন ঘটনার ফল কেমন হবে তা জানতে পেরে উদ্বিগ্ন হোতাম না !
কিন্তু ওটি তো হবার নয় ! বহু জন্মের বহু সাধনার ফল এক একটা সিদ্ধি ! এইভাবে অষ্টসিদ্ধি অর্থাৎ অনিমা , লঘিমা , মহিমা , প্রাকাম্য , প্রাপ্তি , ঈশিতা , বশিতা , কামবশয়িতা – এই আট রকমের সিদ্ধি করায়ত্ত করতে কত জন্মের নিরন্তর সাধনা লেগে যায় ৷ এরপরে আবার ঝামেলা রয়েছে , সিদ্ধি করায়ত্ত হবার পর যদি তুমি নিজের ইচ্ছায় খরচ করতে শুরু করো – তাহলেই তো হয়ে গেল !! কিছুদিনের মধ্যেই হুর্ হুর্ করে সিদ্ধির শক্তিও শেষ – সিদ্ধিও শেষ ! তুমি যে হরিদাস ছিলে – সেই হরিদাস !
আর যদি সমস্ত সিদ্ধি করায়ত্ত হবার পরও তোমার নিজের কোনো ইচ্ছা ক্রিয়াশীল না হয় , তাহলে যিনি সিদ্ধি দিয়েছেন সেই ✓রী মা জগদম্বা খুশি হন । তিনি তখন বর এবং অভয় দেন , ‘বর’ লাভের ফলে ওই সিদ্ধিগুলি অপরের কল্যাণে , জীবের মঙ্গলকার্যে ব্যয়িত হয় আর ‘অভয়’ দেন এইজন্য যে , শক্তি যতই ক্রিয়াশীল হোক না কেন – ওই মহাসাধকের সঞ্চয় থেকে এর ফলে কোনো ক্ষয় হয় না ! যেটুকু ক্ষয় হয় – তা আবার মহাশক্তির ভান্ডার থেকে সাথে সাথেই পূরণ হয়ে যায় ৷ এইরকম ব্যক্তিদেরকেই বলা হয় ‘আদিষ্ট পুরুষ’ । এঁরা জগত কল্যাণের কাজে নিজের সারা জীবনের কঠোর সাধনার ফল নিঃস্বার্থে মানবকল্যাণে , জীবজগতের কল্যাণে দান করে যান ! ন’কাকা ছিলেন সেই ধরনের মহাপুরুষ !
বনগ্রাম পরমানন্দ মিশনে যতদিন আমি ছিলাম _ন’কাকাদের পুকুরে মাছ ধরলেই (বোধহয় ন’কাকাদের বনগ্রামে দু-তিনটে পুকুরের অংশ রয়েছে , প্রায়ই মাছ ধরতো – জেলেরা) ন’কাকা আমাকে মধ্যাহ্নভোজে নিমন্ত্রণ করতেন । খাওয়া-দাওয়া যা হোত_সেটা তো খুবই আনন্দের ছিল , কিন্তু সবচাইতে বড় কথা ছিল সারা দুপুর ধরে ওনার সাথে গল্প-গুজব হোতো নানান রকমের !
সেই সব দিনের কথা এখন মনে পড়ছে – আর মনটায় যেমন একদিকে আনন্দও হচ্ছে – তেমনি অপরদিকে মনটা বিষাদগ্রস্থ হয়ে যাচ্ছে ! অমন একটা মহান মানুষ , একজন মহাপুরুষকে এত কাছে কাছে পেয়েও – কি তাঁর যথার্থ মর্যাদা দিতে পেরেছি ? তা যদি না হয়ে থাকে – তাহলে তো সেটা মহা অপরাধ হয়ে গেছে ! এটা ঠিকই যে – কোন মহাপুরুষই ভক্তদের দোষ ধরেন না , কিন্তু আমাদের নিজেদের তো একটা অপরাধবোধ থেকেই যায় ! সেটা থেকে মুক্ত হতে পারি কই– মাঝেমাঝেই সেটা কাঁটার মতো বুকে খিচ্ খিচ্ করে বেঁধে !
যেকোনো আপদে-বিপদে-সম্পদে ন’কাকার পরামর্শ চাইতাম , উনি বক্তব্য গুলিকে মন দিয়ে শুনতেন , আর সব সময় সুপরামর্শ দিতেন । ওনার যে কোনো পরামর্শ , যে কোনো কথার এতো গভীরতা ছিল যে , সেইগুলি সঙ্গে সঙ্গে না ঘটলেও – পরে পরে ঠিকই ঘটে যেতো অর্থাৎ ওনার বলা কথা দেরিতে হলেও ঠিকই সত্যে পরিণত হতো ! এমন বহু প্রমাণ আমি নিজের জীবনেই পেয়েছি ।(ক্রমশঃ)