[ন’কাকা যখন আমাদের গ্রামের বাড়িতে( কাটোয়ার কাছে) এসেছিলেন, সেই সময়কার নানা কথা বলা হচ্ছিল।]
সেইসময় অর্থাৎ যখন ন’কাকা প্রথমবার আমাদের দেশের বাড়ি রশুই গ্রামে এসেছিলেন তখন উনি ধীরুভাই(আমাদের গ্রামের একটি যুবক, গুরুমহারাজ এবং ন’কাকার ভক্ত) -এর বাড়িতেও গিয়েছিলেন । ওর মা তখনো বেঁচে ছিলেন ! ওর বাড়ি থেকে ফেরার পথে ন’কাকা ধীরুভাইকে বলেছিলেন – ” তুমি যখন যা রোজগার করবে সেই সমস্ত টাকার কিছুটা হাত খরচ হিসাবে রেখে, বাকীটা__ হয় তোমার মায়ের হাতে দিয়ে দেবে অথবা স্ত্রীর ব্যাংক একাউন্টে জমা করে দেবে , নিজের হাতে রাখবে না ৷”
এই কথাটা উনি কেন ওই ছেলেটিকে বললেন – পরে আমি ন’কাকাকে একান্তে সেই কথাটা জিজ্ঞাসা করেছিলাম ! উত্তরে উনি আমাকে বলেছিলেন – ” বাবা ! ওই ছেলের হাতে টাকা থাকবে না, ও রোজগার করতে পারে – কিন্তু রাখতে পারবে না । যদি ছেলেটি ওর রোজগারের অর্থ –ওর মা অথবা ওর স্ত্রীর হাতে দেয় – তাহলে তা থাকবে, তাই বললাম ৷”আমি ভাবছিলাম_ এই কথাগুলি তো ন’কাকা ওর হাত দেখে বলেন নি, তাহলে কি ওর কপাল দেখে বললেন _অথবা ওর বাড়ি বা পরিবেশ দেখে ? অবশ্য আমি ন’কাকাকে অনেকের হাত দেখতে দেখেছি – অবশ্যই এটা ওনার আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে । ন’কাকা যে হাত দেখতে বা কোষ্ঠী বিচার করতে জানতেন_এই ব্যাপারটা বাইরের প্রায় কেউই জানতো না বা বেশিরভাগ ভক্তই ওনাকে হাত দেখাবার বা ভাগ্য গণনা করার প্রয়োজনই মনে করতো না ! কিন্তু ওনার আত্নীয়-স্বজনদের বাড়িতে গিয়ে তাদের অনুরোধে বা উপরোধে উনি ওই কাজ তো করেছেন-ই – অনেক বাড়িতে ওনাকে কোষ্ঠী-বিচার করে দিতেও দেখেছি !
যাইহোক, যা বলছিলাম __আমাদের গ্রামের ওই ছেলেটিকে (ধীরুভাই) ন’কাকা যা বলেছিলেন, পরবর্তীতে আমরা দেখেছিলাম তা ছিল একদম যথাযথ ! ধীরুভাই রোজগার করেছিল – কিন্তু টাকা-পয়সা হাতে রাখতে পারেনি । তারপর তো অল্প বয়সে হঠাৎ করে দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে ছেলেটি মারা গেল! মারা যাবার রাত্রিটায় ও কলকাতা মেডিকেল কলেজে ভর্তি ছিল, সেখান থেকে প্রতি ঘন্টায় ন’কাকাকে ফোন করে তার অবশ্যম্ভাবী আসন্ন মৃত্যুর আগমনের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা ও তার ওষ্ঠাগত প্রাণের কষ্ট বর্ণনা করে যাচ্ছিল ! ন’কাকা যখনই ধীরুভাই-এর জীবনের সেই শেষ রাত্রির কথার প্রসঙ্গে আসতেন, তখন যেন ব্যথায় ওনার মুখটা কেমন হয়ে যেতো – কণ্ঠস্বরে যেন সেই রাত্রির ধীরুভাই-এর আর্তি ঝড়ে পড়তো – ” আহা ! বাবা__ সেই রাত্রে ছেলেটি কত কষ্ট সহ্য করেছে ! ঘন্টায় ঘন্টায় আমাকে ফোন করে – তার আসন্ন মৃত্যুর, আর তার অসহনীয় কষ্টের খবর দিয়েছে ! বারবার বলেছে ‘ন’কাকা আপনি একটু গুরু মহারাজকে বলে দিন , যাতে আমার কষ্টটা একটু কমে ! আর যে সহ্য করতে পারছি না ন’কাকা !’ ভোর সাড়ে তিনটে-চারটেয় ধীরুভাই শেষ ফোনটি করেছিল – তারপরেই ও মারা গিয়েছিল !”
মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে গেল ধীরুভাই-এর কথা ওঠায় ! কারণ ছেলেটি আমার চাইতে বয়সে একটু ছোট হলেও – আমার খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু স্থানীয় ছিল !
এইভাবে ন’কাকার মধ্যে আমি একেবারে কাছ থেকে বহু ক্ষেত্রে তাঁর মহিমা শক্তির প্রকাশ ঘটতে দেখেছি । ন’কাকার যে অষ্টসিদ্ধি করায়ত্ত ছিল – সে ব্যাপারে তো গুরু মহারাজের কাছে আমার জানা-ই ছিল, তাই এগুলো দেখে আমি অবাক হোতাম না, বরং enjoy -ই করতাম !
গুরু মহারাজ বলতেন – ” মহিমা শক্তি ভগবানের ভগবৎ শক্তির প্রকাশ ৷” সুতরাং ন’কাকার মহিমা শক্তির প্রকাশ দেখে আমার মনে হতো ন’কাকার মধ্যে ভগবৎ শক্তির প্রত্যক্ষ ক্রিয়া চলছে – আর তা কাছ থেকে দেখতে পেরে – আমিও নিজেকে ধন্য বলে মনে করতাম !
তবে এটাও ঠিক যে, আমি আর ন’কাকার মহিমা কতটুকু দেখেছি, কত শত ভক্তরা যে তাঁর মহিমা শক্তির কতরকম প্রকাশ ঘটতে দেখেছে – তার কি কোন ইয়ত্তা আছে !
একবার ন’কাকার সাথে দীঘার কাছে তাজপুর আশ্রমে গেছিলাম, সে বার সঙ্গে ন’কাকিমাও ছিলেন, আরও দু-চারজন আশ্রমের ভক্ত ছিল ৷ আশ্রম থেকে গুরু মহারাজদের সেই বিখ্যাত ‘টাইটান’ গাড়িটা [ওটাই আশ্রমের প্রথম গাড়ি, ওটা একটা জিপ গাড়ি ছিল _শেষের দিকে গুরুমহারাজ ঐ গাড়িতে চেপে এখানে ওখানে যাওয়া আসা করতেন। শেষ দিনে গুরুমহারাজ অসুস্থ হলে ওনাকে ঐ গাড়ি করেই বর্ধমান নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।] নিয়ে-ই যাওয়া হয়েছিল (তখন দু-এক বছর হলো গুরুমহারাজ শরীর ছেড়েছেন) ! সমুদ্রের ধার বরাবর ভিজে বালি দিয়ে তখন ঐ আশ্রমে যাবার রাস্তা ছিল – তখনো তাজপুর বর্তমানের ঝাঁ-চকচকে রাস্তা বিশিষ্ট শহর হয়ে ওঠেনি । সেদিন প্রায় আমরা আশ্রমের কাছে চলেই এসেছিলাম – হঠাৎ করে প্রবল বৃষ্টি আরম্ভ হ’ল, আর গাড়ির পিছনের চাকা বালিতে এমনভাবে বসে গেল যে আর কোনভাবেই তোলা গেল না ! সে কি বিপদাপন্ন অবস্থা !! গাড়ি চালিয়ে নিয়ে গিয়েছিল আশ্রমের ছেলে নব-ভাই, যে পরবর্তীতে আশ্রমে ব্রহ্মচর্য এবং সন্ন্যাস নিয়েছে, এখন ওর নাম স্বামী করুনানন্দ। সেদিন ঐ ছেলেটি সমুদ্রের ভিজে বালি থেকে গাড়িটিকে তোলার খুব চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিল। পরে অবশ্য স্থানীয় মানুষের সহায়তায় গাড়ি তোলা হয়েছিল। ন’কাকা, ন’কাকীমাসহ আমাদের সবাইকে গাড়ি থেকে নেমে ভিজতে ভিজতে আশ্রম অব্দি যেতে হয়েছিল ! পরে ন’কাকাকে জিজ্ঞাসা করে জেনেছিলাম যে, আমাদের যেখানে আশ্রমটি হয়েছে, ওখানে বেশ কয়েকটি প্রেতযোনী আশ্রয় নিয়েছিল – ওরাই ন’কাকাকে ওখানে আগিয়ে গিয়ে Reception করে নিয়ে এসেছিল এবং তাদের মুক্তির ব্যবস্থা নিজেরাই করে নিয়েছিল ! [ক্রমশঃ]
সেইসময় অর্থাৎ যখন ন’কাকা প্রথমবার আমাদের দেশের বাড়ি রশুই গ্রামে এসেছিলেন তখন উনি ধীরুভাই(আমাদের গ্রামের একটি যুবক, গুরুমহারাজ এবং ন’কাকার ভক্ত) -এর বাড়িতেও গিয়েছিলেন । ওর মা তখনো বেঁচে ছিলেন ! ওর বাড়ি থেকে ফেরার পথে ন’কাকা ধীরুভাইকে বলেছিলেন – ” তুমি যখন যা রোজগার করবে সেই সমস্ত টাকার কিছুটা হাত খরচ হিসাবে রেখে, বাকীটা__ হয় তোমার মায়ের হাতে দিয়ে দেবে অথবা স্ত্রীর ব্যাংক একাউন্টে জমা করে দেবে , নিজের হাতে রাখবে না ৷”
এই কথাটা উনি কেন ওই ছেলেটিকে বললেন – পরে আমি ন’কাকাকে একান্তে সেই কথাটা জিজ্ঞাসা করেছিলাম ! উত্তরে উনি আমাকে বলেছিলেন – ” বাবা ! ওই ছেলের হাতে টাকা থাকবে না, ও রোজগার করতে পারে – কিন্তু রাখতে পারবে না । যদি ছেলেটি ওর রোজগারের অর্থ –ওর মা অথবা ওর স্ত্রীর হাতে দেয় – তাহলে তা থাকবে, তাই বললাম ৷”আমি ভাবছিলাম_ এই কথাগুলি তো ন’কাকা ওর হাত দেখে বলেন নি, তাহলে কি ওর কপাল দেখে বললেন _অথবা ওর বাড়ি বা পরিবেশ দেখে ? অবশ্য আমি ন’কাকাকে অনেকের হাত দেখতে দেখেছি – অবশ্যই এটা ওনার আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে । ন’কাকা যে হাত দেখতে বা কোষ্ঠী বিচার করতে জানতেন_এই ব্যাপারটা বাইরের প্রায় কেউই জানতো না বা বেশিরভাগ ভক্তই ওনাকে হাত দেখাবার বা ভাগ্য গণনা করার প্রয়োজনই মনে করতো না ! কিন্তু ওনার আত্নীয়-স্বজনদের বাড়িতে গিয়ে তাদের অনুরোধে বা উপরোধে উনি ওই কাজ তো করেছেন-ই – অনেক বাড়িতে ওনাকে কোষ্ঠী-বিচার করে দিতেও দেখেছি !
যাইহোক, যা বলছিলাম __আমাদের গ্রামের ওই ছেলেটিকে (ধীরুভাই) ন’কাকা যা বলেছিলেন, পরবর্তীতে আমরা দেখেছিলাম তা ছিল একদম যথাযথ ! ধীরুভাই রোজগার করেছিল – কিন্তু টাকা-পয়সা হাতে রাখতে পারেনি । তারপর তো অল্প বয়সে হঠাৎ করে দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে ছেলেটি মারা গেল! মারা যাবার রাত্রিটায় ও কলকাতা মেডিকেল কলেজে ভর্তি ছিল, সেখান থেকে প্রতি ঘন্টায় ন’কাকাকে ফোন করে তার অবশ্যম্ভাবী আসন্ন মৃত্যুর আগমনের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা ও তার ওষ্ঠাগত প্রাণের কষ্ট বর্ণনা করে যাচ্ছিল ! ন’কাকা যখনই ধীরুভাই-এর জীবনের সেই শেষ রাত্রির কথার প্রসঙ্গে আসতেন, তখন যেন ব্যথায় ওনার মুখটা কেমন হয়ে যেতো – কণ্ঠস্বরে যেন সেই রাত্রির ধীরুভাই-এর আর্তি ঝড়ে পড়তো – ” আহা ! বাবা__ সেই রাত্রে ছেলেটি কত কষ্ট সহ্য করেছে ! ঘন্টায় ঘন্টায় আমাকে ফোন করে – তার আসন্ন মৃত্যুর, আর তার অসহনীয় কষ্টের খবর দিয়েছে ! বারবার বলেছে ‘ন’কাকা আপনি একটু গুরু মহারাজকে বলে দিন , যাতে আমার কষ্টটা একটু কমে ! আর যে সহ্য করতে পারছি না ন’কাকা !’ ভোর সাড়ে তিনটে-চারটেয় ধীরুভাই শেষ ফোনটি করেছিল – তারপরেই ও মারা গিয়েছিল !”
মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে গেল ধীরুভাই-এর কথা ওঠায় ! কারণ ছেলেটি আমার চাইতে বয়সে একটু ছোট হলেও – আমার খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু স্থানীয় ছিল !
এইভাবে ন’কাকার মধ্যে আমি একেবারে কাছ থেকে বহু ক্ষেত্রে তাঁর মহিমা শক্তির প্রকাশ ঘটতে দেখেছি । ন’কাকার যে অষ্টসিদ্ধি করায়ত্ত ছিল – সে ব্যাপারে তো গুরু মহারাজের কাছে আমার জানা-ই ছিল, তাই এগুলো দেখে আমি অবাক হোতাম না, বরং enjoy -ই করতাম !
গুরু মহারাজ বলতেন – ” মহিমা শক্তি ভগবানের ভগবৎ শক্তির প্রকাশ ৷” সুতরাং ন’কাকার মহিমা শক্তির প্রকাশ দেখে আমার মনে হতো ন’কাকার মধ্যে ভগবৎ শক্তির প্রত্যক্ষ ক্রিয়া চলছে – আর তা কাছ থেকে দেখতে পেরে – আমিও নিজেকে ধন্য বলে মনে করতাম !
তবে এটাও ঠিক যে, আমি আর ন’কাকার মহিমা কতটুকু দেখেছি, কত শত ভক্তরা যে তাঁর মহিমা শক্তির কতরকম প্রকাশ ঘটতে দেখেছে – তার কি কোন ইয়ত্তা আছে !
একবার ন’কাকার সাথে দীঘার কাছে তাজপুর আশ্রমে গেছিলাম, সে বার সঙ্গে ন’কাকিমাও ছিলেন, আরও দু-চারজন আশ্রমের ভক্ত ছিল ৷ আশ্রম থেকে গুরু মহারাজদের সেই বিখ্যাত ‘টাইটান’ গাড়িটা [ওটাই আশ্রমের প্রথম গাড়ি, ওটা একটা জিপ গাড়ি ছিল _শেষের দিকে গুরুমহারাজ ঐ গাড়িতে চেপে এখানে ওখানে যাওয়া আসা করতেন। শেষ দিনে গুরুমহারাজ অসুস্থ হলে ওনাকে ঐ গাড়ি করেই বর্ধমান নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।] নিয়ে-ই যাওয়া হয়েছিল (তখন দু-এক বছর হলো গুরুমহারাজ শরীর ছেড়েছেন) ! সমুদ্রের ধার বরাবর ভিজে বালি দিয়ে তখন ঐ আশ্রমে যাবার রাস্তা ছিল – তখনো তাজপুর বর্তমানের ঝাঁ-চকচকে রাস্তা বিশিষ্ট শহর হয়ে ওঠেনি । সেদিন প্রায় আমরা আশ্রমের কাছে চলেই এসেছিলাম – হঠাৎ করে প্রবল বৃষ্টি আরম্ভ হ’ল, আর গাড়ির পিছনের চাকা বালিতে এমনভাবে বসে গেল যে আর কোনভাবেই তোলা গেল না ! সে কি বিপদাপন্ন অবস্থা !! গাড়ি চালিয়ে নিয়ে গিয়েছিল আশ্রমের ছেলে নব-ভাই, যে পরবর্তীতে আশ্রমে ব্রহ্মচর্য এবং সন্ন্যাস নিয়েছে, এখন ওর নাম স্বামী করুনানন্দ। সেদিন ঐ ছেলেটি সমুদ্রের ভিজে বালি থেকে গাড়িটিকে তোলার খুব চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিল। পরে অবশ্য স্থানীয় মানুষের সহায়তায় গাড়ি তোলা হয়েছিল। ন’কাকা, ন’কাকীমাসহ আমাদের সবাইকে গাড়ি থেকে নেমে ভিজতে ভিজতে আশ্রম অব্দি যেতে হয়েছিল ! পরে ন’কাকাকে জিজ্ঞাসা করে জেনেছিলাম যে, আমাদের যেখানে আশ্রমটি হয়েছে, ওখানে বেশ কয়েকটি প্রেতযোনী আশ্রয় নিয়েছিল – ওরাই ন’কাকাকে ওখানে আগিয়ে গিয়ে Reception করে নিয়ে এসেছিল এবং তাদের মুক্তির ব্যবস্থা নিজেরাই করে নিয়েছিল ! [ক্রমশঃ]