[গুরুমহারাজ এবং ন’কাকার কথা বলতে গিয়ে বিভিন্ন মহাপুরুষদের কথাও চলে এসেছে। আগের দিন বলা হয়েছিল যে, আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য সাধন-ভজন করা একান্ত জরুরি। স্থুল শরীরে যদি সাধন সম্পূর্ণ না হয় তাহলে সুক্ষশরীরেও সাধন করতে হয়! ]
অবশ্য এতসব কথা যেগুলো বলা হোলো, বিভিন্ন মহাপুরুষের – গুরুকুলের Reference দেওয়া হোলো, এগুলো কোনোটাই গুরুমহারাজ বা ন’কাকার ক্ষেত্রে খাটে না ! কেন খাটে না – কারণ ওনারা যে সাক্ষাৎ করুণার অবতার ছিলেন, আর এইটা আমরা একদম কাছ থেকে দেখেছিলাম ! ওনাদের ক্ষেত্রে কোন শর্ত-ই কার্যকরী হবে না – কোন নিয়মই খাটবে না ।
ন’কাকার প্রসঙ্গে নানা কথা বলতে গিয়ে গুরু মহারাজের কথাও অবশ্যম্ভাবীভাবে এসে যাচ্ছে । দুই ‘মহাত্মা-মহাজন’ পাশাপাশি একই স্থানে থেকে লীলা করে গেলেন, ফলে একজনের কথা বলতে গেলে – অন্য জনের কথা তো আসবেই ৷ তাছাড়া গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দ ছিলেন ষড়ৈশ্বর্যবান ভগবানের মূর্ত প্রকাশ ! সহস্র সহস্র লোকের মধ্যেও যদি উনি থাকতেন – তাহলেও যে কারো চোখ ওনার উপরেই পড়তে বাধ্য হতো ! এ তো গেল তাঁর অলৌকিক রূপের কথা! তাঁর গুণের কথা _কোনো মহাজন-ই আজ পর্যন্ত বর্ননা করে শেষ করতে পারেনি, আমি আর কি বলব!!
ওনার (স্বামী পরমানন্দ) কাছে বসে 5/10 মিনিট যদি কেউ ওনার শ্রীমুখের কথা শুনতো – তাহলে সে এতটাই মুগ্ধ হোতো যে, আর ওনার সিটিং ছেড়ে উঠতেই পারতো না ! আর ওনার শ্রীমুখের কথা শুনে সে ভাবতো – ‘ আরে ! এমন কথা তো কখনও – কোথাও শুনিনি ! এ যে সব নতুন কথা !’ এরপরে যে ব্যাপারটি হোতো তা হলো – যদি ওই ব্যক্তি গুরুমহারাজের ঘরে গিয়ে একবার তাঁর সাথে একান্ত সাক্ষাৎকার কোরতো, তাহলেই সেই ব্যক্তি গুরুজীর অপার্থিব-অলৌকিক করুণা ও প্রেমের স্পর্শ পেয়ে যেতো ! ওই ব্যক্তি বুঝতে পারতো – তার শরীর-মন কেমন যেন হালকা হয়ে যাচ্ছে, জীবনে এই যেন প্রথম বুক ভরে নিঃশ্বাস নেওয়া গেল – যেন জগৎ-সংসার কোথায় হারিয়ে গিয়ে একটাই বোধ কাজ কোরতো – ‘শুধু আমি আছি, আর তুমি আছো !’
ন’কাকা আমাদেরকে প্রায়ই বলতেন – “বাবা ! পরমানন্দ ছিল সাক্ষাৎ যজ্ঞেশ্বর নারায়ণ ! ওর সঙ্গে কি কারো তুলনা হয় ? ওর তুলনা শুধুমাত্র ও নিজেই ! ওকে দেখলেই মনে হোতো যেন চৈতন্য মহাপ্রভু অথবা ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ লীলা করতে শরীর ধরে এসেছে !” ন’কাকা যখনই গুরু মহারাজ সম্বন্ধে কোনো কথা বলতেন, তখন সেই কথায় এত প্রগাঢ় শ্রদ্ধা মিশে থাকতো যে, আমরা বুঝতে পারতাম গুরু মহারাজের প্রতি আমাদের ভক্তি বা ভালোবাসা কতটা ‘জোলো’, ‘ঘনত্বে’ কতটা কম !
আমরা প্রায়ই শুনতাম__’গুরু মহারাজের সাথে ন’কাকার মাঝে মাঝেই যোগাযোগ হয় – গুরু মহারাজ রাত্রিতে ন’কাকার কাছে এসে নানান আলোচনা করেন !’___ তাহলে এই মানুষটা(ন’কাকা) কে ? কই আর কোনো স্থূলশরীরধারীকে তো পরমানন্দ জগতে দেখলাম না – যার কাছে গুরুমহারাজ (স্থূলশরীর ছাড়ার পর) নিয়মিত আসেন, কথা বলেন – আলোচনা করেন !
ন’কাকার মধ্যেও যে ঐশী শক্তির প্রকাশ প্রকটভাবে ছিল তা আমরা যারা তাঁর কণামাত্র কৃপা পেয়েছি – তারা তো বারবার উপলব্ধি করেছি, প্রত্যক্ষ করেছি ! এই ক’দিন আগেই আদিত্যপুর আশ্রমের নন্দ মহারাজ বলেছিলেন – একদিন উনি আশ্রমের কোনো একটা সমস্যার ব্যাপারে খুবই চিন্তায় পড়ে গেছিলেন ! এতটাই চিন্তায় পড়েছিলেন যে, উনি রাত্রে ঘুমােতে পারছিলেন না ! রাত্রি দশটা-এগারোটার সময় হঠাৎ করে ন’কাকার ফোন – ” দুশ্চিন্তা করে কি আর করবে বাবা ! যাঁর কাজ তিনি ঠিক করিয়ে নেবেন ! আমাদের চিন্তা করাই বৃথা ! শুয়ে পড়ো, বিশ্রাম নাও বাবা । সকাল থেকে তোমার আবার নানা কাজ! যাই হোক, ওসব নিয়ে তোমাকে আর দুশ্চিন্তা করতে হবে না !”
একরাশ ভরসা নিয়ে দুশ্চিন্তামুক্ত নন্দ মহারাজ পরম নিশ্চিন্তে ঘুমোতে গেলেন । এমনই ভরসাস্থল ছিলেন ন’কাকা !!
তবে নন্দ মহারাজের সাথে ঘটে যাওয়া ঐ ঘটনার যে উপলব্ধি, এমন উপলব্ধি ন’কাকার বহু ভক্তদের জীবনেই ঘটেছে ! বলা যায় – প্রায় সকল ভক্তদের জীবনেই ঘটেছে ৷ তবে রামায়ণে বর্নিত রয়েছে সীতার বনবাস কালে–বালকাবস্থায় লব-কুশ যখন মহাভক্ত-মহাবীর হনুমানকে ধরে বেঁধে সীতা মায়ের কাছে নিয়ে গেল, তখন তারা মায়ের কাছে গিয়ে তাদের কৃতিত্বের জন্য খুব গৌরব করেছিল ! এইটা দেখে হনুমান বলেছিলেন – ” ওরে কুশীলব – কিসের করিস গৌরব / ধরা না দিলে কি পারিস ধরিতে !” এইটা কিন্তু যে কোনো মহাপুরুষের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য ! ওনারা যার যার কাছে ধরা দেন – তারাই মহাপুরুষের মহিমা জানতে পারে, বুঝতে পারে ! আবার অপরদিকে __পাশাপাশি অথবা কাছাকাছি থেকেও হয়তো অনেকে তাঁকে কিছুই বুঝতে পারে না !!! [ক্রমশঃ]