[ মহাপুরুষদের বাড়ির লোক বা কাছাকাছি স্থানের মানুষজনেরা, বাইরের ভক্তদের মতো সেই মহাপুরুষকে অতটা বেশি (মহাপুরুষ’- হিসাবে) মান্যতা দেন না, এইসব নিয়েই আমাদের কথা হচ্ছিলো। ]
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের জীবনেও এইরকম ঘটনা আমরা প্রত্যক্ষ করেছিলাম, এমন ঘটনা ঘটেছিল সারদা মা-য়ের জীবনেও ৷ সারদা মায়ের নিজের দাদা, শেষ বয়স পর্যন্ত সারদা মাকে নিজের ছোট বোন ‘সারু’-ই ভাবতেন ৷ একবার উনি সরাসরি সারদা মাকে জিজ্ঞাসাই করে বসেছিলেন, “হ্যাঁরে সারু ! তোকে যে বয়স্ক বয়স্ক লোকজন, এমনকি সাধু-সন্তরাও ‘মা জগদম্বা’ জ্ঞানে প্রণাম করে – আর তুই তাদের প্রণাম গ্রহণ করিস । কিন্তু আমরা তো তোর মধ্যে আলাদা কিছুই দেখতে পাই না ! তুই তো আমাদের সেই ‘সারু’-ই আছিস !” মা হেসে বলেছিলেন – ” হ্যাঁ দাদা ! তোমাকে ওসব নিয়ে ভাবতে হবে না – তোমার কাছে আমি সেই ছোট বোন ‘সারু’-ই আছি !”
গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দের জীবনেও আমরা দেখেছি তাঁর পৈতৃকবাড়ি কৃষ্ণদেবপুরের লোকজন কতটাই বা তাঁকে নিতে পেরেছিল ! যখন ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তের লোক, এমনকি ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মানুষজনও বনগ্রামে মধুলোভী ভ্রমরের মতো ঝাঁকে ঝাঁকে এসে জড়ো হচ্ছিল – তখন কৃষ্ণদেবপুরের লোকজন কোথায় ? গুরু মহারাজের বাড়ির লোকেদের সাথেও কথা বলে দেখেছি – ওনারাও গুরু মহারাজকে ‘ভগবান’ ভাবতে সত্যি সত্যিই কষ্ট পেতেন । কথা উঠলেই সেই ছোটবেলার কথা তুলে – বালক রবীনের কি কি ত্রুটি ছিল – সেই দিকটাই যেন বেশি করে তুলে ধরতেন ! তাঁর ঐশ্বর্যের কথা, তাঁর কোন ঐশী শক্তির কথা – কখনোই বলতেন না তাঁরা ৷ সুতরাং ন’কাকার ক্ষেত্রেও সেই রকমটাই হবে — তাতে আর বিচিত্র কি !
এখন আমরা আবার ফিরে যাই বিভিন্ন ভক্তদের সাথে ন’কাকার সম্পর্কের কথায় ! গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের দীক্ষিত শিষ্যদের মধ্যে যে কজন ন’কাকাকেও তাদের জীবন-তরীর অন্যতম কর্ণধার বা friend-philosopher এবং guide হিসাবে মেনে নিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে একজন ছিল সিঙ্গুরের (কামারকুন্ডু) পল্লব ৷ পল্লব এবং ওর স্ত্রী মুকু (বর্ধমানের গুরু মহারাজের ভক্ত হীরুদার বোন) ন’কাকাকে নিজের বাবার মতোই শ্রদ্ধা কোরতো । প্রায়ই ওরা ন’কাকাকে ওদের বাড়িতে নিয়ে যেতো এবং ন’কাকার সেবা-যত্ন করার সুযোগ গ্রহণ কোরতো ।
বনগ্রাম আশ্রমের বাগানের কাজ করতো বিশু ভাই বা বিশ্বনাথ ব্রহ্মচারী! গুরুমহারাজের শরীর ছাড়ার পর ওই ব্রহ্মচারী খানাকুল-এর কাছে একটি নিজস্ব আশ্রম বানিয়েছে ৷ বনগ্রামে থাকাকালীন ন’কাকা ওই ব্রহ্মচারীকে খুব স্নেহ করতেন । ওই ছেলেটিও ন’কাকাকে বিশেষ শ্রদ্ধা করতো এবং মর্যাদা দিতো ! ফলে বিশু ব্রহ্মচারী যখন ওখানে আশ্রম বানালো – তখন তার অনুরোধে ন’কাকাকে বছরে অন্ততঃ একবার ওখানে যেতেই হোতো ! ওইখানে আর একজন ভক্তিমতী মা (চম্পা মা) ছিলেন, যিনি নিজে এবং তাঁর স্বামীও ন’কাকাকে খুবই শ্রদ্ধা করতেন, সম্ভবতঃ চম্পা মায়ের স্বামী ন’কাকার কাছে দীক্ষাও নিয়েছিলেন ৷
ওই বিশু ব্রহ্মচারীর কাছে বা চম্পা মায়ের বাড়ি গেলেই ন’কাকা পল্লবের বাড়িতেও অবশ্যই যেতেন । 2018 সালে যেবার ন’কাকা শরীর ছাড়লেন – তার ঠিক আগে আমি ন’কাকার কাছে আব্দার জানিয়েছিলাম যে – এবার ন’কাকা ওই জায়গাগুলিতে গেলে যেন আমাকেও সঙ্গে নেন ! ন’কাকা রাজীও হয়েছিলেন!
দেখুন, তখনও পর্যন্ত উনি কিছুই আমাকে বললেন না, বরং বললেন _’তা যাবে বই কি ‘! কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই উনি স্থূলশরীর ছেড়ে দেওয়ায় – আমার এই সাধ আর মিটলো না !
পল্লব সম্বন্ধে ন’কাকা আমার কাছে খুবই প্রশংসা করতেন ৷ বলেছিলেন ওই ছেলেটি যা রোজগার করে (পল্লব ইন্ডিয়ান রেলওয়েতে চাকরি করে)– তা ও একা খায় না, অনেককেই দিয়ে খায় ! আশ্রমের মুরারী (স্বামী নিষ্কামানন্দ)-কে কিছু দেয় – আমাকেও দেয় ।” পল্লব আমারও খুব ভালো বন্ধু – তাই আমি জানি সে পরমানন্দ মিশনের আরও অনেককেই বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য অর্থ সাহায্য করে।
ন’কাকা, গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের কথার-ই অনুরণন করে বলেছিলেন, ” বাবা ! প্রচুর অর্থ মানুষকে বিপথগামী-ই করে বেশি ! তার চেয়ে নিজের প্রয়োজনীয় অর্থ রেখে সৎকাজে বাকিটা দান করে দেওয়াই তো বুদ্ধিমানের কাজ ! তাতে-ই অর্থের সদুপযোগ হয় ৷ গুরু মহারাজ যে এই কথাগুলি বলতেন – তুমিও তো সে কথা নিজের কানেই শুনেছ, ‘কৃপণের ধন, তস্করে নেয় অথবা উশৃংখল, অমিতব্যয়ী, অনাচারী উত্তর পুরুষেরা সেই ধন নষ্ট করে !’ – তাহলে বাবা ! জেনেশুনে, অকারন সঞ্চয় করে উত্তরপুরুষের ক্ষতিসাধন করার প্রয়োজনটাই বা কি ! তাছাড়া দেখো ! যে ভালো – তার সবকিছুই তো ভালই হবে।” [ক্রমশঃ]
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের জীবনেও এইরকম ঘটনা আমরা প্রত্যক্ষ করেছিলাম, এমন ঘটনা ঘটেছিল সারদা মা-য়ের জীবনেও ৷ সারদা মায়ের নিজের দাদা, শেষ বয়স পর্যন্ত সারদা মাকে নিজের ছোট বোন ‘সারু’-ই ভাবতেন ৷ একবার উনি সরাসরি সারদা মাকে জিজ্ঞাসাই করে বসেছিলেন, “হ্যাঁরে সারু ! তোকে যে বয়স্ক বয়স্ক লোকজন, এমনকি সাধু-সন্তরাও ‘মা জগদম্বা’ জ্ঞানে প্রণাম করে – আর তুই তাদের প্রণাম গ্রহণ করিস । কিন্তু আমরা তো তোর মধ্যে আলাদা কিছুই দেখতে পাই না ! তুই তো আমাদের সেই ‘সারু’-ই আছিস !” মা হেসে বলেছিলেন – ” হ্যাঁ দাদা ! তোমাকে ওসব নিয়ে ভাবতে হবে না – তোমার কাছে আমি সেই ছোট বোন ‘সারু’-ই আছি !”
গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দের জীবনেও আমরা দেখেছি তাঁর পৈতৃকবাড়ি কৃষ্ণদেবপুরের লোকজন কতটাই বা তাঁকে নিতে পেরেছিল ! যখন ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তের লোক, এমনকি ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মানুষজনও বনগ্রামে মধুলোভী ভ্রমরের মতো ঝাঁকে ঝাঁকে এসে জড়ো হচ্ছিল – তখন কৃষ্ণদেবপুরের লোকজন কোথায় ? গুরু মহারাজের বাড়ির লোকেদের সাথেও কথা বলে দেখেছি – ওনারাও গুরু মহারাজকে ‘ভগবান’ ভাবতে সত্যি সত্যিই কষ্ট পেতেন । কথা উঠলেই সেই ছোটবেলার কথা তুলে – বালক রবীনের কি কি ত্রুটি ছিল – সেই দিকটাই যেন বেশি করে তুলে ধরতেন ! তাঁর ঐশ্বর্যের কথা, তাঁর কোন ঐশী শক্তির কথা – কখনোই বলতেন না তাঁরা ৷ সুতরাং ন’কাকার ক্ষেত্রেও সেই রকমটাই হবে — তাতে আর বিচিত্র কি !
এখন আমরা আবার ফিরে যাই বিভিন্ন ভক্তদের সাথে ন’কাকার সম্পর্কের কথায় ! গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের দীক্ষিত শিষ্যদের মধ্যে যে কজন ন’কাকাকেও তাদের জীবন-তরীর অন্যতম কর্ণধার বা friend-philosopher এবং guide হিসাবে মেনে নিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে একজন ছিল সিঙ্গুরের (কামারকুন্ডু) পল্লব ৷ পল্লব এবং ওর স্ত্রী মুকু (বর্ধমানের গুরু মহারাজের ভক্ত হীরুদার বোন) ন’কাকাকে নিজের বাবার মতোই শ্রদ্ধা কোরতো । প্রায়ই ওরা ন’কাকাকে ওদের বাড়িতে নিয়ে যেতো এবং ন’কাকার সেবা-যত্ন করার সুযোগ গ্রহণ কোরতো ।
বনগ্রাম আশ্রমের বাগানের কাজ করতো বিশু ভাই বা বিশ্বনাথ ব্রহ্মচারী! গুরুমহারাজের শরীর ছাড়ার পর ওই ব্রহ্মচারী খানাকুল-এর কাছে একটি নিজস্ব আশ্রম বানিয়েছে ৷ বনগ্রামে থাকাকালীন ন’কাকা ওই ব্রহ্মচারীকে খুব স্নেহ করতেন । ওই ছেলেটিও ন’কাকাকে বিশেষ শ্রদ্ধা করতো এবং মর্যাদা দিতো ! ফলে বিশু ব্রহ্মচারী যখন ওখানে আশ্রম বানালো – তখন তার অনুরোধে ন’কাকাকে বছরে অন্ততঃ একবার ওখানে যেতেই হোতো ! ওইখানে আর একজন ভক্তিমতী মা (চম্পা মা) ছিলেন, যিনি নিজে এবং তাঁর স্বামীও ন’কাকাকে খুবই শ্রদ্ধা করতেন, সম্ভবতঃ চম্পা মায়ের স্বামী ন’কাকার কাছে দীক্ষাও নিয়েছিলেন ৷
ওই বিশু ব্রহ্মচারীর কাছে বা চম্পা মায়ের বাড়ি গেলেই ন’কাকা পল্লবের বাড়িতেও অবশ্যই যেতেন । 2018 সালে যেবার ন’কাকা শরীর ছাড়লেন – তার ঠিক আগে আমি ন’কাকার কাছে আব্দার জানিয়েছিলাম যে – এবার ন’কাকা ওই জায়গাগুলিতে গেলে যেন আমাকেও সঙ্গে নেন ! ন’কাকা রাজীও হয়েছিলেন!
দেখুন, তখনও পর্যন্ত উনি কিছুই আমাকে বললেন না, বরং বললেন _’তা যাবে বই কি ‘! কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই উনি স্থূলশরীর ছেড়ে দেওয়ায় – আমার এই সাধ আর মিটলো না !
পল্লব সম্বন্ধে ন’কাকা আমার কাছে খুবই প্রশংসা করতেন ৷ বলেছিলেন ওই ছেলেটি যা রোজগার করে (পল্লব ইন্ডিয়ান রেলওয়েতে চাকরি করে)– তা ও একা খায় না, অনেককেই দিয়ে খায় ! আশ্রমের মুরারী (স্বামী নিষ্কামানন্দ)-কে কিছু দেয় – আমাকেও দেয় ।” পল্লব আমারও খুব ভালো বন্ধু – তাই আমি জানি সে পরমানন্দ মিশনের আরও অনেককেই বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য অর্থ সাহায্য করে।
ন’কাকা, গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দের কথার-ই অনুরণন করে বলেছিলেন, ” বাবা ! প্রচুর অর্থ মানুষকে বিপথগামী-ই করে বেশি ! তার চেয়ে নিজের প্রয়োজনীয় অর্থ রেখে সৎকাজে বাকিটা দান করে দেওয়াই তো বুদ্ধিমানের কাজ ! তাতে-ই অর্থের সদুপযোগ হয় ৷ গুরু মহারাজ যে এই কথাগুলি বলতেন – তুমিও তো সে কথা নিজের কানেই শুনেছ, ‘কৃপণের ধন, তস্করে নেয় অথবা উশৃংখল, অমিতব্যয়ী, অনাচারী উত্তর পুরুষেরা সেই ধন নষ্ট করে !’ – তাহলে বাবা ! জেনেশুনে, অকারন সঞ্চয় করে উত্তরপুরুষের ক্ষতিসাধন করার প্রয়োজনটাই বা কি ! তাছাড়া দেখো ! যে ভালো – তার সবকিছুই তো ভালই হবে।” [ক্রমশঃ]