[ আগের দিন কুষ্ঠ রোগীদের দ্বীপের একটি গল্পের অবতারণা করে আমরা আলোচনা করেছিলাম গুরুমহারাজের ন্যায় হরির অবতার অথবা ন’কাকার ন্যায় শিবাবতার-রা যখন শরীর ধারন করেন তখন প্রথমটায় তাদেরকে সাধারণ মানুষের ন্যায় আচরণ করতে হয়। আর এটা করতে হয় _শুধুমাত্র লোকশিক্ষার জন্য। ]
গুরু মহারাজ এই গল্পটি বলে আমাদের এটাই বুঝেছিলেন – অবতারপুরুষ বা বিভিন্ন মহাপুরুষগণ যখন যখনই পৃথিবীতে জন্ম-‘গ্রহণ’ করেন [মহাপুরুষরা বা অবতার পুরুষরা ‘জন্মান’ _এই কথাটা না বলে ‘জন্মগ্রহণ করেন’ _এই কথা বলাটাই উচিত ! কারণ আমরা সাধারন মানুষেরা জন্ম-মৃত্যুর চক্রে ঘুরে ঘুরে মরছি, অর্থাৎ একবার জন্মাছি – কিছুকাল বেঁচে থাকছি – ভালো-মন্দ নানা রকম কাজ করছি – তারপর নানা কর্মফল সৃষ্টি করে মারা যাচ্ছি ! তার ফলস্বরূপ আবার জন্মাচ্ছি ! কিন্তু মহাপুরুষগণের ক্ষেত্রে এমনটা হয় না – ওনারা যেন ‘পাকা ঘুঁটি’, ওনারা ঈশ্বরের Reserve Beneh-এ রয়েছেন – কোনো সময়ে কোনো স্থানের প্রয়োজনে সেই Reserve Bench থেকে ওনাদের পাঠানো হয় এবং তাঁরা তাঁদের নির্দিষ্ট কাজটি সম্পন্ন করে আবার স্ব-অবস্থানে ফিরে যান । জগতের মায়া-মোহ, লোভ-লালসার আবর্তে এঁদের পড়তে হয় না বা এইগুলি তাঁদেরকে ফাঁসাতে পারে না । সুতরাং এঁরা যুগপ্রয়োজনে – জীবের কল্যাণে ঈশ্বরের ইচ্ছায় শরীর ধারণ করেন। আর ঈশ্বরের অবতরণ যখন হয়, তখন তো সম্পূর্ণ পৃথক নিয়ম, সেখানে তো সরাসরি শরীরধারন! তাই বলা হয় অবতার পুরুষ এবং মহাপুরুষগণ ‘জন্মগ্রহণ করেন’!]_ তখন তাঁদেরকেও প্রথম দিকটায় সাধারণ মানুষের মতোই আচরণ করতে হয় ! আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতোই সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার জগতের মধ্যে দিয়ে তাঁদেরকে কিছুটা সময় অতিবাহিত করতে হয় ৷ তাঁদেরকে দেখাতে হয় যে সাধন-ভজনের দ্বারাই তাঁরা ধীরে ধীরে ঐশী শক্তির অধিকারী হয়ে উঠেছেন – তবেই সাধারণ মানুষেরা তাঁকে গ্রহণ করে, অন্যথায় ‘দূরের মানুষ’ বলে তাঁর কাছ থেকে সর্বদা তারা তফাতে থাকবে । কিন্তু এই রকমটা হোলে যে ওই মহাপুরুষের আরব্ধ কাজটি সম্পন্ন হবে না, তাঁর যে মানুষের সান্নিধ্য দরকার – তাদের দেহের কুষ্ঠ-মনের কুষ্ঠ নিবারণের জন্যই যে তাঁর আসা ! তাই মানুষকে বাদ দিয়ে সেই মানুষ-রতন কি করে থাকতে পারে ! লোক শিক্ষার প্রয়োজনেই মহাপুরুষদের সাধন-ভজন !
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণকে এবং মহাভৈরব বামদেবকে ছোটবেলা থেকেই নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে কাটাতে হয়েছে, জীবনে প্রচুর সাধন-ভজন করতে হয়েছে_ শুধুমাত্র লোকশিক্ষা বা লোকসংগ্রহের জন্য ! ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁর সাধনক্ষেত্র হিসাবে দক্ষিণেশ্বরের ‘পঞ্চবটী’ স্থানটিকে বেছে না নিয়ে তো তৎকালীন এঁদো গ্রাম কামারপুকুরেই সেটা সেরে নিতে পারতেন – কিন্তু তা তিনি করলেন না ৷ এরও তো নির্দিষ্ট কিছু কারণ ছিল _সেগুলি তাহলে একটু আলোচনা করা যাক!
তখন কলকাতাকে কেন্দ্র করেই সমগ্র ভারতবর্ষের শিক্ষা-দীক্ষা, মেধা-মনীষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি-রাজনীতি সবকিছুই কেন্দ্রীভূত ছিল । তাই ঠাকুর তাঁর কর্মকেন্দ্র হিসাবে বাছলেন কলকাতার উপকণ্ঠের কোনো স্থানকে ! আর সেই স্থানটি ই ছিল দক্ষিণেশ্বর! দক্ষিণেশ্বরের পঞ্চবটিতে ভারতবর্ষে প্রচলিত প্রায় সমস্ত প্রকারের সাধন-পদ্ধতিতে সাধন করে, তিনি সব পদ্ধতিকেই মর্যাদা দিলেন, পদ্ধতিগুলিকে আরো শক্তিশালী করে গেলেন ।
সেই সময় দক্ষিনেশ্বর অঞ্চলের বহুলোকে সাধনরত অবস্থায় তাঁকে দেখেছে __ দেখেছে গঙ্গার তীরে তিনি মাটিতে মুখ ঘষছেন, আর কেঁদে কেঁদে বলছেন, ” মা আরো একটা দিন কেটে গেল – তাও দেখা দিলি না !” পথচলতি মানুষেরা এই দৃশ্য দেখে পরস্পরে বলাবলি করেছে, ” আহা ! ওর বুঝি মা মরেছে ! তাই অমন করে কাঁদছে !”
অথচ দেখুন __কামারপুকুরে গদাইয়ের ভগবৎ-রুপের বাল্যলীলা, চিনু শাঁখারী প্রত্যক্ষ করেছেন, তাঁকে দেখেছেন সাক্ষাৎ বালগোপাল রূপে ! গুরু মহারাজের কাছে শুনেছিলাম – হালদার পুকুরে স্নান করতে গিয়ে চিনু শাঁখারী বালক গদাইকে তাঁর আরাধ্য বালগোপাল রূপে প্রথম দেখেছিল ! দর্শন লাভ করেই ছুটে গিয়ে তাঁকে বুকে চেপে ধরেছিল চিনু শাঁখারী ! বলেছিল – ” তুমি এই বেশে আমার এত কাছে রয়েছো প্রভু ! তবু এতোদিন তোমাকে চিনতে পারিনি ! কিন্তু আজ যখন তুমি চেনা দিয়েছো – আর তোমায় ছাড়বো না ।”
বালক গদাই সেইদিনেই জগৎপতির অতিলৌকিক ঐশ্বর্য্য ভক্ত চিনিবাসের(চিনু শাঁখারী)-নিকট প্রকাশ করে তাকে আদেশ দিয়েছিলেন – ” তুমি যা দেখেছো – যা বুঝেছো তা তুমি নিজের কাছেই রেখে দেবে – বাইরে কারো কাছে কিছুই প্রকাশ করবে না।”
গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দের জীবনেও আমরা এই একই রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি পাই – মাত্র পাঁচ বছর বয়সে কৃষ্ণদেবপুর (কালনার কাছে গ্রাম) অঞ্চলের এক বৃদ্ধা বৈষ্ণবী পথ চলতে চলতে_ কচুবনে হঠাৎ করে ক্রীড়ারত ল্যাংটাে রবীনকে দেখে কেঁদে আর বাঁচে না ! কাঁদবে না কেন – সে যে তখন ওই বালককে ধড়া-চূড়াধারী বংশী-হাতে সাক্ষাৎ বালগোপাল দেখছে ! ঐ বৈষ্ণবীও বালক গুরু মহারাজকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে কামারপুকুরের চিনিবাসের মতো একই কথাই বলেছিল ! সেখানেও বালক রবীন, গদাইয়ের মতোই বলেছিলেন – ” যা দেখলে, যা বুঝলে তা একান্তই নিজের কাছেই রাখবে – বাইরে কারোর কাছে প্রকাশ করবে না।” কিন্তু এই বৈষ্ণবী চতুর ছিল – ভগবানের কাছে কথা আদায় করে নিয়ে তার মুক্তির ব্যবস্থাটি করে নিয়েছিল ৷ [ক্রমশঃ]
গুরু মহারাজ এই গল্পটি বলে আমাদের এটাই বুঝেছিলেন – অবতারপুরুষ বা বিভিন্ন মহাপুরুষগণ যখন যখনই পৃথিবীতে জন্ম-‘গ্রহণ’ করেন [মহাপুরুষরা বা অবতার পুরুষরা ‘জন্মান’ _এই কথাটা না বলে ‘জন্মগ্রহণ করেন’ _এই কথা বলাটাই উচিত ! কারণ আমরা সাধারন মানুষেরা জন্ম-মৃত্যুর চক্রে ঘুরে ঘুরে মরছি, অর্থাৎ একবার জন্মাছি – কিছুকাল বেঁচে থাকছি – ভালো-মন্দ নানা রকম কাজ করছি – তারপর নানা কর্মফল সৃষ্টি করে মারা যাচ্ছি ! তার ফলস্বরূপ আবার জন্মাচ্ছি ! কিন্তু মহাপুরুষগণের ক্ষেত্রে এমনটা হয় না – ওনারা যেন ‘পাকা ঘুঁটি’, ওনারা ঈশ্বরের Reserve Beneh-এ রয়েছেন – কোনো সময়ে কোনো স্থানের প্রয়োজনে সেই Reserve Bench থেকে ওনাদের পাঠানো হয় এবং তাঁরা তাঁদের নির্দিষ্ট কাজটি সম্পন্ন করে আবার স্ব-অবস্থানে ফিরে যান । জগতের মায়া-মোহ, লোভ-লালসার আবর্তে এঁদের পড়তে হয় না বা এইগুলি তাঁদেরকে ফাঁসাতে পারে না । সুতরাং এঁরা যুগপ্রয়োজনে – জীবের কল্যাণে ঈশ্বরের ইচ্ছায় শরীর ধারণ করেন। আর ঈশ্বরের অবতরণ যখন হয়, তখন তো সম্পূর্ণ পৃথক নিয়ম, সেখানে তো সরাসরি শরীরধারন! তাই বলা হয় অবতার পুরুষ এবং মহাপুরুষগণ ‘জন্মগ্রহণ করেন’!]_ তখন তাঁদেরকেও প্রথম দিকটায় সাধারণ মানুষের মতোই আচরণ করতে হয় ! আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতোই সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার জগতের মধ্যে দিয়ে তাঁদেরকে কিছুটা সময় অতিবাহিত করতে হয় ৷ তাঁদেরকে দেখাতে হয় যে সাধন-ভজনের দ্বারাই তাঁরা ধীরে ধীরে ঐশী শক্তির অধিকারী হয়ে উঠেছেন – তবেই সাধারণ মানুষেরা তাঁকে গ্রহণ করে, অন্যথায় ‘দূরের মানুষ’ বলে তাঁর কাছ থেকে সর্বদা তারা তফাতে থাকবে । কিন্তু এই রকমটা হোলে যে ওই মহাপুরুষের আরব্ধ কাজটি সম্পন্ন হবে না, তাঁর যে মানুষের সান্নিধ্য দরকার – তাদের দেহের কুষ্ঠ-মনের কুষ্ঠ নিবারণের জন্যই যে তাঁর আসা ! তাই মানুষকে বাদ দিয়ে সেই মানুষ-রতন কি করে থাকতে পারে ! লোক শিক্ষার প্রয়োজনেই মহাপুরুষদের সাধন-ভজন !
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণকে এবং মহাভৈরব বামদেবকে ছোটবেলা থেকেই নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে কাটাতে হয়েছে, জীবনে প্রচুর সাধন-ভজন করতে হয়েছে_ শুধুমাত্র লোকশিক্ষা বা লোকসংগ্রহের জন্য ! ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁর সাধনক্ষেত্র হিসাবে দক্ষিণেশ্বরের ‘পঞ্চবটী’ স্থানটিকে বেছে না নিয়ে তো তৎকালীন এঁদো গ্রাম কামারপুকুরেই সেটা সেরে নিতে পারতেন – কিন্তু তা তিনি করলেন না ৷ এরও তো নির্দিষ্ট কিছু কারণ ছিল _সেগুলি তাহলে একটু আলোচনা করা যাক!
তখন কলকাতাকে কেন্দ্র করেই সমগ্র ভারতবর্ষের শিক্ষা-দীক্ষা, মেধা-মনীষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি-রাজনীতি সবকিছুই কেন্দ্রীভূত ছিল । তাই ঠাকুর তাঁর কর্মকেন্দ্র হিসাবে বাছলেন কলকাতার উপকণ্ঠের কোনো স্থানকে ! আর সেই স্থানটি ই ছিল দক্ষিণেশ্বর! দক্ষিণেশ্বরের পঞ্চবটিতে ভারতবর্ষে প্রচলিত প্রায় সমস্ত প্রকারের সাধন-পদ্ধতিতে সাধন করে, তিনি সব পদ্ধতিকেই মর্যাদা দিলেন, পদ্ধতিগুলিকে আরো শক্তিশালী করে গেলেন ।
সেই সময় দক্ষিনেশ্বর অঞ্চলের বহুলোকে সাধনরত অবস্থায় তাঁকে দেখেছে __ দেখেছে গঙ্গার তীরে তিনি মাটিতে মুখ ঘষছেন, আর কেঁদে কেঁদে বলছেন, ” মা আরো একটা দিন কেটে গেল – তাও দেখা দিলি না !” পথচলতি মানুষেরা এই দৃশ্য দেখে পরস্পরে বলাবলি করেছে, ” আহা ! ওর বুঝি মা মরেছে ! তাই অমন করে কাঁদছে !”
অথচ দেখুন __কামারপুকুরে গদাইয়ের ভগবৎ-রুপের বাল্যলীলা, চিনু শাঁখারী প্রত্যক্ষ করেছেন, তাঁকে দেখেছেন সাক্ষাৎ বালগোপাল রূপে ! গুরু মহারাজের কাছে শুনেছিলাম – হালদার পুকুরে স্নান করতে গিয়ে চিনু শাঁখারী বালক গদাইকে তাঁর আরাধ্য বালগোপাল রূপে প্রথম দেখেছিল ! দর্শন লাভ করেই ছুটে গিয়ে তাঁকে বুকে চেপে ধরেছিল চিনু শাঁখারী ! বলেছিল – ” তুমি এই বেশে আমার এত কাছে রয়েছো প্রভু ! তবু এতোদিন তোমাকে চিনতে পারিনি ! কিন্তু আজ যখন তুমি চেনা দিয়েছো – আর তোমায় ছাড়বো না ।”
বালক গদাই সেইদিনেই জগৎপতির অতিলৌকিক ঐশ্বর্য্য ভক্ত চিনিবাসের(চিনু শাঁখারী)-নিকট প্রকাশ করে তাকে আদেশ দিয়েছিলেন – ” তুমি যা দেখেছো – যা বুঝেছো তা তুমি নিজের কাছেই রেখে দেবে – বাইরে কারো কাছে কিছুই প্রকাশ করবে না।”
গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দের জীবনেও আমরা এই একই রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি পাই – মাত্র পাঁচ বছর বয়সে কৃষ্ণদেবপুর (কালনার কাছে গ্রাম) অঞ্চলের এক বৃদ্ধা বৈষ্ণবী পথ চলতে চলতে_ কচুবনে হঠাৎ করে ক্রীড়ারত ল্যাংটাে রবীনকে দেখে কেঁদে আর বাঁচে না ! কাঁদবে না কেন – সে যে তখন ওই বালককে ধড়া-চূড়াধারী বংশী-হাতে সাক্ষাৎ বালগোপাল দেখছে ! ঐ বৈষ্ণবীও বালক গুরু মহারাজকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে কামারপুকুরের চিনিবাসের মতো একই কথাই বলেছিল ! সেখানেও বালক রবীন, গদাইয়ের মতোই বলেছিলেন – ” যা দেখলে, যা বুঝলে তা একান্তই নিজের কাছেই রাখবে – বাইরে কারোর কাছে প্রকাশ করবে না।” কিন্তু এই বৈষ্ণবী চতুর ছিল – ভগবানের কাছে কথা আদায় করে নিয়ে তার মুক্তির ব্যবস্থাটি করে নিয়েছিল ৷ [ক্রমশঃ]