[ শ্রীরামপুরে ন’কাকা মাষ্টারমশাই-এর(সুদর্শন বাবু) বাড়ি গেলেই আসর জমে যেতো। বহু মানুষ ঐ সভায় আসতো এবং অনেক মহান মানুষ যাঁরা মাষ্টারমশাই-এর সান্নিধ্যে এসেছিলেন তাঁদের কথা হোত…. !!]
শ্রীরামপুরে ন’কাকার আসরে অন্যান্যদের সাথে যোগ দিতে আসতেন ‘শ্রুতি’ খ্যাত পরমানন্দ ভক্ত রমেন চক্রবর্ত্তী মহাশয় ,তাছাড়াও আসতেন স্থানীয় কিছু বিশিষ্টজন এবং বাইরেরও কিছু বিশেষ ব্যক্তি ! সুদর্শন বাবু (মাষ্টারমশাই) বহুদর্শী লোক – তার সংগ্রামময় জীবনে উনি সমাজের অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে মিশেছেন , তাদের কাছে উনি অনেক ভালোবাসা পেয়েছেন, সন্মানও পেয়েছেন । মাষ্টারমশাই-এর জীবনেও কিছু সাধন-ভজন ছিল , ফলে ওনারও কিছু সাধনশক্তি ছিল! সেইসব কারণেই অনেক মানুষ ওনাকে মান্যিগন্যি করতো ৷ ব্যারাকপুরের এক সাধুবাবার কথা আগে বলেছি – সেই সাধুবাবা পরবর্ত্তী জীবনে বিবাহ করেছিলেন – তাঁর ছেলে এবং মেয়ে (তারাও খুবই ভালো মানুষ)-ও ন’কাকার সাথে দেখা করতে এসেছিল ! সাধুবাবার কিছু কথা পরে বলছি – আগে ওই আসরে আরও কারা আসতো তাদের কথা বলি । “মহাপীঠ তারাপীঠ” গ্রন্থের লেখক শ্রী বিপুল কুমার গাঙ্গুলী, মাষ্টারমশাইয়ের বন্ধুস্থানীয় ছিলেন ৷ উনি মাষ্টারমশাইয়ের বাড়ীতে প্রায়ই আসতেন । পন্ডিত অজয় চক্রবর্তীর ছাত্র একটি ছেলে এবং ওনার বাবা-মাও (যারা প্রত্যেকে দূরদর্শন , বেতার ইত্যাদির সংগীত বিভাগের সাথে যুক্ত) ন’কাকাকে গান শুনিয়ে গেছিল ৷ যার গান শুনে ন’কাকা খুবই আনন্দ পেয়েছিলেন , অনেকদিন পর্যন্ত ছেলেটির কথা উনি আমাকে বলতেন (“মাষ্টারমশাই-এর বাড়িতে গান গেয়েছিল যে ছেলেটি, তার গলাটি কিন্তু চমৎকার ছিল” _এই কথাটা উনি বলতেন।) । বৃন্দাবনে থাকেন একজন পরম বৈষ্ণব – উনিও মাষ্টারমশাই-এর ছাত্র বা কোন আত্মীয় হবেন – তিনিও শুধু ন’কাকার সাথে দেখা করার জন্যই কয়েকদিন থেকে গিয়েছিলেন (যেহেতু ঐ বৈষ্ণবের বৃন্দাবনে ফিরে যাবার জন্য যে দিনের টিকিট ছিল – তার ২/৪ দিন পরেই মাষ্টারমশাই-এর বাড়ীতে ন’কাকার যাবার কথা ছিল , তাই ঐ বৈষ্ণব থেকে গিয়েছিলেন)!
যে সাধুবাবার কথা হচ্ছিল তার কিছু কথা বলি ৷ ব্যারাকপুরে ওনাকে সবাই “ভাগাড়ে সাধু” বলে ডাকতো । ওই সাধুবাবা তন্ত্রসাধনা করতেন এবং বেশ কিছু সিদ্ধাই তার করায়ত্ত ছিল ! যেমন দূরশ্রবণ , দূরগমন , মনের কথা বুঝতে পারা , যে কোন জিনিস শূন্য থেকে সৃষ্টি করা – এসব অনেককিছুই ওনার করায়ত্ত ছিল । একবার মাষ্টারমশাই ওনার সাথে ট্রেনে করে ফিরছিলেন(বা হয়তো ওনাকে ট্রেন থেকে নামার পর_অভ্যর্থনা করে নিয়ে আসার জন্য স্টেশন অব্দি গেছিলেন) ৷ শ্রীরামপুর স্টেশন থেকে সুদর্শন বাবুর বাড়ি যাবার পথে ঐ সাধুবাবা হঠাৎ করে বলতে শুরু করছিলেন – ” বাঃ! বাঃ! ✓রী মায়ের পূজার জন্য কত ফুল , কত বেলপাতা যাচ্ছে !” মাষ্টারমশাই এই কথা গুলি শুনতে পেয়ে ওনাকে বলেছিলেন – ” এসব আপন মনে খ্যাপার মতো কি বলছো- সাধুবাবা ! ফুল – বেলপাতা কোথায় দেখতে পাচ্ছো” ? সাধুবাবা উপরের দিকে দু-হাত বাড়িয়েই (রাস্তার উপরেই , বহু লোকের সামনে) গোছা গোছা ফুল-বেলপাতা ধরে ফেললেন ! মাষ্টারমশাই সেগুলি ওনার হাত থেকে নিয়ে পকেটে পুরে ফেলেছিলেন । সুদর্শন বাবু সেই সাধুবাবাকে পরীক্ষা করার জন্য পথ চলতে চলতেই (ওনার বাড়ি থেকে স্টেশন ৪/৫-মিনিটের হাঁটাপথ)ওনার বাড়ীর দুয়ারের কাছাকাছি স্থানে এসে ঐ সাধুবাবার কাছে জানতে চেয়েছিলেন_”কি গো সাধুবাবা! এখনোও কি ফুল-বেলপাতা দেখতে পাচ্ছো”? আশ্চর্যজনকভাবে ঐ সাধুবাবা আরো একবার একগোছা বেলপাতা ও ফুল আবার শূন্য থেকে হাত বাড়িয়ে ধরে সুদর্শন বাবু (মাষ্টারমশাই) – কে দিয়েছিলেন! মাষ্টারমশাই ঐ ফুল-বেলপাতাগুলোকেও ঘরে এনে যত্ন করে রেখে দিয়েছিলেন এবং সেগুলি বেশ কয়েকদিন বেশ টাটকা-ই ছিল ! ওগুলো ম্যাজিক ফুল বা বেলপাতা ছিল না যে Vanish হয়ে যাবে!
মাষ্টারমশাই সাধুবাবার ব্যারাকপুরের বাড়ীতে যে কালীমন্দির ছিল – সেখানে কতদিন যে ইচ্ছামতো গরমাগরম খাবার খেয়েছেন তার ঠিক নাই ! যেগুলি miraculously তৎক্ষণাৎ তৈরি হোতে। সাধুবাবার কাছে কোন কিছু খাবার চাইলেই উনি বলতেন – ” যাও না মায়ের কাছে (কালীমন্দিরে) গিয়ে চাও ! যা চাইবে _তাই পাবে” ! মাষ্টারমশাই বা তার সাথীরা এক একদিন এক একরকম খাবার চাইতেন – আর তা পেতেনও _যেমন কোনো কোনো দিন গরম গরম সিঙ্গাড়া, কোনো কোনো দিন গরম গরম জিলিপি ইত্যাদি! উনি এসব কথা ন’কাকাকে বলছিলেন এবং ন’কাকার বিশ্বাস অর্জনের জন্য অন্য ভক্তদের কাছে সালিশিও করতেন (কারণ তারাও মাষ্টারমশাই-এর সাথে ব্যারাকপুরে যেতো এবং দু-চার দিন ঁমায়ের দেওয়া খাবার খেয়েছিল)।
একবার মাষ্টারমশাই সন্ধ্যার সময় ওনার পূজার ঘরে ‘ধ্যান’ করার সময় বন্ধ ঘরে একজনের পায়চারির শব্দ শুনেছিলেন – পরে চোখ বন্ধ অবস্থাতেই বুঝতে পারলেন জানলা খুলে যেন কিছু একটা ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল । পরের সপ্তাহে মাষ্টারমশাই যখন ব্যারাকপুরে ঐ সাধুবাবার আশ্রমে গিয়েছিলেন – তখন সাধুবাবা হাসতে হাসতে সেই সন্ধ্যায় মাষ্টারমশাই-এর ধ্যান করার গল্প সকলকে শুনিয়ে দিয়েছিলেন! এইসব অলৌকিক ক্রিয়াকর্ম ঘটাতে পারতেন ঐ ব্যারাকপুরের “ভাগাড়ের সাধুবাবা”।
আরো একটা ঘটনার কথা মাষ্টারমশাই খুবই বলতেন, সেটা হোল__ একবার বৃন্দাবন বেড়াতে গিয়ে মাষ্টারমশাই এবং তার দলবল বরষানা পাহাড়ে উঠে অন্ধকারে পথ হারিয়ে ফেলেছিলেন এবং দুটি বাচ্চা ছেলে অন্ধকারের মধ্যে ওনাদের পথের দিশা বলে দিয়েছিল ৷ সেদিনের ওই পুরো ঘটনাটাও “ভাগাড়ে সাধু” ব্যারাকপুরে বসেই উপস্থিত জনেদের বলে দিয়েছিলেন ৷ এই ধরনের অসম্ভব ক্ষমতা ছিল ওনার! মাষ্টারমশাই বৃন্দাবন থেকে ফিরে এলে সাধুবাবা ওনাকে বলেছিলেন _”অন্ধকারের মধ্যে ঐ বাচ্চা ছেলেদুটোকে ধরতে পারলি না!! ওরাই তো ছদ্মবেশী কৃষ্ণ-বলরাম ছিল রে!”
যাইহোক, সাধুবাবার আরও ক্ষমতা ছিল, যেমন_ কঠিন কঠিন রোগ বা ব্যাধিগ্রস্থ মানুষজনকেও শুধুমাত্র মায়ের কাছে প্রার্থনার মাধ্যমে সারিয়ে দিতে পারতেন ঐ সাধুবাবা! আর এইটাই ‘কাল’ হোল ৷ দিন কে দিন ওনার কাছে লোকের ভিড় বাড়তে লাগলো , সাধুবাবার নাম-ডাক বাড়তে লাগলো – আর আশ্চর্যের বিষয় এই যে,ধীরে ধীরে ওনার অলৌকিক ক্ষমতা কমতে লাগলো! একটা সময় পরে সাধুবাবা বিয়ে করলেন এবং তার ছেলে-মেয়ে হোল – কিন্তু ওনার সাধনলব্ধ শক্তি সত্যি সত্যিই একদম শেষ হয়ে গেল ! সাধনশক্তি হারিয়ে নিঃস্ব ঐ সাধুবাবা সাধারণ মানুষের মতই নিদারুণ অভাবগ্রস্ত হয়ে রোগে ভুগে একদিন মারাও গেলেন !! তবে তাঁর মেয়ের ভালো বিবাহ হয়েছে এবং ছেলেটি সরকারী চাকরী পেয়েছে — ফলে বর্তমানে ওনার পরিবারের সবাই মোটামুটি ভালো আছে।
সাধুবাবার ছেলে মেয়ে দুজনেরই ন’কাকার কথা মাষ্টারমশাই-এর কাছে শুনে ওনার সাথে দেখা করতে এবং আশীর্বাদ নিতে এসেছিল। (ক্রমশঃ)
শ্রীরামপুরে ন’কাকার আসরে অন্যান্যদের সাথে যোগ দিতে আসতেন ‘শ্রুতি’ খ্যাত পরমানন্দ ভক্ত রমেন চক্রবর্ত্তী মহাশয় ,তাছাড়াও আসতেন স্থানীয় কিছু বিশিষ্টজন এবং বাইরেরও কিছু বিশেষ ব্যক্তি ! সুদর্শন বাবু (মাষ্টারমশাই) বহুদর্শী লোক – তার সংগ্রামময় জীবনে উনি সমাজের অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে মিশেছেন , তাদের কাছে উনি অনেক ভালোবাসা পেয়েছেন, সন্মানও পেয়েছেন । মাষ্টারমশাই-এর জীবনেও কিছু সাধন-ভজন ছিল , ফলে ওনারও কিছু সাধনশক্তি ছিল! সেইসব কারণেই অনেক মানুষ ওনাকে মান্যিগন্যি করতো ৷ ব্যারাকপুরের এক সাধুবাবার কথা আগে বলেছি – সেই সাধুবাবা পরবর্ত্তী জীবনে বিবাহ করেছিলেন – তাঁর ছেলে এবং মেয়ে (তারাও খুবই ভালো মানুষ)-ও ন’কাকার সাথে দেখা করতে এসেছিল ! সাধুবাবার কিছু কথা পরে বলছি – আগে ওই আসরে আরও কারা আসতো তাদের কথা বলি । “মহাপীঠ তারাপীঠ” গ্রন্থের লেখক শ্রী বিপুল কুমার গাঙ্গুলী, মাষ্টারমশাইয়ের বন্ধুস্থানীয় ছিলেন ৷ উনি মাষ্টারমশাইয়ের বাড়ীতে প্রায়ই আসতেন । পন্ডিত অজয় চক্রবর্তীর ছাত্র একটি ছেলে এবং ওনার বাবা-মাও (যারা প্রত্যেকে দূরদর্শন , বেতার ইত্যাদির সংগীত বিভাগের সাথে যুক্ত) ন’কাকাকে গান শুনিয়ে গেছিল ৷ যার গান শুনে ন’কাকা খুবই আনন্দ পেয়েছিলেন , অনেকদিন পর্যন্ত ছেলেটির কথা উনি আমাকে বলতেন (“মাষ্টারমশাই-এর বাড়িতে গান গেয়েছিল যে ছেলেটি, তার গলাটি কিন্তু চমৎকার ছিল” _এই কথাটা উনি বলতেন।) । বৃন্দাবনে থাকেন একজন পরম বৈষ্ণব – উনিও মাষ্টারমশাই-এর ছাত্র বা কোন আত্মীয় হবেন – তিনিও শুধু ন’কাকার সাথে দেখা করার জন্যই কয়েকদিন থেকে গিয়েছিলেন (যেহেতু ঐ বৈষ্ণবের বৃন্দাবনে ফিরে যাবার জন্য যে দিনের টিকিট ছিল – তার ২/৪ দিন পরেই মাষ্টারমশাই-এর বাড়ীতে ন’কাকার যাবার কথা ছিল , তাই ঐ বৈষ্ণব থেকে গিয়েছিলেন)!
যে সাধুবাবার কথা হচ্ছিল তার কিছু কথা বলি ৷ ব্যারাকপুরে ওনাকে সবাই “ভাগাড়ে সাধু” বলে ডাকতো । ওই সাধুবাবা তন্ত্রসাধনা করতেন এবং বেশ কিছু সিদ্ধাই তার করায়ত্ত ছিল ! যেমন দূরশ্রবণ , দূরগমন , মনের কথা বুঝতে পারা , যে কোন জিনিস শূন্য থেকে সৃষ্টি করা – এসব অনেককিছুই ওনার করায়ত্ত ছিল । একবার মাষ্টারমশাই ওনার সাথে ট্রেনে করে ফিরছিলেন(বা হয়তো ওনাকে ট্রেন থেকে নামার পর_অভ্যর্থনা করে নিয়ে আসার জন্য স্টেশন অব্দি গেছিলেন) ৷ শ্রীরামপুর স্টেশন থেকে সুদর্শন বাবুর বাড়ি যাবার পথে ঐ সাধুবাবা হঠাৎ করে বলতে শুরু করছিলেন – ” বাঃ! বাঃ! ✓রী মায়ের পূজার জন্য কত ফুল , কত বেলপাতা যাচ্ছে !” মাষ্টারমশাই এই কথা গুলি শুনতে পেয়ে ওনাকে বলেছিলেন – ” এসব আপন মনে খ্যাপার মতো কি বলছো- সাধুবাবা ! ফুল – বেলপাতা কোথায় দেখতে পাচ্ছো” ? সাধুবাবা উপরের দিকে দু-হাত বাড়িয়েই (রাস্তার উপরেই , বহু লোকের সামনে) গোছা গোছা ফুল-বেলপাতা ধরে ফেললেন ! মাষ্টারমশাই সেগুলি ওনার হাত থেকে নিয়ে পকেটে পুরে ফেলেছিলেন । সুদর্শন বাবু সেই সাধুবাবাকে পরীক্ষা করার জন্য পথ চলতে চলতেই (ওনার বাড়ি থেকে স্টেশন ৪/৫-মিনিটের হাঁটাপথ)ওনার বাড়ীর দুয়ারের কাছাকাছি স্থানে এসে ঐ সাধুবাবার কাছে জানতে চেয়েছিলেন_”কি গো সাধুবাবা! এখনোও কি ফুল-বেলপাতা দেখতে পাচ্ছো”? আশ্চর্যজনকভাবে ঐ সাধুবাবা আরো একবার একগোছা বেলপাতা ও ফুল আবার শূন্য থেকে হাত বাড়িয়ে ধরে সুদর্শন বাবু (মাষ্টারমশাই) – কে দিয়েছিলেন! মাষ্টারমশাই ঐ ফুল-বেলপাতাগুলোকেও ঘরে এনে যত্ন করে রেখে দিয়েছিলেন এবং সেগুলি বেশ কয়েকদিন বেশ টাটকা-ই ছিল ! ওগুলো ম্যাজিক ফুল বা বেলপাতা ছিল না যে Vanish হয়ে যাবে!
মাষ্টারমশাই সাধুবাবার ব্যারাকপুরের বাড়ীতে যে কালীমন্দির ছিল – সেখানে কতদিন যে ইচ্ছামতো গরমাগরম খাবার খেয়েছেন তার ঠিক নাই ! যেগুলি miraculously তৎক্ষণাৎ তৈরি হোতে। সাধুবাবার কাছে কোন কিছু খাবার চাইলেই উনি বলতেন – ” যাও না মায়ের কাছে (কালীমন্দিরে) গিয়ে চাও ! যা চাইবে _তাই পাবে” ! মাষ্টারমশাই বা তার সাথীরা এক একদিন এক একরকম খাবার চাইতেন – আর তা পেতেনও _যেমন কোনো কোনো দিন গরম গরম সিঙ্গাড়া, কোনো কোনো দিন গরম গরম জিলিপি ইত্যাদি! উনি এসব কথা ন’কাকাকে বলছিলেন এবং ন’কাকার বিশ্বাস অর্জনের জন্য অন্য ভক্তদের কাছে সালিশিও করতেন (কারণ তারাও মাষ্টারমশাই-এর সাথে ব্যারাকপুরে যেতো এবং দু-চার দিন ঁমায়ের দেওয়া খাবার খেয়েছিল)।
একবার মাষ্টারমশাই সন্ধ্যার সময় ওনার পূজার ঘরে ‘ধ্যান’ করার সময় বন্ধ ঘরে একজনের পায়চারির শব্দ শুনেছিলেন – পরে চোখ বন্ধ অবস্থাতেই বুঝতে পারলেন জানলা খুলে যেন কিছু একটা ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল । পরের সপ্তাহে মাষ্টারমশাই যখন ব্যারাকপুরে ঐ সাধুবাবার আশ্রমে গিয়েছিলেন – তখন সাধুবাবা হাসতে হাসতে সেই সন্ধ্যায় মাষ্টারমশাই-এর ধ্যান করার গল্প সকলকে শুনিয়ে দিয়েছিলেন! এইসব অলৌকিক ক্রিয়াকর্ম ঘটাতে পারতেন ঐ ব্যারাকপুরের “ভাগাড়ের সাধুবাবা”।
আরো একটা ঘটনার কথা মাষ্টারমশাই খুবই বলতেন, সেটা হোল__ একবার বৃন্দাবন বেড়াতে গিয়ে মাষ্টারমশাই এবং তার দলবল বরষানা পাহাড়ে উঠে অন্ধকারে পথ হারিয়ে ফেলেছিলেন এবং দুটি বাচ্চা ছেলে অন্ধকারের মধ্যে ওনাদের পথের দিশা বলে দিয়েছিল ৷ সেদিনের ওই পুরো ঘটনাটাও “ভাগাড়ে সাধু” ব্যারাকপুরে বসেই উপস্থিত জনেদের বলে দিয়েছিলেন ৷ এই ধরনের অসম্ভব ক্ষমতা ছিল ওনার! মাষ্টারমশাই বৃন্দাবন থেকে ফিরে এলে সাধুবাবা ওনাকে বলেছিলেন _”অন্ধকারের মধ্যে ঐ বাচ্চা ছেলেদুটোকে ধরতে পারলি না!! ওরাই তো ছদ্মবেশী কৃষ্ণ-বলরাম ছিল রে!”
যাইহোক, সাধুবাবার আরও ক্ষমতা ছিল, যেমন_ কঠিন কঠিন রোগ বা ব্যাধিগ্রস্থ মানুষজনকেও শুধুমাত্র মায়ের কাছে প্রার্থনার মাধ্যমে সারিয়ে দিতে পারতেন ঐ সাধুবাবা! আর এইটাই ‘কাল’ হোল ৷ দিন কে দিন ওনার কাছে লোকের ভিড় বাড়তে লাগলো , সাধুবাবার নাম-ডাক বাড়তে লাগলো – আর আশ্চর্যের বিষয় এই যে,ধীরে ধীরে ওনার অলৌকিক ক্ষমতা কমতে লাগলো! একটা সময় পরে সাধুবাবা বিয়ে করলেন এবং তার ছেলে-মেয়ে হোল – কিন্তু ওনার সাধনলব্ধ শক্তি সত্যি সত্যিই একদম শেষ হয়ে গেল ! সাধনশক্তি হারিয়ে নিঃস্ব ঐ সাধুবাবা সাধারণ মানুষের মতই নিদারুণ অভাবগ্রস্ত হয়ে রোগে ভুগে একদিন মারাও গেলেন !! তবে তাঁর মেয়ের ভালো বিবাহ হয়েছে এবং ছেলেটি সরকারী চাকরী পেয়েছে — ফলে বর্তমানে ওনার পরিবারের সবাই মোটামুটি ভালো আছে।
সাধুবাবার ছেলে মেয়ে দুজনেরই ন’কাকার কথা মাষ্টারমশাই-এর কাছে শুনে ওনার সাথে দেখা করতে এবং আশীর্বাদ নিতে এসেছিল। (ক্রমশঃ)