[ গুরু মহারাজের কথার রেশ টেনে ন’কাকা কিছু কথা বলেছিলেন !আজকে সেইসব নিয়েই আলোচনা | ]
গুরু মহারাজ একদিন সিটিংয়ে আমাদের মতো সাধারণ ভক্তদের কতক্ষণ সাধন-ভজন বা ধ্যান-জপ করা উচিত (উনি অবশ্য ‘জপ’ করার ব্যাপারে কোন সময় বা সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেননি ৷ বলেছিলেন – ” চলতে-ফিরতে, হাঁটতে-চলতে, সবসময় জপ করবি ৷”) সে সম্বন্ধে কথা বলছিলেন ৷ সাধারণ সংসারী মানুষ বেশিক্ষণ ধ্যানে বসে থাকতে পারে না, কিন্তু জপ-টা সবাই সবসময় করতে পারে । স্থান নির্দিষ্ট করে করতে হবে – শুচি বস্ত্র পরে করতে হবে – এমন কোনো কথা নাই । যখন খুশি জপ করা যায় ৷ এইসব নিয়ে সেদিন উনি বিস্তারিত আলোচনা করেছিলেন । আমরা _ সাধারন মানুষেরা তো বেশিক্ষণ সাধন- ভজন করতে পারি না| তাই পরম করুনাময় ভগবান স্বামী পরমানন্দ ধ্যান-জপের সময় কমাতে কমাতে শেষটায় বলেছিলেন – ” ঠিক আছে ! তোরা ২১ মিনিট ধ্যান-জপ করবি ! যা – তাতেই তােদের হয়ে যাবে ৷” দয়াময় হরি — সাধনের সময় এত কমিয়ে দেওয়া সত্ত্বেও উপস্থিত ভক্তজনেদের ম্লান-মুখগুলি দেখে তিনি সেদিন প্রকৃত “করুণাময়”-রূপে প্রকটিত হলেন এবং বললেন – “যা – তোরা শুধু আমাকে স্মরণ-মনন করবি, তাতেই তােদের হয়ে যাবে ।”
ন’কাকাও সেদিন উপস্থিত ছিলেন, তাই সেই কথাগুলির রেশ ধরে উনি প্রায়ই বলতেন, – ” বাবা ! সবসময় ধ্যান-জপ করা তো সম্ভব নয়, তাছাড়া ধ্যানে মনোসংযোগ আর ক’জনার হয় বলো ! এর চাইতে দু-চারজন গুরুভাই মিলে ভগবানের নাম-স্মরণ, তাঁর কথা আলোচনা, বিভিন্ন মহাপুরুষদের জীবনী নিয়ে মত বিনিময় করার মাধ্যমে তবু অনেকটা কাজ হয়, এতে মানুষের মন পবিত্র হয় – মনে শান্তি আসে ৷”
গুরুমহারাজের কথা, ন’কাকার কথা অথবা যে কোনো মহাপুরুষের কথাগুলি আলোচনা করা বা সেগুলি লিখে সকলের কাছে পৌঁছানোর মধ্যে দিয়েও- এই কাজটিই হয়ে থাকে । এখনকার যুগটা তো ইন্টারনেটের যুগ – এক লহমায় দুনিয়ার প্রায় সমস্ত এলাকার মানুষের সাথে, নিমেষে যোগাযোগ করা সম্ভব ৷ যে কোনো বার্তা (তা voice-এর মাধ্যমে হোক বা লেখার মাধ্যমে) মুহূর্তের মধ্যে বহু মানুষের কাছে পৌছে দেওয়া যায় । বিজ্ঞানের এই অগ্রগতি মানুষের জনজীবনকে আরও fast করেছে – তাকে আরো অনেক স্বাধীনতা দিয়েছে ৷
যে কোনো মানুষ ইন্টারনেটকে কাজে লাগিয়ে জগতের যতকিছু খারাপ, নোংরা, জীবনবিরোধী বিষয়সমূহকে গ্রহণ করতে পারে – অপরপক্ষে সে এর সাহায্যে জীবনের পথে এগিয়ে চলার মহামন্ত্রও পেতে পারে | সে জীবন-জিজ্ঞাসার সমস্ত উত্তর পেতে পারে, জীবনে শান্তি ও আনন্দের সন্ধান পেতে পারে ! মহাপুরুষদের কথার মধ্যে-ই আধ্যাত্মিক শক্তি লুক্কায়িত অবস্থায় থাকে । মহাপুরুষদের কথা আলোচনা করলে বা পাঠ করলে– সেই শক্তি automatically ওই ব্যক্তির মধ্যে সঞ্চারিত হয়ে যায় । এটা একটা সাংঘাতিক বিজ্ঞান !!
যে কোনো একটি মানুষ কিছুদিন প্রেমের উপন্যাস, নাটক, হালকা রসের গল্প-প্রবন্ধ অথবা আদিরসাত্মক কিছু গ্রন্থ পাঠ করুক অথবা সেই সব নিয়ে কিছুকাল ক্রমাগত আলোচনায় থাকুক – অবশ্যই তার মধ্যে শক্তির ক্ষয় হতে শুরু করবে, ওই ব্যক্তি জীবন বিরোধী হয়ে পড়বে । অপরপক্ষে, সেই একই ব্যক্তি যদি কিছুদিন ধরে মহাপুরুষদের জীবনী বা তাদের বাণী ক্রমাগত পাঠ করতে থাকে বা সেইগুলি নিয়ে আলোচনা করতে থাকে, কোনো মহান মানুষের সান্নিধ্যে সময় অতিবাহিত করে – তাহলে কিছুদিন পর দেখা যাবে, ওই ব্যক্তির মনের জোর বেড়ে গেছে, তার মধ্যে জীবনমুখী নানান ভাবনা আসছে অর্থাৎ এক কথায় মানুষটির মধ্যে বিবেকের জাগরণ এবং চেতনার উত্তরন ঘটতে শুরু করেছে !!
সুতরাং , বর্তমান যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঈশ্বরের ইচ্ছাতেই বিভিন্ন ব্যক্তি, বিভিন্ন গ্রুপ, বিভিন্ন ধর্মীয় সংস্থা থেকে মহাপুরুষদের জীবনী ও বাণী বা তাঁদের শিক্ষা ও উপদেশ প্রচার করে যাচ্ছে ! এতে বহু মানুষের প্রভূত কল্যাণ সাধিত হচ্ছে । ওই যে ন’কাকা আমাকে বলেছিলেন যে, “তাঁর (গুরু মহারাজের বা যে কোনো মহাপুরুষের) কথা আলোচনা করলেও মানুষের কল্যাণ হয়, ধ্যান-জপে আর কতটা সময়ই বা কাটানো যায় – বরং গুরুমহারাজের আলোচনায় অধিক সময় কাটানো যায় !” এক্ষেত্রেও সেটাই হচ্ছে ! তাই সবার মঙ্গল হোক _সবার ভালো হোক, ভগবান পরমানন্দের কাছে এই প্রার্থনা করি।
আমি যখন ন’কাকাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম – ” ন’কাকা ! ‘কথাপ্রসঙ্গে’-পঞ্চম খন্ড বা ‘গল্প কথা প্রসঙ্গে’ _কি ইন্টারনেটের মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করব (কারণ – যেহেতু তখনও ঐ সংকলনগুলি বনগ্রাম পরমানন্দ মিশন থেকে ছেপে বেরোনোর কোনো সম্ভাবনাই তৈরি হয়নি !) ? ন’কাকা সঙ্গে সঙ্গেই আমাকে উত্তর দিয়েছিলেন – ” হ্যাঁ – তা ভালোই তো হবে !অল্প অল্প করে দিয়ে দাও !” বর্তমানে ন’কাকা আর স্থুল শরীরে নাই, তাই এখন – যখন ন’কাকার কথা স্মরণে আসে তখন বেশ বুঝতে পারি যে তিনি কতটা আধুনিক মানুষ ছিলেন!
এখন ‘কথা প্রসঙ্গে’- ষষ্ঠ খন্ড এবং সপ্তম খন্ড ready ! নেটের মাধ্যমে সেগুলি একটু একটু করে দেওয়া হবে কি না – এ সম্বন্ধে decision এখন কে দেবে? আশ্রমের মহারাজদের নিশ্চয়ই একবার জিজ্ঞাসা করবো ! তবু আমার মনে হয় _হয়তো আমাকে এখন জনতা জনার্দনের মতামত নিয়েই কাজ করতে হবে ! তাঁরা যদি বলেন তাহলে নেটে দেওয়া হবে – অন্যথায় মিশন থেকে কবে ছাপা হবে – তার জন্য সকলকেই অপেক্ষা করতে হবে ৷ ….. [ক্রমশঃ]